জসীমউদদীনের সমব্যথী

জসীমউদদীনের সমব্যথী

অরুণ কুমার
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০২: ১৩
কবি জসীমউদদীন

নিকটাত্মীয় হতে হলে রক্তের সম্পর্ক থাকা লাগে। কিন্তু আত্মার আত্মীয় হতে গেল রক্তের বন্ধন না থাকলেও চলে। জীবনে চলার পথে হয়তো কত আত্মীয়ের কাছে অবহেলা-বঞ্ছনার শিকার হতে হয়। আবার দেখা যায়, খুব দূরের কেউ, যার সঙ্গে রক্তের কোনো বন্ধনই নেইা, তিনি হয়তো পরমাত্মীয়ের মতো চরম দুর্দিনে দাঁড়িয়ে গেছেন। পল্লীকবি জসীমউদদীনের এমন একজন অনাত্মীয় সুহৃদ ছিলেন।

লোকটার বাড়ি বিক্রমপুরে। বর্তমানে আমরা যাকে মুন্সীগঞ্জ বলি। লোকটা আইএ পাস করার পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি। কোনো একটা চাকরি জুটিয়ে নেবেন, এ আশা নিয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন কলকতায়।

সেখানেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাই হকারি করে অর্থাৎ রাস্তায়, বাসে-ট্রামে খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। লোকটা একদিন এক দরিদ্র ছেলের সন্ধান পান। সে-ও তার মতো পেটের দায়ে হকারিতে নেমেছে।

ছেলেটা বড্ড আনাড়ি। পত্রিকা কিভাবে বেচতে হয় তাও জানে না। সুতরাং দিনশেষে তার পত্রিকা অবিক্রীত থাকে। ছেলেটার দুঃখ দেখে মায়া হয় কার্তিকদার।

ছেলেটার সঙ্গে আলাপ করেন। ছেলেটা বড্ড দুঃখী, থাকে এক গরিব বোনের বাসায়। কিন্তু তাদের একটিমাত্র ঘর। স্বামী-স্ত্রী আর কয়েকজন ছেলেমেয়ে―তাদের সঙ্গেই ঠাসাঠাসি করে থাকে ছেলেটা। অভাবের তাড়নায় পত্রিকা বিক্রিতে নেমেছে।

কিন্তু এ কাজে বড্ড আনাড়ি।

কার্তিকদা ছেলেটার অবিক্রীত কাগজ বিক্রি করে দেন প্রায় প্রতিদিনই। ছেলেটার দুঃখের কথা, থাকার অসুবিধার কথা শুনে তাকে সঙ্গে করে নিজের মেসে নিয়ে তোলেন। কার্তিকদা একটা ভাঙা দালানের দোতলায় থাকতেন। সামনে বারান্দার মতো খোলা ছাদ। শুধু কার্তিদা নয়, সেই ঘরে তাদের মতো আরো কয়েকজন ছেলে থাকত। সবাই হতদরিদ্র।

ছোট্ট ছেলেটা কবিতা লেখে। কার্তিকদা সেই কবিতা পড়ে সবাইকে শোনায়, রাতে ঘুমানোর আগে। ছেলেটার পত্রিকা যদি খুব কম বিক্রি হয়, কার্তিকদাও সেগুলোর ব্যবস্থা হয়তো করতে পারেন না, সেদিন কার্তিদাই ছেলেটার খাওয়াদাওয়ার ভার নেন।

সেই ছেলেটা হলেন পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের পল্লীকবি জসীমউদদীন। সেদিন কার্তিকদার মতো একজন অনাত্মীয় বড় ভাইকে পেয়েছিলেন বলেই জসীমউদদীন কলকাতা শহরে টিকে থাকতে পেরেছিলেন, হয়েছিলেন দেশবরেণ্য কবি!

সূত্র : স্মৃতিকথা সমগ্র/জসীমউদদীন

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র

বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিতে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম হল সত্যজিৎ রায়। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে ১৯৫৫ সালে যে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন, তা কেবল বাংলা বা ভারতীয় চলচ্চিত্রের নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।

৫ দিন আগে

পলাশীর যুদ্ধ কেন হয়েছিল?

মীর জাফর, নবাবের সেনাপতি, ব্রিটিশদের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করেন এবং যুদ্ধের সময় তার বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় রাখেন। এই বিশ্বাসঘাতকতা নবাবের পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫ দিন আগে

গ্যাস্ট্রিক দূর করবেন যেভাবে

গ্যাস্ট্রিকের মূল কারণ হলো পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়া। এই অ্যাসিড আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু যখন এটি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তৈরি হয় বা পাকস্থলীর দেওয়াল দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনই শুরু হয় সমস্যা।

৫ দিন আগে

প্রযুক্তির হাত ধরে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রে পৌঁছাবে বাংলাদেশ?

নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখনও পুরুষদের তুলনায় অনেক কম, এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে তাঁদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে।

৫ দিন আগে