ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইরান জুড়ে ধরপাকড়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর ইরান জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ‘ইতিহাসে নজিরবিহীন’ অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।

কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ইসরায়েলকে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল, যার ফলে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর সিনিয়র কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। দেশটির গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ‘পশ্চিমা ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক’ — যেমন সিআইএ, মোসাদ এবং এম১৬-এর বিরুদ্ধে ‘অবিরাম যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ১২ দিনের যুদ্ধে তিনজনকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, আর যুদ্ধবিরতির পরের দিনই আরো তিনজনের দণ্ড কার্যকর করা হয়। একই সঙ্গে দেশজুড়ে ৭০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইআরজিসির ঘনিষ্ঠ ফারস নিউজ এজেন্সি।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে কয়েকজন বন্দির তথাকথিত স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য, যাদের দাবি— তারা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করতেন। এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এসব স্বীকারোক্তি জোরপূর্বক আদায় করা হতে পারে এবং বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি।

তারা বলছে, ইরানে দীর্ঘদিন ধরেই গোপন বিচার এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির অভিযোগ রয়েছে।

বিদেশে কর্মরত ফার্সি ভাষার গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও চাপ বাড়িয়েছে ইরান সরকার, এমনটাই বলা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। বিবিসি পারসিয়ান, ইরান ইন্টারন্যাশনাল এবং লন্ডনভিত্তিক মানোতো টিভির সাংবাদিকদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিবিসি পারসিয়ানের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারকে লক্ষ্য করে হুমকি বাড়ছে। তাদের ‘মোহারেব’ বা ‘ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ব্যক্তি’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে— যে অপরাধে ইরানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই ধরনের ঘটনা মানোতো টিভির কর্মীদের সঙ্গেও ঘটেছে। পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

যুদ্ধ চলাকালীন ইরানে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে সীমিত করা হয় এবং যুদ্ধবিরতির পরও স্বাভাবিক সেবা এখনো পুরোপুরি ফেরেনি। ইরানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন— ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ এবং ভিপিএন ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা যায় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ১৯৮০-এর দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধকালীন সময়ের মতোই, যখন বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক বন্দিকে গোপনে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে এমন একটি ঘটনায়, গোপন বিচারে হাজার হাজার বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং তাদের অধিকাংশকেই অচিহ্নিত গণকবরে দাফন করা হয়েছিল।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা করছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ইরান সরকার আবারও ভেতরকার বিরোধীদের ওপর চরম দমন-পীড়নে নেমেছে, যার অংশ হিসেবে চলছে গণগ্রেপ্তার, মৃত্যুদণ্ড।সূত্র : বিবিসি

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভারত সফরে যাচ্ছেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের জন্য ‘ধাক্কা’

মুত্তাকির এই ভারত সফর ঘিরে ভূ-রাজনীতিতে বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য একটি ‘বড় ধাক্কা’ হিসেবে মনে করছেন অনেকে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে কাবুলের ওপর প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে ইসলামাবাদ। এখন ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক তৈরি হলে তা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেবে।

৬ ঘণ্টা আগে

মার্কিন সরকারের দ্বিতীয় দিনের শাটডাউন চলছে

১১ ঘণ্টা আগে

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ধসে ৩ শিক্ষার্থী নিহত, নিখোঁজ ৯১

উদ্ধারকর্মীরা জানাচ্ছেন, বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে কয়েকজন জীবিত থাকার সংকেত পাওয়া গেছে। কিন্তু ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে হাতে হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হচ্ছে।

১২ ঘণ্টা আগে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫৩ জন নিহত

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ এক্সে লিখেছেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে “সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক” হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

১৩ ঘণ্টা আগে