ইতিহাস

চুয়িংগামের প্রাচীন ইতিহাস

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আধুনিক চুয়িং গামের প্রকৃত সূচনা হয় থমাস অ্যাডামসের হাত ধরে।

চুয়িং গামের ইতিহাস শুরু আজ থেকে প্রায় ৯,০০০ বছর আগে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যায়, উত্তর ইউরোপের মানুষরা গাছের ছাল চিবাতেন। ধারণা করা হয়, তারা এটি করতেন দুটি কারণে—একটি হলো স্বাদের জন্য, অন্যটি হলো দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য। গাছের ছালে থাকা প্রাকৃতিক রেসিন মুখের ভেতর এক ধরনের সতেজতা দিত, যা তাদের কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল।

মায়া সভ্যতায় চুয়িং গামের ব্যবহার ছিল আরও সুপরিচিত। মায়ানরা স্যাপোডিল্লা গাছের রস সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে চিবাতেন। এই রসকে তারা 'চিকল' নামে ডাকত। মায়ানরা মূলত ক্ষুধা নিবারণ ও তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এটি ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে আজটেক সভ্যতায় চুয়িং গামের ব্যবহার আরও বিস্তৃত হয়। আজটেকরা চিকল চিবানোর জন্য কঠোর সামাজিক নিয়ম মেনে চলতেন। উদাহরণস্বরূপ: শিশু ও অবিবাহিত নারীরা প্রকাশ্যে চুয়িং গাম চিবাতে পারতেন। বিবাহিত নারী ও বিধবাদের ব্যক্তিগত স্থানে চিবাতে হতো। পুরুষরা একেবারে গোপনে চিবাতেন, কারণ তারা মনে করতেন এটি দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

চুয়িং গামের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয় ১৯শ শতাব্দীতে। ১৮৪০ সালে জন কার্টিস নামের একজন আমেরিকান প্রথমবারের মতো চুয়িং গাম তৈরি করে বাজারে ছাড়েন। তিনি স্প্রুস গাছের রস সংগ্রহ করে তা গরম পানিতে সিদ্ধ করতেন, পরে ঠান্ডা করে টুকরো টুকরো করে কেটে বিক্রি করতেন। তবে এই গামের স্বাদ তেমন ভালো ছিল না, তাই তিনি এতে প্যারাফিন মিশিয়ে স্বাদ উন্নত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু আধুনিক চুয়িং গামের প্রকৃত সূচনা হয় থমাস অ্যাডামসের হাত ধরে। ১৮৬০-এর দশকে তিনি মেক্সিকোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এ্যান্টনিও লোপেজ ডি সান্তা আন্নার সাথে দেখা করেন, যিনি তাকে চিকল (স্যাপোডিল্লা গাছের রস) সম্পর্কে ধারণা দেন। প্রথমে তারা চিকল দিয়ে রাবার বানানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি। পরে অ্যাডামস ভাবলেন, এটি দিয়ে চুয়িং গাম বানালে কেমন হয়? ১৮৭১ সালে তিনি "অ্যাডামস নিউ ইয়র্ক চুয়িং গাম" বাজারে আনেন, যা তাত্ক্ষণিক সাফল্য পায়।

চুয়িং গামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপ্লব আসে বাবল গামের আবিষ্কারের মাধ্যমে। ১৯০৬ সালে ফ্র্যাঙ্ক ফ্লিয়ার প্রথম বাবল গাম বাজারে আনেন, যার নাম ছিল "ব্লিবার-ব্লাবার"। তবে এটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। পরে ১৯২৮ সালে ফ্লিয়ারের কোম্পানির এক তরুণ কর্মী ওয়াল্টার ডাইমার একটি নতুন ফর্মুলা তৈরি করেন, যা দিয়ে বড় বুদবুদ তৈরি করা যেত। এই গামের নাম দেওয়া হয় "ডাবল বাবল", এবং এটি রাতারাতি হিট হয়ে যায়।

চুয়িং গামের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বিজ্ঞাপনের ভূমিকা অপরিসীম। উইলিয়াম রিংলে জুনিয়র নামের এক ব্যবসায়ী প্রথমে সাবান বিক্রি করতেন, কিন্তু পরে তিনি লক্ষ্য করলেন যে বিনামূল্যে দেওয়া চুয়িং গামের চাহিদা বেশি। তাই তিনি ১৮৯৩ সালে জ্যুসি ফ্রুট এবং রিংলে’জ স্পিয়ারমিন্ট নামে দুটি চুয়িং গাম কোম্পানি চালু করেন। তিনি বিপুল অর্থ ব্যয় করে চুয়িং গামের বিজ্ঞাপন দিতেন, যা তাকে ধনী বানিয়ে দেয়।

সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম

ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

উত্তরে কাদেরিয়া ঝড়, দক্ষিণে সপ্তম নৌ বহর: নিয়াজির চোখে সর্ষে ফুল!

কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা প্যারাট্রুপারদের পথ দেখিয়ে পুংলি ব্রিজের দিকে নিয়ে যায় এবং ব্রিজটি দখল করে নেয়। এর ফলে ময়মনসিংহ ও জামালপুর থেকে পিছু হটা পাকিস্তানি ৯৩ ব্রিগেডের সৈন্যরা ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে আটকা পড়ে।

৩ দিন আগে

উত্তরে চীন, দক্ষিণে আমেরিকা— ইয়াহিয়ার ‘গালগপ্পো’ আর রূপসায় স্বজনের গোলা!

ঢাকার চারপাশের বৃত্ত বা ‘লুপ’ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যায়। উত্তরে ময়মনসিংহ মুক্ত হওয়ার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে ছুটছে, পূর্বে মেঘনা পাড় হয়ে নরসিংদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিশাল বহর, আর পশ্চিমে পদ্মার পাড়ে চলছে তুমুল প্রস্তুতি।

৪ দিন আগে

আকাশ থেকে নামল ‘উড়ন্ত যম’— পালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না পাকিস্তানি বাহিনীর

পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের তথাকথিত ‘ফোর্ট্রেস ডিফেন্স’ বা দুর্গ রক্ষা কৌশলের ওপর যে অন্ধ বিশ্বাস রেখেছিল, তা তখন অন্ধের মতোই তাদের হোঁচট খাওয়াচ্ছিল। একদিকে বিশ্বরাজনীতির দাবার বোর্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌ বহর পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তাপ ছড়াচ্ছিল, অন্যদিকে বাংলার

৫ দিন আগে

বিনয়-বাদল-দীনেশ— অগ্নিযুগের ৩ বিপ্লবী

তিন যুবকের হাতে মোটেও সময় নেই। বেচারা সিম্পসন! আজীবন নিরীহ-নিরপরাধ ভারতীয়দের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এসেছেন। এ জন্য কতকিছু চিন্তা করে নির্যাতনের উপায় বের করতে হয়েছে। সেই মানুষটি নিজের শেষ সময়ে বিন্দুমাত্র ভাবনার সময়ও পেলেন না। তার দিকে তাক করা তিনটি রিভলবার থেকে ছয়টি বুলেট সিম্পসনের শরীর ভেদ করে

৬ দিন আগে