ডিজিটাল সেবা

বাবা বিদেশে মারা গেলে ছেলে কীভাবে ওয়ারিশ হবেন

শানজীদা শারমিন

আবিরের বাবা মনির হোসেন ছিলেন কাতারের রাজধানী দোহায়। সেখানে ১২ বছর ধরে কাজ করতেন টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে। একদিন হঠাৎ আবির জানতে পারলেন—তার বাবা কাতারে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

মনির হোসেনের মৃত্যুর পর জানা গেল, তাঁর কোম্পানির কাছে শেষের মাসের বেতন, কিছু সেভিংস এবং একটা প্রভিডেন্ট ফান্ড মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো পাওনা আছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হলো—সঠিক উত্তরাধিকারীকে পাওনা পরিশোধ করতে হলে বাংলাদেশ থেকে সাকসেশন সার্টিফিকেট আনতে হবে।

দোহা থেকে বাংলাদেশের দূতাবাসে মনির হোসেনের সহকর্মীরা তাঁর মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ শুরু করলেন। দূতাবাসে লাগল:

  • মনির হোসেনের পাসপোর্ট ও কাতারের রেসিডেন্স কার্ড (QID)
  • হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট
  • কোম্পানির দেওয়া মৃত্যু সংক্রান্ত রিপোর্ট
  • একজন সহকর্মীর বিবৃতি (declaration)

এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ‘মৃত্যু নিবন্ধন’ সার্টিফিকেট জারি হলো। এই কাগজপত্রগুলো ডিএইচএলে-এ করে পাঠানো হলো ঢাকায় মনির হোসেনের ছেলে আবিরের কাছে।

আবির প্রথমে গেলেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। কার্যালয়ের ডিজিটাল সেন্টারের অপারেটর জানালেন, ‘প্রথমে ব্যাকডেটেড জন্মসনদ করতে হবে, তারপর মৃত্যু সনদ।’

বাবার পাসপোর্ট কপি, কাতারের ডেথ সার্টিফিকেট, নিজের ও মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে জন্মসনদের আবেদন করলেন আবির। তিন দিনের মধ্যে জন্মসনদ তৈরি হয়ে গেলে, সেই নম্বর দিয়ে বাবার মৃত্যু সনদের আবেদন করা হলো। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের পর, হাতে পেলেন অফিসিয়াল মৃত্যু সনদ।

এরপর আবির আবেদন নিজের, মায়ের এবং ছোট ভাইয়ের নাম উল্লেখ করে ওয়ারিশান সনদের আবেদন করলেন। দরকার হলো:

  • বাবার মৃত্যু সনদ
  • বাবা, মা, ভাই, নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • পরিবারের সদস্যদের নাম, বয়স ও পিতার নাম
  • ওয়ারিশদের অনাপত্তিপত্র (No Objection)

ইউপি চেয়ারম্যান সত্যতা যাচাই করে ওয়ারিশান সনদ ইস্যু করলেন। ওয়ারিশ সনদ হাতে নিয়েই আবির গেলেন জেলা জজ কোর্টে, পরিচিত এক আইনজীবীর কাছে। আইনজীবী জানালেন, প্রবাসে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সম্পদ না থাকলেও যদি পাওনা থাকে (যেমন প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা বা কোম্পানির বকেয়া), তাহলে সাকসেশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।

সাকসেশন সার্টিফিকেটের জন্য আবিরের দরকার হলো:

  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • বাবার জন্ম ও মৃত্যু সনদ
  • নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র
  • ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে ওয়ারিশান সনদ
  • অনাপত্তিপত্র (মা ও ভাইয়ের পক্ষ থেকে)
  • কাতার থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর কাগজ
  • কাতারের কোম্পানি থেকে বেতন বা পাওনার কাগজ
  • একটি হলফনামা (affidavit)

ফাইলিং, সমন ফেরত এবং জবানবন্দি- এই তিন ধাপের প্রক্রিয়া শুরু হলো। শুনানি হলো, কোর্ট ওয়ারিশদের উপস্থিতিতে জেনে নিল কেউ বাদ পড়েছে কি না। কোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে সাকসেশন সার্টিফিকেট জারি করল। কোর্ট ফি বাবদ ২% টাকা জমা দিতে হলো, কারণ প্রবাসে পাওনা ১৫ লাখ টাকার মতো।

সাকসেশন সার্টিফিকেটের নোটারি ও ইংরেজি অনুবাদ করে কাতারে ডিএইচএলে পাঠানো হলো মনির হোসেনের কোম্পানিতে। সেখানকার আইন বিভাগ যাচাই করে জানাল—“এই সনদের ভিত্তিতে টাকা হস্তান্তর সম্ভব।”

দুই মাসের মাথায় কোম্পানি সব টাকা ট্রান্সফার করল মনির হোসেনের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে।

প্রবাসে মৃত্যু হলে শুধু ভিসা বা পাসপোর্ট নয়, মৃত্যুর পরে প্রক্রিয়াটাও হয় আইনি ও কাগজপত্রনির্ভর।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০০-রও বেশি সরকারি সেবা নিয়ে চালু হচ্ছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন আউটলেট। চলমান ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এতে যুক্ত করা হবে। সেখানেও পাওয়া যাবে এ সংক্রান্ত সেবা।

Picture1

ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

শিল্পকলার নতুন মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন

কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

১৩ দিন আগে

সমগীতের নতুন গান ‘ধর্ম যার যার’, ভিডিও উৎসব

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, বিশ্বসূফি সংস্থার সদস্য হাসান শাহ সুরেশ্বরী দীপু নূরী, সায়ান, অরূপ রাহী, কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম, সহজিয়া ব্যান্ডের রাজুসহ বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমগীতের সভাপ্রধ

১৪ দিন আগে

ক্যারল অ্যান ডাফির কবিতা— রাষ্ট্র/ভোজ

প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তাদের বৃহস্পতিবার প্রথম পাতা সাজিয়েছে ট্রাম্পের সফর নিয়েই। সেখানে মূল সংবাদের পাশেই স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ ‘পোয়েট লরিয়েট’ তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিযুক্ত কবি ক্যারল অ্যান ডাফির কবিতা STATE/BANQUET। বিশ্বব্যবস্থা যে রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারই এক মূর্ত

১৫ দিন আগে

লুমিনের মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘ফিরে এসো’র গ্র্যান্ড প্রিমিয়ার

কানাডা প্রবাসী হলেও দেশের টানে এই ফিল্ম নির্মাণ করেছেন শিল্পী লুমিন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু ও মিডিয়ার প্রিয় মানুষ ডা. আশীষ না থাকলে এটি সম্ভব হতো না। আগত সব অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’

২২ দিন আগে