এতদিন সবাই কেন ঘুমিয়ে ছিল?

শরিফুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

একের পর এক রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে, ছাড়পত্র না থাকলে, আগুনের নিরাপত্তা না থাকলে যতো নামি রেস্তোরাঁই হোক সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমি মনে করি এই শহরের প্রতিটা ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা দেখা উচিত। যেই ভবনের নিরাপত্তা নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার আগে মানুষের নিরাপত্তা! তবে এই খাতের সমস্যা কোথায় সেটিও দেখা উচিত। বিষয়টা কী এমন যথাযথ অনুমতি পেতে নানা সমস্যা করে রাখা হয় যাতে ঘুষ দুর্নীতি বাড়ে? নয়তো এতদিন সবাই কেন ঘুমিয়ে ছিল? এই রেস্তোরাঁ মালিকরা বলুক কোথায় কোথায় তারা ঘুষ দিতেন? কারা কারা ঘুষ খেয়ে দায়িত্বে অবহেলা করেছে সেটা আমরা জানতে চাই। এই দায়িত্বে অবহেলার বিচার হওয়া উচিত।

কেন এতেদিনে কোনো অভিযান হয়নি, কোন জাদুবলে সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন সেই জবাবদিহিতা জরুরি। দায়িত্বে অবহেলায় যদি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে তাহলে কিন্তু ফের সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে মাঝখান থেকে শুধু ঘুষের রেট বাড়বে। এরপর সবাই ফের জাদুর ঘুম দিবে।

একবার ভেবে দেখেন! সবাইকে ম্যানেজ না করে নিশ্চয়ই এই ব্যবসা চলছিলে না। একটা ভবন করতে, একটা রেস্তোরাঁ চালাতে সরকারের আটটা সংস্থার নাকি অনুমোদন লাগে। এর পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন তো আছেই। সবাইকে ম্যানেজ না করে কী এগুলো চলছিল? কাজেই শুধু রেস্তোরাঁর মালিক বা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আর এই খাতের মূল সমস্যা সমাধান করা উচিত। কারণ এগুলো সিস্টেমটিক ব্যর্থতা। পেছনের কারণ অনিয়ম আর দুর্নীতি।

ভীষণ কষ্ট লাগে। সাংবাদিক হিসেবে গত দুই যুগে কত যে দুর্ঘটনা আর কত যে লাশ দেখেছি! এই যে এই দেশে আপনি খেতে গিয়ে মরবেন, হাসপাতালে সুন্নতের খতনা করতে গিয়ে মরবে আপনার সন্তান, এন্ডোসকপি করতে গিয়ে মরবে আপনার ভাই, নির্মাণাধীন ভবনের রড পড়ে মারা যাবে কোনো বাবা, বাস দুর্ঘটনা, ট্রেনে আগুন কিংবা ভবনের আগুনে মারা যাবে সাধারণ মানুষ, গার্মেন্টস বা কারখানায় মরবে শ্রমিক প্রত্যেকটা মৃত্যুর দায় এই রাষ্ট্রের! এমন কোনো দিন নেই এ দেশে অবহেলায় মৃত্যু হচ্ছে না। এগুলো বন্ধ করতেই হবে।

আমি মনে করি নিয়ম না মানলে নাগরিকের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনি দায়িত্বে অবহেলাকারী বা ঘুষখোরদের বিরুদ্ধেও শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা দ্বিপাক্ষিক বিষয়। নাগরিককে যেমন নিয়ম মানতে হবে, যারা নীতি নির্ধারক যারা দায়িত্বে আছেন তাদের সততাও জরুরি। সুশাসন গড়ে না উঠলে এমন অপমৃত্যু কখনোই বন্ধ হবে না!

শেষ করি আরেকটা কথা বলে। আগুনের বিষয়ে সবার সচেতনতা জরুরি। ১১ বছর আগে রানা প্লাজায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। বিশ্বের ইতিহাসে এটি তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা। ওই ঘটনার পর কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ থেকে শুরু করে সবার প্রচেষ্টায় গার্মেন্টসে এমন দুর্ঘটনা বন্ধ হয়েছে।

আমি মনে করি বেইলি রোডের ৪৬ জন মানুষের জীবনের মূল্যও অনেক। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও খেতে গিয়ে এভাবে ৪৬ জন মানুষ মরেছে বলে আমার জানা নেই। কাজেই আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন মৃত্যু বন্ধ করতেই হবে। এখানে লোক দেখানো অভিযানের চেয়েও সংকটের মূলে নজর দেওয়া জরুরি। (লেখকের ফেসবুক থেকে)

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৪ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৫ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৫ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

৯ দিন আগে