আফরোজা পারভীন
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তার অপরাধ সঠিকভাবে জানা যায়নি। এ ব্যাপারে পত্রিকায় দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। তবে উভয় পত্রিকাই লিখেছে, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী হলেও আওয়ামী লীগ আমলে স্থানীয় এমপির সাথে দ্বন্দ্বের কারণে এলাকায় থাকতে পারেননি। ৬ বছর এলাকা ছাড়া ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা আছে। আরেক পত্রিকা লিখেছে, তার ছেলে মানুষের ওপর নির্যাতন করত। ছেলে ভোটে দাঁড়িয়েছিল। সেই দাঁড়ানোতে সায় ছিল না স্থানীয় এমপির। সেই থেকে ঝামেলা শুরু।
সম্প্রতি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। ভেবেছিলেন, আগের সরকার যেহেতু নেই এবার তিনি নিরাপদে বাড়িতে বসবাস করতে পারবেন। বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কতিপয় লোক তাকে তুলে আনে, জুতার মালা পরায়, শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে। এলাকা ছেড়ে চলে যাবার হুমকিও দেয়। একজন তাকে গ্রামের সমস্ত লোকের কাছে মাফ চাইতে বললে তিনি মাফও চান।
যারা তাকে তুলে আনল তাদের সম্পর্কেও ভিন্নমত আছে। ভদ্রলোকের ছেলে বলেছেন, ‘তারা সবাই জামাতি।’ ভদ্রলোক বলেছেন, একজন সন্ত্রাসী ছিল। যে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। এখন ফিরে এসেছে। পুলিশ বলছে, তারা জানপ্রাণ দিয়ে খাটছে। এখনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।
আমার ছেলেবেলায় শুধুমাত্র চোরের গলাতেই জুতার মালা পরাতে দেখেছি। ছেঁড়া জুতার মালা। তখন জুতা স্যান্ডেল এত লভ্য ছিল না। ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে, সোল খুলে গেলে সোল লাগিয়ে পরা হত। এমনকি স্পঞ্জের ফিতাও বিক্রি হতো। তখন জিনিসের দাম ছিল। মানুষের হাতে পয়সা ছিল না, বোলবালাও ছিল না। পোশাকের সাথে মিলিয়ে জামা জুতো পরার কথা কেউ ভাবত না। একজনের বিশ পঁচিশ জোড়া জুতা স্যান্ডেলও থাকত না। তাই ছেঁড়া জুতা জোগাড় করতেও অনেক কষ্ট হতো। অত্যন্ত ঘৃণ্য কোনো কাজ না করলে কারো গলায় জুতার মালা পরানো হতো না। চুরি ছিল খুবই ঘৃণ্য কাজ। এখনকার মতো ধর্ষণ যৌন হয়রানি ছিনতাই চাঁদাবাজি কথায় কথায় হত্যা এসব তখন ছিল না। তাই জুতার মালা পরানো মানে মারাত্মক কিছু!
এখন বিষয়টা ডালভাত। বছর দুয়েক আগে নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হয়েছিল। আমাদের কালে শিক্ষক ছিলেন পীর দরবেশ তুল্য। তার গলায় শুধু ফুলের মালায় শোভা পেত। সে যত খারাপ শিক্ষকই হোক। জুতার মালার কথা স্বপ্নেও কেউ ভাবত না। এখন এটা ভীষণ সহজ ব্যাপার। কারো কিছু মন মতো না হলেই জুতোর মালা। শিক্ষক পছন্দ হলো না জুতার মালা, রাজনীতিবিদ পছন্দ হলো না, জুতার মালা। জুতা ছোঁড়াও আর এক ট্রাডিশন। কোন জিনিস খুব সহজ করে ফেললে তার যেমন দাম থাকে না, তেমনি সহজলভ্য জিনিসে সহজেই সবার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা। এসব কাজে উৎসাহ দিলে যখন তখন জুতার মালা উৎসাহদাতার গলায় এসে পড়া অসম্ভব নয়।
জুলাই বিপ্লবের পর সবাই ভেবেছিল, এবার দেশ থেকে সব রকম অন্যায় অনাচার অবিচার দূর হবে। সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সুখ শান্তি সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে। কারণ মানুষের মনে শান্তি থাকবে। যে কোন বিপ্লবের পর সামান্য বিশৃঙ্খলা হয় । সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কতদিন ! ছয় মাস হতে চলল এতদিনে সবকিছু একটা সেপে আসার কথা ছিল । জেলের দরজা দিয়ে যে সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে এল, তাদের কারো কারো আজীবন সাজা ছিল। কে জেলের দরজা খুলল, কে তাদের বের করল, কোন আইনে বের করল জানা গেল না। এখন তারা সদর্পে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। এইত চৌদ্দগ্রামের ভদ্রলোক বলেছেন, একজন পলাতক সন্ত্রাসী ছিলেন তাকে হেনস্থাকারীদের দলে। তিনিও সদর্পে সগৌরবে ফিলে এলেন। আমরা সন্ত্রাস বিলোপ করতে চেয়েছিলাম। ঘটনাটা উল্টো ঘটল কিনা?
জামায়াতে ইসলামের লোকজন যদি তাকে পিটিয়ে থাকে তবে কী অপরাধে পেটালো, জুতার মালা পরালো সেটা তো বলতে হবে। দেশে আইন আদালত থাকতে নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই। বলছি না, মুক্তিযোদ্ধা বলে তার সব অপরাধ মাফ। না, অপরাধ করলে যেই হোক তার শাস্তি প্রাপ্য। তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন আইন অনুযায়ী তার বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু অপরাধের কথা তো কেউ বলছে না। বরং শোনা যাচ্ছে, আগের শাসনামলেও তিনি নির্যাতিত ছিলেন। আর আগের আমলে নিজ দলের মধ্যে মারামারি, খুনোখুনি, রক্তারক্তির কথা আমাদের অজানা কিছু নয়। তার ছেলে যদি মানুষের ওপর নির্যাতন করে থাকে সে দায় মুক্তিযোদ্ধা ভদ্রলোকের নয়।
দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। মাত্র কদিন আগে খোদ ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। এলাকাটিকে সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যেখানে সেখানে মানুষের কাটা হাত পা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। এখন অবস্থা আগের থেকে সামান্য ভালো হলেও নিরাপদ বলা যায় না। দেশজুড়ে একই অবস্থা । একের পর এক হত্যার ঘটনা শুনছি। ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় একজন অটোরিকশা মালিককে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
দেশের সর্বত্র এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তার কম খবরই আমরা জানতে পাই। দ্রব্যমূল্য যত বাড়ছে অপরাধপ্রবণতাও তত বড়ছে। এক শ্রেণির হাতে কোনো টাকা নেই। সম্পদের অসমতা মারাত্মক। তারই প্রতিফলন এসব অপরাধ। যখন তখন যেখানে সেখানে অবরোধ হচ্ছে। রাস্তা চলাচল এখন রীতিমতো বিভীষিকা। কোন রাস্তা যে কখন বন্ধ হয়ে যাবে কেউ জানে না। প্রশাসনে স্থবিরতা আগের মতোই চলছে। বহুবছর ধরে উপেক্ষিত বঞ্চিত কর্মকর্তারা ভেবেছিল, এবার তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পদোন্নতি পাবে, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসবে। কিছু পদোন্নতি হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু অনেক বছর আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ আগের সরকারের চুক্তিতে নিয়োগ নিয়ে অনেক আপত্তি ছিল বৈষম্যবিরোধীদের। তাদের উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে চুক্তি বাতিলের কথা ছিল, ভবিষ্যতে চুক্তি দেয়া হবে না এমন কথাও ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে সম্পূর্ণ বিপরীত। কথার সাথে কাজের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রমের সময়কাল বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেসব কমিশন অনেক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তারা স্বাভাবিকভাবে খুশি। কিন্তু দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন তাতে ঘটছে কিনা সেটা দেখা দরকার। মানুষ অত সংস্কার বোঝে না। তারা চায় সহনশীল দ্রব্যমূল্য, নির্বিঘ্নে চলা ফেরা করতে, জীবনের নিরাপত্তা। সেদিক দিয়ে কোনো সুবাতাস বইছে না। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। এদেশের মানুষ কখনো দুটো টমোটা একটা দুুটো বেগুন কেনেনি, এখন কেনে। তারা মুখে কিছু বলে না। আগের মতোই মুখে তালা পিঠে ছালা। বলার সাহস নেই। অবস্থা বদলায়নি।
আগের সাথে একটা জায়গায় ভীষণ মিল। একই চিত্র। আগের মন্ত্রীরা প্রচুর কথা বলতেন, এরাও বলেন। এদের আবার সমন্বয়করাও আছেন। যারা আগে ছিলেন না। আমরা প্রচুর কথা শুনতে পাই যেকোনো বিষয়ে জেনে না জেনে। অধিক কথা যে শুধু কোনো কাজের নয়, ধ্বংসের কারণ সেটা আগের সরকার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। তারপরও একই ঘটনা। কথার পাল্লা চলছে। শুধু একটা ব্যতিক্রম, প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেন কম।
একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি, নোবেল লরিয়েট যখন কোনো দেশের শীর্ষে থাকেন সে দেশ নিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার পারদ অনেক উঁচুতে থাকে। সে পারদ নিচে নামতে দেয়া ঠিক না। ইতোমধ্যে অনেকটাই নেমে গেছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হলো, অপরাধ জানা গেল না। না, এতটা কখনো ভাবিনি। এরাই দেশ এনেছে। কোথায় লুকাবো মুখ!
লেখক: কথাশিল্পী ও গবেষক
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তার অপরাধ সঠিকভাবে জানা যায়নি। এ ব্যাপারে পত্রিকায় দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। তবে উভয় পত্রিকাই লিখেছে, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী হলেও আওয়ামী লীগ আমলে স্থানীয় এমপির সাথে দ্বন্দ্বের কারণে এলাকায় থাকতে পারেননি। ৬ বছর এলাকা ছাড়া ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা আছে। আরেক পত্রিকা লিখেছে, তার ছেলে মানুষের ওপর নির্যাতন করত। ছেলে ভোটে দাঁড়িয়েছিল। সেই দাঁড়ানোতে সায় ছিল না স্থানীয় এমপির। সেই থেকে ঝামেলা শুরু।
সম্প্রতি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। ভেবেছিলেন, আগের সরকার যেহেতু নেই এবার তিনি নিরাপদে বাড়িতে বসবাস করতে পারবেন। বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কতিপয় লোক তাকে তুলে আনে, জুতার মালা পরায়, শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে। এলাকা ছেড়ে চলে যাবার হুমকিও দেয়। একজন তাকে গ্রামের সমস্ত লোকের কাছে মাফ চাইতে বললে তিনি মাফও চান।
যারা তাকে তুলে আনল তাদের সম্পর্কেও ভিন্নমত আছে। ভদ্রলোকের ছেলে বলেছেন, ‘তারা সবাই জামাতি।’ ভদ্রলোক বলেছেন, একজন সন্ত্রাসী ছিল। যে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। এখন ফিরে এসেছে। পুলিশ বলছে, তারা জানপ্রাণ দিয়ে খাটছে। এখনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।
আমার ছেলেবেলায় শুধুমাত্র চোরের গলাতেই জুতার মালা পরাতে দেখেছি। ছেঁড়া জুতার মালা। তখন জুতা স্যান্ডেল এত লভ্য ছিল না। ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে, সোল খুলে গেলে সোল লাগিয়ে পরা হত। এমনকি স্পঞ্জের ফিতাও বিক্রি হতো। তখন জিনিসের দাম ছিল। মানুষের হাতে পয়সা ছিল না, বোলবালাও ছিল না। পোশাকের সাথে মিলিয়ে জামা জুতো পরার কথা কেউ ভাবত না। একজনের বিশ পঁচিশ জোড়া জুতা স্যান্ডেলও থাকত না। তাই ছেঁড়া জুতা জোগাড় করতেও অনেক কষ্ট হতো। অত্যন্ত ঘৃণ্য কোনো কাজ না করলে কারো গলায় জুতার মালা পরানো হতো না। চুরি ছিল খুবই ঘৃণ্য কাজ। এখনকার মতো ধর্ষণ যৌন হয়রানি ছিনতাই চাঁদাবাজি কথায় কথায় হত্যা এসব তখন ছিল না। তাই জুতার মালা পরানো মানে মারাত্মক কিছু!
এখন বিষয়টা ডালভাত। বছর দুয়েক আগে নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হয়েছিল। আমাদের কালে শিক্ষক ছিলেন পীর দরবেশ তুল্য। তার গলায় শুধু ফুলের মালায় শোভা পেত। সে যত খারাপ শিক্ষকই হোক। জুতার মালার কথা স্বপ্নেও কেউ ভাবত না। এখন এটা ভীষণ সহজ ব্যাপার। কারো কিছু মন মতো না হলেই জুতোর মালা। শিক্ষক পছন্দ হলো না জুতার মালা, রাজনীতিবিদ পছন্দ হলো না, জুতার মালা। জুতা ছোঁড়াও আর এক ট্রাডিশন। কোন জিনিস খুব সহজ করে ফেললে তার যেমন দাম থাকে না, তেমনি সহজলভ্য জিনিসে সহজেই সবার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা। এসব কাজে উৎসাহ দিলে যখন তখন জুতার মালা উৎসাহদাতার গলায় এসে পড়া অসম্ভব নয়।
জুলাই বিপ্লবের পর সবাই ভেবেছিল, এবার দেশ থেকে সব রকম অন্যায় অনাচার অবিচার দূর হবে। সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সুখ শান্তি সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে। কারণ মানুষের মনে শান্তি থাকবে। যে কোন বিপ্লবের পর সামান্য বিশৃঙ্খলা হয় । সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কতদিন ! ছয় মাস হতে চলল এতদিনে সবকিছু একটা সেপে আসার কথা ছিল । জেলের দরজা দিয়ে যে সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে এল, তাদের কারো কারো আজীবন সাজা ছিল। কে জেলের দরজা খুলল, কে তাদের বের করল, কোন আইনে বের করল জানা গেল না। এখন তারা সদর্পে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। এইত চৌদ্দগ্রামের ভদ্রলোক বলেছেন, একজন পলাতক সন্ত্রাসী ছিলেন তাকে হেনস্থাকারীদের দলে। তিনিও সদর্পে সগৌরবে ফিলে এলেন। আমরা সন্ত্রাস বিলোপ করতে চেয়েছিলাম। ঘটনাটা উল্টো ঘটল কিনা?
জামায়াতে ইসলামের লোকজন যদি তাকে পিটিয়ে থাকে তবে কী অপরাধে পেটালো, জুতার মালা পরালো সেটা তো বলতে হবে। দেশে আইন আদালত থাকতে নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই। বলছি না, মুক্তিযোদ্ধা বলে তার সব অপরাধ মাফ। না, অপরাধ করলে যেই হোক তার শাস্তি প্রাপ্য। তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন আইন অনুযায়ী তার বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু অপরাধের কথা তো কেউ বলছে না। বরং শোনা যাচ্ছে, আগের শাসনামলেও তিনি নির্যাতিত ছিলেন। আর আগের আমলে নিজ দলের মধ্যে মারামারি, খুনোখুনি, রক্তারক্তির কথা আমাদের অজানা কিছু নয়। তার ছেলে যদি মানুষের ওপর নির্যাতন করে থাকে সে দায় মুক্তিযোদ্ধা ভদ্রলোকের নয়।
দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। মাত্র কদিন আগে খোদ ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। এলাকাটিকে সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যেখানে সেখানে মানুষের কাটা হাত পা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। এখন অবস্থা আগের থেকে সামান্য ভালো হলেও নিরাপদ বলা যায় না। দেশজুড়ে একই অবস্থা । একের পর এক হত্যার ঘটনা শুনছি। ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় একজন অটোরিকশা মালিককে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
দেশের সর্বত্র এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তার কম খবরই আমরা জানতে পাই। দ্রব্যমূল্য যত বাড়ছে অপরাধপ্রবণতাও তত বড়ছে। এক শ্রেণির হাতে কোনো টাকা নেই। সম্পদের অসমতা মারাত্মক। তারই প্রতিফলন এসব অপরাধ। যখন তখন যেখানে সেখানে অবরোধ হচ্ছে। রাস্তা চলাচল এখন রীতিমতো বিভীষিকা। কোন রাস্তা যে কখন বন্ধ হয়ে যাবে কেউ জানে না। প্রশাসনে স্থবিরতা আগের মতোই চলছে। বহুবছর ধরে উপেক্ষিত বঞ্চিত কর্মকর্তারা ভেবেছিল, এবার তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পদোন্নতি পাবে, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসবে। কিছু পদোন্নতি হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু অনেক বছর আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ আগের সরকারের চুক্তিতে নিয়োগ নিয়ে অনেক আপত্তি ছিল বৈষম্যবিরোধীদের। তাদের উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে চুক্তি বাতিলের কথা ছিল, ভবিষ্যতে চুক্তি দেয়া হবে না এমন কথাও ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে সম্পূর্ণ বিপরীত। কথার সাথে কাজের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রমের সময়কাল বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেসব কমিশন অনেক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তারা স্বাভাবিকভাবে খুশি। কিন্তু দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন তাতে ঘটছে কিনা সেটা দেখা দরকার। মানুষ অত সংস্কার বোঝে না। তারা চায় সহনশীল দ্রব্যমূল্য, নির্বিঘ্নে চলা ফেরা করতে, জীবনের নিরাপত্তা। সেদিক দিয়ে কোনো সুবাতাস বইছে না। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। এদেশের মানুষ কখনো দুটো টমোটা একটা দুুটো বেগুন কেনেনি, এখন কেনে। তারা মুখে কিছু বলে না। আগের মতোই মুখে তালা পিঠে ছালা। বলার সাহস নেই। অবস্থা বদলায়নি।
আগের সাথে একটা জায়গায় ভীষণ মিল। একই চিত্র। আগের মন্ত্রীরা প্রচুর কথা বলতেন, এরাও বলেন। এদের আবার সমন্বয়করাও আছেন। যারা আগে ছিলেন না। আমরা প্রচুর কথা শুনতে পাই যেকোনো বিষয়ে জেনে না জেনে। অধিক কথা যে শুধু কোনো কাজের নয়, ধ্বংসের কারণ সেটা আগের সরকার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। তারপরও একই ঘটনা। কথার পাল্লা চলছে। শুধু একটা ব্যতিক্রম, প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেন কম।
একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি, নোবেল লরিয়েট যখন কোনো দেশের শীর্ষে থাকেন সে দেশ নিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার পারদ অনেক উঁচুতে থাকে। সে পারদ নিচে নামতে দেয়া ঠিক না। ইতোমধ্যে অনেকটাই নেমে গেছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হলো, অপরাধ জানা গেল না। না, এতটা কখনো ভাবিনি। এরাই দেশ এনেছে। কোথায় লুকাবো মুখ!
লেখক: কথাশিল্পী ও গবেষক
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৪ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৫ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৫ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
৯ দিন আগে