বিটিভির অরগানোগ্রামে ‘মহাব্যবস্থাপক’ পদ নেই

খ ম হারূন
বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন। ফাইল ছবি

বিটিভিতে চলতি বছরের ১২ মার্চ একজন ‘মহাব্যবস্থাপক’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিটিভি অরগানোগ্রামে ‘মহাব্যবস্থাপক’ নামে কোনো পদ নেই। বিটিভি কিন্তু আর দশটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। এখানে কিছু বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বিটিভিতে ‘মহাব্যবস্থাপক’ নামে কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। যেটি ছিলো এবং এখনো আছে সেটি হলো ‘জেনারেল ম্যানেজার’ বা ‘মহাধ্যক্ষ’ নামে একটি পদ। হঠাৎ করে এই সৃজনশীল পদটিকে নিছক ‘মহাব্যবস্থাপক’ পদে রূপান্তরিত কিভাবে করা হলো? এজন্য কি অরগানোগ্রাম সংশোধন করা হয়েছে? যদি তা নাই হয় তাহলে একটি মহাভুল করা হয়েছে।

বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রে কারা ‘জেনারেল ম্যানেজার’ ছিলেন, সেটা বলি- পাকিস্তান আমলে এই ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বা মহাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রদ্ধেয় জামিল চৌধুরী। স্বাধীন বাংলাদেশে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের প্রথম জিএম মুস্তাফা মনোয়ার, তারপর দায়িত্ব নেন যথাক্রমে খালেদা ফাহমী, মোস্তফা কামাল সৈয়দ, মুস্তাফিজুর রহমান, নওয়াজিস আলী খান, মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ, কাজী আবু জাফর সিদ্দিকীসহ অনেকে। যারা বিটিভিতে দীর্ঘ সময় প্রযোজক, নির্বাহী প্রযোজক, অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ পদে কাজ করে এসেছেন তাদের মধ্য থেকে অত্যন্ত সৎ, দক্ষ ও সৃজনশীল ব্যক্তিকে এই পদের জন্য নির্বাচন করা হতো। দুটি মাত্র পদে বিটিভিতে প্রেষণে আসার সুযোগ ছিলো। পদ দুটি হলো পরিচালক (প্রশাসন) ও মহাপরিচালক বা ডাইরেক্টর জেনারেল।

আমি ১৯৮০ সালে বিটিভিতে যখন প্রযোজক পদে যোগদান করি তখন মহাধ্যক্ষ ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ, অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ/নিয়ন্ত্রক ছিলেন আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন, আতিকুল হক চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান। খালেদা ফাহমী ছিলেন পরিচালক (অনুষ্ঠান), পরিচালক (প্রশাসন) পদে প্রেষণে ছিলেন এম এ মান্নান (পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনামন্ত্রী) এবং মহাপরিচালক পদে এম এ সাঈদ (পরবর্তী সময়ে চিফ ইলেকশন কমিশনার)। এই ব্যক্তিদের রয়েছে বিটিভির জন্য বিশাল অবদান। তাদের নাম এখনো আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

বর্তমান সময়ের কথায় আসি। বিটিভির নতুন ‘মহাব্যবস্থাপক’ পদে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা, একজন সুযোগ্য আমলা। তবে অরগানোগ্রামের বাইরে কোনো পদে কাউকে নিয়োগ দেবার সুযোগ কি আছে?

মনে রাখা প্রয়োজন, এই পদটি (জেনারেল ম্যানেজার বা মহাধ্যক্ষ) শুধু একটি প্রশাসনিক পদ নয় একইসাথে সৃজনশীল একটি পদ। শুধু চাকরি করার জন্য বিটিভি উপযুক্ত স্থান নয়। তবে এই প্রতিষ্ঠানকে নতুন রূপ দেয়া, আগের মর্যাদায় ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতি থেকে মুক্ত করা এবং অনুষ্ঠান নির্মাণে বৈচিত্র আনা সম্ভব হলে জিএম পদের গৌরব ফিরে আসবে। অবশ্য এজন্য সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়, মহাপরিচালক, তথ্যসচিব ও মন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

আমার প্রশ্ন এখন কি বিটিভিতে কোনো দক্ষ জনবল নেই? তা না হলে জিএম/মহাধ্যক্ষ, অতিরিক্ত পরিচালক, পরিচালক, উপমহাপরিচালক, মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন প্রায় সকল পদে প্রেষণে বা চুক্তিতে নিয়োগ দেবার প্রয়োজন হলো কেন? পৃথিবীর আর কোনো দেশে একটি পাবলিক টেলিভিশন প্রতিষ্ঠানে কি এই ধরনের দৃষ্টান্ত আছে?

বিটিভির কাছ থেকে এখনো আমরা অনেক কিছু আশা করি। [লেখকের ফেসবুক থেকে]

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৪ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৫ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৫ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

৯ দিন আগে