আফরোজা পারভীন
আচমকা কঠিন বিপদে নিপতিত আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এইতো দিন কয়েক আগে পাকিস্তানে স্লোগান হলো, তুমি কে আমি কে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। ভারতে স্লোগান হলো, ঢাকা টু কলকাতা উই ওয়ান্ট জাস্টিস। পৃথিবীজুড়ে উচ্চারিত হলো বাংলাদেশের নাম।
সেই জের কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধেয়ে এলো ভয়াবহ বন্যা। বুঝে ওঠার আগেই ভাসিয়ে নিয়ে গেল জনপদ গ্রামগঞ্জ।
বন্যা এদেশে নতুন নয়, প্রতিবছরই নব নব রূপে ধেয়ে আসে। নদীবাহিত দেশ আমাদের। অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। তাছাড়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল বন্যা আনে। এ ছাড়া ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে দেয়া বাধ খুলে দিলে একদিকে যেমন হয় বন্যা অন্যদিকে খরা। এ এক বহুকালের অমীমাংসিত বিষয়। আর এই বিষয়ে দর কষাকষিতে বরাবর আমরা বঞ্চিতই হয়েছি।
এবার বন্যার কারণ নানাবিধ। ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলায় গোমতী নদীর ওপরে থাকা ডুম্বর নদীর বাধের গেট খুলে দেয়া। এতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গোটা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত অবশ্য এই কারণটি অস্বীকার করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকা (ক্যাচমেন্ট) এলাকায় কয়েকদিন ধরে এ বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাধের ভাটির দিকের বৃহৎ অববাহিকার পানির কারণে ঘটেছে। তাদের ভাষ্যমতে অতি বৃষ্টি এই বন্যার কারণ। কিন্তু বাধটি তারা সত্যিই খুলে দিয়েছে। খোলার আগে বাংলাদেশকে জানায়নি। বাধ গলিয়ে ঢলের মতো নামছে প্রবল জলস্রোতে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আগাম সতর্কতা না জানিয়ে, আমাদের প্রস্তুতি নেবার সুযোগ না দিয়ে বাধ খুলে দেয়া অমানবিক আচরণ। উজানের পানি বাংলাদেশে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমি আশা করব , দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের জনবিরোধী এ ধরণের নীতি থেকে সরে আসবে।'
তুনি বলেছেন, ভারতের এই নীতি নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে কীভাবে একত্রে এ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায়, সে বিষয় সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে।’ তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করতে। তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
বন্যার কারণে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। গণমাধ্যমে যেসব ছবি আমরা পাচ্ছি সেগুলো হৃদয়বিদারক। গামলায় ভাসছে ছোট শিশু । গামলায় ভাসছে বিড়াল, কুকুর। ছোট্ট একটা শিশু আধগলা পানিতে জীবনের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তার দু’চোখে অসহায়ত্ব। ভেসে যাচ্ছে মানুষ বাড়ি-ঘর, মহিষ, গরু-ছাগল। জীবন বিপন্ন সাপ, ইঁদুর বিড়ালেরও ।
কেউ আছেন গাছের উপর, কেউ আছেন গলা পর্যন্ত ডোবা বাড়ির টিনের চালার উপর। কেউ আছেন দোতলা বাড়ির ছাদে। সে দোতলা পর্যন্তও পানি উঠি উঠি করছে। কেউ গলা পর্যন্ত পানিতে সাঁতরে সামান্য মালামাল রক্ষার চেষ্টা করছেন। খাবার নেই, পানি নেই, পা রাখার জায়গা নেই। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই তারা সামাজিক মাধ্যমে বাঁচার জন্য মেসেজ পাঠাচ্ছেন। মেসেজ পাঠাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা তাদের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা। কারো বৃদ্ধ মা একা আছেন বাড়িতে । এটা তো এখনকার সময়ের বাস্তবতা। তার সন্তান মেসেজ করে উদ্ধারকারীদের সহায়তা চাইছেন। কারো অন্ত:সত্তা স্ত্রী আটকা পড়েছেন বাড়িতে, তিনি আছেন ছাদে। ঢাকায় চাকুরিরত তার স্বামী তার স্ত্রীকে উদ্ধার করার জন্য সহায়তা চাইছেন মেসেজ করে। দু বছরের শিশু বাবার হাত থেকে ছুটে একা হয়ে গেছে।
ঢলের পানি হু হু করে আসছে। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে আরও আরও এলাকা। চলছে সমানে বৃষ্টি। খুলনার উপকূল রক্ষা বাধ ভেঙে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী দল উদ্ধারকার্যে অংশ নিচ্ছেন। আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। পরে আরও অর্থ সাহায্য দেয়া হতে পারে। বিকাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও ৪০ টি উদ্ধারকারী যান ফেনীতে পাঠানো হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধার যান দুর্গত এলাকাগুলোতে কাজ করছে। সেই সাথে বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধারযানও কাজ করছে। কাজে লাগানো হয়েছে নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট। দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য হেলিকপ্টারে ত্রাণসামগ্রি পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি। কিন্তু প্রবল বাতাসে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করতে পারেনি, ফিরে এসেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ছুটি বাতিল করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দুর্গত এলাকায় পানির তীব্র সমস্যা হওয়ায় একটি ওয়াটার প্লান্ট খোলা হয়েছে। সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দুর্গত এলাকায় সার্বক্ষণিক নেট চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ এলাকা বিদুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। টেলিফোন লাইনও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। টাওয়ার মেরামতের কাজ করলেও পানির কারণে দ্রুত কিছুই করা যাচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তাই উদ্ধারকারীদের এক জায়গা থেকে ছুটতে হচ্ছে অন্য জায়গায়। সাজেকে আটকা পড়েছে ২৫০জন পর্যটক। কেউ কেউ আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। পাহাড়ে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয় নেবার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে সমস্ত স্কুল-কলেজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি উঠে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ।
অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ত্রাণ কাজে এগিয়ে এসেছেন । অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বা দলবেধে উদ্ধারকাজে চলে গেছেন। টিএসসিতে দিনব্যাপী পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ চলছে। তা দুর্গত এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ও জলযান – এর মালিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ দুর্যোগ জাতীয় দুর্যোগ। এ দুর্যোগ সবার।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি ভাল হতে থাকবে। বন্যা মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এবারও আমরা মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করি।
তবে ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এই সমস্ত নদীর পানির হিস্যা এবং বাধ নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা হলেও কোনদিন আমরা সুবিচার পাইনি। নতুন সরকার প্রধান বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি এসব বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবেন। তাঁর সাথে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা দেখা করতে গেলে পানিবন্টন ও বন্যার বিষয় যৌথভাবে কাজ করা যায় কিনা এ বিষয়ে নিয়ে আলাপ করেন তিনি।
আমাদের আবহাওয়া দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে আরও সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে। যাতে বন্যা আসার আগেই আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি। ভারতের সাথে অমীমাংসিত বিষয়গুলিরও সুরাহা করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতার ভিত্তিতে পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা করে বিষয়গুলির সমাধান হোক।
লেখক: কথাশিল্পী ও গবেষক
আচমকা কঠিন বিপদে নিপতিত আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এইতো দিন কয়েক আগে পাকিস্তানে স্লোগান হলো, তুমি কে আমি কে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। ভারতে স্লোগান হলো, ঢাকা টু কলকাতা উই ওয়ান্ট জাস্টিস। পৃথিবীজুড়ে উচ্চারিত হলো বাংলাদেশের নাম।
সেই জের কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধেয়ে এলো ভয়াবহ বন্যা। বুঝে ওঠার আগেই ভাসিয়ে নিয়ে গেল জনপদ গ্রামগঞ্জ।
বন্যা এদেশে নতুন নয়, প্রতিবছরই নব নব রূপে ধেয়ে আসে। নদীবাহিত দেশ আমাদের। অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। তাছাড়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল বন্যা আনে। এ ছাড়া ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে দেয়া বাধ খুলে দিলে একদিকে যেমন হয় বন্যা অন্যদিকে খরা। এ এক বহুকালের অমীমাংসিত বিষয়। আর এই বিষয়ে দর কষাকষিতে বরাবর আমরা বঞ্চিতই হয়েছি।
এবার বন্যার কারণ নানাবিধ। ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলায় গোমতী নদীর ওপরে থাকা ডুম্বর নদীর বাধের গেট খুলে দেয়া। এতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গোটা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত অবশ্য এই কারণটি অস্বীকার করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকা (ক্যাচমেন্ট) এলাকায় কয়েকদিন ধরে এ বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাধের ভাটির দিকের বৃহৎ অববাহিকার পানির কারণে ঘটেছে। তাদের ভাষ্যমতে অতি বৃষ্টি এই বন্যার কারণ। কিন্তু বাধটি তারা সত্যিই খুলে দিয়েছে। খোলার আগে বাংলাদেশকে জানায়নি। বাধ গলিয়ে ঢলের মতো নামছে প্রবল জলস্রোতে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আগাম সতর্কতা না জানিয়ে, আমাদের প্রস্তুতি নেবার সুযোগ না দিয়ে বাধ খুলে দেয়া অমানবিক আচরণ। উজানের পানি বাংলাদেশে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমি আশা করব , দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের জনবিরোধী এ ধরণের নীতি থেকে সরে আসবে।'
তুনি বলেছেন, ভারতের এই নীতি নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে কীভাবে একত্রে এ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায়, সে বিষয় সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে।’ তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করতে। তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
বন্যার কারণে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। গণমাধ্যমে যেসব ছবি আমরা পাচ্ছি সেগুলো হৃদয়বিদারক। গামলায় ভাসছে ছোট শিশু । গামলায় ভাসছে বিড়াল, কুকুর। ছোট্ট একটা শিশু আধগলা পানিতে জীবনের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তার দু’চোখে অসহায়ত্ব। ভেসে যাচ্ছে মানুষ বাড়ি-ঘর, মহিষ, গরু-ছাগল। জীবন বিপন্ন সাপ, ইঁদুর বিড়ালেরও ।
কেউ আছেন গাছের উপর, কেউ আছেন গলা পর্যন্ত ডোবা বাড়ির টিনের চালার উপর। কেউ আছেন দোতলা বাড়ির ছাদে। সে দোতলা পর্যন্তও পানি উঠি উঠি করছে। কেউ গলা পর্যন্ত পানিতে সাঁতরে সামান্য মালামাল রক্ষার চেষ্টা করছেন। খাবার নেই, পানি নেই, পা রাখার জায়গা নেই। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই তারা সামাজিক মাধ্যমে বাঁচার জন্য মেসেজ পাঠাচ্ছেন। মেসেজ পাঠাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা তাদের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা। কারো বৃদ্ধ মা একা আছেন বাড়িতে । এটা তো এখনকার সময়ের বাস্তবতা। তার সন্তান মেসেজ করে উদ্ধারকারীদের সহায়তা চাইছেন। কারো অন্ত:সত্তা স্ত্রী আটকা পড়েছেন বাড়িতে, তিনি আছেন ছাদে। ঢাকায় চাকুরিরত তার স্বামী তার স্ত্রীকে উদ্ধার করার জন্য সহায়তা চাইছেন মেসেজ করে। দু বছরের শিশু বাবার হাত থেকে ছুটে একা হয়ে গেছে।
ঢলের পানি হু হু করে আসছে। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে আরও আরও এলাকা। চলছে সমানে বৃষ্টি। খুলনার উপকূল রক্ষা বাধ ভেঙে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী দল উদ্ধারকার্যে অংশ নিচ্ছেন। আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। পরে আরও অর্থ সাহায্য দেয়া হতে পারে। বিকাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও ৪০ টি উদ্ধারকারী যান ফেনীতে পাঠানো হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধার যান দুর্গত এলাকাগুলোতে কাজ করছে। সেই সাথে বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধারযানও কাজ করছে। কাজে লাগানো হয়েছে নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট। দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য হেলিকপ্টারে ত্রাণসামগ্রি পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি। কিন্তু প্রবল বাতাসে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করতে পারেনি, ফিরে এসেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ছুটি বাতিল করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দুর্গত এলাকায় পানির তীব্র সমস্যা হওয়ায় একটি ওয়াটার প্লান্ট খোলা হয়েছে। সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দুর্গত এলাকায় সার্বক্ষণিক নেট চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ এলাকা বিদুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। টেলিফোন লাইনও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। টাওয়ার মেরামতের কাজ করলেও পানির কারণে দ্রুত কিছুই করা যাচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তাই উদ্ধারকারীদের এক জায়গা থেকে ছুটতে হচ্ছে অন্য জায়গায়। সাজেকে আটকা পড়েছে ২৫০জন পর্যটক। কেউ কেউ আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। পাহাড়ে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয় নেবার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে সমস্ত স্কুল-কলেজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি উঠে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ।
অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ত্রাণ কাজে এগিয়ে এসেছেন । অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বা দলবেধে উদ্ধারকাজে চলে গেছেন। টিএসসিতে দিনব্যাপী পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ চলছে। তা দুর্গত এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ও জলযান – এর মালিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ দুর্যোগ জাতীয় দুর্যোগ। এ দুর্যোগ সবার।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি ভাল হতে থাকবে। বন্যা মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এবারও আমরা মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করি।
তবে ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এই সমস্ত নদীর পানির হিস্যা এবং বাধ নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা হলেও কোনদিন আমরা সুবিচার পাইনি। নতুন সরকার প্রধান বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি এসব বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবেন। তাঁর সাথে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা দেখা করতে গেলে পানিবন্টন ও বন্যার বিষয় যৌথভাবে কাজ করা যায় কিনা এ বিষয়ে নিয়ে আলাপ করেন তিনি।
আমাদের আবহাওয়া দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে আরও সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে। যাতে বন্যা আসার আগেই আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি। ভারতের সাথে অমীমাংসিত বিষয়গুলিরও সুরাহা করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতার ভিত্তিতে পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা করে বিষয়গুলির সমাধান হোক।
লেখক: কথাশিল্পী ও গবেষক
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৬ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৬ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৭ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
১১ দিন আগে