ডয়চে ভেলে
জেল-পালানো সাত শতাধিক বন্দিও বাড়াচ্ছে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। পলাতকদের মধ্যে ৮০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, ৭৮ জন জঙ্গি রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন দায়িত্বরত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর সদস্যরা ভল্টে অস্ত্র জমা রেখে গণভবন ছেড়ে যান। পরে অভ্যুত্থানকারীরা গণভবনে ঢুকে পড়লে এক পর্যায়ে ভল্টে রাখা ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র লুট হয়ে যায়।
এর মধ্যে অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬-সহ অত্যাধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সেগুলোসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। বিভিন্ন কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া ৭৮ জঙ্গিসহ ৭ শতাধিক বন্দিও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পলাতক বন্দিদের মধ্যে ৮০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীও আছেন।
লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং জেল-পালানো জঙ্গিদের কারণে নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) আ ন ম মুনীরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন যে উদ্ধার হয়নি, সেটা তো উদ্বেগের৷ এছাড়া গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে এসএসএফের যে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো তো কোনোভাবেই সাধারণ নাগরিকের কাছে, এমনকি পুলিশের কাছে থাকাও উচিত নয়। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাইরে থাকলে যে-কোনো সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যায়৷ আবার সব অস্ত্রই যে দেশে থাকবে এমনও নয়। এগুলো পাচারও হতে পারে।'
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় পুলিশ, বিভিন্ন থানা, কারাগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র এবং ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়৷ এর মধ্যে ১ হাজার ৫৪৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ লাখ ৬২ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে শেষ হওয়া সাধারণ ক্ষমার সময় ৩ হাজার ৭০০ টি অস্ত্র জমা পড়েছিল৷ তবে গত নভেম্বরে যৌথবাহিনীর পক্ষে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে ৬ হাজারের মতো অবৈধভাবে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে৷ অভিযান এখনো চলছে৷ অভিযানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে চারজনের মৃত্যুর খবর প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সেনারা কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলছে৷ তারপরও যদি কোনো অভিযোগ আসে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
লুটের অস্ত্রে তরুণীকে হত্যা, চাঁদাবাজি
গত শনিবার মুন্সীগঞ্জের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তৌহিদ শেখ তন্ময় (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই যুবক পুলিশকে জানায়, বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় তরুণীকে হত্যা করেছে সে। যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়, সেটি গত ৫ আগস্ট ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে ওই অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে লুট করা অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার বিহারী ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময়ও থানা থেকে লুট করা অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব ভারী আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অবৈধ কোনো আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকা ঠিক না৷ এর কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে-কোনো সময় অবনতি হতে পারে। এই মুহূর্তে সরকারের কাজ হবে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে মনোযোগ দেওয়া৷ পাশাপাশি যেসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা পালিয়ে গেছেন, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। এ কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়াতে হবে।’
গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে আছে, অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল গোলাবারুদ৷ এগুলো সবই ভারী আগ্নেয়াস্ত্র বলে পরিচিত।
জেল-পালানো ৭৮ জঙ্গি কোথায়?
জেল থেকে পালানো ৭৮ জন জঙ্গি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারাদেশের ৮টি কারাগারে কয়েদি ও হাজতিরা বিদ্রোহ করে৷ তাদের মধ্যে ৮৮ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও পালিয়ে যায়। পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ জন পুলিশ ও র্যাবের হাতে ধরা পড়ে। বাকি ৮০ জন এখন ফেরারি। জঙ্গি আসামিদের মধ্যে কাশিমপুর কারাগার থেকে শতাধিক জঙ্গি আসামি পালিয়ে যায়। এর মধ্যে এখনো ৭৮ জন অধরা রয়েছেন।
গত ৬ আগস্ট সকালে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে কয়েদিদের মধ্যে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। কয়েদিরা কারা অভ্যন্তরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে মোট ১৯৯ জন পালিয়ে যায়৷ এর মধ্যে ৮৮ জন রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷ এর মধ্যে ২০৩ জন আসামি ছিলেন যারা নরসিংদী কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মসমর্পন করেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যান৷ তবে কাশিমপুর কারাগারে দেশের অন্যান্য কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের এই কারাগারে রাখা হয়৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকল আসামি পালিয়ে যায়৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র্যাবের হাতে ৮ জন আসামি গ্রেপ্তার হন।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেছেন, কারাগারগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিসহ বিচারাধীন মামলার ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তারের পর ফের কারাবন্দি করা হলেও এখনো ৭০০ বন্দি পলাতক রয়েছে৷ ওই সময়ে আটটি কারাগার থেকে অস্ত্র লুট হয়েছিল ৯৪টি৷ এর মধ্যে ৬৫টি উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৬৯টি কারাগারের মধ্যে ১৭টি কারাগার অনেক পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। ৫ আগস্টের আগে বন্দি ছিল ৫৫ হাজার, যদিও পরবর্তীতে সেই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এখন বন্দি সংখ্যা ৬৫ হাজার।
পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পলাতক ৭শ বন্দির তালিকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন শাখায় দেওয়া হয়েছে৷ এর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কাছেও তালিকা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সমস্যা এখানে দু'টি। প্রথমত, অস্ত্র আর দ্বিতীয়ত, জঙ্গি বা সন্ত্রাসী। এখন খোয়া যাওয়া অস্ত্র যদি জঙ্গিদের হাতে যায়, সেটা তো ভয়ঙ্কর ঝুঁকির কারণ৷ শুধু জঙ্গিদের হাতে নয়, যে কোনো অপরাধীর হাতে এসব অস্ত্র গেলে সেটাও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কারণ, কোনো সাধারণ মানুষের হাতে তো আর এসব অস্ত্র থাকার কথা নয়৷ যে এটার ব্যবহার করবে সেই দখলে রেখেছে৷ ফলে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে হবে।’
জামিনে ছাড়া পাওয়া অপরাধীরাও তৎপর
জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে এসে আবারও প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী্ পাশাপাশি পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদেরও বেশ কয়েকজন প্রকাশ্যে এসেছেন। ইতিমধ্যে মগবাজারে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছেন পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরেক পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে৷ অনেকের নামেই ফোন করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অন্তত ৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী্ এদের প্রায় সবাই কমপক্ষে ১৫-২০ বছর ধরে কারাবন্দি ছিলেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাংচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের সবার বিরুদ্ধেই ৭ থেকে ১৫ টি মামলা ছিল। সব কটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর তারা কারাগার থেকে মুক্তি পান। এদের মধ্যে আছেন, পূর্ব রাজাবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ইমন, মিরপুরের আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস, মোহাম্মদুপরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। এদের কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘একজন মানুষ তো সারাজীবন কারাগারে থাকতে পারে না। আদালত যদি জামিন দেয় তাহলে মুক্তিতে সমস্যা কী? জোর করে তো আর তাকে কারাগারে আটকে রাখা যাবে না। তবে হ্যাঁ, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার দিকে নজরদারি অবহ্যত রাখতে হবে। তিনি যদি অপরাধ জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তো ভালো কথা। কিন্তু তিনি যদি আবারও অপরাধ জগতে ফিরে যান তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আবারও তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করবে।’
জেল-পালানো সাত শতাধিক বন্দিও বাড়াচ্ছে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। পলাতকদের মধ্যে ৮০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, ৭৮ জন জঙ্গি রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন দায়িত্বরত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর সদস্যরা ভল্টে অস্ত্র জমা রেখে গণভবন ছেড়ে যান। পরে অভ্যুত্থানকারীরা গণভবনে ঢুকে পড়লে এক পর্যায়ে ভল্টে রাখা ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র লুট হয়ে যায়।
এর মধ্যে অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬-সহ অত্যাধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সেগুলোসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। বিভিন্ন কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া ৭৮ জঙ্গিসহ ৭ শতাধিক বন্দিও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পলাতক বন্দিদের মধ্যে ৮০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীও আছেন।
লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং জেল-পালানো জঙ্গিদের কারণে নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) আ ন ম মুনীরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন যে উদ্ধার হয়নি, সেটা তো উদ্বেগের৷ এছাড়া গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে এসএসএফের যে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো তো কোনোভাবেই সাধারণ নাগরিকের কাছে, এমনকি পুলিশের কাছে থাকাও উচিত নয়। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাইরে থাকলে যে-কোনো সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যায়৷ আবার সব অস্ত্রই যে দেশে থাকবে এমনও নয়। এগুলো পাচারও হতে পারে।'
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় পুলিশ, বিভিন্ন থানা, কারাগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র এবং ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়৷ এর মধ্যে ১ হাজার ৫৪৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ লাখ ৬২ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে শেষ হওয়া সাধারণ ক্ষমার সময় ৩ হাজার ৭০০ টি অস্ত্র জমা পড়েছিল৷ তবে গত নভেম্বরে যৌথবাহিনীর পক্ষে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে ৬ হাজারের মতো অবৈধভাবে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে৷ অভিযান এখনো চলছে৷ অভিযানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে চারজনের মৃত্যুর খবর প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সেনারা কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলছে৷ তারপরও যদি কোনো অভিযোগ আসে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
লুটের অস্ত্রে তরুণীকে হত্যা, চাঁদাবাজি
গত শনিবার মুন্সীগঞ্জের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তৌহিদ শেখ তন্ময় (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই যুবক পুলিশকে জানায়, বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় তরুণীকে হত্যা করেছে সে। যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়, সেটি গত ৫ আগস্ট ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে ওই অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে লুট করা অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার বিহারী ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময়ও থানা থেকে লুট করা অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব ভারী আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অবৈধ কোনো আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকা ঠিক না৷ এর কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে-কোনো সময় অবনতি হতে পারে। এই মুহূর্তে সরকারের কাজ হবে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে মনোযোগ দেওয়া৷ পাশাপাশি যেসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা পালিয়ে গেছেন, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। এ কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়াতে হবে।’
গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে আছে, অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল গোলাবারুদ৷ এগুলো সবই ভারী আগ্নেয়াস্ত্র বলে পরিচিত।
জেল-পালানো ৭৮ জঙ্গি কোথায়?
জেল থেকে পালানো ৭৮ জন জঙ্গি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারাদেশের ৮টি কারাগারে কয়েদি ও হাজতিরা বিদ্রোহ করে৷ তাদের মধ্যে ৮৮ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও পালিয়ে যায়। পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ জন পুলিশ ও র্যাবের হাতে ধরা পড়ে। বাকি ৮০ জন এখন ফেরারি। জঙ্গি আসামিদের মধ্যে কাশিমপুর কারাগার থেকে শতাধিক জঙ্গি আসামি পালিয়ে যায়। এর মধ্যে এখনো ৭৮ জন অধরা রয়েছেন।
গত ৬ আগস্ট সকালে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে কয়েদিদের মধ্যে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। কয়েদিরা কারা অভ্যন্তরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে মোট ১৯৯ জন পালিয়ে যায়৷ এর মধ্যে ৮৮ জন রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷ এর মধ্যে ২০৩ জন আসামি ছিলেন যারা নরসিংদী কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মসমর্পন করেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যান৷ তবে কাশিমপুর কারাগারে দেশের অন্যান্য কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের এই কারাগারে রাখা হয়৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকল আসামি পালিয়ে যায়৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র্যাবের হাতে ৮ জন আসামি গ্রেপ্তার হন।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেছেন, কারাগারগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিসহ বিচারাধীন মামলার ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তারের পর ফের কারাবন্দি করা হলেও এখনো ৭০০ বন্দি পলাতক রয়েছে৷ ওই সময়ে আটটি কারাগার থেকে অস্ত্র লুট হয়েছিল ৯৪টি৷ এর মধ্যে ৬৫টি উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৬৯টি কারাগারের মধ্যে ১৭টি কারাগার অনেক পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। ৫ আগস্টের আগে বন্দি ছিল ৫৫ হাজার, যদিও পরবর্তীতে সেই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এখন বন্দি সংখ্যা ৬৫ হাজার।
পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পলাতক ৭শ বন্দির তালিকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন শাখায় দেওয়া হয়েছে৷ এর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কাছেও তালিকা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সমস্যা এখানে দু'টি। প্রথমত, অস্ত্র আর দ্বিতীয়ত, জঙ্গি বা সন্ত্রাসী। এখন খোয়া যাওয়া অস্ত্র যদি জঙ্গিদের হাতে যায়, সেটা তো ভয়ঙ্কর ঝুঁকির কারণ৷ শুধু জঙ্গিদের হাতে নয়, যে কোনো অপরাধীর হাতে এসব অস্ত্র গেলে সেটাও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কারণ, কোনো সাধারণ মানুষের হাতে তো আর এসব অস্ত্র থাকার কথা নয়৷ যে এটার ব্যবহার করবে সেই দখলে রেখেছে৷ ফলে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে হবে।’
জামিনে ছাড়া পাওয়া অপরাধীরাও তৎপর
জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে এসে আবারও প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী্ পাশাপাশি পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদেরও বেশ কয়েকজন প্রকাশ্যে এসেছেন। ইতিমধ্যে মগবাজারে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছেন পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরেক পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে৷ অনেকের নামেই ফোন করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অন্তত ৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী্ এদের প্রায় সবাই কমপক্ষে ১৫-২০ বছর ধরে কারাবন্দি ছিলেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাংচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের সবার বিরুদ্ধেই ৭ থেকে ১৫ টি মামলা ছিল। সব কটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর তারা কারাগার থেকে মুক্তি পান। এদের মধ্যে আছেন, পূর্ব রাজাবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ইমন, মিরপুরের আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস, মোহাম্মদুপরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। এদের কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘একজন মানুষ তো সারাজীবন কারাগারে থাকতে পারে না। আদালত যদি জামিন দেয় তাহলে মুক্তিতে সমস্যা কী? জোর করে তো আর তাকে কারাগারে আটকে রাখা যাবে না। তবে হ্যাঁ, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার দিকে নজরদারি অবহ্যত রাখতে হবে। তিনি যদি অপরাধ জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তো ভালো কথা। কিন্তু তিনি যদি আবারও অপরাধ জগতে ফিরে যান তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আবারও তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করবে।’
ঐকমত্য কমিশনে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার অনেকগুলোতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বা ঘোরতর দ্বিমত জানিয়েছে। এসব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ঘোরতম দ্বিমতকে কোনোভাবে ঐকমত্য হিসেবে ধরা যাবে না।
৭ দিন আগেক্ষুধা ধীরে হত্যা করে, ভেজাল নীরবে হত্যা করে। খাদ্যে ভেজাল কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, প্রতি বছর ৬০ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে চার লাখ ২০ হাজার মানুষ মারাও যায়।
৮ দিন আগেএ জাতির মুক্তির মন্দিরের সোপানতলে কে হবেন কান্ডারী? আমরা কি সেই ইতিহাসের ভারবাহী নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছি? না পারার দায় কার? লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক
৯ দিন আগেগত আট দশক ধরে জাতিসংঘ ধারাবাহিকভাবে তার কর্মপরিধি সম্প্রসারিত করেছে এবং নানা ক্ষেত্রে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে । বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার, বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা ও সমতা প্রসারে জাতিসংঘ অনস্বীকার্য ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের কারণেই আজ বিশ্বের ১২০ টি দে
১৫ দিন আগে