বিবিসি
হঠাৎ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা ‘চিকিৎসার দাবিতে’ আন্দোলনে নামায় এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বুধবার ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা দুপুর একটা থেকে রাত প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সড়কে অবস্থান করেছিলেন।
ওই রোগীদের কারও কারও পা ছিল না, কেউ কেউ তাদের চোখ হারিয়েছেন। অনেকের ক্ষত এখনও শুকায়নি। তারপরও তারা ‘সুচিকিৎসা’র দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও দিয়েছেন।
জুলাই-অগাস্ট মাসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এর আগেও কথাবার্তা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ করা হয়েছে।
সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো যে আন্দোলনে আহত সবাইকে সুচিকিৎসা দেওয়া হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানে আহত ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বড় অভিযোগই হলো— চিকিৎসা হচ্ছে না। কেন এমন অভিযোগ উঠছে? আহতের মাঝে ক্ষোভের জায়গাগুলো আসলে কী কী?
আহতদের অভিযোগ ও বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সংকট
আহতদের প্রধান অভিযোগ, তারা তিন মাস ধরে হাসপাতালে থাকলেও সরকার তাদের খোঁজ নেয়নি। সেইসাথে, আর্থিক সহায়তা হিসাবে যে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তাও তারা পাননি। হাসপাতালে ভর্তি থাকলে চিকিৎসা খরচ বাদে আনুষঙ্গিক আরও অনেক খরচ করতে হয় রোগীর পরিবারকে। অনেকেই বলেছেন, তাদের পরিবার সেই খরচের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কেন বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তরও খোঁজ করেছেন তারা। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের তিন মাস হয়ে গেল। তারপরও আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত, আহতদের মাঝে এত ক্ষোভ বা অভিযোগ কেন?
বিবিসি বাংলা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’– এর সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছে।
“ওনারা-আমরা আলাদা পক্ষ না। দুইটা এক পক্ষ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– ওনাদের সুচিকিৎসার জন্য, বাইরে পাঠানোর জন্য যে ফান্ড প্রয়োজন; তার অভাব হবে না,” বলছিলেন সারজিস আলম।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? “সমস্যাটা হলো প্রসেসিং-এর জায়গাতে,” বলেন সারজিস আলম। তার মতে, তথ্য হালনাগাদসংক্রান্ত কিছু জটিলতা ছিল এতদিন। কিন্তু “এখন সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে সেল গঠন করা হয়েছে; যারা সবকিছু দেখবে…অনেকের তথ্য এমআইএসে নাই। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা প্রাথমিক লিস্ট এমআইএসে আছে। পরে নতুন তথ্য দেওয়া হয় নাই।”
বিশেষ করে, যেসব আহত পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মি. আলম জানান, আহতদের অনেকে ফাউন্ডেশনের ফর্ম পূরণ করেছেন। কিন্তু তাদের তথ্য আইএমএস-এ না থাকার কারণে সেগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সমন্বয়ক ও প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। বুধবারের বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “ফান্ড পায়নি, গতকাল এমন সংখ্যা ছিল ২০-৩০ জন।”
জুলাই অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিলো কোটা সংস্কারের দাবি ঘিরে
কারণ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), সাভার সিআরপি হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে “চেক বা সরাসরি ফান্ড” দেওয়া হয়েছে।
শুরুর দিকে কিছু আহতদেরকে ৫০ হাজার এবং কিছু এক লক্ষ করে টাকা দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া, নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে বেশিও দেওয়া হয়েছে। “কিন্তু আমি জিএস হওয়ার পর আহতদেরকে ১ লাখ করে টাকা দিতে বলেছি,” বলছিলেন মি. আলম।
সারজিস আলম জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে ২৪ হাজারের মতো আহত আছেন। তবে গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকের তথ্য এখানে যোগ হয়নি। সেক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে গত দুই সপ্তাহে দুই শতাধিক নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহতদের মাঝে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।। তবে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত কতজনকে দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।
সরকারি-বেসরকারিভাবে এর আগে অনেককে আর্থিক সহায়তা করা হলেও “কাগজে কলমে সবমিলিয়ে কতজনকে দেওয়া হয়েছে, সেটি বোঝার জন্যই কোলাবোরেশন টিম দরকার। এটির জন্যই একটি কমন প্ল্যাটফর্ম লাগবে। আহতদের ভেরিফিকেশন হলে অ্যাকশনে যাবে ফাউন্ডেশন,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. আলম।
তবে যেসব আন্দোলনকারী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথা বলছেন, তাদের বিষয়ে সার্জিস আলমের বক্তব্য, “কিছু ডাক্তার বলেছে, প্রয়োজন নাই তবুও অনেকে বাইরে যেতে চায়। উনারা কেন যেন ভাবছে যে চিকিৎসার ঘাটতি হচ্ছে, তাই বাইরে যাবে। তবে প্রয়োজন অনুসারে বিদেশ পাঠানো হবে।”
“আহতদের জন্য বাজেট লিমিটেড না। এটা (এক লক্ষ টাকা) প্রাথমিকভাবে দেওয়া হচ্ছে, ধাপে ধাপে আরও দেওয়া হবে। আমরা তাদের জন্য মাসিক সম্মানী, পুনর্বাসন, উন্নত চিকিৎসার কথাও ভাবছি।”
বুধবার যা ঘটেছিল
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
কিন্তু তিনি হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ভর্তি রোগীদের সাথে দেখা করে নিচে নেমে যাওয়ায় তৃতীয় তলার আহত রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং নিচে নেমে বিক্ষোভ করেন।
তাদের অভিযোগ, উপদেষ্টা সব আহদের বিষয়ে খোঁজ নেননি, সবার সাথে দেখা করেননি। এক পর্যায়ে তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি আটক করে এবং গাড়িতে কিল-ঘুসি মারে। একজন গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে যান। কেউ কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো দেখে সারাহ কুক অন্য একটি গাড়িতে করে স্থান ত্যাগ করেন। তবে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। পরে হাসপাতালের কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ওখান থেকে বের হতে সহায়তা করে।
কিন্তু তিনি চলে এলেও আহত ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালে ফিরে যাননি। সড়কে অবস্থান নেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং মাঝ রাত পর্যন্ত সেই বিক্ষোভ চলে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাত আড়াইটায় সেখানে যান সরকারের চার উপদেষ্টা— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আশ্বস্ত হননি।
চার উপদেষ্টা গিয়ে বিক্ষোভকারীদেরকে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে হাসপাতালে ফিরে যান তারা। আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন উপদেষ্টারা।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মি. আলমও বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “নভেম্বরের মাঝে ভেরিফিকেশন হবে এবং ডিসেম্বরের মাঝে সবার কাছে ফান্ড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ওপর ক্ষোভ কেন?
বিক্ষোভকারীরা সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার দাবির কথা জানিয়েছিলেন। সেইসাথে, তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগও চেয়েছেন। শুধু তারা নয়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজেও সন্তুষ্ট নন অনেক পক্ষই।
সারজিস আলম বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আমরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) পুরোপুরি সন্তুষ্ট, তা না। কিন্তু এটাও বলতে পারবো না যে তিনি কোনও কাজ করছেন না।” “তবে এটা সত্যি যে যতটা দ্রুত হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না,” তিনি যোগ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এতদিন হয়ে গেছে, তারা কেন ওখানে পড়ে থাকবে? কেন তাদের চিকিৎসা হবে না? যেখানে সরকার পুরো খরচ বহনের কথা বলেছে। বহুদিন পরে তাদের এই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়েছে।”
“একশো দিন পরেও যদি আন্দোলন করতে হয়, তাহলে তা দুঃখজনক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন তাদের (আহতদের) দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু তারা (আহতরা সাহায্য) পায়নি, তাহলে বিক্ষোভ করা খুবই স্বাভাবিক,” বলেন মি. হোসেন। “স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে তারা দায়ী করতেই পারে। এর মাঝে কোনও ভুল দেখছি না আমি,” যোগ করেন তিনি।
সমাধান হিসাবে তিনি বলেন, “যিনি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, এমন একজনকে বসাতে হবে পঙ্গু হাসপাতালে। নইলে আপনি যতই ফাউন্ডেশন করেন, তাতে কাজ হবে না।”
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
হঠাৎ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা ‘চিকিৎসার দাবিতে’ আন্দোলনে নামায় এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বুধবার ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা দুপুর একটা থেকে রাত প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সড়কে অবস্থান করেছিলেন।
ওই রোগীদের কারও কারও পা ছিল না, কেউ কেউ তাদের চোখ হারিয়েছেন। অনেকের ক্ষত এখনও শুকায়নি। তারপরও তারা ‘সুচিকিৎসা’র দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও দিয়েছেন।
জুলাই-অগাস্ট মাসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এর আগেও কথাবার্তা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ করা হয়েছে।
সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো যে আন্দোলনে আহত সবাইকে সুচিকিৎসা দেওয়া হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানে আহত ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বড় অভিযোগই হলো— চিকিৎসা হচ্ছে না। কেন এমন অভিযোগ উঠছে? আহতের মাঝে ক্ষোভের জায়গাগুলো আসলে কী কী?
আহতদের অভিযোগ ও বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সংকট
আহতদের প্রধান অভিযোগ, তারা তিন মাস ধরে হাসপাতালে থাকলেও সরকার তাদের খোঁজ নেয়নি। সেইসাথে, আর্থিক সহায়তা হিসাবে যে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তাও তারা পাননি। হাসপাতালে ভর্তি থাকলে চিকিৎসা খরচ বাদে আনুষঙ্গিক আরও অনেক খরচ করতে হয় রোগীর পরিবারকে। অনেকেই বলেছেন, তাদের পরিবার সেই খরচের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কেন বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তরও খোঁজ করেছেন তারা। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের তিন মাস হয়ে গেল। তারপরও আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত, আহতদের মাঝে এত ক্ষোভ বা অভিযোগ কেন?
বিবিসি বাংলা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’– এর সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছে।
“ওনারা-আমরা আলাদা পক্ষ না। দুইটা এক পক্ষ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– ওনাদের সুচিকিৎসার জন্য, বাইরে পাঠানোর জন্য যে ফান্ড প্রয়োজন; তার অভাব হবে না,” বলছিলেন সারজিস আলম।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? “সমস্যাটা হলো প্রসেসিং-এর জায়গাতে,” বলেন সারজিস আলম। তার মতে, তথ্য হালনাগাদসংক্রান্ত কিছু জটিলতা ছিল এতদিন। কিন্তু “এখন সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে সেল গঠন করা হয়েছে; যারা সবকিছু দেখবে…অনেকের তথ্য এমআইএসে নাই। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা প্রাথমিক লিস্ট এমআইএসে আছে। পরে নতুন তথ্য দেওয়া হয় নাই।”
বিশেষ করে, যেসব আহত পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মি. আলম জানান, আহতদের অনেকে ফাউন্ডেশনের ফর্ম পূরণ করেছেন। কিন্তু তাদের তথ্য আইএমএস-এ না থাকার কারণে সেগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সমন্বয়ক ও প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। বুধবারের বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “ফান্ড পায়নি, গতকাল এমন সংখ্যা ছিল ২০-৩০ জন।”
জুলাই অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিলো কোটা সংস্কারের দাবি ঘিরে
কারণ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), সাভার সিআরপি হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে “চেক বা সরাসরি ফান্ড” দেওয়া হয়েছে।
শুরুর দিকে কিছু আহতদেরকে ৫০ হাজার এবং কিছু এক লক্ষ করে টাকা দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া, নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে বেশিও দেওয়া হয়েছে। “কিন্তু আমি জিএস হওয়ার পর আহতদেরকে ১ লাখ করে টাকা দিতে বলেছি,” বলছিলেন মি. আলম।
সারজিস আলম জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে ২৪ হাজারের মতো আহত আছেন। তবে গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকের তথ্য এখানে যোগ হয়নি। সেক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে গত দুই সপ্তাহে দুই শতাধিক নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহতদের মাঝে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।। তবে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত কতজনকে দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।
সরকারি-বেসরকারিভাবে এর আগে অনেককে আর্থিক সহায়তা করা হলেও “কাগজে কলমে সবমিলিয়ে কতজনকে দেওয়া হয়েছে, সেটি বোঝার জন্যই কোলাবোরেশন টিম দরকার। এটির জন্যই একটি কমন প্ল্যাটফর্ম লাগবে। আহতদের ভেরিফিকেশন হলে অ্যাকশনে যাবে ফাউন্ডেশন,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. আলম।
তবে যেসব আন্দোলনকারী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথা বলছেন, তাদের বিষয়ে সার্জিস আলমের বক্তব্য, “কিছু ডাক্তার বলেছে, প্রয়োজন নাই তবুও অনেকে বাইরে যেতে চায়। উনারা কেন যেন ভাবছে যে চিকিৎসার ঘাটতি হচ্ছে, তাই বাইরে যাবে। তবে প্রয়োজন অনুসারে বিদেশ পাঠানো হবে।”
“আহতদের জন্য বাজেট লিমিটেড না। এটা (এক লক্ষ টাকা) প্রাথমিকভাবে দেওয়া হচ্ছে, ধাপে ধাপে আরও দেওয়া হবে। আমরা তাদের জন্য মাসিক সম্মানী, পুনর্বাসন, উন্নত চিকিৎসার কথাও ভাবছি।”
বুধবার যা ঘটেছিল
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
কিন্তু তিনি হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ভর্তি রোগীদের সাথে দেখা করে নিচে নেমে যাওয়ায় তৃতীয় তলার আহত রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং নিচে নেমে বিক্ষোভ করেন।
তাদের অভিযোগ, উপদেষ্টা সব আহদের বিষয়ে খোঁজ নেননি, সবার সাথে দেখা করেননি। এক পর্যায়ে তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি আটক করে এবং গাড়িতে কিল-ঘুসি মারে। একজন গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে যান। কেউ কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো দেখে সারাহ কুক অন্য একটি গাড়িতে করে স্থান ত্যাগ করেন। তবে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। পরে হাসপাতালের কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ওখান থেকে বের হতে সহায়তা করে।
কিন্তু তিনি চলে এলেও আহত ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালে ফিরে যাননি। সড়কে অবস্থান নেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং মাঝ রাত পর্যন্ত সেই বিক্ষোভ চলে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাত আড়াইটায় সেখানে যান সরকারের চার উপদেষ্টা— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আশ্বস্ত হননি।
চার উপদেষ্টা গিয়ে বিক্ষোভকারীদেরকে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে হাসপাতালে ফিরে যান তারা। আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন উপদেষ্টারা।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মি. আলমও বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “নভেম্বরের মাঝে ভেরিফিকেশন হবে এবং ডিসেম্বরের মাঝে সবার কাছে ফান্ড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ওপর ক্ষোভ কেন?
বিক্ষোভকারীরা সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার দাবির কথা জানিয়েছিলেন। সেইসাথে, তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগও চেয়েছেন। শুধু তারা নয়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজেও সন্তুষ্ট নন অনেক পক্ষই।
সারজিস আলম বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আমরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) পুরোপুরি সন্তুষ্ট, তা না। কিন্তু এটাও বলতে পারবো না যে তিনি কোনও কাজ করছেন না।” “তবে এটা সত্যি যে যতটা দ্রুত হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না,” তিনি যোগ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এতদিন হয়ে গেছে, তারা কেন ওখানে পড়ে থাকবে? কেন তাদের চিকিৎসা হবে না? যেখানে সরকার পুরো খরচ বহনের কথা বলেছে। বহুদিন পরে তাদের এই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়েছে।”
“একশো দিন পরেও যদি আন্দোলন করতে হয়, তাহলে তা দুঃখজনক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন তাদের (আহতদের) দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু তারা (আহতরা সাহায্য) পায়নি, তাহলে বিক্ষোভ করা খুবই স্বাভাবিক,” বলেন মি. হোসেন। “স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে তারা দায়ী করতেই পারে। এর মাঝে কোনও ভুল দেখছি না আমি,” যোগ করেন তিনি।
সমাধান হিসাবে তিনি বলেন, “যিনি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, এমন একজনকে বসাতে হবে পঙ্গু হাসপাতালে। নইলে আপনি যতই ফাউন্ডেশন করেন, তাতে কাজ হবে না।”
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৫ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৬ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৬ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
১০ দিন আগে