ডয়চে ভেলে
সচিবালয়ে আগুন লাগার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত সমালোচনা ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব মনে করেন, ‘‘অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করায় সাংবাদিকতা আরো সংহত হবে।’’ এদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সোমবার থেকে সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য দৈনিক পাস দেয়া শুরু হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ের সাত নাম্বার ভবনে আগুন লাগে। তার দুদিন পর ২৭ ডিসেম্বর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সাংবাদিকসহ বেসরকারি পর্যায়ে যাদের সচিবালয়ে প্রবেশের পাস ও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড আছে, সব বাতিল করা হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে সোববার থেকে সাংবাদিকদের সচিবালয়ে পেশাগত কাজের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা কবে আবার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ফিরে পাবেন তা জানানো হয়নি।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পরই সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। রবিবার এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলে, এই ধরনের আদেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি ও অন্তরায়৷ সম্পাদক পরিষদ মনে করে, ‘সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিলের অনাকাঙ্খিত পদক্ষেপটি অযৌক্তিক৷ এছাড়া সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে অধ্যাদেশ গ্রহণ করা হতাশাজনক এবং কর্তৃত্ববাদী মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ।’
সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামসহ আরো অনেক সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়ে এটাকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি’ বলে অভিহিত করে৷ এবার একযোগে করা হলেও ৫ আগস্টের পর তিন দফায় মোট ১৬৭ জন সাংবাদিক ও সম্পাদকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছিল।
সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে ২৮ ডিসেম্বর দুঃখ প্রকাশ করে বার্তা দেয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সেই বার্তায় দাবি করা হয়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্য সব বেসরকারি পাসের পাশাপাশি বর্তমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশও ‘সীমিত’ করা হয়েছে। সরকার শিগগিরই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে বলেও জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
একই দিনে (রবিবার) তথ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে, শিগগিরই নতুন করে স্থায়ী, অস্থায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড, পাস ইস্যু করা হবে৷ সেই ঘোষণার পর সোমবার সাংবাদিকদের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে পাস ইস্যু শুরু করা হয়৷
‘আসলে এমন কিছু আছে যা দেশের মানুষ জানুক তারা তা চান না’
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘যদি নিরাপত্তার কারণে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ কার্ড বাতিল করা হয় তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, তারা সাংবাদিকদের ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে। সাংবাদিকরা নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর? তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করার কী কারণ থাকতে পারে?’
তার কথা, ‘তারা যা বলছেন এগুলো অজুহাত৷ আসলে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় এমন কিছু আছে যা দেশের মানুষ জানুক তারা তা চান না। সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে সেই ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে- এই কারণে তারা সাংবাদিকদের সচিবালয়ে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দেন। পৃথিবীর কোথাও এমন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় যে সাত নম্বর ভবন পুড়েছে সেই ভবনে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ আরো কিছু দপ্তর৷ আগুনের ঘটনায় ছয়, সাত, আট ও নবম তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির সোমবার প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। কমিটি আরো একদিন সময় বাড়িয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো দল কাজ করছে একসঙ্গে। সেনাবাহিনীর টিম কাজ করছে, বুয়েটের টিম কাজ করছে, পিডাব্লিউডির লোকেরা কাজ করছে, পুলিশ ও আইসিটি লোকেরাও কাজ করছে৷ আমরা সবাই টিম হয়ে কাজ করছি। তাদের থেকে আলামত সংগ্রহ করে সেগুলো আলোচনা করে একটা কনক্লুশনে আসার চেষ্টা করছি যে, প্রাথমিকভাবে কী বলা যায়৷ সে কারণে আরো একদিন সময় নিয়েছি।’
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে তার মধ্যে আলোচনায় আছে ভিতরে একটি কুকুরের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর বিষয়টি। কুকুরটি সেখানে গেল কীভাবে? সাদা পাউডারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে৷ সেই সাদা পাউডার কি দাহ্য রাসায়নিক? ওই ভবনের তিন জায়গায় একই সঙ্গে একই সময়ে কীভাবে আগুন লাগে? কেউ কেউ আগুনের সময় সেখানে রহিরাগতদের উপস্থিতির কথা বলছেন৷ তারা কারা? গাড়ি চাপায় ফায়ার সর্ভিসের কর্মীর মুত্যু নিয়েও প্রশ্ন আছে। এছাড়া সচিবালয়ের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিয়েও খুব বড় প্রশ্ন উঠেছে।
সাংবাদিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে অস্থায়ী তালিকা ধরে সোমবার দুপুর দুইটার পর কিছু সাংবাদিককে পেশাগত কাজে সচিবালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত মফিউর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের তালিকা ধরে প্রবেশ করতে দেয়া হলেও আগুন লাগা ভবনটিতে আমাদের যেতে দেয়া হয়নি। আমরা সেখানে প্রবেশ করে প্রতিবেদন করতে চাইলেও আবারো তদন্ত এবং নিরাপত্তার কথা বলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভবনের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘একদিন আগেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে নাম চাওয়া হয়েছে। সেইভাবে নাম ধরে ডেকে ডেকে সোমবার আমাদের সচিবালয়ে ঢুকানো হয়েছে। তবে যেসব সাংবাদিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ের বাইরে আরো সংবাদের খোঁজে সচিবালয়ে যান, তারা যেতে পারেননি।’
সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)-এর সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব বলেন, ‘আমার পেশাগত জীবনে কোনো ঘটনায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে বা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে- এরকম ঘটনা আর কখনো দেখিনি। স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এটা অন্তরায় বলে শুরুতেই আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। আর সাংবাদিকদের কার্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তথ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে কার্ড বাতিল করে সেই প্রশ্নও আমরা তুলেছি।’
‘তবে আজ (৩০ ডিসেম্বর) আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজেই প্রেসক্লাবে এসেছিলেন। সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও ছিলেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, খুব দ্রুতই সাংবাদিকদের নতুন করে তথ্য অধিদপ্তর আবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেবে৷ তবে কবে থেকে দেয়া শুরু হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তার আগ পর্যন্ত সাংবাদিকরা দৈনিক পাস নিয়ে সচিবালয়ে পেশাগত কাজে যেতে পারবেন।’
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে তারা যে প্রবেশে বাধা দিলো, তা মোটেই সমীচিন হয়নি। কোনো তথ্য গোপন করা বা লুকানোর উদ্দেশ্যে এটা করা হয়ে থাকতে পারে।’
‘এর মাধ্যমে বরং স্বাধীন সাংবাদিকতা আরো সংহত হবে’
তবে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) থেকে সচিবালয়ে প্রবেশে সাংবাদিকদের যে পাস দেয়া হচ্ছে তা ১৫ দিনের জন্য৷ এই সময়ের মধ্যে আমরা সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া তৈরি করবো। তারপর দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সাংবাদিক ফোরামের নেতাদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছি। তাদের কাছ থেকে কীভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সাংবাদিকদের দেয়া যায় তার প্রস্তাব আহ্বান করেছি। তারা প্রস্তাব দেবেন। সেই প্রস্তাব আমরা বিবেচনা করে দেখব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য কোনো হুমকি নয়৷ সচিবালয়ে একটা আগুনের ঘটনা ঘটেছে৷ ওটা একটা ক্রাইম সিন৷ সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপত্তার জন্যই বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বরং স্বাধীন সাংবাদিকতা আরো সংহত হবে।’
তবে সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, ‘কোনো কিছু গোপন করার জন্য সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে, তা আমার মনে হয় না৷ তবে নিরাপত্তার নামে আমরা অনেক সময় দেখি প্রশাসনের বাড়াবাড়ি৷ সেটি হয়েছে।’
‘কিন্তু এর ফলে প্রশ্ন যেটা উঠবে সেটা হলো, কেউ কিছু ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে কিনা। তারা যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করল- এটা মোটেই ঠিক হয়নি। এটায় কাজের চেয়ে অকাজ বেশি হবে। পুরোপুরি রং মেসেজ যাবে।’
সচিবালয়ে আগুন লাগার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত সমালোচনা ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব মনে করেন, ‘‘অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করায় সাংবাদিকতা আরো সংহত হবে।’’ এদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সোমবার থেকে সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য দৈনিক পাস দেয়া শুরু হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ের সাত নাম্বার ভবনে আগুন লাগে। তার দুদিন পর ২৭ ডিসেম্বর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সাংবাদিকসহ বেসরকারি পর্যায়ে যাদের সচিবালয়ে প্রবেশের পাস ও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড আছে, সব বাতিল করা হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে সোববার থেকে সাংবাদিকদের সচিবালয়ে পেশাগত কাজের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা কবে আবার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ফিরে পাবেন তা জানানো হয়নি।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পরই সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। রবিবার এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলে, এই ধরনের আদেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি ও অন্তরায়৷ সম্পাদক পরিষদ মনে করে, ‘সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিলের অনাকাঙ্খিত পদক্ষেপটি অযৌক্তিক৷ এছাড়া সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে অধ্যাদেশ গ্রহণ করা হতাশাজনক এবং কর্তৃত্ববাদী মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ।’
সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামসহ আরো অনেক সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়ে এটাকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি’ বলে অভিহিত করে৷ এবার একযোগে করা হলেও ৫ আগস্টের পর তিন দফায় মোট ১৬৭ জন সাংবাদিক ও সম্পাদকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছিল।
সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে ২৮ ডিসেম্বর দুঃখ প্রকাশ করে বার্তা দেয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সেই বার্তায় দাবি করা হয়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্য সব বেসরকারি পাসের পাশাপাশি বর্তমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশও ‘সীমিত’ করা হয়েছে। সরকার শিগগিরই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে বলেও জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
একই দিনে (রবিবার) তথ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে, শিগগিরই নতুন করে স্থায়ী, অস্থায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড, পাস ইস্যু করা হবে৷ সেই ঘোষণার পর সোমবার সাংবাদিকদের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে পাস ইস্যু শুরু করা হয়৷
‘আসলে এমন কিছু আছে যা দেশের মানুষ জানুক তারা তা চান না’
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘যদি নিরাপত্তার কারণে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ কার্ড বাতিল করা হয় তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, তারা সাংবাদিকদের ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে। সাংবাদিকরা নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর? তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করার কী কারণ থাকতে পারে?’
তার কথা, ‘তারা যা বলছেন এগুলো অজুহাত৷ আসলে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় এমন কিছু আছে যা দেশের মানুষ জানুক তারা তা চান না। সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে সেই ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে- এই কারণে তারা সাংবাদিকদের সচিবালয়ে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দেন। পৃথিবীর কোথাও এমন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় যে সাত নম্বর ভবন পুড়েছে সেই ভবনে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ আরো কিছু দপ্তর৷ আগুনের ঘটনায় ছয়, সাত, আট ও নবম তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির সোমবার প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। কমিটি আরো একদিন সময় বাড়িয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো দল কাজ করছে একসঙ্গে। সেনাবাহিনীর টিম কাজ করছে, বুয়েটের টিম কাজ করছে, পিডাব্লিউডির লোকেরা কাজ করছে, পুলিশ ও আইসিটি লোকেরাও কাজ করছে৷ আমরা সবাই টিম হয়ে কাজ করছি। তাদের থেকে আলামত সংগ্রহ করে সেগুলো আলোচনা করে একটা কনক্লুশনে আসার চেষ্টা করছি যে, প্রাথমিকভাবে কী বলা যায়৷ সে কারণে আরো একদিন সময় নিয়েছি।’
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে তার মধ্যে আলোচনায় আছে ভিতরে একটি কুকুরের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর বিষয়টি। কুকুরটি সেখানে গেল কীভাবে? সাদা পাউডারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে৷ সেই সাদা পাউডার কি দাহ্য রাসায়নিক? ওই ভবনের তিন জায়গায় একই সঙ্গে একই সময়ে কীভাবে আগুন লাগে? কেউ কেউ আগুনের সময় সেখানে রহিরাগতদের উপস্থিতির কথা বলছেন৷ তারা কারা? গাড়ি চাপায় ফায়ার সর্ভিসের কর্মীর মুত্যু নিয়েও প্রশ্ন আছে। এছাড়া সচিবালয়ের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিয়েও খুব বড় প্রশ্ন উঠেছে।
সাংবাদিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে অস্থায়ী তালিকা ধরে সোমবার দুপুর দুইটার পর কিছু সাংবাদিককে পেশাগত কাজে সচিবালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত মফিউর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের তালিকা ধরে প্রবেশ করতে দেয়া হলেও আগুন লাগা ভবনটিতে আমাদের যেতে দেয়া হয়নি। আমরা সেখানে প্রবেশ করে প্রতিবেদন করতে চাইলেও আবারো তদন্ত এবং নিরাপত্তার কথা বলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভবনের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘একদিন আগেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে নাম চাওয়া হয়েছে। সেইভাবে নাম ধরে ডেকে ডেকে সোমবার আমাদের সচিবালয়ে ঢুকানো হয়েছে। তবে যেসব সাংবাদিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ের বাইরে আরো সংবাদের খোঁজে সচিবালয়ে যান, তারা যেতে পারেননি।’
সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)-এর সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব বলেন, ‘আমার পেশাগত জীবনে কোনো ঘটনায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে বা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে- এরকম ঘটনা আর কখনো দেখিনি। স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এটা অন্তরায় বলে শুরুতেই আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। আর সাংবাদিকদের কার্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তথ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে কার্ড বাতিল করে সেই প্রশ্নও আমরা তুলেছি।’
‘তবে আজ (৩০ ডিসেম্বর) আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজেই প্রেসক্লাবে এসেছিলেন। সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও ছিলেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, খুব দ্রুতই সাংবাদিকদের নতুন করে তথ্য অধিদপ্তর আবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেবে৷ তবে কবে থেকে দেয়া শুরু হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তার আগ পর্যন্ত সাংবাদিকরা দৈনিক পাস নিয়ে সচিবালয়ে পেশাগত কাজে যেতে পারবেন।’
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে তারা যে প্রবেশে বাধা দিলো, তা মোটেই সমীচিন হয়নি। কোনো তথ্য গোপন করা বা লুকানোর উদ্দেশ্যে এটা করা হয়ে থাকতে পারে।’
‘এর মাধ্যমে বরং স্বাধীন সাংবাদিকতা আরো সংহত হবে’
তবে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) থেকে সচিবালয়ে প্রবেশে সাংবাদিকদের যে পাস দেয়া হচ্ছে তা ১৫ দিনের জন্য৷ এই সময়ের মধ্যে আমরা সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া তৈরি করবো। তারপর দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সাংবাদিক ফোরামের নেতাদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছি। তাদের কাছ থেকে কীভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সাংবাদিকদের দেয়া যায় তার প্রস্তাব আহ্বান করেছি। তারা প্রস্তাব দেবেন। সেই প্রস্তাব আমরা বিবেচনা করে দেখব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য কোনো হুমকি নয়৷ সচিবালয়ে একটা আগুনের ঘটনা ঘটেছে৷ ওটা একটা ক্রাইম সিন৷ সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপত্তার জন্যই বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বরং স্বাধীন সাংবাদিকতা আরো সংহত হবে।’
তবে সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, ‘কোনো কিছু গোপন করার জন্য সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে, তা আমার মনে হয় না৷ তবে নিরাপত্তার নামে আমরা অনেক সময় দেখি প্রশাসনের বাড়াবাড়ি৷ সেটি হয়েছে।’
‘কিন্তু এর ফলে প্রশ্ন যেটা উঠবে সেটা হলো, কেউ কিছু ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে কিনা। তারা যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করল- এটা মোটেই ঠিক হয়নি। এটায় কাজের চেয়ে অকাজ বেশি হবে। পুরোপুরি রং মেসেজ যাবে।’
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৫ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৫ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৬ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
৯ দিন আগে