প্রশাসন ও সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে রদবদল নিয়ে কী হচ্ছে?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি, পদায়ন কিংবা নতুন নিয়োগের কাজ শুরু করেছে। বুধবার সচিব পদমর্যাদার ১০ কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল হয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এতদিন কোণঠাসা কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব নিতে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত দেড় দশকে পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কিংবা পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় বিবেচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছিল বেশি। যে কারণে সরকার পরিবর্তনের পরই এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবুল কাশেম মজুমদার বলেছেন, পুরোপুরি দলীয়করণের কারণেই প্রশাসন ও সরকারে একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তখন যদি যোগ্য ও মেধাবীরা এসব পদে থাকতো তাহলে হয়তো তাদের সরে যেতে হতো না।

নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পুলিশের আইজিপি’র বিভিন্ন নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

গত ১৬ বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন জায়গায় এমন নিয়োগপ্রাপ্তদের রদবদল কিংবা অব্যাহতি দেওয়ার ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে পরিবর্তন কিংবা সংস্কার করা হলে এ নিয়ে সংকট তৈরি হবে কি না সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যখন সরকার পরিবর্তন হয়, তখন আরেকটু জরুরি ভিত্তিতে পরিবর্তন দরকার হয়। দায়িত্বে থেকে এখন যারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না, সে সব জাতীয় জায়গায় দ্রুত পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অনেকেই পদ ছেড়ে গেছেন।

এদের মধ্যে কেউ চাপের মুখে পদ ছেড়েছেন। কেউ পদ ছেড়েছেন স্বেচ্ছায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল, কয়েকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের অনেকেই ।

এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গর্ভনরসহ চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন থেকেই তাদের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাংকটিতে বিক্ষোভে নেমেছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এছাড়াও ঢাকা-জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ থেকে সরে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, এতদিন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছিলেন। পট পরিবর্তনের কারণে ঐসব পদে থাকা ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় সরে যাচ্ছেন।

গত এক সপ্তাহে সরকার ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানদেরও সরিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের পদ থেকে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগদানের কারণে সরকারে পরিবর্তনের পর সে সব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার করতে হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে।

তবে প্রশাসনে সংস্কারের ক্ষেত্রে আবারও ‘আরেকটি দলীয়করণ’ যাতে না হয় সেবিষয়ে সতর্ক করছেন কোন কোন বিশ্লেষক। সূত্র : বিবিসি বাংলা

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৬ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৬ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৭ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

১১ দিন আগে