শেখ হাসিনাকে কি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে ভারত?

ডয়চে ভেলে
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার বিষয়টি ছিল অভাবনীয় এক ঘটনা।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে থাকার ৫০ দিন পূর্ণ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সম্প্রতি ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ন্যায়বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ভারতের ভিসার ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকলে ৪৫ দিন থাকা যায়। সেই ৪৫ দিন শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এখন কি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে ভারত?

ভারত কী করতে পারে?

ও পি জিন্দল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাোধা দত্ত ডিডব্লিউকে বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। ফলে তাতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে অনুরোধ এলে তা ভারত খতিয়ে দেখবে। তার একটা প্রক্রিয়া আছে, তা চলতে থাকবে।’

তবে এই অনুরোধ করা হলেই যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই৷ ভারত তো কতদিন ধরে আর্থিক মামলায় অভিযুক্ত বিজয় মালিয়াকে চাইছে। কিন্তু এখনো তো বিজয় মালিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়নি। ২০১৬ সালে মালিয়া ভারত ছেড়ে যুক্তরাজ্যে গেছেন। তারপর তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তারপর আইনি জটে এখনো মালিয়াকে ফেরত পায়নি ভারত।

শ্রীরাধা বলছেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারত এটাও মনে করে না, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নিরাপদে থাকতে পারবেন। তাই শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে ফেরত দেয়া হবে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। আর তাকে ফেরত পাঠানোর কোনো নৈতিক বাধ্যবাধকতাও ভারতের নেই।’

সম্পর্কে বাধা হবে না

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক সাবেক কূটনীতিক মনে করেন, শেখ হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। তার মতে, দুইটি বিষয় এক করে দেখা উচিত নয়। দুইটি বিষয় আলাদা। বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী দেশ। ফলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার পেছনে দুই দেশের স্বার্থ হয়েছে।

দলাই লামার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাকেও ভারত আশ্রয় দিয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আছেন। তারপরেও তো তার থাকা-না থাকার বিষয়টি আলোচনার ক্ষেত্রে বাধা হয়নি।

বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। তার কাছে আর কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই। সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘টেকনিক্যালি বলা যেতে পারে, শেখ হাসিনা স্টেটলেস। তিনি ভারত থেকে বাইরের কোনো দেশে যেতে পারবেন না। কিন্তু ভারতে থাকার ক্ষেত্রে তার কোনো অসুবিধা নেই।’

ফলে তিনি কতদিন এখানে থাকবেন, তাকে বাংলাদেশের হাতে দেয়া হবে বা হবে না, এটা শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে প্রত্যর্পণের আবেদন করা হলেও শেখ হাসিনাকে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তারা অন্তত মনে করছেন না।

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৫ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৬ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৭ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

১০ দিন আগে