বিশ্ব শিক্ষক দিবসে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দাবি

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি কলেজ শিক্ষক ও অধ্যক্ষ জোটের নেতারা।

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

সুশাসনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার অঙ্গীকার এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এবং শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

মেধাবী শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষক নেতারা বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে শিক্ষকরা স্বাধীনভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন না।
রাজনৈতিক প্রভাবের ঘটনা সব সরকারের আমলেই ঘটে থাকে, এই প্রথা বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. মাজহারুল হান্নান বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ চাই। ইউনেস্কো শিক্ষক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০২৪ খ্রীস্টাব্দে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল বিষয় নির্ধারন করেছে- ‘শিক্ষার জন্য আমাদের শিক্ষক প্রয়োজন : বিশ্বব্যাপী শিক্ষকের অভাব মোকাবেলা করা।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. মাজহারুল হান্নানের সঞ্চালনায় বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. ইসহাক হোসেন।

উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, অধ্যক্ষ শহীদুন নাহার, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউনুস, অধ্যাপক ইলিম মো. নাজমুল হোসেন, অধ্যাপক রফিকা আফরোজ ও অধ্যাপক জহির উদ্দিন আজম, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মন্ডল, অধ্যক্ষ এম. এ. মোনায়েম, অধ্যাপক হোসনে জাহান, অধ্যাপক কানিজ সালমা, অধ্যাপক আল মামুন প্রমুখ।

শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের সমতুল্য বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, সরকারি কলেজের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ পেনশন ব্যবস্থা চালু করাসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন।

শিক্ষকদের নয় দফা

১। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং অন্যান্য ভাতা যেমন- বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।

২। সরকারি কলেজের অনুরূপ পদ্ধতিতে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু করতে হবে।

৩। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ন্যায় আনুপাতিক হারে শিক্ষা প্রশাসনের ( জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, নায়েম ও এন.সি.টি.বি. ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি শিক্ষকদের লিয়েন/ডেপুটেশনে নিয়োগদান করতে হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ/সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত ইউনেস্কো ও আই.এল.ও-এর সনদ ১৯৬৬ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে একাডেমিক পরিদর্শন ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। শিক্ষাঙ্গনে দলাদলি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নিংবডি/ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুরূপ নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

৭। সরকারি কলেজের অনুরূপে বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে এবং বেসরকারি কলেজে ডিগ্রী (অনার্স) ও মাস্টার্স পাঠদানরত শিক্ষকদেরকে এমপিওভূক্ত করতে হবে।

৮। সরকারি কলেজের মতো বেসরকারি শিক্ষকদেরও পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালু করতে হবে।

৯। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করে জরিপের মাধ্যমে কেবল মাত্র চাহিদার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিতে হবে।

সুশাসন দাবি

*​ভেঙ্গে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং বিধ্বস্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে হবে।

*​স্বৈরশাসকের আমলে সরকার প্রভাবিত পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

*​দলীয় প্রশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে জাতিকে রক্ষায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

*​ভোটাধিকারবিহীন নির্বাচনে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

*​বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলামসহ নানাভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষার জন্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

*​গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে রাখার এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসেবীদের ওপর নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসেবীদের স্বাধীনভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেওয়ার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

*​আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

*​সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র চাঁদাবাজিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

*​ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা দান করতে হবে।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, পরের সরকারের কোনো পদে থাকব না: প্রধান উপদেষ্টা

তিনি বলেছেন, “আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্র

৭ ঘণ্টা আগে

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কয়েক বছর লাগবে : প্রেস সচিব

এই অর্থের কতটুকু উদ্ধার করা সম্ভব হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, বিদেশে ৪০ হাজার কোটির সম্পদের সঙ্গে অনেকগুলো আইনি প্রক্রিয়া আছে। এখানে আইনি অনেক জটিলতা আছে। ফলে অনেকের নাম কিংবা কোথায় তার সম্পদ আছে, আমরা এখানে তা প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু এদের অনেকের সম্পদের কথা ব্রিটিশ পত্রিকায় এসেছে।

৮ ঘণ্টা আগে

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর বাস্তবায়ন সম্পর্কে ইইউ রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন।

৯ ঘণ্টা আগে

সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সফরের সুযোগ

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সরকারি (অফিশিয়াল) ও কূটনীতিক পাসপোর্টধারীরা পরস্পরের দেশে ভিসা ছাড়াই সফর করতে পারবেন। চুক্তির মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

১০ ঘণ্টা আগে