প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল ৪টা। এর আগেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাঝে মাঝে রূপ নিচ্ছিল ভারী বৃষ্টিতেও। তাতে অপেক্ষার প্রহর বাড়ল, সেটি খুব বেশি নয়— মিনিট ত্রিশেক। আরও আধা ঘণ্টার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
বিকেল ৫টার কিছু পরেই ২৫টি রাজনৈতিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি সই করলেন ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও সই করলেন তাতে। এর মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ আট মাসের আলোচনায় যেসব ঐকমত্য উঠে এসেছে, সেই রাজনৈতিক দলিল বাস্তবায়নের পথে পেল রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
এদিকে জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছয়টি রাজনৈতিক দল এই সনদে সই করেনি, যার মধ্যে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। এর মধ্যে পাঁচটি দল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে।
অন্যদিকে জুলাই সনদ ঘিরে তিন দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন ‘জুলাই যোদ্ধা’রা। তাদের অবস্থান ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষও হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে জৌলুস ম্লান হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত হন অনুষ্ঠানস্থলে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের অন্য উপদেষ্টা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা ততক্ষণে নিজ নিজ আসন নিয়েছেন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনের জায়গাটিতে। প্রধান উপদেষ্টা পৌঁছাতেই তাই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা, শেষ হতে লাগেনি খুব বেশি সময়।
বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যদের কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় সংগীতের পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান ছিলেন। ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সংলাপ পরিচালনার মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণয়নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনিই।
আলী রীয়াজ বলেন, এই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত কোনো চুক্তি নয়, এটি নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সামাজিক চুক্তি। এই সামাজিক চুক্তির মধ্যে নিহিত রয়েছে জনগণের প্রত্যাশা, সংগ্রাম ও স্বপ্ন। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তাদের আন্দোলন ও প্রচেষ্টার প্রতিটি বিন্দু এই সনদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
জুলাই অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের কথা তুলে ধরে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন কিংবা এখনো কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের ত্যাগ ও অবদানের মধ্য দিয়েই এই সনদ তৈরি হয়েছে।
অধ্যাপক রীয়াজের বক্তব্যের পরই জুলাই সনদে সই করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এ সময় প্রতিটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি সই করেন এ সনদে। এর ঠিক পরপরই জুলাই সনদে সই করেন ঐক্যমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সনদে সই করার পর বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি জুলাই সনদ সইয়ের এই দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন। এ দিনটির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে এবং দেশের সব নাগরিককেও অভিনন্দন জানান তিনি। জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে ঐক্যের সুর আজ আমরা এখানে বাজালাম, সেই সুর নিয়েই আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, আর এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজ যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এই সনদ স্বাক্ষর করলাম, তেমনি রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়েও সব দলের নেতারা বসে একটি চুক্তিতে পৌঁছাবেন। কীভাবে নির্বাচন পরিচালিত হবে, তা নিয়েও ঐকমত্য গঠন জরুরি। কারণ, যেমন তেমনভাবে নির্বাচন করলে আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যেতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ঐক্যমতের মাধ্যমে কঠিন কাজও সমাধা করা সম্ভব, এটাই সভ্যতার প্রমাণ। আমরা কাগজে প্রমাণ করেছি যে আমরা সেই সভ্যতার পথে হাঁটছি, এখন কাজে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা সত্যিই তা অর্জন করেছি। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা আমাদের সেই পথ দেখিয়েছেন, আমরা তাদের কাছে শ্রদ্ধাভরে মাথা নত করছি এই দিকনির্দেশনার জন্য।
এদিকে জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়া— এই তিন দফা দাবি নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানস্থল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে অবস্থান নেন ‘জুলাই যোদ্ধা’রা। একপর্যায়ে সেখানকার একটি গেট ভেঙে তারা ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়, তা সংঘর্ষেও রূপ নেয়।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর জুলাই যোদ্ধারা দক্ষিণ প্লাজার সামনে অনড় অবস্থান ধরে রাখলে একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সড়কের কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করেন। পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য ব্যবহৃত ‘রোড ব্লকার’গুলো একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ সময় ধাওয়া দিয়ে তাদের সড়কের দুপাশে সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে জুলাই যোদ্ধাদের একাংশ গিয়ে অবস্থান নেন খামারবাড়ির দিকে, আরেক অংশ চলে যায় আসাদ গেটের দিকে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও তখন মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। পরে পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত হয়নি।
জুলাই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভ থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক দল এনসিপি। ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রতিনিধিরা। সংবিধান থেকে শুরু করে নির্বাচনব্যবস্থাসহ প্রতিটি বিষয়েই সংস্কার প্রশ্নে জোরালো অবস্থান ছিল দলটির।
দীর্ঘ এ আলোচনায় অবশ্য অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে তাদের বিরোধও তীব্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বিএনপির একাধিক প্রস্তাবের সঙ্গে তারা দ্বিমত করে, কিছু দ্বিমত ছিল জামায়াতসহ অন্য দলগুলোর প্রস্তাবের সঙ্গেও। তারপরও জুলাই সনদ নিয়ে ইতিবাচক গতিতেই এগিয়েছে এনসিপি।
গোল বাঁধে শেষের দিকে এসে, যখন এই সনদে বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাস্তবায়ন আর সনদ বাস্তবায়নে সরকারি আদেশের আইনি ভিত্তির বিষয়টি এনসিপির প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, এ দুটি বিষয়ের সমাধান না মিললে তারা সনদে সই করবে না।
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনভর এনসিপি নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সে চেষ্টা সফল হয়নি।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এনসিপি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, তারা এ অনুষ্ঠান বর্জন করছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে সনদেও সই করবে না। এনসিপির কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছাড়াই তাই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল।
এদিকে চার বামপন্থি দলের জোট বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছিল, জুলাই সনদের চূড়ান্ত যে কপি তারা পেয়েছে সেটিতে তাদের পক্ষে সই করা সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জোটটি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যাখ্যা হাজির করে।
শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে এই জোটের চার দলও অংশ নেয়নি, সইও করেনি জুলাই সনদে। দল চারটি হলো— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ৩. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
এনসিপি ও বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের মতো গণফোরামও জুলাই সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছিল গত বুধবারেই। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার কারণে দলটি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অবশ্য উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান। পরে গণফোরামের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তারা অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও জুলাই সনদে সই করেনি।
দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সনদটি পর্যালোচনা করে তারা পরে এটি সই করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সব মিলিয়ে তাই জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় যুক্ত ৩০টি দলের মধ্য পাঁচটিকে বাদ রেখেই এই সনদ সই হয়ে গেল। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ অবশ্য জানিয়েছেন, কোনো দল চাইলে পরেও এ সনদে সই করতে পারবে।
নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল ৪টা। এর আগেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাঝে মাঝে রূপ নিচ্ছিল ভারী বৃষ্টিতেও। তাতে অপেক্ষার প্রহর বাড়ল, সেটি খুব বেশি নয়— মিনিট ত্রিশেক। আরও আধা ঘণ্টার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
বিকেল ৫টার কিছু পরেই ২৫টি রাজনৈতিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি সই করলেন ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও সই করলেন তাতে। এর মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ আট মাসের আলোচনায় যেসব ঐকমত্য উঠে এসেছে, সেই রাজনৈতিক দলিল বাস্তবায়নের পথে পেল রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
এদিকে জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছয়টি রাজনৈতিক দল এই সনদে সই করেনি, যার মধ্যে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। এর মধ্যে পাঁচটি দল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে।
অন্যদিকে জুলাই সনদ ঘিরে তিন দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন ‘জুলাই যোদ্ধা’রা। তাদের অবস্থান ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষও হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে জৌলুস ম্লান হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত হন অনুষ্ঠানস্থলে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের অন্য উপদেষ্টা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা ততক্ষণে নিজ নিজ আসন নিয়েছেন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনের জায়গাটিতে। প্রধান উপদেষ্টা পৌঁছাতেই তাই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা, শেষ হতে লাগেনি খুব বেশি সময়।
বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যদের কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় সংগীতের পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান ছিলেন। ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সংলাপ পরিচালনার মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণয়নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনিই।
আলী রীয়াজ বলেন, এই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত কোনো চুক্তি নয়, এটি নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সামাজিক চুক্তি। এই সামাজিক চুক্তির মধ্যে নিহিত রয়েছে জনগণের প্রত্যাশা, সংগ্রাম ও স্বপ্ন। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তাদের আন্দোলন ও প্রচেষ্টার প্রতিটি বিন্দু এই সনদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
জুলাই অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের কথা তুলে ধরে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন কিংবা এখনো কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের ত্যাগ ও অবদানের মধ্য দিয়েই এই সনদ তৈরি হয়েছে।
অধ্যাপক রীয়াজের বক্তব্যের পরই জুলাই সনদে সই করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এ সময় প্রতিটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি সই করেন এ সনদে। এর ঠিক পরপরই জুলাই সনদে সই করেন ঐক্যমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সনদে সই করার পর বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি জুলাই সনদ সইয়ের এই দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন। এ দিনটির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে এবং দেশের সব নাগরিককেও অভিনন্দন জানান তিনি। জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে ঐক্যের সুর আজ আমরা এখানে বাজালাম, সেই সুর নিয়েই আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, আর এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজ যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এই সনদ স্বাক্ষর করলাম, তেমনি রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়েও সব দলের নেতারা বসে একটি চুক্তিতে পৌঁছাবেন। কীভাবে নির্বাচন পরিচালিত হবে, তা নিয়েও ঐকমত্য গঠন জরুরি। কারণ, যেমন তেমনভাবে নির্বাচন করলে আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যেতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ঐক্যমতের মাধ্যমে কঠিন কাজও সমাধা করা সম্ভব, এটাই সভ্যতার প্রমাণ। আমরা কাগজে প্রমাণ করেছি যে আমরা সেই সভ্যতার পথে হাঁটছি, এখন কাজে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা সত্যিই তা অর্জন করেছি। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা আমাদের সেই পথ দেখিয়েছেন, আমরা তাদের কাছে শ্রদ্ধাভরে মাথা নত করছি এই দিকনির্দেশনার জন্য।
এদিকে জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়া— এই তিন দফা দাবি নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানস্থল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে অবস্থান নেন ‘জুলাই যোদ্ধা’রা। একপর্যায়ে সেখানকার একটি গেট ভেঙে তারা ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়, তা সংঘর্ষেও রূপ নেয়।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর জুলাই যোদ্ধারা দক্ষিণ প্লাজার সামনে অনড় অবস্থান ধরে রাখলে একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সড়কের কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করেন। পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য ব্যবহৃত ‘রোড ব্লকার’গুলো একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ সময় ধাওয়া দিয়ে তাদের সড়কের দুপাশে সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে জুলাই যোদ্ধাদের একাংশ গিয়ে অবস্থান নেন খামারবাড়ির দিকে, আরেক অংশ চলে যায় আসাদ গেটের দিকে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও তখন মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। পরে পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত হয়নি।
জুলাই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভ থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক দল এনসিপি। ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রতিনিধিরা। সংবিধান থেকে শুরু করে নির্বাচনব্যবস্থাসহ প্রতিটি বিষয়েই সংস্কার প্রশ্নে জোরালো অবস্থান ছিল দলটির।
দীর্ঘ এ আলোচনায় অবশ্য অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে তাদের বিরোধও তীব্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বিএনপির একাধিক প্রস্তাবের সঙ্গে তারা দ্বিমত করে, কিছু দ্বিমত ছিল জামায়াতসহ অন্য দলগুলোর প্রস্তাবের সঙ্গেও। তারপরও জুলাই সনদ নিয়ে ইতিবাচক গতিতেই এগিয়েছে এনসিপি।
গোল বাঁধে শেষের দিকে এসে, যখন এই সনদে বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাস্তবায়ন আর সনদ বাস্তবায়নে সরকারি আদেশের আইনি ভিত্তির বিষয়টি এনসিপির প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, এ দুটি বিষয়ের সমাধান না মিললে তারা সনদে সই করবে না।
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনভর এনসিপি নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সে চেষ্টা সফল হয়নি।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এনসিপি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, তারা এ অনুষ্ঠান বর্জন করছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে সনদেও সই করবে না। এনসিপির কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছাড়াই তাই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল।
এদিকে চার বামপন্থি দলের জোট বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছিল, জুলাই সনদের চূড়ান্ত যে কপি তারা পেয়েছে সেটিতে তাদের পক্ষে সই করা সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জোটটি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যাখ্যা হাজির করে।
শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে এই জোটের চার দলও অংশ নেয়নি, সইও করেনি জুলাই সনদে। দল চারটি হলো— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ৩. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
এনসিপি ও বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের মতো গণফোরামও জুলাই সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছিল গত বুধবারেই। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার কারণে দলটি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অবশ্য উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান। পরে গণফোরামের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তারা অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও জুলাই সনদে সই করেনি।
দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সনদটি পর্যালোচনা করে তারা পরে এটি সই করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সব মিলিয়ে তাই জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় যুক্ত ৩০টি দলের মধ্য পাঁচটিকে বাদ রেখেই এই সনদ সই হয়ে গেল। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ অবশ্য জানিয়েছেন, কোনো দল চাইলে পরেও এ সনদে সই করতে পারবে।
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। কিন্তু ঐক্যের জায়গাও থাকতে হবে। আমাদের অনেক স্রোত, মোহনা একটি— একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। আমাদের বহু স্রোত, কিন্তু সবাই এক জায়গায়— আমরা যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকব।
৭ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ আলোচনা শেষে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শেষ মুহূর্তেও কিছু রাজনৈতিক দলের মতভিন্নতা থাকলেও শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান আয়োজন করে সরকার। অনুষ্ঠানের ঘটনাপ্রবাহ সরাসরি তুলে ধরা হচ্ছে রাজনীতি ডটকমের পাঠকদের জন্য...
৯ ঘণ্টা আগেবিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ জঘন্য কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। এটি মানবাধিকার ও আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সরকার এ দুঃখজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ভারত সরকারকে এ ঘটনার বিষয়ে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।
৯ ঘণ্টা আগেপ্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়েছে, আমরা প্রস্তুত ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের জন্য। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরুর সময় কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।
১০ ঘণ্টা আগে