
নাজমুল ইসলাম হৃদয়

গুলশানের আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলোর চকচকে কাঁচের দেয়ালে যখন বিকেলের রোদ পড়ছিল, ঠিক তার পেছনেই কড়াইল বস্তির আকাশে তখন কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ঘন কালো ধোঁয়া। রাজধানীর বৈষম্যের এক জীবন্ত ক্যানভাস মুহূর্তেই পরিণত ধূসর শ্মশানে।
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর। ঘড়ির কাঁটা মাত্র পেরিয়েছে বিকেল সোয়া ৫টার ঘর। আচমকা আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করতে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষের তিল তিল করে জমানো স্বপ্ন। অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলের বাতাসে সে আগুন ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। বস্তির ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো যেন একেকটি বারুদের স্তূপ। সিলিন্ডারগুলো যখন বোমার মতো বিস্ফোরিত হচ্ছিল, প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছিল মানুষ। মালামাল বাঁচানো তো দূরের কথা, কোলের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আগুনের বেষ্টনী পার হওয়াই ছিল তখন একমাত্র যুদ্ধ।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালের চিত্র আরও ভয়াবহ। ধোঁয়ার গন্ধে ভারী বাতাস। পায়ের নিচে শুধুই ছাই, পোড়া টিন আর গলে যাওয়া সংসারের স্মৃতিচিহ্ন।
ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়েছিলেন বস্তিরই বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজালাল মিয়া। অন্য সবার মতো তার ঘরও পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকে যথাসম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করছিলেন। তবে ফায়ার ফাইটারদের মতো প্রশিক্ষণ তো তার নেই। একসময় সংজ্ঞা হারান তিনি।
শাহজালাল মিয়া রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বস্তির প্রায় সব ঘরেই রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। যেভাবেই আগুন লাগুক, সিলিন্ডারগুলো বোমার মতো ফুটতেছিল। তাতে আগুন আরও বেড়ে যায়। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের সাথে কাজ করতেছিলাম। দেখলাম একটার পর একটা সিলিন্ডার ফুটতেছে। একদিকে আগুনের তাপ, আরেকদিকে সে কী ধোঁয়া! ঘণ্টাখানেক পরই মনে হয় জ্ঞান হারায়ে ফেলছি।’
ভয়াবহ এ আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো কেউই দিতে পারছে না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রাথমিক তথ্যমতে, আগুনের ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল এবং বহু কাঁচা ও আধাপাকা ঘর পুড়ে গেছে।
বস্তিবাসীর দাবি, পুড়ে ছাই হওয়া ঘরের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। এর অর্থ, অন্তত দেড় হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে এ আগুনে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা হাজার দশেক। বুধবার সকালে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত কড়াইল বস্তির বাতাস তাদের হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছিল।

এক কোণে বসে বিলাপ করছিলেন পোশাক কর্মী শাহিদা। জানালেন, পাঁচ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে থাকেন। একটু একটু করে ঘর গুছিয়েছিলেন। দেড় লাখ টাকা খরচ করে ফ্রিজ কিনেছিলেন, খাট সাজিয়েছিলেন।
শাহিদা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট কইরা টাকা গুছাইছি, একটা একটা কইরা জিনিস বানাইছি। ভাবছিলাম সামনের ঈদে ট্রাক ভাড়া কইরা সব মালামাল নিয়া গ্রামে চইলা যাব। আর ফিরব না এই শহরে। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হইল না। পরনের কাপড়ডা ছাড়া এখন আর কিছুই নাই। বস্তি থেকে বাইর হয়ে যে রিকশা নিয়া মহাখালী যাব, সেই টাকাডাও নাই।’
শাহিদার মতো আরেক ভুক্তভোগী এক অটোরিকশা গ্যারেজের মালিক নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন পোড়া টিনের দিকে। তার গ্যারেজে থাকা চারটি অটোরিকশার মধ্যে তিনটিই পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে। রোজগারের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন শুধুই অন্ধকার দেখছেন।
ভয়াবহ আগুন পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও পুরো বস্তি আগুনে পোড়েনি। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও পুরো কড়াইল বস্তি ছাই হওয়া থেকে কীভাবে বাঁচল, তার এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেখানকার ৩৫ বছরের পুরনো বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহরাব।
তার ব্যাখ্যা, বাতাসের তীব্র গতিবেগ আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিলেও গুলশান লেকের অবস্থান ও বাতাসের দিক পরিবর্তন আগুনকে একদিকে সীমাবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছে। বাতাস আগুনটাকে ঠেলে গুলশান লেকের দিকে নিয়ে গিয়েছিল বলেই রক্ষা পেয়েছে বস্তির বাকি অংশ। স্থানীয়দের মতে, যদি বাতাসের গতি ভিন্ন দিকে থাকত এবং লেকটি না থাকত, তবে ৯০ একর বস্তির পুরোটাই পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালেন, রাত সাড়ে ১০টার কিছু পরে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও রাতভর আগুন নেভাতে কাজ করতে হয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৯টায় তারা আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হন।

আগুন নেভানোর পর এখন কড়াইল বস্তিতে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। ঘরপোড়া মানুষের জন্য বিভিন্ন সংগঠন খিচুড়ি ও বিস্কুট নিয়ে এলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন তাদের চাহিদার ভিন্ন কথা। বিশেষ করে স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় নারীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।
শাহজালাল মিয়া ক্ষোভ ও লজ্জার সঙ্গে বলেন, ‘কালকে (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে মা-বোনেরা টয়লেটে যাইতে পারতেছে না। কমিউনিটি টয়লেটগুলা ব্যবহারের অবস্থায় নাই। এতগুলা মানুষ কোথায় কী করবে?’
কয়েকজন নারীও শাহজালাল মিয়ার কথাকেই সমর্থন করলেন। জানালেন, অনেকের তলপেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। ক্ষুধার যন্ত্রণা তো আছেই, টয়লেটের অভাব এখন তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণার কারণ হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানির তীব্র সংকট। আগুনের তাপে বস্তির প্লাস্টিকের পানির লাইনগুলো গলে গেছে, মাটির নিচের রিজার্ভ ট্যাংকগুলোও দূষিত হয়ে গেছে। বস্তিবাসী যেন এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও আশার আলো হয়ে ছিলেন মানবতার সেবকরা। আগুন লাগার খবর পাওয়া মাত্রই ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণ কর্মীরা। সরু গলি আর উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে ফায়ার সার্ভিসের পাইপ টেনে নেওয়া থেকে শুরু করে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা— সবখানেই ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই তরুণরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে আগুন নেভাতে ও দুর্গতদের উদ্ধারে।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও সেবাকাজে অংশ নেয়া লালবাগ ওপেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার নাইমুল ইসলাম রাফি চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে আমাদের স্কাউট সদস্যরা নিয়মিত সেবা দিয়ে আসছে। দিন-রাত যেকোনো সময়, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত। কড়াইল বস্তির এই ভয়াবহতার সময়েও আমরা চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মানুষের পাশে থাকার।’

স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি এনজিও ও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। ব্র্যাকের কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির জরিপ করছেন, যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা যায়। পারটেক্স গ্রুপের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ও বিস্কুট বিতরণ করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজ কর্মীরা কাজ করছেন আগুনে আতঙ্কিত শিশুদের মানসিক ট্রমা কাটাতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
কিন্তু চাহিদার তুলনায় কড়াইলে ত্রাণ ও সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। ভুক্তভোগীদের একটাই দাবি— তাৎক্ষণিক ত্রাণের খিচুড়ি নয়, তাদের পুনর্বাসনের জন্য দরকার টিন। রোদ আর আসন্ন শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষগুলোর মাথার ওপর দরকার ছাউনি।
আগুন নিভেছে, কিন্তু কড়াইল বস্তির মানুষের বুকের আগুন নেভেনি। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তারা এখন খুঁজছেন নতুন করে বাঁচার রসদ। একদিকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পানির রিজার্ভ ট্যাংক, অন্যদিকে গলে যাওয়া আসবাবপত্র— এর মাঝেই চলছে অস্তিত্বের লড়াই।
বস্তিবাসী বলছেন, সরকারিভাবে হোক আর বেসরকারিভাবে হোক, টেকসই পুনর্বাসন ছাড়া তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। যা হারিয়েছেন তার ক্ষতিপূরণ নয়, লড়াই করার জন্য সহায়তা চাইছেন তারা।

গুলশানের আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলোর চকচকে কাঁচের দেয়ালে যখন বিকেলের রোদ পড়ছিল, ঠিক তার পেছনেই কড়াইল বস্তির আকাশে তখন কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ঘন কালো ধোঁয়া। রাজধানীর বৈষম্যের এক জীবন্ত ক্যানভাস মুহূর্তেই পরিণত ধূসর শ্মশানে।
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর। ঘড়ির কাঁটা মাত্র পেরিয়েছে বিকেল সোয়া ৫টার ঘর। আচমকা আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করতে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষের তিল তিল করে জমানো স্বপ্ন। অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলের বাতাসে সে আগুন ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। বস্তির ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো যেন একেকটি বারুদের স্তূপ। সিলিন্ডারগুলো যখন বোমার মতো বিস্ফোরিত হচ্ছিল, প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছিল মানুষ। মালামাল বাঁচানো তো দূরের কথা, কোলের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আগুনের বেষ্টনী পার হওয়াই ছিল তখন একমাত্র যুদ্ধ।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালের চিত্র আরও ভয়াবহ। ধোঁয়ার গন্ধে ভারী বাতাস। পায়ের নিচে শুধুই ছাই, পোড়া টিন আর গলে যাওয়া সংসারের স্মৃতিচিহ্ন।
ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়েছিলেন বস্তিরই বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজালাল মিয়া। অন্য সবার মতো তার ঘরও পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকে যথাসম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করছিলেন। তবে ফায়ার ফাইটারদের মতো প্রশিক্ষণ তো তার নেই। একসময় সংজ্ঞা হারান তিনি।
শাহজালাল মিয়া রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বস্তির প্রায় সব ঘরেই রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। যেভাবেই আগুন লাগুক, সিলিন্ডারগুলো বোমার মতো ফুটতেছিল। তাতে আগুন আরও বেড়ে যায়। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের সাথে কাজ করতেছিলাম। দেখলাম একটার পর একটা সিলিন্ডার ফুটতেছে। একদিকে আগুনের তাপ, আরেকদিকে সে কী ধোঁয়া! ঘণ্টাখানেক পরই মনে হয় জ্ঞান হারায়ে ফেলছি।’
ভয়াবহ এ আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো কেউই দিতে পারছে না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রাথমিক তথ্যমতে, আগুনের ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল এবং বহু কাঁচা ও আধাপাকা ঘর পুড়ে গেছে।
বস্তিবাসীর দাবি, পুড়ে ছাই হওয়া ঘরের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। এর অর্থ, অন্তত দেড় হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে এ আগুনে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা হাজার দশেক। বুধবার সকালে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত কড়াইল বস্তির বাতাস তাদের হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছিল।

এক কোণে বসে বিলাপ করছিলেন পোশাক কর্মী শাহিদা। জানালেন, পাঁচ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে থাকেন। একটু একটু করে ঘর গুছিয়েছিলেন। দেড় লাখ টাকা খরচ করে ফ্রিজ কিনেছিলেন, খাট সাজিয়েছিলেন।
শাহিদা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট কইরা টাকা গুছাইছি, একটা একটা কইরা জিনিস বানাইছি। ভাবছিলাম সামনের ঈদে ট্রাক ভাড়া কইরা সব মালামাল নিয়া গ্রামে চইলা যাব। আর ফিরব না এই শহরে। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হইল না। পরনের কাপড়ডা ছাড়া এখন আর কিছুই নাই। বস্তি থেকে বাইর হয়ে যে রিকশা নিয়া মহাখালী যাব, সেই টাকাডাও নাই।’
শাহিদার মতো আরেক ভুক্তভোগী এক অটোরিকশা গ্যারেজের মালিক নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন পোড়া টিনের দিকে। তার গ্যারেজে থাকা চারটি অটোরিকশার মধ্যে তিনটিই পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে। রোজগারের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন শুধুই অন্ধকার দেখছেন।
ভয়াবহ আগুন পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও পুরো বস্তি আগুনে পোড়েনি। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও পুরো কড়াইল বস্তি ছাই হওয়া থেকে কীভাবে বাঁচল, তার এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেখানকার ৩৫ বছরের পুরনো বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহরাব।
তার ব্যাখ্যা, বাতাসের তীব্র গতিবেগ আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিলেও গুলশান লেকের অবস্থান ও বাতাসের দিক পরিবর্তন আগুনকে একদিকে সীমাবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছে। বাতাস আগুনটাকে ঠেলে গুলশান লেকের দিকে নিয়ে গিয়েছিল বলেই রক্ষা পেয়েছে বস্তির বাকি অংশ। স্থানীয়দের মতে, যদি বাতাসের গতি ভিন্ন দিকে থাকত এবং লেকটি না থাকত, তবে ৯০ একর বস্তির পুরোটাই পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালেন, রাত সাড়ে ১০টার কিছু পরে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও রাতভর আগুন নেভাতে কাজ করতে হয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৯টায় তারা আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হন।

আগুন নেভানোর পর এখন কড়াইল বস্তিতে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। ঘরপোড়া মানুষের জন্য বিভিন্ন সংগঠন খিচুড়ি ও বিস্কুট নিয়ে এলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন তাদের চাহিদার ভিন্ন কথা। বিশেষ করে স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় নারীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।
শাহজালাল মিয়া ক্ষোভ ও লজ্জার সঙ্গে বলেন, ‘কালকে (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে মা-বোনেরা টয়লেটে যাইতে পারতেছে না। কমিউনিটি টয়লেটগুলা ব্যবহারের অবস্থায় নাই। এতগুলা মানুষ কোথায় কী করবে?’
কয়েকজন নারীও শাহজালাল মিয়ার কথাকেই সমর্থন করলেন। জানালেন, অনেকের তলপেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। ক্ষুধার যন্ত্রণা তো আছেই, টয়লেটের অভাব এখন তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণার কারণ হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানির তীব্র সংকট। আগুনের তাপে বস্তির প্লাস্টিকের পানির লাইনগুলো গলে গেছে, মাটির নিচের রিজার্ভ ট্যাংকগুলোও দূষিত হয়ে গেছে। বস্তিবাসী যেন এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও আশার আলো হয়ে ছিলেন মানবতার সেবকরা। আগুন লাগার খবর পাওয়া মাত্রই ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণ কর্মীরা। সরু গলি আর উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে ফায়ার সার্ভিসের পাইপ টেনে নেওয়া থেকে শুরু করে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা— সবখানেই ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই তরুণরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে আগুন নেভাতে ও দুর্গতদের উদ্ধারে।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও সেবাকাজে অংশ নেয়া লালবাগ ওপেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার নাইমুল ইসলাম রাফি চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে আমাদের স্কাউট সদস্যরা নিয়মিত সেবা দিয়ে আসছে। দিন-রাত যেকোনো সময়, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত। কড়াইল বস্তির এই ভয়াবহতার সময়েও আমরা চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মানুষের পাশে থাকার।’

স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি এনজিও ও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। ব্র্যাকের কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির জরিপ করছেন, যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা যায়। পারটেক্স গ্রুপের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ও বিস্কুট বিতরণ করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজ কর্মীরা কাজ করছেন আগুনে আতঙ্কিত শিশুদের মানসিক ট্রমা কাটাতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
কিন্তু চাহিদার তুলনায় কড়াইলে ত্রাণ ও সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। ভুক্তভোগীদের একটাই দাবি— তাৎক্ষণিক ত্রাণের খিচুড়ি নয়, তাদের পুনর্বাসনের জন্য দরকার টিন। রোদ আর আসন্ন শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষগুলোর মাথার ওপর দরকার ছাউনি।
আগুন নিভেছে, কিন্তু কড়াইল বস্তির মানুষের বুকের আগুন নেভেনি। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তারা এখন খুঁজছেন নতুন করে বাঁচার রসদ। একদিকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পানির রিজার্ভ ট্যাংক, অন্যদিকে গলে যাওয়া আসবাবপত্র— এর মাঝেই চলছে অস্তিত্বের লড়াই।
বস্তিবাসী বলছেন, সরকারিভাবে হোক আর বেসরকারিভাবে হোক, টেকসই পুনর্বাসন ছাড়া তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। যা হারিয়েছেন তার ক্ষতিপূরণ নয়, লড়াই করার জন্য সহায়তা চাইছেন তারা।

প্রিলিতে উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে ৯ এপ্রিল এবং ফল প্রকাশ করা হবে ৩০ জুলাই। ১০ আগস্ট থেকে শুরু হবে মৌখিক পরীক্ষা। আর ২৫ নভেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। অর্থাৎ, ৩৬৫ দিন বা এক বছরের মধ্যেই শেষ হবে ৫০তম বিসিএস।
৩ ঘণ্টা আগে
তিনি বলেন, পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে বিশ্বকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য পাঁচদিন করে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আজ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ ২৭ তারিখ) থেকে সেই অঞ্চলভিত্তিক সীমাবদ্ধতা এবং পাঁচদিনের সময়সীমা তুলে নেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে তাদের সুবিধামতো সময়ে নিবন
৩ ঘণ্টা আগে
স্থায়ী ও স্বতন্ত্র সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে চলতি বছর ২১ জানুয়ারি ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রা
৩ ঘণ্টা আগে
পরীক্ষার্থীদের দাবি, লিখিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি না বদলানোয় বহু শিক্ষার্থী বাস্তবিকভাবে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তাই ‘মানবিক বিবেচনা’ থেকে পরীক্ষাটি পিছিয়ে নেওয়ার আহ্বান আর গুরুত্ব পায়নি বলেই তারা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগে