শ্রদ্ধার মিছিলে স্মৃতির আলাপন, অশ্রুতে বিদায় সৈয়দ মনজুরুলকে

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ১৯
শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। ছবি: রাজনীতি ডটকম

সকাল থেকেই বৃষ্টি। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো বাড়ছে তীব্রতা। শরৎ শেষ করে হেমন্ত যখন আসি আসি করছে, আকাশ তখনো মনে করিয়ে দিচ্ছে বর্ষার মেঘমেদুর দিনের কথা। এমন দিনেও মেঘবৃষ্টি মাথায় নিয়েই শহিদ মিনারে নেমেছিল মানুষের ঢল। প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো বিদায় জানানোর আর কোনো সুযোগ যে থাকবে না।

সেই মানুষটি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক— শিক্ষার্থীদের প্রিয় স্যার, অন্য শিক্ষকদের কাছে মর্যাদাপূর্ণ সহকর্মী। এর বাইরে কারও কাছে তিনি কথাসাহিত্যিক, কারও কাছে শিক্ষাবিদ, কারও কাছে শিল্প-সাহিত্য সমালোচক। আর তার সঙ্গে যারা মিশেছেন তাদের সবার কাছে একজন ভালো মানুষ।

এমন বহুধা পরিচয়ে পরিচিত সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। হাতে হাতে ফুল নিয়ে তাকেই শেষ বিদায় জানাতে শনিবার (১১ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে হাজির হয়েছিলেন সবাই।

বৃষ্টি মাথায় করে শনিবার সকাল ১১টার দিকেই সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহিদ মিনারে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তার স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও গুণমুগ্ধরা। একে একে উপস্থিত হয়ে শ্রদ্ধা জানালেন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রকাশক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী, রাজনৈতিক নেতারা৷ শ্রদ্ধা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকেও। আর অসংখ্য শিক্ষার্থী তো ছিলেনই।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে বিদায় জানাতে সবার হাতে ছিল ফুল, ফুলের তোড়া৷ চোখে শোক। স্মৃতিচারণে বৃষ্টির ফোঁটার মতোই ঝরে পড়ছিল তার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কথা। সবাই বলছিলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এক উজ্জ্বল বুদ্ধিজীবী, যিনি তার প্রজ্ঞা ও মানবিকতার মধ্য দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করেছেন।

শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের আরেক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধূরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, লেখক আহমেদ মোস্তফা কামাল, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, সাহিত্যিক খায়রুল আলম সবুজসহ শিক্ষাঙ্গন ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক বিশিষ্টজন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: রাজনীতি ডটকম
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: রাজনীতি ডটকম

এ ছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন গীতিকবি শহিদুল্লাহ ফরায়েজী, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, বদিউর রহমান, মুমিত আল রশিদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিষয়ক সংগঠনের কর্মীরা। শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাসস, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, গণসংহতি আন্দোলন, প্রথম আলো, রফিক আজাদ স্মৃতি পর্ষদ, নগর গবেষণা কেন্দ্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যম।

বাংলা সাহিত্য, শিক্ষা ও চিন্তার জগতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করবে— এমনটাই বিশ্বাস করেন সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীরা। সবাই বলছেন, তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা, যার অনুপস্থিতি দীর্ঘদিন অনুভূত হবে।

চিত্রকলা সমালোচনা নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাজকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বলেন, আমাদের দেশে চিত্র সমালোচনা তেমন বিকশিত হয়নি। সেখানে মনজুরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চিত্রকলা বুঝতেন। শেক্সপিয়রের নাটক অনুবাদ করেছেন, ইংরেজিতেও সাহিত্য রচনা করেছেন। এমন বিরল একজন মানুষ, যার মধ্যে বিনয়ের কোনো অভাব ছিল না। তার জীবন ও কাজ আমাদের জন্য চিরদিন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: রাজনীতি ডটকম
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: রাজনীতি ডটকম

অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে সবাই শ্রদ্ধা করত। তিনি পরিবেশ ইস্যুতেও কাজ করেছেন। অনেক সময় ভিন্নমতও দিয়েছেন, কিন্তু তা সবসময়ই ছিলো নীতির জায়গা থেকে। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ, নিঃস্বার্থ ও স্পষ্টভাষী শিক্ষক, যার অবস্থান কখনোই ব্যক্তিস্বার্থের ওপর নির্ভর করেনি।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, লেখকদের তিনি সবসময় উৎসাহ দিতেন। নিজে থেকেই বলতেন, ‘তোমার লেখাটা পড়েছি, খুব ভালো হয়েছে।’ এমন উদার হৃদয়ের মানুষ খুব বিরল। তার চলে যাওয়া আমাদের সাহিত্য–সমাজের বড় ক্ষতি।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বোন সাইদা সাত্তার বেবী বলেন, হাসপাতালে যে কদিন ছিলাম, আমার ভাইয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, শুভানুধ্যায়ীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, তাতে সত্যিই মনে হয়েছে— আমার ভাই একজন ভালো শিক্ষক তো ছিলেনই, একই সঙ্গে তিনি সবার প্রাণের মানুষও ছিলেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আরও একবার শ্রদ্ধা জানান তার প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তখন নীরব, ভারাক্রান্ত। জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

কী প্রশ্ন থাকবে জুলাই সনদের গণভোটে?

প্রশ্নটি হবে এ রকম— ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’

২ ঘণ্টা আগে

সংসদ নির্বাচনের দিন জুলাই সনদের গণভোট

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের গণভোট নেওয়া হবে।

২ ঘণ্টা আগে

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি

‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের আদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ আদেশের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সংস্কার প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেগুলোর বিষয়ে জনগণের রায় নেওয়া হবে গণভোটে।

২ ঘণ্টা আগে

অগ্নিসন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি কার প্রিয়, জানালেন সোহেল তাজ

সোহেল তাজ লেখেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে আর সত্যি কথা বললে যদি গালি খেতে হয় তাহলে কি আর করা।’

২ ঘণ্টা আগে