দিনে-রাতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী

রাজশাহী ব্যুরো
মশার উপদ্রবে দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থী। ছবি: রাজনীতি ডট কম

আলো ঝলমলে শান্তির শহর রাজশাহীতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। মশার তীব্র উৎপাতের কারণে ইফতারি ও সেহরির সময় মানুষ নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ছেন। সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছেন শিশু-বয়স্ক আর শিক্ষার্থীরা। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তারা। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে শুধু রাতের বেলা নয়, দিনেও ঘরে মশারি টাঙিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

নগরবাসী অভিযোগ করে জানান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শোবার ঘর, শোচাগার, রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার, অফিস, হাসপাতাল- কোথাও শান্তি নেই। চারিদিকে শুধু মশা আর মশা। শহরের ড্রেনগুলোতে পানির কোনো স্রোত নেই। স্রোত থাকলে মশার লার্ভা ভেসে নদীতে বা খালে চলে যেত। ড্রেনের বদ্ধ পানিতে সহজেই মশা উৎপাদন হচ্ছে। অথচ মশা নিধনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, স্বজন, বৃদ্ধ ও শিশুরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও দিনের বেলায় মশার কামড়ে কাহিল হয়ে পড়ছেন। মশার তীব্র উৎপাতের কারণে ইফতারি ও সেহরির সময় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোজদাররা।

তারা আরো জানান, ড্রেনের ময়লা মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা হয়। তবে শহরে মানুষের চাপ বেশি থাকায় দ্রুত ড্রেন ময়লায় ভরে যায়। এজন্য মশা ময়লা আবর্জনার মধ্যে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারছে।

নগর উপশহর এরাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, সারাদিন রোজা রেখে পরিবারের সাথে ইফতার করতে বসলে মশার আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে যেতে হয়। একই অবস্থা সেহরির সময়ও। কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সিটি করপোরেশন থেকে মশা মারার কোনো ওষুধ ছিটানো হয়নি। ফগার মেশিনেরও কোনো ব্যবহার হয়নি। ফলে মশার উপদ্রব খুবই বেড়েছে।

নগরীর শালবাগান এলাকার শিশু সোহান, তিহামি ও আফিফের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় বেশ কিছু ড্রেন থাকায় বদ্ধ পানিতে সহজেই মশা উৎপাদন হচ্ছে। এতে, দিন-রাত সবসময়ই ঘরে-বাইরে মশার উপস্থিতি থাকে। অথচ মশা নিধনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে মশার উৎপাতে বাচ্চারা টেবিল চেয়ারে বসে লেখাপড়া করতে পারছে না। অনেকেই কয়েলের ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। তাই কয়েলও ব্যবহার করা যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে মশারি টানিয়ে তাদের লেখাপড়া করাতে হয়।

নগরীর ভদ্রা এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, ভদ্রার পদ্মা আবাসিক এলাকায় সপ্তাহে একবার করে ফগার মেশিনে স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। চারিদিকে প্রচুর মশা। মশার অত্যাচারে ঘরে বাহিরে কোথাও স্থির থাকা যায় না। ওষুধে কেন কাজ হচ্ছে না তা বলতে পারবো না।

নগরীর ডাবতলা এলাকার স্কুল শিক্ষক আলতাফ হোসেন জানান, রাজশাহী নগরীতে মশার উপদ্রব মারাত্মকভাবে বেড়েছে। বলার মতো নয়। মশার উপদ্রবে নগরবাসীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বহুতল ভবনের আট-দশ তলাতেও মশার উপদ্রব। আর নিচের তলার অবস্থাটা দিনে-রাতে প্রায় সমান।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মাহাবুল ইসলাম বলেন, ক্লাসেও মশার কামড় হজম করতে হচ্ছে। এতে ক্লাসে বরাবরই মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর নিচতলাতে মশার উপদ্রবে রোগী ও স্বজনরা একবিন্দুও ঘুমাতে পারেন না বলে অভিযোগ তাদের।

একই অবস্থা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতেও। দিনের বেলা ক্লাস-পরীক্ষা চলাকালে মশার কামড় নিয়মিত খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। হলেও তাদের শান্তি নাই। সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির আলী হলের শিক্ষার্থী রিন্টু চাকমা মশা মেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত নাম ইংরেজিতে ‘আরইউ’ লেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি ছেড়েছিলেন। ছবিটি দ্রুত সময়ে নেটিজেনদের নজরে আসে। এতে ১৬২ জন হাহা রিয়েকশন দেন। ক্যাপশনে, ‘পরীক্ষার পড়া পড়তে গিয়ে মশাদের কামড় খেয়ে মনের ভেতর থেকে শিল্প লাফিয়ে উঠেছিলো’ শিরোনাম দেন। এতে মন্তব্য করেছেন ৫২ জন। এদের একজন তিশা লিখেছেন, একই অবস্থা। লিজা নামের একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন এতো মশা কেনো?’

জানতে চাইলে রিন্টু চাকমা বলেন, ‘মাত্র আড়াই ঘণ্টায় শতাধিক মশা মেরে আরইউ লিখেছি। মশার কামড়ে পড়াশোনা করা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইরফান তামিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মশার উৎপাত অনেক বেড়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। রাতে মশার উৎপাতে ঘুমানো যাচ্ছে না, দিনে ক্লাসও করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগ কর্তৃক মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে সম্প্রতি মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে বিশেষ অভিযান ও তদারকির জন্য কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক, রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নিযাম উল আযীম বলেন, মহানগরীব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণে রাসিকের পক্ষ থেকে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। নগরীর প্রতিটি ড্রেনে লার্ভিসাইড কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া, ড্রেনের পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে ড্রেন স্লাবে মশার ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়মিত ফগার মেশিনে স্প্রে করা হচ্ছে। সকাল বিকাল দুই শিফটে স্প্রে হচ্ছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। শিগগিরই একযোগে পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হবে। ড্রেনে ময়লা না ফেলার জন্য সচেতনামূলক প্রচার করা হচ্ছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সচেতন করা হচ্ছে।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গায় ২ ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

১ দিন আগে

সুনামগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আটক ৪

আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত আব্দুল মজিদ, শুভ হাসান ও তানিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যদের জামালগঞ্জ ও জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মোছা আলী, ইমার হোসেন, নূর আলম ও শাখাওয়াত হোসেন তবারক নামের চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

২ দিন আগে

নাগরিক শোকসভায় স্মরণ যতীন সরকারকে

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় জেলা পাবলিক হলে নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাবন্ধিক হায়দার জাহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য মো. আল

২ দিন আগে

নেত্রকোনায় ৬ বিএনপি নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ওই নেতাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নোটিশে।

২ দিন আগে