৬৫ দিনের লড়াই, ৫৮ ঘণ্টার অনশন—শেষমেশ কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিজয়

আওয়াল শেখ, খুলনা
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ২৩

৬৫ দিন ধরে টানা আন্দোলন, আর শেষ পর্যন্ত ৫৮ ঘণ্টার অনশন—সব মিলিয়ে অবশেষে বিজয় অর্জন করলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার, এমন ঘোষণার পর আনন্দে ফেটে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস।

বুধবার দিবাগত রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠি ক্যাম্পাসে এসে পড়ে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম জানান, রাত সোয়া ১টার দিকে তানজিম স্যার (ইউজিসির সদস্য প্রফেসর তানজিমউদ্দীন খান) এসে শিক্ষার্থীদের সামনে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়, কুয়েটের বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে এবং দ্রুত সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।

রাহাতুল বলেন, “সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে ছিল বলেই আমরা এই বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারী আচরণ হলে আমরাই প্রথম গর্জে উঠব।”

দীর্ঘ আন্দোলনের পটভূমি

গত ১৮ ফেব্রুয়ারির এক সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই উপাচার্যের অপসারণসহ ছয় দফা দাবি তুলে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার জেরে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়, যার প্রতিবাদে শুরু হয় লাগাতার আন্দোলন ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বুধবার সকালে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ক্যাম্পাসে আসেন। তবে শিক্ষার্থীরা হলের পানি-ইন্টারনেট বন্ধ, বহিষ্কার আদেশ, মামলা ও প্রশাসনের আচরণের অভিযোগ তুলে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। উপদেষ্টা পরে জানান, তাদের দাবি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য-উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতির প্রক্রিয়া শুরু এবং ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ৭টি আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব

সোমবার বিকেল ৩টা থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করে। এতে অংশ নেওয়া ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে উপাচার্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়ে দেন।

অন্যদিকে কুয়েট কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি, বহিরাগত একজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানা যায়, যা শিক্ষার্থীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই দাবি করে।

আন্দোলনের চিত্রপট

১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পরদিন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। প্রশাসন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সব শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

তবে শিক্ষার্থীরা সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যান। প্রশাসনিক ভবনের তালা ভাঙা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অনশন—সবকিছুর পর এই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নিলো গত রাতে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, কুয়েটে গণতন্ত্র, অধিকার ও ন্যায়ের লড়াইয়ে তারা যে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, তা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

২ বছর ধরে মা-মেয়ের সরকারি চাল মেরে খেয়েছেন ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি

স্থানীয়রা জানান, মেম্বার লিয়াকত আলী সামটা গ্রামের গোলাম হোসেন গোপালের স্ত্রী সাজেদা খাতুন ও তার মেয়ে সাবিকুন নাহারের নামে গত দুই বছর আগে ভিজিডি কার্ড করে নিজের কাছে রেখে দেন। ওই কার্ড দেখিয়ে লিয়াকত প্রতিমাসে ৬০ বস্তা চাল আত্মসাৎ করে আসছিলেন, যা কারও জানা ছিল না। গত ছয় মাস ধরে এ চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে।

১১ ঘণ্টা আগে

বেনাপোলের মাদরাসাছাত্র তামিম নিখোঁজ, সন্ধান মেলেনি ২ সপ্তাহেও

আব্দুর রহমান জানান, গত ১৯ জুন রাত ৮টার দিকে মাদরাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি তামিম। এ নিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।

১৯ ঘণ্টা আগে

ওসির অপসারণ দাবিতে পটিয়া থানা অবরোধ বৈষম্যবিরোধীদের

বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরও সেখানে দেখা গেছে। তারা ‘ওসি তুই স্বৈরাচার, এ মুহূর্তে পটিয়া ছাড়’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’— এমন নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা।

২১ ঘণ্টা আগে

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতার পদত্যাগ

রাশেদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি সবসময় আমার শ্রম, মেধা, অর্থ, ধৈর্য ও সময় ব্যয় করে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি, সেটা মূল্যায়নের দায়িত্ব আপনাদের। তবে আমি যদি নিজেকে মূল্যায়ন করি, বলব— আরও ভালো কিছু হ

১ দিন আগে