আওয়াল শেখ, খুলনা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ তার মেয়াদকালে অসংখ্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যার শেষমেশ অপরাধের মাত্র যখন অতিচরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, তখনই ছাত্ররা তার পদত্যাগের আন্দোলনে সফল হন। তবে সরকার কর্তৃক এই ভিসির অপসারণের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষক সমিতির পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এই নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভিসির দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একই সাথে ক্যাম্পাসের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ বাণিজ্যের প্রমাণও মিলেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতিতে জড়িত শিক্ষক নেতারা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসি যোগদানের পর ৫৪ কর্মচারীকে মাস্টাররোলে নিয়োগ দিয়েছেন। তার মধ্যে ৭ জনই রয়েছে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেনের আত্মীয় ও সুপারিশকৃত। এছাড়া বাকি অধিকাংশ সবাই শিক্ষক সমিতির নেতাদের সুপারিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এই নিয়োগ হওয়ার জন্য ইউজিসি থেকে আর্থিক চাহিদার পত্র প্রত্যাখানও করা হয়েছে।
শিক্ষক নেতা ড. ফারুক হোসেন দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রকাশনা কমিটির সভাপতি হিসেবে। ওই দায়িত্বে থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্যালেন্ডার এবং বার্ষিক ডায়েরি ছাপিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এবার নিম্নমানের কাগজে ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়, যার সাইজ পূর্বের চেয়ে ছোট, প্লাস্টিক বাইন্ডিং পূর্বে ১২ এমএম হলেও এবার দেওয়া হয় ৯ এমএম। কাগজ ম্যাট পেপারের বদলে দেয়া হয় রিয়েল আর্ট। ডায়েরি ২০% বড় করা হয় এবং প্রায় ২.৫০ গুণ বেশি দাম নির্ধারণ করা হয়। আর এই কাজগুলো খুলনার কোনো প্রেসকে না জানিয়ে অতি গোপনে ঢাকার একটি প্রেস থেকে করানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা আগের থেকে অনেক কম খরচে এই কাজগুলো করেছি। একটা কমিটি ছিল, কমিটির সিদ্ধান্তেই সব কাজ হয়েছে। আমার একার মতামতে নয়। তবে দুর্নীতি হয়নি। এছাড়া নিয়োগে সুপারিশে আমার কথা যা বলা হচ্ছে, এটা আমি আজকে প্রথম শুনলাম।
গত বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভিসি ও প্রো ভিসির অপসারণের প্রক্রিয়া শুরুর খবর জানানো পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে ভিসির পক্ষে অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেন এই শিক্ষক নেতা। তিনি একটি বিবৃতি পাঠ করে বলেন, সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের বিচার না পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না শিক্ষকরা।
এ সময়ে তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটানোয় যারা দোষ করেছে, এই ঘটনার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অপসারণ দেওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। অপরাধ যেটা সেটা অপরাধই, সেটা আমাদের ছাত্রদেরও দাবি, শিক্ষকবৃন্দেরও দাবি। আমাদের পরিষ্কার অবস্থান, এই বিচার নিশ্চিত করেই ক্লাসে ফিরতে হবে। তা না হলে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত হবে না।’
একই সাথে তিনি ভিসি ও প্রো ভিসিকে অপসারণে ইউজিসির তদন্ত নিয়েও উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা এসেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে, অনুরোধ করতে। শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছি। উপদেষ্টার প্রতিনিধিদল (ইউজিসির সদস্য) তারাও এই ব্যাপার আমাদের সরকার আছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। তবে এখন আমরা দেশের পরিস্থিতি জানি, এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্বার্থে আমরা সবাই একাত্মতা প্রকাশ করে যাব।’
শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে এই প্রতিবেদকের সাথে কয়েজন শিক্ষক কথা বলেছেন। কুয়েটের একজন অধ্যাপক জানিয়েছেন, এই সবগুলি নিয়োগই ভিসিপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির সুপারিশে হয়েছে। শিক্ষক নেতারা একধিক কমিটিতে থেকে আর্থিক দুর্নীতি করছে। যার কারণে তারা এই ভিসির মায়া ছাড়তে পারছেন না।
নিয়োগ ও পদোন্নতি সুবিধা সব বিএনপিপন্থীদের
কুয়েটের অষ্টম উপাচার্য হিসেবে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ। ছাত্রজীবনে তিনি কুয়েট শাখার ছাত্রদলের সভাপতিও ছিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরে তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে। শুরু হয় নিয়োগের ভাগাভাগি। তিনি এ পর্যন্ত ৫৪ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ ও ৪ জনকে মাস্টাররোল থেকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকজন যে সরাসরি বিএনপি পরিবারের সদস্য তার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছেন, অফিস সহায়ক হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার, ড্রাইভার হিসেবে স্থানীয় যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির কৃষক দলের নেতা আতাউর রহমানের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম টগর, এই আতাউর রহমান নিজেও কুয়েটের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, যাকে পুনরায় অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়, ড্রাইভার হিসেবে খান জাহান আলী থানা যুবদল নেতা জুয়েল হাওলাদার, ডাটা প্রসেসর হিসেবে খান জাহান আলী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ আব্বাসের বড় ভাইয়ের মেয়ে তাজরিন তামান্না।
ভিসি যে নিয়োগ দুর্নীতি করেছেন তার একটি অডিও রেকর্ডও হাতে এসেছে এই প্রতিবেদকের। তাতে ভিসিকে বলতে শোনা গেছে, ‘ইমদাদ হচ্ছে দুষ্টুর শিরোমণি। ও করছে কী, এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে, যে স্যারকে বললেই চাকরি দিয়ে দেবে। আমি তো খবর পেয়ে গেছি। ওই প্রত্যেকদিন আসবে, স্যার এই লোকটা গরিব, খেতে পায় না। ও তো আমার ক্যারেকটার জানে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমদাদুল হক ওরফে এমদাদ মোড়ল। তিনি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হিসেবে কুয়েটে সবকিছুর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। ডাটা এন্ট্রি প্রসেসর হলেও পদোন্নতি নিয়ে হয়েছিলেন ভিসির সেকশন অফিসার। তিনি ভিসির খলিফা হিসেবে পরিচিত।
এর সাথে বিএনপি পন্থী আরও তিন খলিফা রয়েছেন, যারা কুয়েটের কর্মচারী। তারাও ভিসি মাছুদ যোগদানের পরই হঠাৎ পদোন্নতি পেয়েছেন, তারা হলেন, জালাল মুন্সী, অফিস সহায়ক থেকে একেবারে সেকশন অফিসার হয়েছেন তিনি। বাকি দুজন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট আশরাফুল আলম ও অফিস সহায়ক সাইফুলও একধাপ পদোন্নতি নিয়েছেন।
অবৈধ নিয়োগে প্রত্যাখ্যান ইউজিসির
২০১৮ সালে সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী ও মাস্টাররোল কর্মচারীদের নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও, উপাচার্য সেই কাজ করেছেন। ৫৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে ইউজিসির কাছে টাকা চাইলে তার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
কুয়েটের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, ১৭ মার্চ ইউজিসি একটি চিঠি দিয়ে জানায়, এই অস্থায়ী নিয়োগের বেতন দেওয়ার জন্য কুয়েটের চাহিদা মোতাবেক ৫২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউজিসি বেতন আটকে দিলে, কুয়েটের বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে তাদের বেতন চলমান রাখা হয়েছিল।
অপসারণের খবরের পর বদলি আদেশ, নিয়োগ
কুয়েটের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, বৃহস্পতিবার ভিসি ক্যাম্পাসের বাংলোতেই অবস্থান করেছেন। ওইদিন তিনি একাধিক অফিসিয়াল নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। কয়েকজন কর্মকর্তাকে ব্যাক ডেটে বিভিন্ন দপ্তরে বদলির আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও চারজনের ব্যাক ডেটে নিয়োগ বিষয়ে স্বাক্ষরও করেছেন।
এর মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামানকে এমইআরসিতে, পাবলিক রিলেশনস, ইনফরমেশন অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের সেকশন অফিসার শাহেদুজ্জামান শেখকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে, রেজিস্ট্রারের দপ্তরের সেকশন অফিসার মো. আজিজুর রহমানকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে, মো. শেখ হাফিজুর রহমানকে শিক্ষা শাখায় বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি ৭ জন কর্মচারীকে অন্য দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া অফিস সহায়ক মো. আব্দুল্লাহ, মো. আব্দুল্লাহ আল ওমর ফারুক শুভ, মো. হালিম ও মো. হাসিবুল মিঞাকে ব্যাকডেটে মাস্টাররোল থেকে চাকরি স্থায়ী করে দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনজন ডিরেক্টরকে বদলি করেছেন।
ছাত্র আন্দোলনে পরাজয়
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে শুক্রবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রো ভিসি শেখ শরীফুল আলম অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৩ এর ১০/২ ধারা অনুযায়ী ভিসিকে ও ১২/২ ধারা অনুযায়ী প্রো ভিসিকে প্রত্যাহার পূর্বক অব্যহতি প্রদান করে নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তন করা হলো।
এর আগে বুধবার সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। সেই সময়ে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করানোর জন্য অনুরোধ করে। তবে শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ প্রত্যাখান করে, তাদের হলের পানি, ইন্টারনেট বন্ধের কথা উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। একই সাথে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে অভিযোগ তুলে।
উপদেষ্টা সেই সময়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, আমার সাথে দুইজন ইউজিসির সদস্য এসেছেন। তারা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে কুয়েট প্রশাসনকে অবহিত করবেন। তোমাদের এই যাবতীয় অসুবিধা দ্রুত সমাধান করা হবে। সেই সময়ে তিনিছাত্রদের বহিষ্কার আদেশ ও মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাসও দেন। পাশাপাশি হল খুলে দেওয়াসহ যাবতীয় সমাধানের ব্যাপরেও শিক্ষার্থীদের সাথে একমত হন।
ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
৬৫ দিনের আন্দোলন আর ৫৮ ঘণ্টার অনশনে পেটের পেটের ক্ষুধায় যখন শরীর ঝিমিয়ে আসছিল, তখনই বুধবার মধ্যরাতে সংবাদ এসেছিল শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উপাচার্য অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত সোমবার বিকেল ৩ টায় তারা অনশন শুরু করেন। সেদিন ৩২ জন শিক্ষার্থীর অনশন শুরু করলে ইতোমধ্যে ৫ জন অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া দুইজন বাড়িতে চলে গেছেন।
এর আগে বুধবার সকালে অনশন প্রত্যাহার করানোর জন্য কুয়েট ক্যাম্পাসে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। তিনি অনশন প্রত্যাহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করলেও, ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যান্ত তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
১৪ এপ্রিল বিকেলে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই দিন কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ জানান, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট কতৃক গ্রহণ করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া আগামী ০৪ মে থেকে শুরু এবং সকল আবাসিক হলসমূহ আগামী ০২ মে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
একই সাথে ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকেতদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হোচেন আলী কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন।তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া ২২ জনের নাম ও পরিচয় এভাবে বাইরের কোন ব্যক্তির পক্ষে জানা সম্ভব না।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ তার মেয়াদকালে অসংখ্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যার শেষমেশ অপরাধের মাত্র যখন অতিচরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, তখনই ছাত্ররা তার পদত্যাগের আন্দোলনে সফল হন। তবে সরকার কর্তৃক এই ভিসির অপসারণের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষক সমিতির পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এই নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভিসির দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একই সাথে ক্যাম্পাসের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ বাণিজ্যের প্রমাণও মিলেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতিতে জড়িত শিক্ষক নেতারা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসি যোগদানের পর ৫৪ কর্মচারীকে মাস্টাররোলে নিয়োগ দিয়েছেন। তার মধ্যে ৭ জনই রয়েছে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেনের আত্মীয় ও সুপারিশকৃত। এছাড়া বাকি অধিকাংশ সবাই শিক্ষক সমিতির নেতাদের সুপারিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এই নিয়োগ হওয়ার জন্য ইউজিসি থেকে আর্থিক চাহিদার পত্র প্রত্যাখানও করা হয়েছে।
শিক্ষক নেতা ড. ফারুক হোসেন দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রকাশনা কমিটির সভাপতি হিসেবে। ওই দায়িত্বে থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্যালেন্ডার এবং বার্ষিক ডায়েরি ছাপিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এবার নিম্নমানের কাগজে ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়, যার সাইজ পূর্বের চেয়ে ছোট, প্লাস্টিক বাইন্ডিং পূর্বে ১২ এমএম হলেও এবার দেওয়া হয় ৯ এমএম। কাগজ ম্যাট পেপারের বদলে দেয়া হয় রিয়েল আর্ট। ডায়েরি ২০% বড় করা হয় এবং প্রায় ২.৫০ গুণ বেশি দাম নির্ধারণ করা হয়। আর এই কাজগুলো খুলনার কোনো প্রেসকে না জানিয়ে অতি গোপনে ঢাকার একটি প্রেস থেকে করানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা আগের থেকে অনেক কম খরচে এই কাজগুলো করেছি। একটা কমিটি ছিল, কমিটির সিদ্ধান্তেই সব কাজ হয়েছে। আমার একার মতামতে নয়। তবে দুর্নীতি হয়নি। এছাড়া নিয়োগে সুপারিশে আমার কথা যা বলা হচ্ছে, এটা আমি আজকে প্রথম শুনলাম।
গত বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভিসি ও প্রো ভিসির অপসারণের প্রক্রিয়া শুরুর খবর জানানো পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে ভিসির পক্ষে অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেন এই শিক্ষক নেতা। তিনি একটি বিবৃতি পাঠ করে বলেন, সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের বিচার না পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না শিক্ষকরা।
এ সময়ে তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটানোয় যারা দোষ করেছে, এই ঘটনার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অপসারণ দেওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। অপরাধ যেটা সেটা অপরাধই, সেটা আমাদের ছাত্রদেরও দাবি, শিক্ষকবৃন্দেরও দাবি। আমাদের পরিষ্কার অবস্থান, এই বিচার নিশ্চিত করেই ক্লাসে ফিরতে হবে। তা না হলে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত হবে না।’
একই সাথে তিনি ভিসি ও প্রো ভিসিকে অপসারণে ইউজিসির তদন্ত নিয়েও উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা এসেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে, অনুরোধ করতে। শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছি। উপদেষ্টার প্রতিনিধিদল (ইউজিসির সদস্য) তারাও এই ব্যাপার আমাদের সরকার আছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। তবে এখন আমরা দেশের পরিস্থিতি জানি, এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্বার্থে আমরা সবাই একাত্মতা প্রকাশ করে যাব।’
শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে এই প্রতিবেদকের সাথে কয়েজন শিক্ষক কথা বলেছেন। কুয়েটের একজন অধ্যাপক জানিয়েছেন, এই সবগুলি নিয়োগই ভিসিপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির সুপারিশে হয়েছে। শিক্ষক নেতারা একধিক কমিটিতে থেকে আর্থিক দুর্নীতি করছে। যার কারণে তারা এই ভিসির মায়া ছাড়তে পারছেন না।
নিয়োগ ও পদোন্নতি সুবিধা সব বিএনপিপন্থীদের
কুয়েটের অষ্টম উপাচার্য হিসেবে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ। ছাত্রজীবনে তিনি কুয়েট শাখার ছাত্রদলের সভাপতিও ছিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরে তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে। শুরু হয় নিয়োগের ভাগাভাগি। তিনি এ পর্যন্ত ৫৪ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ ও ৪ জনকে মাস্টাররোল থেকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকজন যে সরাসরি বিএনপি পরিবারের সদস্য তার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছেন, অফিস সহায়ক হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার, ড্রাইভার হিসেবে স্থানীয় যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির কৃষক দলের নেতা আতাউর রহমানের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম টগর, এই আতাউর রহমান নিজেও কুয়েটের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, যাকে পুনরায় অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়, ড্রাইভার হিসেবে খান জাহান আলী থানা যুবদল নেতা জুয়েল হাওলাদার, ডাটা প্রসেসর হিসেবে খান জাহান আলী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ আব্বাসের বড় ভাইয়ের মেয়ে তাজরিন তামান্না।
ভিসি যে নিয়োগ দুর্নীতি করেছেন তার একটি অডিও রেকর্ডও হাতে এসেছে এই প্রতিবেদকের। তাতে ভিসিকে বলতে শোনা গেছে, ‘ইমদাদ হচ্ছে দুষ্টুর শিরোমণি। ও করছে কী, এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে, যে স্যারকে বললেই চাকরি দিয়ে দেবে। আমি তো খবর পেয়ে গেছি। ওই প্রত্যেকদিন আসবে, স্যার এই লোকটা গরিব, খেতে পায় না। ও তো আমার ক্যারেকটার জানে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমদাদুল হক ওরফে এমদাদ মোড়ল। তিনি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হিসেবে কুয়েটে সবকিছুর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। ডাটা এন্ট্রি প্রসেসর হলেও পদোন্নতি নিয়ে হয়েছিলেন ভিসির সেকশন অফিসার। তিনি ভিসির খলিফা হিসেবে পরিচিত।
এর সাথে বিএনপি পন্থী আরও তিন খলিফা রয়েছেন, যারা কুয়েটের কর্মচারী। তারাও ভিসি মাছুদ যোগদানের পরই হঠাৎ পদোন্নতি পেয়েছেন, তারা হলেন, জালাল মুন্সী, অফিস সহায়ক থেকে একেবারে সেকশন অফিসার হয়েছেন তিনি। বাকি দুজন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট আশরাফুল আলম ও অফিস সহায়ক সাইফুলও একধাপ পদোন্নতি নিয়েছেন।
অবৈধ নিয়োগে প্রত্যাখ্যান ইউজিসির
২০১৮ সালে সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী ও মাস্টাররোল কর্মচারীদের নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও, উপাচার্য সেই কাজ করেছেন। ৫৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে ইউজিসির কাছে টাকা চাইলে তার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
কুয়েটের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, ১৭ মার্চ ইউজিসি একটি চিঠি দিয়ে জানায়, এই অস্থায়ী নিয়োগের বেতন দেওয়ার জন্য কুয়েটের চাহিদা মোতাবেক ৫২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউজিসি বেতন আটকে দিলে, কুয়েটের বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে তাদের বেতন চলমান রাখা হয়েছিল।
অপসারণের খবরের পর বদলি আদেশ, নিয়োগ
কুয়েটের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, বৃহস্পতিবার ভিসি ক্যাম্পাসের বাংলোতেই অবস্থান করেছেন। ওইদিন তিনি একাধিক অফিসিয়াল নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। কয়েকজন কর্মকর্তাকে ব্যাক ডেটে বিভিন্ন দপ্তরে বদলির আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও চারজনের ব্যাক ডেটে নিয়োগ বিষয়ে স্বাক্ষরও করেছেন।
এর মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামানকে এমইআরসিতে, পাবলিক রিলেশনস, ইনফরমেশন অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের সেকশন অফিসার শাহেদুজ্জামান শেখকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে, রেজিস্ট্রারের দপ্তরের সেকশন অফিসার মো. আজিজুর রহমানকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে, মো. শেখ হাফিজুর রহমানকে শিক্ষা শাখায় বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি ৭ জন কর্মচারীকে অন্য দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া অফিস সহায়ক মো. আব্দুল্লাহ, মো. আব্দুল্লাহ আল ওমর ফারুক শুভ, মো. হালিম ও মো. হাসিবুল মিঞাকে ব্যাকডেটে মাস্টাররোল থেকে চাকরি স্থায়ী করে দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনজন ডিরেক্টরকে বদলি করেছেন।
ছাত্র আন্দোলনে পরাজয়
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে শুক্রবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রো ভিসি শেখ শরীফুল আলম অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৩ এর ১০/২ ধারা অনুযায়ী ভিসিকে ও ১২/২ ধারা অনুযায়ী প্রো ভিসিকে প্রত্যাহার পূর্বক অব্যহতি প্রদান করে নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তন করা হলো।
এর আগে বুধবার সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। সেই সময়ে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করানোর জন্য অনুরোধ করে। তবে শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ প্রত্যাখান করে, তাদের হলের পানি, ইন্টারনেট বন্ধের কথা উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। একই সাথে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে অভিযোগ তুলে।
উপদেষ্টা সেই সময়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, আমার সাথে দুইজন ইউজিসির সদস্য এসেছেন। তারা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে কুয়েট প্রশাসনকে অবহিত করবেন। তোমাদের এই যাবতীয় অসুবিধা দ্রুত সমাধান করা হবে। সেই সময়ে তিনিছাত্রদের বহিষ্কার আদেশ ও মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাসও দেন। পাশাপাশি হল খুলে দেওয়াসহ যাবতীয় সমাধানের ব্যাপরেও শিক্ষার্থীদের সাথে একমত হন।
ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
৬৫ দিনের আন্দোলন আর ৫৮ ঘণ্টার অনশনে পেটের পেটের ক্ষুধায় যখন শরীর ঝিমিয়ে আসছিল, তখনই বুধবার মধ্যরাতে সংবাদ এসেছিল শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উপাচার্য অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত সোমবার বিকেল ৩ টায় তারা অনশন শুরু করেন। সেদিন ৩২ জন শিক্ষার্থীর অনশন শুরু করলে ইতোমধ্যে ৫ জন অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া দুইজন বাড়িতে চলে গেছেন।
এর আগে বুধবার সকালে অনশন প্রত্যাহার করানোর জন্য কুয়েট ক্যাম্পাসে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। তিনি অনশন প্রত্যাহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করলেও, ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যান্ত তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
১৪ এপ্রিল বিকেলে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই দিন কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ জানান, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট কতৃক গ্রহণ করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া আগামী ০৪ মে থেকে শুরু এবং সকল আবাসিক হলসমূহ আগামী ০২ মে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
একই সাথে ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকেতদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হোচেন আলী কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন।তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া ২২ জনের নাম ও পরিচয় এভাবে বাইরের কোন ব্যক্তির পক্ষে জানা সম্ভব না।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
ঝড়ের কবলে পড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের পর গাছে চাপা পড়ে জাটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর গ্রামের সুরুজ আলীর দুটি, নুরুল ইসলামের একটি, আব্দুর রহিমের দুটি, আবু সিদ্দিকের একটি ও ইদ্রিস আলীর দুটি এবং সোহাগী ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের রিপনের দুটি, শাহ্ নেওয়াজের একটি ও সিরাজুল ইসলামের একটি বসতঘর ভেঙে গেছে
২ দিন আগেপ্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সারোয়ার আলমকে সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
২ দিন আগেপ্রার্থীরা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকারি উদাসীনতার কারণে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শূন্যপদ বাড়ছে, অন্যদি
২ দিন আগে