ঋণের বোঝায় দিশেহারা বন্যায় নিঃস্ব মাছ চাষিরা

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

লক্ষ্মীপুরে সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে পুকুর, জলাশয় এবং মাছের ঘের ভেসে সব মাছ বের হয়ে গেছে। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন মাছচাষিরা। নতুন করে চাষাবাদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত অর্থ। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোরও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। সরকারি সহায়তা পেলে আবার চাষাবাদ শুরু করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ৩৭ হাজার ৭৬টি পুকুর ও জলাশয় ভেসে গেছে। এছাড়া অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষিদের।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের মৎস্য চাষি এটিএম হাসান মাহমুদ সোহাগ। ত্রিপল-ই তে বিএসসি পাস করে চাকরির পেছনে না দৌড়ে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন। যুব উন্নয়ন থেকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে মনোযোগী হয়েছেন তিনি। ঋণ করে দাঁড় করিয়েছেন পাঁচ একরের মৎস্য খামারটি। সফলতার মুখও দেখতে শুরু করেন। কিন্তু এবারের বন্যা তার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মাছ।

চাষি হাসান মাহমুদ সোহাগ বলেন, পাঁচ একরের একটি জলাশয়ে মাছ চাষ করি। একটি পুকুর আছে, ওই পুকুরে মাছের রেণু উৎপাদন করি। খামারে এক কেজি ওজনের পাঁচ হাজার পিছ রুই, দুই হাজার পিছ মৃগেল ছিল। এছাড়া খামারে কাতল, বিগহেড, সিলভার কার্প, ব্লাক কার্প, গ্রাস কার্প, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, ট্যাংরা, শিংসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ছিল। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মাছ হবে। সব মাছ ভেসে গেছে।

তিনি বলেন, দুই দফা বন্যা হয়েছে। প্রথম ধাপে অনেক মাছ বের হয়ে গেছে। চারপাশে জাল দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পানির উচ্চতা হু হু করে বাড়তে থাকায় জাল দিয়েও পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কিছু মাছ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় সেগুলোও বেরিয়ে যায়। এছাড়া বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এতে অবশিষ্ট যা মাছ ছিল, তাও দূষিত পানির কারণে মরে গেছে।

ঋণ নিয়ে খামার পরিচালনা করায় এখন ঋণের বোঝা নিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন এ চাষি। তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংক থেকে তিন লাখ এবং যুব উন্নয়ন থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। মাছের খাদ্যের দোকানে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা বাকি। এসব দেনা কীভাবে শোধ করবো, বুঝতে পারছি না। নতুন করে খামার শুরু করারও কোনো অবস্থা নেই।

একই এলাকার মৎস্য চাষি গাজী মো. বেলালের ১১ একরের জলাশয় ভেসে গেছে। এতে তিনিও বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, দুই ভাইয়ের যৌথ ব্যবসা। আমাদের মূল পেশা হলো মাছ চাষ। ১১ একরের জলাশয়ে রুই, কাতল, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মাছ ছিল। প্রতিটা মাছের ওজন দেড় থেকে দুই কেজির মধ্যে। মাছগুলো বিক্রি করার সময় হয়েছে, তখনই বন্যার পানি চলে আসে।

বলেন, বন্যার পানি দ্রুত উঠে পড়ে। চারপাশে জাল দিয়েও মাছ আটকানো সম্ভব হয়নি। আমার খামারের ওপর দিয়ে বন্যার পানির তীব্র স্রোত ছিল। এতে বেশিরভাগ মাছ বের হয়ে গেছে। ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিছু মাছ আছে, হয়তো বিক্রি করলে পাঁচ লাখ টাকার মতো হতে পারে। আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করে, তাহলে হয়তো ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব।

সদর উপজেলা দত্তপাড়া ইউনিয়নের করইতোলা গ্রামের মৎস্য চাষি মো. মামুনুর রশিদ বলেন, তিনটি পুকুরসহ চারটি জলাশয়ে মিশ্র জাতের মাছ চাষ করেছি। দুই বছরের পুরোনো মাছ ছিল৷ নিজের চোখের সামনে দিয়ে সব মাছ চলে গেছে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ ছিল যে জাল দিয়েও মাছ আটকানো যায়নি। আমার প্রায় ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকারি কোনো সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। আমাদের প্রধান পেশা মাছ চাষ করা।

সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ এলাকার মৎস্য চাষি আবু সুফিয়ানের পাঁচ একরের জলাশয় থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। মিশ্র জাতের প্রতিটি মাছের ওজন সাতশ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়েছিল।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০ লাখ টাকার পোনামাছের বরাদ্দ পেয়েছি। সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ঢাকা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়ম পরিপালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি।’

৪ দিন আগে

গণতন্ত্রের গলদ

গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র জনগণই ক্ষমতার উৎস। সেটা আজকাল কেউ মানে বলে মনে হয় না। সে বাংলাদেশেই হোক বা যুক্তরাষ্ট্র—ক্ষমতাসীন নেতাদের সবাই নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করে। গণতন্ত্রের অন্যতম পুরোধা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেছিলেন, ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য

৪ দিন আগে

শোক দিবসের অনুষ্ঠানের ভিডিও প্রচার ও নাশকতা করায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কামরুল হাসান তার নিজ দোকানের সামনে ইটের রাস্তায় পুরাতন মোটরসাইকেলের টায়ার জ্বালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কামরুলকে আটক করে। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য আসামিদের নাম জানতে পারে পুলিশ।

৪ দিন আগে

গ্রিন শিপবিল্ডিং খাত দেশের শিল্পায়নে সুযোগ তৈরি করবে: শিল্প উপদেষ্টা

শিল্প উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প কার্বন নিঃসরণ জাহাজের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএসও) ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। যে দেশগুলো পরিবেশবান্ধব, স্বল্প-নিঃসরণ জাহাজ তৈরি ও রপ্তানি করত

৫ দিন আগে