দলীয়করণ ও বিরাজনীতিকরণমুক্ত একাডেমিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলাসহ ১১ দফা অঙ্গীকারের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে ডাকসু নির্বাচনে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও খাদ্যসংকট নিরসনের পাশাপাশি ইশতেহারে নারীবান্ধব ও সবার জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ইশতেহারটি পাঠ করেন।
ইশতেহারে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে শতভাগ আবাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাইজেশন, ক্যাম্পাসের উদ্বাস্তু ও মাদকসেবীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া, সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠনের প্রতিশ্রুতি উঠে এসেছে।
ইশতেহারের যে ১১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে, তার প্রধান প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলো তুলে ধরা হলো—
দলীয়করণ ও বিরাজনীতিকরণ মুক্ত ক্যাম্পাস
- গণরুম, আসন সংকট, খাবার সংকট ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার স্থায়ী সমাধান।
- ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করা।
- ছাত্র রাজনীতির কাঠামোগত সংস্কার ও শিক্ষার্থীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন।
- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ ও সংস্কার।
- দলীয় বয়ানমুক্ত ইতিহাস পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি ও গবেষণার সুযোগ তৈরি।
- নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন ও কাঠামোগত সংস্কার।
- পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন, বাজেটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ।
শিক্ষা, কারিকুলাম ও গবেষণা
- গবেষণা বাজেট ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা।
- ‘Research & Innovation Fund’ সম্প্রসারণ, থিসিস/ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করা।
- স্মার্ট অবকাঠামো, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করা।
- নিয়মিত স্টুডেন্ট কনফারেন্স, রিসার্চ ফেয়ার ও হেল্পডেস্ক প্রতিষ্ঠা।
- শীর্ষ জার্নাল অ্যাকসেস ও গবেষণা সফটওয়্যার সরবরাহ।
- ক্রস-ডিপার্টমেন্ট কোর্স ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সিলেবাস চালু।
- মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা।
- শিক্ষক মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ফিডব্যাক কার্যকর করা।
- একাডেমিক রাইটিং ও সফটওয়্যার ট্রেনিং বাধ্যতামূলক করা।
- প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল, অডিওবুক, বিশেষ রিসোর্স নিশ্চিত।
- এআই ইনকিউবেটর ও উন্নত ল্যাব স্থাপন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ও অনুবাদকর্ম সম্প্রসারণ।
- মানসম্পন্ন ক্লাসরুম, কমনরুম, অডিটোরিয়াম ও স্টেশনারি উন্নয়ন।
- থিসিস সাপোর্ট সেল ও স্পেশাল এক্সামের ফি কমানো।
ক্যারিয়ার ও কর্মসংস্থান
- বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ তৈরি করা।
- সব শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টার্নশিপ, জব ফেয়ার ও ক্যারিয়ার সেমিনার বাধ্যতামূলক।
- উদ্যোক্তা মেলা, ডিজিটাল স্কিল ট্রেনিং ও বিনিয়োগ সংযোগ।
- মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা।
- স্টার্টআপ ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা ও গবেষণা তহবিল গঠন করা।
ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
- ধর্মীয় উৎসবের আগে-পরে পরীক্ষা না রাখা।
- আদিবাসী উৎসব ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তি।
- সংখ্যালঘু ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- কেন্দ্রীয় উপাসনালয় নির্মাণ।
নারীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস
- যৌন নিপীড়ন সেলের কার্যকারিতা ও তদন্তের স্বচ্ছতা।
- আইনি সহায়তা ও সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন।
- প্রক্টরিয়াল টিম ও ক্যাম্পাস নিরাপত্তা বৃদ্ধি।
- পিরিয়ড লিভ, ভেন্ডিং মেশিন ও ডে-কেয়ার সেন্টার চালু।
- নারীদের হলে নিরাপত্তা, স্যানিটেশন, সংস্কার ও সময়সীমা বৃদ্ধি।
- নারী গেইটকিপার নিয়োগ ও আইডি-ভিত্তিক প্রবেশাধিকার।অসুস্থ শিক্ষার্থীর জন্য দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা।
- নারী শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সুযোগ বৃদ্ধি।
- ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য
- প্রতিটি হলে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে ক্যানটি চালু।
- বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি নিশ্চিত করা।
- ন্যায্য দামে মানসম্পন্ন খাবার ও ডিজিটাল ক্রেডিট সিস্টেম।
- মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন ও অ্যাম্বুলেন্স বৃদ্ধি।
- শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবীমা, ই-হেলথ প্রোফাইল ও ২৪/৭ মেডিকেল সাপোর্ট।
- হলভিত্তিক ফার্মেসি, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও হেল্পলাইন।
- সব টয়লেট সংস্কার।
আবাসন
- ১ শিক্ষার্থী = ১ বেড = ১ টেবিল ব্যবস্থা।
- নবীনদের দ্রুত সিট প্রদান বা বৃত্তির ব্যবস্থা।
- নারীদের জন্য নতুন হল ও ক্যাম্পাসসংলগ্ন আবাসন নির্মাণ।
- ইন্টারনেট, লিফট ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নয়ন।
- ছারপোকা দমনে বৈজ্ঞানিক গবেষণা।
পরিবহন
- বাসের ট্রিপ সংখ্যা ও সময় বৃদ্ধি, রাত ৮টা পর্যন্ত চালু।
- শাটল বাস সার্ভিস পুনর্প্রবর্তন।
- পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুট চালু।
- বাসচালকদের অসদাচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
- ফিটনেসবিহীন বাস নিষিদ্ধ, নতুন বাস সংযোজন।
- যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নীতি ও ক্যাম্পাসে রিকশা নিয়মিতকরণ।
- ছুটির সময়ে নিরাপদ বাস সার্ভিস।
ডিজিটালাইজেশন
- ই-লাইব্রেরি পুনরায় চালু।
- প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন।
- স্মার্ট নোটিশ বোর্ড, মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন সেবা।
- ভর্তি থেকে সার্টিফিকেট পর্যন্ত সব লেনদেন স্মার্ট কার্ডে।
- ফ্রি ওয়াইফাই ও ক্যাম্পাস ওয়াইড ইন্টারনেট।
- অ্যালামনাই অ্যাপ ও ডেটাবেজ।
- পরিবহন ব্যবস্থার অ্যাপ চালু।
খেলাধুলা
- মাঠ, কোর্ট, জিম ও সুইমিংপুলের উন্নয়ন।
- কোটাধারী ও সাধারণ খেলোয়াড়ের বৈষম্য দূরীকরণ।
- আইডিভিত্তিক মাঠ প্রবেশ নিশ্চিত।
- সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদদের বৃত্তি ও সহায়তা।
- রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচক প্যানেল।
পরিবেশ ও স্যানিটেশন
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও আধুনিক টয়লেট ব্যবস্থা।
- পরিবেশসম্মত উন্নয়ন, প্লাস্টিক কমানো, বৃক্ষরোপণ।
- শিক্ষার্থী অংশগ্রহণে ক্লিনিং ইভেন্ট।
- সৌরশক্তি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, রিসাইক্লিং ব্যবস্থা।
- হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করে শব্দদূষণ কমানো।