
শাহরিয়ার শরীফ

নিষিদ্ধ আ.লীগ— যা কিছু শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা
ছাত্র-জনতার গড়ে তোলা গণআন্দোলনের পরপরই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যেসব যুক্তি ছিল বা ওই সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে তা যতটা গ্রহণযোগ্যতা পেত, ৯ মাস পর তা অনেকটাই শিথিল হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু এরপর জাতীয় বা রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠার বদলে বিভাজন বেড়ে যাওয়া এবং সুশাসনের অভাবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় ফাটল ধরেছে। এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় ইসলামি শক্তির উত্থানের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোসহ উদার রাজনীতিতে বিশ্বাসী অনেকের অবস্থানই ছিল নির্বাচনের মাধ্যমে জনতার কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগকে দাঁড় করিয়ে শিক্ষা দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় মানুষের কাছে দলটির অবস্থান কোথায়, তা বোঝার সহজ সুযোগ রইল না বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত করতে ৯ মাস লাগল কেন? যখন অভ্যুত্থান হয়েছিল তখনই এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। এখন তো একেকটা রাজনৈতিক দল একেক ধরনের অবস্থান নিয়ে নেমেছে। যেটা আমরা চিন্তা করেছিলাম— একটা সুষ্ঠু-সুন্দর রাজনীতি দেখতে পাব— আসলে তা দেখতে পাচ্ছি না।’
অধ্যাপক দিলারার মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি স্থগিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ঢুকে গেছে। নিয়তান্ত্রিক রাজনীতি ও সাংবিধানিক রাজনীতির সম্ভাবনা থেকেও বাংলাদেশ দূরে সরে গেল।

ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাতে স্পষ্ট ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর মাহফুজ আলম (তথ্য উপদেষ্টা) যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ এই রাজাকার ও পাকিস্তানপন্থি— এসব শুনতে শুনতে আমরা ১৫ বছর কাটালাম, নতুন করে আর শুনতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক স্ট্যাটাস, শাহবাগে জামায়াত নেতার দেওয়া ‘গোলাম আজমের বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাঁই নেই’ স্লোগান ও সে বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান পরিষ্কার না করা, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থানের স্পষ্ট না করা— এসব বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট ঘনীভূত হওয়ার আলামত দেখতে পাচ্ছেন ড. দিলারা চৌধুরী।
জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেনি। নানা ঘটনাপ্রবাহে একাধিকবার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের আলাপ উঠেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসা নিতে দেশ ছাড়লে ফের এসব আলোচনা আরও গতি পায়।
এ ঘটনা ঘিরেই ফের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার দাবির প্রতি সংহতি জানায় গোটা দলই। প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে ও পরে শাহবাগে টানা তিনদিন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান নেয় এনসিপি। তাতে আরও কিছু দল ও সংগঠন সমর্থন জানায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় জুলাই আন্দোলন দমাতে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কারও কারও অভিমত, অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করল। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশে রাজনীতির সেক্যুলার ধারাটি দুর্বল হয়ে পড়বে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ব্যর্থ হলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ধারাটি আরও শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রভাব বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ রাজনীতির কথা বলা হচ্ছিল, সেটি আর থাকছে না বলেও মনে করেন তিনি।
সাব্বির আহমেদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ধারা শক্তিশালী হবে। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও অনেকগুলো ধারা রয়েছে— মডারেট ধারা, উদারনৈতিক ধারা, জঙ্গি ধারা। এর মধ্যে কোন ধারাটি বাংলাদেশকে ডিকটেট করবে, সেটা হয়তো সময় বলে দেবে।’
এর সঙ্গে অবশ্য বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানও সম্পর্কিত বলে মনে করেন অধ্যাপক সাব্বির। তার মতে, বিএনপি জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে ব্যর্থ হলে ইসলামী ধারার শক্তিশালী হয়ে ওঠার সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না। কারণ জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি শক্তিশালী হলে ইসলামপন্থিদের সফল হওয়া কঠিন।
ড. সাব্বির মনে করেন, রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের চলে যাওয়ার অর্থ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেক্যুলার ধারা দুর্বল হয়ে পড়া। এখন মোটামুটি কাছাকাছি ধারা বা চিন্তার লোকজন নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে কারও কারও মতে, কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর আওয়ামী লীগ আইনি, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষয়িষ্ণু ধারায় এগিয়ে যেতে থাকবে। এ অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগের নিজ নাম ও প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন।

বর্তমান বাস্তবতায় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি এমনিতেই জনগণের দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে আছে। তারা মানুষের সামনে যেতে পারছে না। মানুষ তাদের আর গ্রহণ করছে না। যেখানেই তারা উকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করেছে, সেখানেই মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে।’
তা সত্ত্বেও নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পক্ষ নিতে পারছেন না অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। তিনি বলেন, রাজনীতি দিয়ে রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল পতনের পরপরই আইন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া। এখন চাপে পড়ে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হয়েছে। এ আন্দোলনে আবার সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি।
যেভাবেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হোক, দিন শেষে এর ফলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার পথ বাংলাদেশের জনগণের কাছে চিরকালের জন্য রুদ্ধ হয়ে গেল বলে মনে করেন ড. মাসুম। বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আইনি, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শূন্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে।’

মুসলিম লীগের উদাহরণ টেনে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সারভাইভ করার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তবে সরাসরি নিজেদের নামে টিকতে না পারলেও গত ১৫ বছরে যে লুটেরা শ্রেণি তৈরি হয়েছে, তারা নানাভাবে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভর করে তাদের লোকেরা রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার চেষ্টা করতে পারে।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রভাব বুঝতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে কী ধরনের প্রভাব রাজনীতিতে পড়বে, তা সময়ই বলে দেবে। এই মুহূর্তে কেউ জানে না এর কী প্রভাব পড়তে পারে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো ধীরে ধীরে বোঝা যাবে। আপাতত সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

নিষিদ্ধ আ.লীগ— যা কিছু শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা
ছাত্র-জনতার গড়ে তোলা গণআন্দোলনের পরপরই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যেসব যুক্তি ছিল বা ওই সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে তা যতটা গ্রহণযোগ্যতা পেত, ৯ মাস পর তা অনেকটাই শিথিল হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু এরপর জাতীয় বা রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠার বদলে বিভাজন বেড়ে যাওয়া এবং সুশাসনের অভাবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় ফাটল ধরেছে। এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় ইসলামি শক্তির উত্থানের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোসহ উদার রাজনীতিতে বিশ্বাসী অনেকের অবস্থানই ছিল নির্বাচনের মাধ্যমে জনতার কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগকে দাঁড় করিয়ে শিক্ষা দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় মানুষের কাছে দলটির অবস্থান কোথায়, তা বোঝার সহজ সুযোগ রইল না বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত করতে ৯ মাস লাগল কেন? যখন অভ্যুত্থান হয়েছিল তখনই এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। এখন তো একেকটা রাজনৈতিক দল একেক ধরনের অবস্থান নিয়ে নেমেছে। যেটা আমরা চিন্তা করেছিলাম— একটা সুষ্ঠু-সুন্দর রাজনীতি দেখতে পাব— আসলে তা দেখতে পাচ্ছি না।’
অধ্যাপক দিলারার মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি স্থগিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ঢুকে গেছে। নিয়তান্ত্রিক রাজনীতি ও সাংবিধানিক রাজনীতির সম্ভাবনা থেকেও বাংলাদেশ দূরে সরে গেল।

ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাতে স্পষ্ট ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর মাহফুজ আলম (তথ্য উপদেষ্টা) যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ এই রাজাকার ও পাকিস্তানপন্থি— এসব শুনতে শুনতে আমরা ১৫ বছর কাটালাম, নতুন করে আর শুনতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক স্ট্যাটাস, শাহবাগে জামায়াত নেতার দেওয়া ‘গোলাম আজমের বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাঁই নেই’ স্লোগান ও সে বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান পরিষ্কার না করা, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থানের স্পষ্ট না করা— এসব বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট ঘনীভূত হওয়ার আলামত দেখতে পাচ্ছেন ড. দিলারা চৌধুরী।
জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেনি। নানা ঘটনাপ্রবাহে একাধিকবার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের আলাপ উঠেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসা নিতে দেশ ছাড়লে ফের এসব আলোচনা আরও গতি পায়।
এ ঘটনা ঘিরেই ফের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার দাবির প্রতি সংহতি জানায় গোটা দলই। প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে ও পরে শাহবাগে টানা তিনদিন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান নেয় এনসিপি। তাতে আরও কিছু দল ও সংগঠন সমর্থন জানায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় জুলাই আন্দোলন দমাতে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কারও কারও অভিমত, অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করল। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশে রাজনীতির সেক্যুলার ধারাটি দুর্বল হয়ে পড়বে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ব্যর্থ হলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ধারাটি আরও শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রভাব বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ রাজনীতির কথা বলা হচ্ছিল, সেটি আর থাকছে না বলেও মনে করেন তিনি।
সাব্বির আহমেদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ধারা শক্তিশালী হবে। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও অনেকগুলো ধারা রয়েছে— মডারেট ধারা, উদারনৈতিক ধারা, জঙ্গি ধারা। এর মধ্যে কোন ধারাটি বাংলাদেশকে ডিকটেট করবে, সেটা হয়তো সময় বলে দেবে।’
এর সঙ্গে অবশ্য বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানও সম্পর্কিত বলে মনে করেন অধ্যাপক সাব্বির। তার মতে, বিএনপি জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে ব্যর্থ হলে ইসলামী ধারার শক্তিশালী হয়ে ওঠার সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না। কারণ জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি শক্তিশালী হলে ইসলামপন্থিদের সফল হওয়া কঠিন।
ড. সাব্বির মনে করেন, রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের চলে যাওয়ার অর্থ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেক্যুলার ধারা দুর্বল হয়ে পড়া। এখন মোটামুটি কাছাকাছি ধারা বা চিন্তার লোকজন নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে কারও কারও মতে, কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর আওয়ামী লীগ আইনি, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষয়িষ্ণু ধারায় এগিয়ে যেতে থাকবে। এ অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগের নিজ নাম ও প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন।

বর্তমান বাস্তবতায় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি এমনিতেই জনগণের দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে আছে। তারা মানুষের সামনে যেতে পারছে না। মানুষ তাদের আর গ্রহণ করছে না। যেখানেই তারা উকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করেছে, সেখানেই মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে।’
তা সত্ত্বেও নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পক্ষ নিতে পারছেন না অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। তিনি বলেন, রাজনীতি দিয়ে রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল পতনের পরপরই আইন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া। এখন চাপে পড়ে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হয়েছে। এ আন্দোলনে আবার সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি।
যেভাবেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হোক, দিন শেষে এর ফলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার পথ বাংলাদেশের জনগণের কাছে চিরকালের জন্য রুদ্ধ হয়ে গেল বলে মনে করেন ড. মাসুম। বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আইনি, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শূন্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে।’

মুসলিম লীগের উদাহরণ টেনে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সারভাইভ করার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তবে সরাসরি নিজেদের নামে টিকতে না পারলেও গত ১৫ বছরে যে লুটেরা শ্রেণি তৈরি হয়েছে, তারা নানাভাবে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভর করে তাদের লোকেরা রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার চেষ্টা করতে পারে।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রভাব বুঝতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে কী ধরনের প্রভাব রাজনীতিতে পড়বে, তা সময়ই বলে দেবে। এই মুহূর্তে কেউ জানে না এর কী প্রভাব পড়তে পারে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো ধীরে ধীরে বোঝা যাবে। আপাতত সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড আছে তাদের পরামর্শক্রমে কিছু পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। উনি কেবিনে আছেন। টেস্টের রিপোর্টগুলো নিয়ে বোর্ডের পর্যালোচনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (২৩ নভেম্বর) রাত ৮ টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সাক্ষাতে
১৭ ঘণ্টা আগে
তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় কর্মী সমর্থকরা একাধিকবার বিক্ষোভ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাজুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। তার বিরুদ্ধে দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডসহ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় ইসলামবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার আছে। ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে বিএনপি কখনো আপোষ করেনি।
১৯ ঘণ্টা আগে