অরুণাভ বিশ্বাস
২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের একটি রায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছিল। সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার’ পূর্ণ পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে দেশে এক নজিরবিহীন ছাত্রবিক্ষোভের সূচনা হয়। সেই আন্দোলন প্রথমে ‘কোটা সংস্কার’ দাবিতে শুরু হলেও, দ্রুতই তা রূপ নেয় একটি সার্বিক গণবিপ্লবে—যেখানে শুধু চাকরির প্রক্রিয়া নয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে সরকারের ক্ষমতা, বৈধতা, এবং শাসনব্যবস্থার ন্যায্যতা।
এই আন্দোলন ইতিহাসে জায়গা করে নেয় ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে—যা কেবল একটি মাসের ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা নয়, বরং ছিল একটি বঞ্চিত প্রজন্মের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
১ জুলাই ২০২৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে একদল ছাত্র ‘কোটা বাতিল’ রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বসে। ধীরে ধীরে সেই প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও সাধারণ ছাত্রসমাজ। তাদের দাবি ছিল—মেধা, যোগ্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে চাকরির নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
তবে আন্দোলন দ্রুত বিস্তৃত হয় কারণ রায়ের মাধ্যমে ছাত্রসমাজের মনে যে ‘বঞ্চনার’ বোধ তৈরি হয়েছিল, তা আর কেবল কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির সংকট, অর্থনৈতিক চাপ, শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচ—সব মিলিয়ে এই আন্দোলন হয়ে উঠেছিল একটি বহুমাত্রিক প্রতিবাদের মঞ্চ।
১৫ জুলাই থেকে সরকারের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাবি ও অন্যান্য ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায়। পুলিশের সহযোগিতায় লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল আর সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যান। এই মৃত্যু গোটা আন্দোলনের ধারাকে বদলে দেয়। এর পরেই আন্দোলন আর শুধুমাত্র চাকরির দাবি নয়, বরং ‘শেখ হাসিনা সরকার পতনের’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের মাত্রা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার নজর কাড়ে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়: “পুলিশ সদস্যরা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।” অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব ছিল শান্তিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, কিন্তু তারা ভয়ভীতি ছড়াতে প্রাণঘাতী পদ্ধতি বেছে নেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভল্কার টার্ক বলেন: “এখানে অতিরিক্ত এবং ভয়ংকর মাত্রার শক্তির প্রয়োগ হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।”
তার মতে, সরকারের এই রূঢ় ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়ের চেতনার পরিপন্থী।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন: “এই আন্দোলন শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতাকে প্রথমবারের মতো বাস্তব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।” তিনি এটিকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের দমননীতির বিরুদ্ধে জনগণের সাড়া বলেও অভিহিত করেন।
১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে আন্দোলনের ইতিহাসে ‘জুলাই ম্যাসাকার’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। সরকারি বাহিনী ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় নিহত হয় শত শত বিক্ষোভকারী। র্যাব ও পুলিশের গুলিতে আহত হয় হাজারেরও বেশি তরুণ।
বিশেষ করে চোখে গুলিবর্ষণ ছিল সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয়—মানবাধিকার সংস্থার হিসেবে, অন্তত ৫৫০ জন বিক্ষোভকারী তাদের দৃষ্টিশক্তি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে হারান।
দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকলেও আন্দোলনের গতি থামানো যায়নি। ৫ আগস্ট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার পর লে মন্ডে, দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে “ভূমিকম্পের মতো রাজনৈতিক পরিবর্তন” বলে উল্লেখ করে।
সরকার পতনের পরেই শুরু হয় সংবিধানিক টানাপোড়েন—কারা গঠন করবে অন্তর্বর্তী সরকার, কী হবে নির্বাচনের পথনকশা, রাষ্ট্রপতির ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়।
এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তরুণরাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, যিনি পরে অস্থায়ী সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হন। নাহিদের মতো অসংখ্য তরুণ-তরুণী, যারা কোনোদিন রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না, তারাই হয়ে উঠেছিলেন দেশের নতুন দিক নির্দেশক।
জুলাই আন্দোলনের প্রাপ্তি শুধু রাজনৈতিক নয়—এটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তবু অনেক ক্ষত এখনো শুকোয়নি। যারা দৃষ্টি হারিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, যারা পরিবার হারিয়েছে—তাদের জন্য এই ইতিহাস চিরন্তন রক্তাক্ত স্মৃতি হয়ে থাকবে।
২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের একটি রায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছিল। সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার’ পূর্ণ পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে দেশে এক নজিরবিহীন ছাত্রবিক্ষোভের সূচনা হয়। সেই আন্দোলন প্রথমে ‘কোটা সংস্কার’ দাবিতে শুরু হলেও, দ্রুতই তা রূপ নেয় একটি সার্বিক গণবিপ্লবে—যেখানে শুধু চাকরির প্রক্রিয়া নয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে সরকারের ক্ষমতা, বৈধতা, এবং শাসনব্যবস্থার ন্যায্যতা।
এই আন্দোলন ইতিহাসে জায়গা করে নেয় ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে—যা কেবল একটি মাসের ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা নয়, বরং ছিল একটি বঞ্চিত প্রজন্মের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
১ জুলাই ২০২৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে একদল ছাত্র ‘কোটা বাতিল’ রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বসে। ধীরে ধীরে সেই প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও সাধারণ ছাত্রসমাজ। তাদের দাবি ছিল—মেধা, যোগ্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে চাকরির নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
তবে আন্দোলন দ্রুত বিস্তৃত হয় কারণ রায়ের মাধ্যমে ছাত্রসমাজের মনে যে ‘বঞ্চনার’ বোধ তৈরি হয়েছিল, তা আর কেবল কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির সংকট, অর্থনৈতিক চাপ, শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচ—সব মিলিয়ে এই আন্দোলন হয়ে উঠেছিল একটি বহুমাত্রিক প্রতিবাদের মঞ্চ।
১৫ জুলাই থেকে সরকারের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাবি ও অন্যান্য ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায়। পুলিশের সহযোগিতায় লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল আর সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যান। এই মৃত্যু গোটা আন্দোলনের ধারাকে বদলে দেয়। এর পরেই আন্দোলন আর শুধুমাত্র চাকরির দাবি নয়, বরং ‘শেখ হাসিনা সরকার পতনের’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের মাত্রা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার নজর কাড়ে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়: “পুলিশ সদস্যরা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।” অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব ছিল শান্তিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, কিন্তু তারা ভয়ভীতি ছড়াতে প্রাণঘাতী পদ্ধতি বেছে নেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভল্কার টার্ক বলেন: “এখানে অতিরিক্ত এবং ভয়ংকর মাত্রার শক্তির প্রয়োগ হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।”
তার মতে, সরকারের এই রূঢ় ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়ের চেতনার পরিপন্থী।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন: “এই আন্দোলন শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতাকে প্রথমবারের মতো বাস্তব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।” তিনি এটিকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের দমননীতির বিরুদ্ধে জনগণের সাড়া বলেও অভিহিত করেন।
১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে আন্দোলনের ইতিহাসে ‘জুলাই ম্যাসাকার’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। সরকারি বাহিনী ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় নিহত হয় শত শত বিক্ষোভকারী। র্যাব ও পুলিশের গুলিতে আহত হয় হাজারেরও বেশি তরুণ।
বিশেষ করে চোখে গুলিবর্ষণ ছিল সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয়—মানবাধিকার সংস্থার হিসেবে, অন্তত ৫৫০ জন বিক্ষোভকারী তাদের দৃষ্টিশক্তি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে হারান।
দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকলেও আন্দোলনের গতি থামানো যায়নি। ৫ আগস্ট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার পর লে মন্ডে, দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে “ভূমিকম্পের মতো রাজনৈতিক পরিবর্তন” বলে উল্লেখ করে।
সরকার পতনের পরেই শুরু হয় সংবিধানিক টানাপোড়েন—কারা গঠন করবে অন্তর্বর্তী সরকার, কী হবে নির্বাচনের পথনকশা, রাষ্ট্রপতির ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়।
এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তরুণরাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, যিনি পরে অস্থায়ী সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হন। নাহিদের মতো অসংখ্য তরুণ-তরুণী, যারা কোনোদিন রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না, তারাই হয়ে উঠেছিলেন দেশের নতুন দিক নির্দেশক।
জুলাই আন্দোলনের প্রাপ্তি শুধু রাজনৈতিক নয়—এটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তবু অনেক ক্ষত এখনো শুকোয়নি। যারা দৃষ্টি হারিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, যারা পরিবার হারিয়েছে—তাদের জন্য এই ইতিহাস চিরন্তন রক্তাক্ত স্মৃতি হয়ে থাকবে।
তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারের প্রতি অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগেছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সহস্রাধিক মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ মাস। বর্ষপঞ্জির পাতায় সেটি ৫ আগস্ট লেখা থাকলেও যে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট শাসনের, সেই ছাত্র-জনতার হৃদয়ে দিনটি ৩৬ জুলাই হিসেবেই জেগে রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেএই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো—এতে অনেক সময় জোট সরকার গঠনে দীর্ঘ সময় লাগে।
১৮ ঘণ্টা আগেইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আগামীকাল বাদ জোহর দুপুর ১:৩০ টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
১৯ ঘণ্টা আগে