বিজ্ঞান

সব মানুষ কেন ডানহাতি নয়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ০১
নানা কারণেই মানুষ বামহাতি হয়

আমাদের চারপাশে বেশিরভাগ মানুষই ডানহাতি। তার মানে, তারা লেখে, খায়, কাজকর্ম করে মূলত ডান হাতে। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এসব কাজ করেন বাম হাতে। আমরা একে একটু ব্যতিক্রম বলে মনে করি। হয়তো প্রথম দেখায় একটু অবাকও হই—এই মানুষটা বাম হাতে লেখে? খায়?

আসলে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ মানুষ বামহাতি। সংখ্যায় কম হলেও, বামহাতিরা একেবারে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। প্রশ্ন হলো—বামহাতি কেন হয় মানুষ? এটা কি জন্মগত? না কি পরে শেখা?

জিনই কি দায়ী?

বিজ্ঞান বলছে, মানুষ বামহাতি হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো জিন। অর্থাৎ, আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা বংশগত উপাদান। যদি কারও বাবা-মা, দাদা-দাদি বা পরিবারের অন্য কেউ বামহাতি হন, তাহলে সেই শিশুর বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তবে এটা সরাসরি উত্তরাধিকার সূত্রে আসে না। অনেক জিন একসঙ্গে কাজ করে, আবার পরিবেশেরও একটা ভূমিকা থাকে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. সিলভিয়া পার্লি বলেন, ‘TUBB4B নামের এক ধরনের জিন বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এই জিন আমাদের মস্তিষ্কের গঠন ও কাজের ওপর প্রভাব ফেলে।’

মানব মস্তিষ্কের দুটি অংশ—বাম ও ডান হেমিস্ফিয়ার। মজার ব্যাপার হলো, মস্তিষ্কের এক পাশ শরীরের বিপরীত দিক নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, বাম মস্তিষ্ক ডান হাত নিয়ন্ত্রণ করে, আর ডান মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে বাম হাত।

ডানহাতি মানুষের বাম দিকের মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় থাকে। আর বামহাতিদের ক্ষেত্রে ডান মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় হয়। এই কারণেই অনেক বামহাতি মানুষের মধ্যে দেখা যায় অতিরিক্ত সৃজনশীলতা বা কল্পনাশক্তি।

ড. ক্লাইড ফ্রাঙ্কস নামে এক গবেষক বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষের ভাষা ও নড়াচড়ার মতো কাজ নির্ধারণ করে বাম মস্তিষ্ক। সেটাই মানুষকে ডানহাতি হতে উৎসাহিত করে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় কিছু বিষয় শিশুর বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। যেমন, টেসটোসটেরন নামের একটি হরমোন। গর্ভকালীন সময়ে এই হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকলে শিশুর মস্তিষ্কের ডান অংশ বেশি সক্রিয় হতে পারে, ফলে সে বামহাতি হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়া গর্ভাবস্থায় শিশুর পজিশন, প্রসবকালীন জটিলতা কিংবা আশপাশের পরিবেশ ও শেখার পদ্ধতিও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

বামহাতিদের কিছু বিশেষ গুণও আছে। যেমন: সৃজনশীল কাজ – ছবি আঁকা, গান-বাজনা, লেখালেখি ইত্যাদিতে তারা ভালো করতে পারে। বামাহাতিদের কল্পনাশক্তিও ব্যতিক্রম হয়। ক্রিকেট, টেনিস বা বক্সিংয়ের মতো খেলায় বামহাতিরা বাড়তি সুবিধা পান, কারণ তাদের খেলার কৌশল প্রতিপক্ষের কাছে অপ্রসাঙ্গিক হয়।

এই পৃথিবীর বেশিরভাগ জিনিসই তৈরি হয় ডানহাতিদের জন্য। যেমন—কাঁচি, ডেস্ক, দরজার হাতল, কম্পিউটার মাউস, বা এমনকি স্কুলের বেঞ্চও। তাই বামহাতিদের কিছুটা অসুবিধা হয়।

আগে বামহাতিদের নিয়ে কুসংস্কারও ছিল। অনেকেই ভাবতেন, বামহাতি হওয়া মানেই খারাপ কিছু। অনেক শিশুকে জোর করে ডান হাতে লেখানো হতো। এখন অবশ্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। বামহাতিকে এখন এক ধরনের স্বাভাবিকতা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়।

বামহাতি হওয়া কোনো অস্বাভাবিকতা নয়। এটা এক ধরনের শারীরিক বৈচিত্র্য। কারও মস্তিষ্ক একটু ভিন্নভাবে কাজ করে বলেই সে বাম হাতে লিখে, খায়, কাজ করে। আর এই ভিন্নতাই তাকে করে তুলতে পারে আরও সৃজনশীল, আরও প্রতিভাবান।

সূত্র: হাউ ইটস ওয়ার্কস

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

সার্ক যেভাবে গঠিত হয়েছিল

সার্কের সূচনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি, নানা রাজনৈতিক সমঝোতা এবং কিছু সাহসী কূটনৈতিক উদ্যোগ।

১৬ ঘণ্টা আগে

মাত্রাতিরিক্ত অ্যাসিডিটি কমাবেন কী করে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আগে জানতে হবে, অ্যাসিডিটি কেন হয়। আমাদের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা খাবার হজমে সহায়তা করে।

১৬ ঘণ্টা আগে

সংখ্যানুপাতিক বা পিআর নির্বাচন ব্যবস্থা আসলে কেমন

এই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো—এতে অনেক সময় জোট সরকার গঠনে দীর্ঘ সময় লাগে।

১৭ ঘণ্টা আগে

নিষেধাজ্ঞার পাহাড় মাথায় নিয়েও ইরানের অর্থনীতি কীভাবে টিকে আছে

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানের ওপর আরোপিত হয় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।

২ দিন আগে