স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু মশা কীভাবে চিনবেন?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
চ্যাটজিপিটির চোখে এডিস মশা

বাংলাদেশে বর্ষা এলেই ডেঙ্গুর ভয় বাড়ে। সংবাদমাধ্যমে মৃত্যুর খবর আসে, হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ে রোগীতে, আর শহরের মানুষজন একরকম আতঙ্কে দিন কাটায়—“আমারও যদি ডেঙ্গু হয়!” এই ভয় একেবারেই অমূলক নয়। কারণ, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে, এবং এটি সময়মতো চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ডেঙ্গু মশা কী রকম দেখতে? আর কীভাবে বুঝবেন যে এটিই সেই ভয়ঙ্কর এডিস মশা? এই নিয়েই আজকের সহজ ভাষার এই ফিচার।

ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশাটির নাম এডিস ইজিপ্টাই। এটি অন্যান্য সাধারণ কিউলেক্স বা এনোফিলিস মশার চেয়ে আলাদা। এই মশাটি দেখতে যেমন আলাদা, তেমনি এর আচার-আচরণ, কামড়ানোর সময়, এমনকি ডিম পাড়ার পছন্দও আলাদা। তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে এই মশাটিকে ঠিকভাবে চিনে রাখা খুব জরুরি।

এডিস মশার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর গায়ের রং। পুরো শরীরজুড়ে থাকে সাদা ও কালো ডোরা দাগ। পা ও বুকেও দেখা যায় একই ধরনের দাগ, যেটা অনেকটা জেব্রার শরীরের মতো দেখায়। বিশেষ করে এর বুকে ইংরেজি ‘লায়ার’ আকৃতির সাদা দাগ দেখা যায়, যেটি একে সহজে আলাদা করতে সাহায্য করে। মশাটি আকারে ছোট হলেও অনেক চটপটে। মানুষের গা ঘেঁষে দ্রুত উড়ে আসে, কামড় দিয়ে আবার সরে যায়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এটি রাত নয়, বরং দিনের বেলায় কামড়ায়। ভোরবেলা বা বিকেলের দিকে এটি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। শহরের ভেতরে, এমনকি বাড়ির ভেতরেও এরা ঢুকে যেতে পারে এবং একাধিক ব্যক্তিকে কামড় দিতে পারে।

আমরা সাধারণত ভাবি, ডেঙ্গু ছড়ায় নোংরা পানি থেকে। কিন্তু এডিস মশা ঠিক তার উল্টো—পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন, ফুলের টবের নিচে পানি জমে থাকলে, এসি’র নিচে পানির ট্রে, পুরনো ডাবের খোসা, কিংবা বাড়ির ছাদে খোলা ট্যাংকি বা টিনে জমে থাকা পরিষ্কার পানি—এসবই এদের প্রজননের আদর্শ জায়গা। ফলে এই মশা শহরের আধুনিক ঘরেও অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে।

এই মশার বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ড. জোনাথন ডে। তিনি বলেন, “এডিস মশা মূলত পাত্রজাত পানিতে ডিম পাড়ে এবং শহুরে পরিবেশের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে।" এই বক্তব্যটি আমাদের শহরাঞ্চলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের বাড়ির বারান্দা, ছাদ, এমনকি বাথরুমেও যদি পানি জমে থাকে, তাহলে সেখানেই এডিস মশা জন্ম নিতে পারে।

একই বিষয়ে ব্রিটেনের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন-এর গবেষক ড. হেলেন কিক বলেন, “অন্য মশাদের মতো নয়, এডিস ইজিপ্টাই মানুষের রক্ত বেশি পছন্দ করে এবং দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে, যা ঘনবসতিপূর্ণ শহরে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।”

এডিস মশা সাধারণত একবার কামড়েই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু সমস্যা হলো, এটি একসঙ্গে অনেকজনকে কামড়াতে পারে। ফলে একটি মশাই হয়ে উঠতে পারে একাধিক মানুষের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণ। মশাটি প্রথমে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ায়, এরপর তার শরীরে থাকা ভাইরাস নিয়ে আরেকজনকে কামড় দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।

এখন যেহেতু এই মশা দিনে কামড়ায়, তাই রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমালেও আপনি নিরাপদ নন। বরং ঘরের জানালার ফাঁক, পর্দার আড়াল, বা সোফার নিচে এরা লুকিয়ে থাকতে পারে এবং দিনের আলোয় হঠাৎ কামড়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব শিশু ও বৃদ্ধ সারাদিন ঘরের ভেতরে থাকে, তারাও ঝুঁকিতে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ‘এডিস মশার প্রজননের স্থান নিয়ন্ত্রণ করাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর মূল কৌশল।’ ফলে শুধু মশা মারলেই হবে না, তাদের ডিম পাড়ার জায়গাগুলোকেও ধ্বংস করতে হবে।

অনেকে ফুলের টবে পানি জমিয়ে রাখে। কেউ কেউ আবার ছাদে প্লাস্টিকের ড্রামে পানি জমিয়ে রাখেন, যেটা পরবর্তীতে ব্যবহার হয় না। এই সমস্ত জায়গাই ডেঙ্গুর উৎস হয়ে উঠতে পারে। তাই ৩ দিনের বেশি যেন কোনো পাত্রে পানি জমে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

সাধারণত এডিস মশা ডিম পাড়ে পানিতে, কিন্তু এই ডিম শুকনো অবস্থায়ও ৬ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। যখন আবার পানি পড়ে, তখন ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘‘এডিসের ডিম পানি ছাড়াও কয়েক মাস টিকে থাকতে পারে। পরে পানি পেলে দ্রুত ফুটে বাচ্চা হয়।” এই তথ্যটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেকে ভাবে শুকনো পাত্রে মশা জন্মাবে না। কিন্তু সেটি ভুল ধারণা।

এইসব কারণে এডিস মশাকে চেনা ও সচেতন থাকা এখন খুবই জরুরি। শুধু নিজের জন্য নয়, পাশের বাড়ির মানুষ, প্রতিবেশী, এমনকি পুরো পাড়াটাকেও নিরাপদ রাখতে হবে। এডিস মশা ছোট হলেও এর প্রভাব ভয়ঙ্কর। এটি যেমন ডেঙ্গু ছড়ায়, তেমনি চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসের মতো রোগও ছড়াতে পারে।

সবশেষে বলতেই হয়, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই শুধু ওষুধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে নয়, বরং আমাদের সচেতনতা দিয়েই শুরু হয়। ঘরের আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া, দিনের বেলায় পুরো হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরা, আর সবচেয়ে বড় কথা—ডেঙ্গু মশাকে চোখে দেখেই চেনা এবং সতর্ক হওয়া। কারণ, শত্রু যদি চেনা থাকে, লড়াই করাটাও সহজ হয়।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

বদহজম দূর করার উপায়

এক গ্লাস হালকা গরম পানি খেলে বদহজমের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পেটের ভেতরে জমে থাকা অতিরিক্ত এসিডকে পাতলা করে দেয়।

১৮ ঘণ্টা আগে

সাপ কেন আঁকাবাঁকা হয়ে পথ চলে?

সাপের মেরুদণ্ডে অসংখ্য হাড় আর পেশী আছে। এই হাড় ও পেশীর সাহায্যে তারা শরীর বাঁকায়, সঙ্কুচিত করে আবার প্রসারিত করে। একেকটা অংশ মাটিতে ধাক্কা দেয়, আর নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী মাটিও পাল্টা চাপ দিয়ে সাপকে সামনে এগিয়ে দেয়।

২ দিন আগে

গণতন্ত্রের গলদ

গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র জনগণই ক্ষমতার উৎস। সেটা আজকাল কেউ মানে বলে মনে হয় না। সে বাংলাদেশেই হোক বা যুক্তরাষ্ট্র—ক্ষমতাসীন নেতাদের সবাই নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করে। গণতন্ত্রের অন্যতম পুরোধা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেছিলেন, ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য

২ দিন আগে

লাউয়ের পুষ্টিগুণ

লাউ মূলত ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি দিয়ে তৈরি। তাই গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে এটি দারুণ কাজ করে। যারা নিয়মিত লাউ খান, তারা জানেন যে এটি হজমে সহায়ক, শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমায় এবং প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে।

২ দিন আগে