বিজ্ঞান

ঘুম কম হলে কী করবেন?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ২৩: ৫৪

রাতে ঘুম ঠিকমতো না হলে সকালবেলা শরীর ভার লাগতে পারে, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, মন খারাপ থাকে, আর কাজকর্মে মন বসে না—এই অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সবারই আছে। কিন্তু যখন এই ঘুম কম হওয়ার সমস্যা প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা শুধু একটা সাময়িক অস্বস্তিই নয়, দীর্ঘমেয়াদে তা হয়ে উঠতে পারে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। ঘুম কম হওয়ার পেছনে যেমন অনেক কারণ থাকতে পারে, তেমনি কিছু সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমেই অনেক সময় এর সমাধানও সম্ভব।

ঘুম হচ্ছে শরীরের নিজস্ব সার্ভিসিং সময়। এই সময় শরীরের কোষগুলো নিজেকে মেরামত করে, মস্তিষ্ক পরিষ্কার হয়, মন শান্ত হয়। কিন্তু যখন আমরা ঘুম কমাই, তখন শরীর তার এই মেরামত প্রক্রিয়ায় বাধার সম্মুখীন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের নিদ্রা গবেষক ড. চার্লস সিজলার বলেন, “ঘুম কম হলে আমাদের মস্তিষ্কের ফোকাস ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, শরীর ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়।” তিনি এই কথাগুলো বলেন হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের এক লেখায়, যেখানে ঘুমের অভাবকে ধরা হয়েছে বর্তমান শতাব্দীর এক নিরব মহামারী হিসেবে।

কিন্তু ঘুম কম হওয়ার মানে সবসময়ই যে ঘুম না পাওয়া তা নয়। অনেক সময় মানুষ ঘুমাতে চায়, বিছানায় যায়, কিন্তু ঘুম আসে না। কখনও ঘুম এলেও মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, আর ঘুম ফেরে না। এসব ক্ষেত্রেও কিন্তু শরীর একইরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব বার্গেনের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক বিইর্গার বোর্ক বলেন, “ঘুমের অভ্যাস ও মানসিক চাপ পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। অনেক সময় ঘুম কম হওয়ার কারণ হয় মানসিক উদ্বেগ, যেটা নিজের অজান্তেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।” তাঁর গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা প্রতিদিন রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের মধ্যে উদ্বেগ, অবসাদ, এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের হার অনেক বেশি।

তাহলে উপায় কী? প্রথমত, বুঝে নিতে হবে সমস্যাটা ঠিক কোথায়। আপনি কি রাত করে ঘুমোচ্ছেন? না কি ঘুমোতে গেলেও ঘুম আসতে দেরি হয়? মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়? না কি খুব ভোরে উঠে পড়েন এবং আর ঘুম ফেরে না? প্রত্যেক সমস্যার পেছনে কারণ আলাদা হতে পারে। তাই সবার সমাধানও একরকম হয় না।

তবে কিছু সাধারণ নিয়ম মানলে অনেকাংশেই ঘুমের অভাব দূর করা সম্ভব। যেমন, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ওঠা। অনেকেই ছুটির দিনগুলোতে রাত করে ঘুমান আর সকালেও ঘুমিয়ে থাকেন। এতে শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক বা জৈব ঘড়ি তালগোল পাকিয়ে ফেলে। এই ঘড়িটি আমাদের ঘুম ও জেগে থাকার সময় নির্ধারণ করে। এটি যত নিয়মিত থাকবে, আমাদের ঘুমও তত ভালো হবে।

দ্বিতীয়ত, ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপের পর্দা থেকে নিজেকে একটু আলাদা রাখা খুবই জরুরি। এসব স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো মস্তিষ্ককে জেগে থাকার সংকেত পাঠায়, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের নিদ্রা বিজ্ঞানী ড. রাসেল ফস্টার বলেন, “আমাদের চোখে একটি বিশেষ ধরনের স্নায়ু থাকে যা কেবল আলো শনাক্ত করে। রাতে এই আলোর সংস্পর্শে এলে শরীরের মেলাটোনিন নামক ঘুমের হরমোন কমে যায়।” ফলে ঘুম আসে না বা এলেও তা স্থায়ী হয় না।

তৃতীয়ত, ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন বা চা-কফি জাতীয় কোনো উত্তেজক পানীয় খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অনেকে ভাবেন এক কাপ কফি খেয়ে পড়তে বসবেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু বাস্তবে অনেকের শরীর ক্যাফেইনকে দীর্ঘ সময় ধরে ধরে রাখে, ফলে ঘুম আসে না। এমনকি বিকেলে খাওয়া এক কাপ কফিও রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

এছাড়া কিছু সহজ ঘরোয়া অভ্যাসও ঘুম বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটা, রাতে হালকা গরম দুধ খাওয়া, বা ঘুমানোর আগে বই পড়া। যাঁরা প্রার্থনায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা ঘুমানোর আগে দু’মিনিট ধ্যান বা নামাজ করলেও মনের চাপ অনেকটা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শান্ত মনের মানুষজনের ঘুমের গুণগত মান অনেক ভালো।

অনেক সময় ঘুমের সমস্যা এতটাই জটিল হয়ে পড়ে যে এসব সাধারণ অভ্যাসেও কাজ হয় না। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ইনসমনিয়া বা ঘুম না আসার রোগকে অনেকেই তুচ্ছভাবে নেন। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন চললে তা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এমনকি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) ঘুম কম হওয়াকে জনস্বাস্থ্যগত বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং বলেছে, প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না।

তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঘুম নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। ঘুম যেন অলস সময় নষ্ট নয়, বরং জীবনের অপরিহার্য অংশ—এই উপলব্ধি যতটা দৃঢ় হবে, আমরা ততটাই গুরুত্ব দিয়ে ঘুমকে নেব। এক রাতে ভালো ঘুম মানেই শুধু পরদিন ফুরফুরে থাকা নয়, এটা মানসিক প্রশান্তি, স্মৃতিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ—সবকিছুর জন্যই জরুরি।

তাই যদি আপনার ঘুম কম হচ্ছে, তাহলে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেবেন না। আজ থেকেই শুরু করুন কিছু সহজ পরিবর্তন। নিজের শরীরকে বোঝার চেষ্টা করুন। আর মনে রাখবেন, ভালো ঘুম মানেই ভালো জীবন। আর এই ঘুমকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন ধৈর্য, সচেতনতা আর একটু মনোযোগ।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

ডুমুর ফল কেন খাবেন?

ডুমুরে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা আমাদের হজমে সহায়তা করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাঁদের জন্য ডুমুর একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

১৭ ঘণ্টা আগে

রোমান্টিক সময় কাটাচ্ছেন তাহসান-রোজা

ছবিতে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-আর এমন সময় সুইমিংপুলে তাদের আদুরে এক মুহূর্ত!

২ দিন আগে

সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।

২ দিন আগে

বাংলাদেশে শিগগির চালু হচ্ছে গুগল পে

গুগল পে হলো একটি ডিজিটাল ওয়ালেট এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, যা গুগল ডেভেলপ করেছে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন বা অন্য স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে খুব সহজে অর্থ পাঠাতে, গ্রহণ করতে ও পেমেন্ট করতে পারেন।

৩ দিন আগে