top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

স্বাস্থ্য

গ্যাস্ট্রিক কমায় যেসব খাবার

গ্যাস্ট্রিক কমায় যেসব খাবার
বেশকিছু খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে

গ্যাস্ট্রিক—আজকাল প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দেখা যায়। পেটের ভেতরে অস্বস্তি, ঢেকুর ওঠা, বুকজ্বালা, খাবার খাওয়ার পর পেট ভার হয়ে থাকা, এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যথাও—এইসব কিছুর পেছনে অনেক সময়ই দায়ী গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। চিকিৎসকদের ভাষায় একে বলা হয় ‘অ্যাসিডিটি’ বা ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’। হজমের সময় পাকস্থলীতে যে অ্যাসিড তৈরি হয়, তা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে পড়ে বা উপরের দিকে উঠে আসে, তখনই গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ দেখা দেয়।

এই সমস্যার পেছনে দায়ী হতে পারে অনিয়মিত জীবনযাপন, দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকা, অতিরিক্ত ঝাল বা ভাজাপোড়া খাওয়া, চা-কফি বা ধূমপানের অভ্যাস, ঘুমের অনিয়ম কিংবা মানসিক চাপ। তবে আশার কথা হলো, কিছু সহজ ও স্বাভাবিক খাবার নিয়মিত খেলে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আমেরিকার ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’-এর পুষ্টিবিদ ড. এমি গুডসন বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হালকা, সহজপাচ্য ও ক্ষারধর্মী খাবার খাওয়া। অনেকেই না জেনে উল্টো রকম খাবার খান, যা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।’

ড. গুডসনের মতে, সঠিক খাবার নির্বাচন করলে ও কিছুটা জীবনযাপনের পরিবর্তন আনলে ওষুধ ছাড়া অনেক সময়েই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যায়।

বিশ্বব্যাপী নানা গবেষণায় এমন কিছু খাবারের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই গ্যাস্ট্রিকের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কলা। পাকা কলা গ্যাস্ট্রিকের জন্য এক দুর্দান্ত ফল। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড জাতীয় উপাদান, যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড শোষণ করে নেয়।

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. লিওন হার্ট বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিক আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রতিদিন এক থেকে দুইটি পাকা কলা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। এটি পাকস্থলীর শ্লেষ্মা স্তরকে সুরক্ষা দেয় এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।’

এর পাশাপাশি ওটসও একটি কার্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত। সকালের নাশতায় দুধ বা পানিতে রান্না করা ওটস পেটকে দেয় আরাম, অ্যাসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডিজেস্টিভ ডিজঅর্ডার্স’-এর গবেষক ড. কেলি স্মিথ জানান, ‘ওটসের মতো ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার পাকস্থলীতে সময় নিয়ে হজম হয় এবং এসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধ করে।’

অনেকেই গ্যাস্ট্রিক কমাতে দুধ পান করেন, তবে এখানে একটু সচেতন হওয়া দরকার। পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে। বরং চর্বিমুক্ত বা স্কিমড মিল্ক গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে। সঙ্গে যোগ করতে পারেন অল্প পরিমাণ মধু, যা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমায় এবং পাকস্থলীর অ্যাসিডিক পরিবেশকে কিছুটা প্রশমিত করে।

আদা গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে এক প্রাচীন ও কার্যকর উপাদান। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা পাকস্থলীর প্রদাহ কমায় এবং হজমে সাহায্য করে। চীন ও ভারতীয় আয়ুর্বেদ চর্চায় আদার ব্যবহার বহু প্রাচীন। আধুনিক গবেষণাও তা স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটেনের 'কিংস কলেজ লন্ডন'-এর পুষ্টিবিদ ড. রেবেকা হ্যালি বলেন, ‘আদা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বা হালকা আদার রস পান করলে গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ দ্রুত প্রশমিত হয়।’

আরেকটি উপকারী খাবার হলো শসা। এটি শরীর ঠান্ডা রাখে, জলীয় অংশ বেশি থাকে এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। গরমের দিনে নিয়মিত শসা খেলে গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ অনেকটাই কমে যায়। একই রকমভাবে তরমুজ বা আনারসের মতো ফলগুলোও উপকারী। তবে মনে রাখতে হবে, খালি পেটে বেশি ফল খেলে উল্টো সমস্যাও হতে পারে।

মধু আর এক চমৎকার প্রাকৃতিক ওষুধ। গ্যাস্ট্রিকের সময় এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে পেট আরাম পায় এবং এসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’-এর গবেষণা অনুযায়ী, মধু পাকস্থলীর মিউকাস লেয়ারকে শক্তিশালী করে এবং গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঝুঁকি কমায়।

অ্যালোভেরা জেলের কথা না বললেই নয়। এটি শরীরের ভেতরকার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হজমপ্রক্রিয়াকে উন্নত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. জর্জ অ্যান্ডারসন বলেন, ‘অ্যালোভেরা জেলের নির্যাস পাকস্থলীর ভেতরের গ্যাসের পরিমাণ কমাতে সহায়ক এবং অনেক সময় এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।’

পানি—সবচেয়ে সাধারণ অথচ সবচেয়ে উপকারী উপাদান। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পর্যাপ্ত পানি পান না করলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি হয়। গ্যাস্ট্রিক কমাতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে খাবারের আগে এক গ্লাস পানি খেলে তা অ্যাসিড নিঃসরণ কিছুটা কমায়। তবে খাবারের একেবারে সঙ্গে বা পরে অতিরিক্ত পানি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, তাই সেখানে ভারসাম্য জরুরি।

সবশেষে বলতে হয়, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় শুধু খাবারের ওপর নির্ভর করলেই হবে না, চাই জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন। নিয়মিত সময়মতো খাওয়া, হালকা হাঁটা, অতিরিক্ত তেল-ঝাল খাবার এড়িয়ে চলা, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানো—এইসব মিলেই গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির পথ তৈরি হয়।

এই ছোট ছোট পরিবর্তনের সঙ্গে যখন প্রাকৃতিক কিছু উপকারী খাবার যুক্ত হয়, তখন গ্যাস্ট্রিক আর ভয় দেখায় না। বরং শরীর ফিরে পায় নিজের স্বাভাবিক ছন্দ। ওষুধ নয়, খাবারই হোক প্রথম প্রতিরোধের ঢাল। আর এই চর্চা যত শিগগির শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল।

r1 ad
top ad image