ইতিহাস

চুয়িংগামের প্রাচীন ইতিহাস

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ১৩
আধুনিক চুয়িং গামের প্রকৃত সূচনা হয় থমাস অ্যাডামসের হাত ধরে।

চুয়িং গামের ইতিহাস শুরু আজ থেকে প্রায় ৯,০০০ বছর আগে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যায়, উত্তর ইউরোপের মানুষরা গাছের ছাল চিবাতেন। ধারণা করা হয়, তারা এটি করতেন দুটি কারণে—একটি হলো স্বাদের জন্য, অন্যটি হলো দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য। গাছের ছালে থাকা প্রাকৃতিক রেসিন মুখের ভেতর এক ধরনের সতেজতা দিত, যা তাদের কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল।

মায়া সভ্যতায় চুয়িং গামের ব্যবহার ছিল আরও সুপরিচিত। মায়ানরা স্যাপোডিল্লা গাছের রস সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে চিবাতেন। এই রসকে তারা 'চিকল' নামে ডাকত। মায়ানরা মূলত ক্ষুধা নিবারণ ও তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এটি ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে আজটেক সভ্যতায় চুয়িং গামের ব্যবহার আরও বিস্তৃত হয়। আজটেকরা চিকল চিবানোর জন্য কঠোর সামাজিক নিয়ম মেনে চলতেন। উদাহরণস্বরূপ: শিশু ও অবিবাহিত নারীরা প্রকাশ্যে চুয়িং গাম চিবাতে পারতেন। বিবাহিত নারী ও বিধবাদের ব্যক্তিগত স্থানে চিবাতে হতো। পুরুষরা একেবারে গোপনে চিবাতেন, কারণ তারা মনে করতেন এটি দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

চুয়িং গামের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয় ১৯শ শতাব্দীতে। ১৮৪০ সালে জন কার্টিস নামের একজন আমেরিকান প্রথমবারের মতো চুয়িং গাম তৈরি করে বাজারে ছাড়েন। তিনি স্প্রুস গাছের রস সংগ্রহ করে তা গরম পানিতে সিদ্ধ করতেন, পরে ঠান্ডা করে টুকরো টুকরো করে কেটে বিক্রি করতেন। তবে এই গামের স্বাদ তেমন ভালো ছিল না, তাই তিনি এতে প্যারাফিন মিশিয়ে স্বাদ উন্নত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু আধুনিক চুয়িং গামের প্রকৃত সূচনা হয় থমাস অ্যাডামসের হাত ধরে। ১৮৬০-এর দশকে তিনি মেক্সিকোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এ্যান্টনিও লোপেজ ডি সান্তা আন্নার সাথে দেখা করেন, যিনি তাকে চিকল (স্যাপোডিল্লা গাছের রস) সম্পর্কে ধারণা দেন। প্রথমে তারা চিকল দিয়ে রাবার বানানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি। পরে অ্যাডামস ভাবলেন, এটি দিয়ে চুয়িং গাম বানালে কেমন হয়? ১৮৭১ সালে তিনি "অ্যাডামস নিউ ইয়র্ক চুয়িং গাম" বাজারে আনেন, যা তাত্ক্ষণিক সাফল্য পায়।

চুয়িং গামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপ্লব আসে বাবল গামের আবিষ্কারের মাধ্যমে। ১৯০৬ সালে ফ্র্যাঙ্ক ফ্লিয়ার প্রথম বাবল গাম বাজারে আনেন, যার নাম ছিল "ব্লিবার-ব্লাবার"। তবে এটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। পরে ১৯২৮ সালে ফ্লিয়ারের কোম্পানির এক তরুণ কর্মী ওয়াল্টার ডাইমার একটি নতুন ফর্মুলা তৈরি করেন, যা দিয়ে বড় বুদবুদ তৈরি করা যেত। এই গামের নাম দেওয়া হয় "ডাবল বাবল", এবং এটি রাতারাতি হিট হয়ে যায়।

চুয়িং গামের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বিজ্ঞাপনের ভূমিকা অপরিসীম। উইলিয়াম রিংলে জুনিয়র নামের এক ব্যবসায়ী প্রথমে সাবান বিক্রি করতেন, কিন্তু পরে তিনি লক্ষ্য করলেন যে বিনামূল্যে দেওয়া চুয়িং গামের চাহিদা বেশি। তাই তিনি ১৮৯৩ সালে জ্যুসি ফ্রুট এবং রিংলে’জ স্পিয়ারমিন্ট নামে দুটি চুয়িং গাম কোম্পানি চালু করেন। তিনি বিপুল অর্থ ব্যয় করে চুয়িং গামের বিজ্ঞাপন দিতেন, যা তাকে ধনী বানিয়ে দেয়।

সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

সার্ক যেভাবে গঠিত হয়েছিল

সার্কের সূচনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি, নানা রাজনৈতিক সমঝোতা এবং কিছু সাহসী কূটনৈতিক উদ্যোগ।

১ দিন আগে

মাত্রাতিরিক্ত অ্যাসিডিটি কমাবেন কী করে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আগে জানতে হবে, অ্যাসিডিটি কেন হয়। আমাদের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা খাবার হজমে সহায়তা করে।

১ দিন আগে

সংখ্যানুপাতিক বা পিআর নির্বাচন ব্যবস্থা আসলে কেমন

এই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো—এতে অনেক সময় জোট সরকার গঠনে দীর্ঘ সময় লাগে।

১ দিন আগে

নিষেধাজ্ঞার পাহাড় মাথায় নিয়েও ইরানের অর্থনীতি কীভাবে টিকে আছে

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানের ওপর আরোপিত হয় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।

২ দিন আগে