বিজ্ঞান

মায়ের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ২১: ৩৯
আইজ্যাক নিউটন

নিউটনের পরিবার ধনী ছিল। কিন্তু লেখাপড়ার চল তেমন ছিল না নিউটন পরিবারে। অঢেল সম্পত্তি! এত আর কে খাবে? কী দরকার জমীদারি ছেড়ে সরকারি চাকরি করার! নিউটনের মা-ও চাইতেন তাঁর ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে চাষবাষে মন দিক।

এই ব্যাপারটাই নিউটনের ভালো লাগত না। পড়াশোনায়, কার্যকারণে, বিজ্ঞানে, গণিতে তাঁর রাজ্যের আগ্রহ। সেই আগ্রহে কিনা জল ঢেলে দিতে চান মা। সুতরাং মন বিষিয়ে ওঠে নিউটনের।

কিন্তু মন বিষানো এই তাঁর প্রথম নয়। সেই ছেলেবেলায় যখন মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন থেকেই মায়ের প্রতি ভীষণ খ্যাপা নিউটন।

খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিলেন হানা নিউটন। পেয়েছিলেন স্বামীর অঢেল সম্পত্তি।

স্বামীর রেখে যাওয়া ভালোবাসা, শোক আর শিশু পুত্রকে বুকে ধরেই পার করে দিতে চেয়েছিলেন বাকি জীবন। কিন্তু সব সময় আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে না মানুষ। স্বামীহারা হান্না নিয়মিত যাতায়াত করেন গীর্জায়। স্মিথ নামে এক পাদ্রী ছিল সেখানে। তাঁর কাছে ধর্মের বাণী, উপদেশ শুনে মনটা হালকা করতে যেতেন হানা।

নিজে স্বামীহারা, অন্যদিকে স্মিথেরও সদ্য পত্নিবিয়োগ হয়েছে। দুজন নিঃসঙ্গ নর-নারী নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করছেন। ধর্মের বাণী শোনাচ্ছেন, শুনছেন। একাকীত্ব আর কষ্টগুলোও ভাগ করে নিচ্ছেন। এ থেকেই পরস্পরের প্রতি একটা সহানূভতি তৈরি হবে, সেটাই নিয়ম। আর সেই সহানুভূতি প্রেমে রূপান্তরিত হতেও সময় নেয়নি। প্রথমে মন দেওয়া-নেওয়া, পরে বিয়ে। টাকা-পয়সার প্রতি একটু বেশিই লোভ ছিল হানার। বিয়ের সময় স্মিথের কাছ থেকে পণ হিসেবে নিয়েছিলেন চাষের জমি।

হানা যখন স্মিথকে বিয়ে করছেন, তখন নিউটনের বয়স সবে চার। বিয়ের পর হানা স্মিথের সঙ্গে চলে গেলেন শ্বশুরবাড়ি। আর শিশু নিউটনকে রেখে গেলেন তাঁর মা অর্থাৎ নিউটনের নানির জিম্মায়। মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হলেন। নানা-নানির পরিবারে অনেকটা নিভৃতে কাটছিল নিউটনের দিন। স্কুলে ভর্তি করানো হলো তাঁকে। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে মায়ের চলে যাওয়টা আজীবন মানতে পারেনি নিউটন। স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়াশোনাও চলছিল বেশ। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিশতেন না। একাকী কী যেন ভাবতেন।
বিয়ের আট বছরের মাথায় স্মিথও মারা যান। সুতরাং দ্বিতীয়বার বিধবা হয়ে হান্না আবার ফিরে আসেন উলসথর্পে। নিউটনকে বলেন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যেন গ্রামে ফিরে আসে এবং চাষবাষে মন দেয়। বাধ্য হয়ে লেখপড়া ছেড়ে তাঁকে ফিরে আসতে হলো উলসথর্পে কিছুদিনি কৃষিকাজ করলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে যিঁনি মহাবিজ্ঞানী হবেন, তার কি কৃষিকাজে মন বসে! তাই নিউটন আসার পর জমিতে-খামারে ফলন তো হচ্ছিলই না, উল্টে বরং ক্ষতির অঙ্কটা বাড়ছিল দিনকে দিন।

নিউটনের মামা হানাকে পরামর্শ দিলেন ছেলেকে বাড়ি থেকে বিদেয় করে স্কুলে ভর্তি করানো হোক। কিন্তু হানা ছেলের পেছনে টাকা খরচ করতে মোটেও রাজি নন। ঠিক সে সময় নিউটনের এক শিক্ষকের কাছ থেকে আসে লোভনীয় এক প্রস্তাব। স্কুলে ফেরৎ যদি পাঠানো নিউটনকে, খরচ সব ওই শিক্ষক দেবেন। নিউটনকে স্কুলে ফের ভর্তি করানো হলো। কিন্তু বছরে মাত্র দশ পাউন্ড করে খরচ যোগাবেন হানা। বাকিটা নিউটনকেই জোগাড় করে নিতে হবে। আর হ্যাঁ, শিক্ষকের দানও নেওয়া চলবে না। নিউটন ভর্তি হলেন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। কিন্তু মায়ের দেওয়া টাকায় তো চলবে না। তখন ট্রিনিটি কলেজের সাবসাইজার ব্যবস্থা চালু ছিল। এই এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য কলেজে কোনো টাকা দিতে হত না। কিন্তু অনেকটা চাকরের মতো ফুট-ফরমায়েশ খাটতে হত শিক্ষার্থীকে। কলেজের একেকজন ফেলোর একজন করে এ ধরনের চাকর থাকত। এই ফেলোদের সহকারীর কাজ করতেই হতো এমনকী তাঁদের মল-মূত্রও পরিষ্কার করতে হত সাবসাইজারদের। অথচ নিউটনের মা বিশাল সম্পত্তির মালিক, বছরে তাঁরা আয় সাত শ পাউন্ডেরও বেশি!

এসব ঘটনা যেমন নিউটনকে রাগী-বদমেজাজী করে তুলেছিল। তেমনি মহাবিজ্ঞানী হওয়ার পথেও বড় ভূমিকা রেখেছিল বলেই মনে করেন অনেকে। নিউটন ভীষণ একাষেড়ে ছিলেন, এ কথা কারও অজনা নয়। কিন্তু একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল তাঁর। না, সেই বন্ধু কোনো মেয়ে বা নারী নন। কলেজ জীবনে ঘনিষ্টতা হয় নিকোলাস উইকিন্স নামে এক তরুণের সঙ্গে। তাঁরা দুজনেই নিজ নিজ রুমমেট দিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁদের ঘনিষ্টতা হয়। এক সময় তাঁরা দুজন একটা রুমে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকদিন তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। এই বিষয়টাকেই অনেকে ভালো চোখে দেখেননি। তাই সেকালে অথবা একালের কোনো সময় কিছু লোক গুজব ছড়িয়েছিল নিউটন আর উইকিন্স দুজনেই আসলে সমকামী ছিলেন, তাই রুম শেয়ারের আড়ালে লিভ টুগেদার করতেন। এ ঘটনা সত্য কিনা যেমন জোর দিয়ে বলা যায় না। আবার মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই। আর সত্যিও যদি হয়, তাহলে ছেলেবেলায় মায়ের বিয়েটাকেও এর জন্য দায়ী করা যায় চোখ বুজে।

সূত্র: ব্রিটানিকা ডট কম

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কিউবিট আসলে কী? এটা কীভাবে কাজ করে?

ক্লাসিক্যাল বিট তৈরি হয় বৈদ্যুতিক সার্কিটের মাধ্যমে, যেখানে একটি ট্রানজিস্টার হয় চালু (১) অথবা বন্ধ (০)। কিন্তু কিউবিট তৈরি হয় পরমাণুর অদ্ভুত আচরণ দিয়ে। কোনো একক ইলেকট্রন, ফোটন, বা নিউক্লিয়াসের ঘূর্ণন—এই সবকিছু দিয়েই একটি কিউবিট বানানো যেতে পারে।

২০ ঘণ্টা আগে

সন্ধ্যার মধ্যে ৮ জেলায় ঝড়ের আভাস

দেশের আট জেলায় সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

১ দিন আগে

বমি বমি ভাব দূর করার উপায়

এই সমস্যা প্রতিরোধে প্রথমে বুঝে নিতে হবে কারণটা ঠিক কী। কারণ অনুযায়ী সমাধানও আলাদা হতে পারে। তবে কিছু প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় আছে, যেগুলো মোটামুটি সব অবস্থাতেই কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।

২ দিন আগে

সরকারি সেবায় তথ্যপ্রযুক্তি: বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে বোঝা যায়, আমাদের যাত্রাপথ ছিল ভিন্নতর। আমরা একটি বিশাল জনগোষ্ঠী, জটিল আমলাতান্ত্রিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছি।

২ দিন আগে