প্রযুক্তি

স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ১৫: ৫১

ইন্টারনেট এখন আর বিলাসিতা নয়, মানুষের জীবনের অন্যতম প্রয়োজন। কিন্তু শহর বা বড় বড় জনপদের বাইরে একটু গেলেই দেখা যায়, এই প্রয়োজনটুকু পূরণে আজও হাহাকার। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা—সবারই মুখে একটাই কথা, “নেট নাই, কিছুই হয় না।” এই সমস্যার মাঝেই নতুন আশার আলো হয়ে এসেছে স্টারলিংক।

মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স কোম্পানি চালু করেছে এই অভিনব স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা। বহুদিন ধরে এটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হলেও বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের মে মাসে এর যাত্রা শুরু হলো। এই সেবার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মিলবে উচ্চগতির ইন্টারনেট—এক কথায়, ডিজিটাল বিভাজন ঘুচিয়ে সবাইকে সংযুক্ত করবে মহাকাশ।

অনেকের মনে প্রশ্ন, কীভাবে পাওয়া যাবে এই স্টারলিংক সংযোগ? উত্তরটা খুব একটা জটিল নয়। নিজের জায়গা থেকে যেকেউ starlink.com ওয়েবসাইটে গিয়ে ঠিকানা লিখে দেখতে পারেন, সেখানে এই সেবা পাওয়া যাবে কি না। যদি সম্ভব হয়, তাহলে একটি সার্ভিস প্ল্যান বেছে নিতে হবে এবং তারপর কিনতে হবে হার্ডওয়্যার কিট।

এই কিটে যা যা থাকে তা হলো—একটি স্যাটেলাইট ডিশ, ওয়াইফাই রাউটার, একটি মাউন্ট ট্রাইপড এবং প্রয়োজনীয় ক্যাবল। পুরো বিষয়টি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন একজন সাধারণ ব্যবহারকারীও নিজেই এটি সহজে সেটআপ করতে পারেন। শুধু নিশ্চিত করতে হবে যে স্যাটেলাইট ডিশটি খোলা আকাশের নিচে স্থাপন করা হচ্ছে, যেন এটি নিরবিচারে সিগন্যাল পায়।

বাংলাদেশে স্টারলিংক বর্তমানে তিনটি মূল প্যাকেজ চালু করেছে। প্রথমটি ‘রেসিডেনশিয়াল’, যার মাসিক খরচ ছয় হাজার টাকা। এটি মূলত বাসাবাড়ির জন্য উপযুক্ত। দ্বিতীয়টি ‘রেসিডেনশিয়াল লাইট’, যার জন্য মাসে খরচ হবে চার হাজার দুই শত টাকা। আরও একটি সুবিধাজনক প্যাকেজ হলো ‘রোম’ প্যাকেজ। এটি যাঁরা ভ্রমণ করেন বা চলন্ত অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান, তাঁদের জন্য। রোম প্যাকেজের মূল খরচ প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা, যেখানে ৫০ জিবি পর্যন্ত ডেটা পাওয়া যাবে। তবে কেউ যদি আনলিমিটেড ডেটা চান, তাহলে নিতে হবে বারো হাজার টাকার 'রোম আনলিমিটেড' প্যাকেজ।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য স্টারলিংকের আলাদা প্যাকেজও রয়েছে, যা আরও শক্তিশালী এবং বিস্তৃত পরিষেবা দেয়। যে কোনো প্যাকেজ গ্রহণের সময় হার্ডওয়্যার কিট কেনার জন্য এককালীন ৪৭ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে ভালো দিক হলো, ৩০ দিন এই সেবা ব্যবহার করার পর কেউ যদি সন্তুষ্ট না হন, তাহলে পুরো টাকা ফেরতের সুযোগও থাকবে।

এই পুরো ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে এখনই অনেক প্রযুক্তি বিশ্লেষক বলছেন, এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল উন্নয়নে একটি বড় ধাপ। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রযুক্তি গবেষক ড. কেলি পার্সনস এই প্রসঙ্গে বলেন, “স্টারলিংকের সেবা যেসব অঞ্চলে পৌঁছেছে, সেখানকার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ।”

অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক জেসিকা রিড বলেন, “স্টারলিংকের সবচেয়ে বড় অবদান হলো, এটি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে পারে সেখানে, যেখানে কোনো মোবাইল টাওয়ার নেই, নেই কোনো অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে আমরা সবাই একটি বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হচ্ছি।”

বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উত্তরাঞ্চলের চর, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কিংবা উপকূলের দ্বীপ অঞ্চল—এমন জায়গায় শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, সরকারি কর্মী বা সাধারণ মানুষ অনেক সময়ই ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন। সেখানে স্টারলিংক সেবা পৌঁছাতে পারলে শুধু ব্যক্তিগত সুবিধাই নয়, সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রম, জরুরি সেবা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সাথেও অনলাইন সংযুক্তি সহজতর হবে।

তবে এখানেই শেষ নয়। ইন্টারনেটের মতো শক্তিশালী প্রযুক্তি সঠিক হাতে গেলে বদলে দিতে পারে সমাজ। এ বিষয়ে কানাডার প্রযুক্তি লেখক জোশ গ্রিনফিল্ড বলেন, “যেসব শিশু আগে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারত না, এখন তারা মহাকাশের সাহায্যে তা পারবে—এই চিন্তাটা ভাবলেও শিহরণ জাগে। বাংলাদেশ যদি এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তাহলে এটি কেবল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, এক ধরনের সামাজিক বিপ্লবও হবে।”

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত খরচ করে স্টারলিংক নেওয়ার দরকার কী? বিশেষ করে যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ব্রডব্যান্ড ভালো কাজ করে, সেখানে এই সেবা কী অতটা দরকারি? এই প্রসঙ্গে ভারতের প্রযুক্তি বিশ্লেষক অনুপম শর্মা বলেন, “স্টারলিংক মূলত ব্যাকআপ বা সংকটকালীন সময়েও কার্যকরভাবে ইন্টারনেট দেয়। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সাইবার হামলার সময় এই ধরনের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অত্যন্ত কার্যকর।”

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। তবে সব মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছাতে হলে শুধু শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন যথেষ্ট নয়। স্টারলিংকের মতো মহাকাশ-নির্ভর ইন্টারনেট সেবা এই দুর্বলতাগুলো পুষিয়ে দিতে পারে।

তবে এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের জন্য দরকার সরকারি সহযোগিতা, স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট। তাহলেই সম্ভব হবে এই প্রযুক্তিকে সর্বজনীন করে তোলা।

শেষ কথা হলো, ইন্টারনেট এখন শুধু জানার নয়, বাঁচার এক অবলম্বন। আর স্টারলিংক যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও শিশু তার হাতের ট্যাবলেট স্ক্রিনে দেখতে পাবে পৃথিবীটা কত বড়, কত বিস্তৃত।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

ফারুকীর অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন: তিশা

কক্সবাজার সফরে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পরে রাতে তাকে একটি হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল রোববার (১৭ আগস্ট) এই উপদেষ্টার অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

১৯ ঘণ্টা আগে

বদহজম দূর করার উপায়

এক গ্লাস হালকা গরম পানি খেলে বদহজমের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পেটের ভেতরে জমে থাকা অতিরিক্ত এসিডকে পাতলা করে দেয়।

২০ ঘণ্টা আগে

সাপ কেন আঁকাবাঁকা হয়ে পথ চলে?

সাপের মেরুদণ্ডে অসংখ্য হাড় আর পেশী আছে। এই হাড় ও পেশীর সাহায্যে তারা শরীর বাঁকায়, সঙ্কুচিত করে আবার প্রসারিত করে। একেকটা অংশ মাটিতে ধাক্কা দেয়, আর নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী মাটিও পাল্টা চাপ দিয়ে সাপকে সামনে এগিয়ে দেয়।

২ দিন আগে

গণতন্ত্রের গলদ

গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র জনগণই ক্ষমতার উৎস। সেটা আজকাল কেউ মানে বলে মনে হয় না। সে বাংলাদেশেই হোক বা যুক্তরাষ্ট্র—ক্ষমতাসীন নেতাদের সবাই নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করে। গণতন্ত্রের অন্যতম পুরোধা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেছিলেন, ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য

২ দিন আগে