ডিজিটাল সেবা

ডিজিটাল বিল পেমেন্ট: সময় বাঁচানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা

শানজীদা শারমিন
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ০০: ০৭

বছর তিনেক আগের কথা। বেসরকারি চাকরিজীবী বিল্লাল সকালে নাশতা করছিলেন। ৬০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত বাবা আশরাফ হাতে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘মোটা হয়ে যাচ্ছিস। গতরটা একটু নাড়াচাড়া কর। ব্যাংকে গিয়ে বিলটা জমা দিয়ে দে।’

বিল্লাল নাস্তা শেষ করে মোবাইল হাতে নিল। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাপ খুলে কয়েকটা ক্লিক করল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল—‘আপনার বিল পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে।’

চায়ের কাপ হাতে চুমুক দিতে দিতে বসে পড়ল। বাবা আবার বললেন, ‘তাড়াতাড়ি যা। নাহলে ব্যাংকে বড় লাইনে দাঁড়াতে হবে।’ বিল্লাল বলল, ‘হয়ে গেছে, বাবা। মোবাইল দিয়েই এসব দেওয়া যায়।’

আশরাফ ভাবলেন, ‘এক সময় এসব বিল পরিশোধ করতে তাকে ব্যাংকে বা পোস্ট অফিসে নগদ হাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লাগত। অনেক সময় ফরম ভুল পূরণ হলে বা কাগজপত্র ঠিক না থাকলে আবার নতুন করে কাজ করতে হতো। কখনো আবার শুনতে হতো, ‘আজ আর বিল নেওয়া হবে না, কাল আসুন।’ মাস শেষে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় নিত্যসঙ্গী ছিল।

বিল্লাল বলল, ‘এখন অনেকগুলো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস আছে। শুয়ে বসে হাতে মোবাইল নিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন—সব বিল পরিশোধ করা যায়। সময়ৎ বাঁচে, ঝামেলা নেই।’

আশরাফ বললেন, ‘শহরের কথা ঠিক আছে। কিন্তু গ্রামে কিভাবে হয়?’ বিল্লাল বলল, ‘গ্রামেও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ডিজিটাল সেন্টার আছে। সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যায়। পাঁচ টাকায় কাজ শেষ। দূরে কোথাও যাওয়া লাগে না।’

২০১৮ সালের পর থেকে পরিস্থিতি বদলেছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস যেমন বিকাশ, নগদ, উপায়—এসব ছড়িয়ে পড়েছে। তারপর এলো জাতীয় বিল ও সার্ভিস এগ্রিগেটর একপে (EkPay)। এই এক প্ল্যাটফর্ম থেকে সরকারি বিল, ফি সবকিছু পরিশোধ করা যায়: বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট, স্কুল-কলেজের ফি, ভূমি উন্নয়ন কর—সব। সব সেবা একসাথে। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড—যেটা সুবিধা, সেটা দিয়ে পেমেন্ট করা যায়।

উল্লেখযোগ্য সেবাগুলোর মধ্যে আছে:

  • বিদ্যুৎ বিল: ডিপিডিসি, ডেসকো, পল্লী বিদ্যুৎ, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ইত্যাদি।
  • গ্যাস বিল: তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলি গ্যাস, সুন্দরবন গ্যাস ইত্যাদি।
  • পানি বিল: ঢাকা ওয়াসাসহ অন্যান্য পৌরসভার পানি বিল।
  • টেলিফোন বিল: বিটিসিএলসহ ল্যান্ডলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল।
  • ইন্টারনেট ও টিভি বিল: বিভিন্ন আইএসপি ও ক্যাবল টিভি সেবার বিল।
  • শিক্ষা ও সরকারি ফি: স্কুল-কলেজের টিউশন ফি, পাসপোর্ট ফি, ট্রেড লাইসেন্স ফি, ভূমি উন্নয়ন কর।
  • অন্যান্য সেবা: জন্মনিবন্ধন ফি, হোল্ডিং ট্যাক্স, পোর্ট ফি, প্যাসেঞ্জার ফ্যাসিলিটি চার্জ ইত্যাদি।

ডিজিটাল বিল পেমেন্টের প্রভাব:

  • কর্মঘণ্টা বেড়েছে
  • নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি কমেছে,
  • উৎপাদনশীলতা বেড়েছে
  • আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারিত হয়েছে

এখনো যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  • ইন্টারনেট সংযোগের ঘাটতি,
  • বয়স্ক এবং প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতার ঘাটতি

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতনতা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ প্রদান, ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। যেসব এলাকায় ইন্টারনেট বা প্রযুক্তিগত সহায়তা সীমিত, সেসব জায়গায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিল জমা দেয়া যায়।

এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০০-রও বেশি সরকারি সেবা নিয়ে চালু হচ্ছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন আউটলেট। চলমান ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এতে যুক্ত করা হবে। সেখানেও পাওয়া যাবে উল্লিখিত সেবাগুলো।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

ডুমুর ফল কেন খাবেন?

ডুমুরে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা আমাদের হজমে সহায়তা করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাঁদের জন্য ডুমুর একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

১২ ঘণ্টা আগে

রোমান্টিক সময় কাটাচ্ছেন তাহসান-রোজা

ছবিতে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-আর এমন সময় সুইমিংপুলে তাদের আদুরে এক মুহূর্ত!

২ দিন আগে

সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।

২ দিন আগে

বাংলাদেশে শিগগির চালু হচ্ছে গুগল পে

গুগল পে হলো একটি ডিজিটাল ওয়ালেট এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, যা গুগল ডেভেলপ করেছে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন বা অন্য স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে খুব সহজে অর্থ পাঠাতে, গ্রহণ করতে ও পেমেন্ট করতে পারেন।

২ দিন আগে