ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
একটি রাষ্ট্র তার জনগণের কাছে কতটা দায়বদ্ধ, তা বোঝা যায় তার নাগরিক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থার ধরনের ওপরে। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় সেবা এখন আর কেবল সরকারি দপ্তরের ফাইলে আটকে নেই, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় এটি পৌঁছে গেছে নাগরিকের হাতে হাতে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই রূপান্তরের নাম ই-গভর্ন্যান্স।
প্রযুক্তির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এই ই-গভর্ন্যান্সের মূল লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের পথে এটি হয়ে উঠেছে একটি অপরিহার্য যন্ত্র।
এই দীর্ঘ অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল বিশ্ব জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ার উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ২০০১ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি’র (ডব্লিউএসআইএস) আলোকে বাংলাদেশ ২০০২ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন করে।
পরের বছর থেকে অর্থাৎ ২০০৩ সালে সাপোর্ট টু আইসিটি টাস্কফোর্স (এসএআইসিটি) প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। বলা যায়, এই প্রকল্পের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
২০০৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কারিগরি সহায়তায় আরেকটি প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ই-গভর্ন্যান্সের জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারি প্রক্রিয়া পুনর্গঠন ও প্রশাসনে প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কৃতির প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন করে আইসিটি ফোকাল কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়, যা প্রশাসনের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পথ তৈরি করে। এই বছরেই নাগরিকদের সুবিধার জন্য বহুল ব্যবহৃত ৫০টি সরকারি ফরম অনলাইনে প্রকাশ করা হয়, যা দেশের প্রথম ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এরপর সরকারি সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগে ই-গভর্নমেন্ট ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (২০০৭-০৮ সালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়) একটি ই-গভর্ন্যান্স সেল স্থাপন এবং এই সেলকে সহায়তার জন্য এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রাম চালু করার প্রস্তাব ২০০৬ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রোগ্রাম চালুর জন্য ইউএনডিপি একটি প্রোগ্রাম ইনিশিয়েশন ডকুমেন্ট (পিআইডি) প্রণয়ন করে, যা আগস্টে চূড়ান্ত করা হয়।
একই সময়ে বিশ্বব্যাংক-সমর্থিত ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের (ইএমটিএপি)’ আওতায় আইসিটি ব্যবহারের জন্য কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। তবে দেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয় ২০০৭-২০০৮ সালে, ‘ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা’ তৈরির মাধ্যমে।
এটুআই কার্যক্রমের অধীনে সেবা সহজীকরণ, তথ্যের প্রবেশাধিকার, দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ গৃহীত হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা ডিজিটাল সেন্টারগুলো ছিল এ উদ্যোগের অন্যতম বড় সাফল্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষও যেন কোনো রকম দালালের সহায়তা ছাড়াই তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারে, সেই ব্যবস্থাই গড়ে তোলা হয়।
একসময়ের কল্পনা এখন বাস্তব। আজ আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে জন্মনিবন্ধন, ভূমি সংক্রান্ত তথ্য, পাসপোর্ট আবেদন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে আপনার সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগও জানাতে পারেন। সেবাগুলোর জন্য নাগরিকদের আর অফিস থেকে অফিসে দৌড়াতে হয় না।
একদিকে যেমন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা সহজতর করা হচ্ছে, তেমনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সহানুভূতিশীলতা বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘এমপ্যাথি ট্রেনিং’য়ের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মীরা নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে সেবাকে দেখতে ও মূল্যায়ন করতে শিখছেন। এটি ই-গভর্ন্যান্সকে একটি কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, বরং মানবিক-সহানুভূতিশীল ব্যবস্থায় পরিণত করছে।
ই-গভর্ন্যান্সের মূল চালিকাশক্তি হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এ ব্যবস্থায় সব তথ্য সংরক্ষিত হয় একটি কেন্দ্রীভূত তথ্যভান্ডারে। ‘MyGov প্ল্যাটফর্ম’ যেমন নাগরিকদের জন্য এক জায়গা থেকে একাধিক সরকারি সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে সরকারও বিভিন্ন সেবার অগ্রগতি ও সমস্যা মনিটর করতে পারছে সরাসরি।
এ ছাড়া ৩৩৩ ও ৯৯৯ হেল্পলাইন দুটি জরুরি পরিষেবার মুখ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ৩৩৩ নম্বরে সাধারণ নাগরিক তথ্য, অভিযোগ বা পরামর্শ জানাতে পারেন। অন্যদিকে ৯৯৯ জরুরি পরিষেবা যেমন পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, বা ফায়ার সার্ভিসের সংযোগ দেয় দ্রুততম সময়ে।
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এসব ব্যবস্থার কারণে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রীয় সেবা ব্যবস্থার প্রতি। আগে যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল নিত্যসঙ্গী, এখন সেখানে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা দেখা যায়। প্রযুক্তি যখন সেবার একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায়, তখন দালাল, ফাইল গুম, বা অযথা ঘুষ দেওয়া অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আসে।
ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত জনগণের ক্ষমতায়ন। এ ক্ষমতায়ন কেবল তথ্য পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অংশগ্রহণ, জবাবদিহি দাবি ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব রাখার সুযোগও তৈরি করেছে।
যেমন— উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমে নাগরিক ফিডব্যাক সংগ্রহ বা জনগণের সমস্যা জানতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রবণতা, কিংবা উন্মুক্ত বাজেট সভার আয়োজন— সবই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর এই ব্যবস্থার মাধ্যমে। নাগরিক চরিত্র এখন আর নিষ্ক্রিয় নয়, বরং তারা প্রশাসনের অংশীদার হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
তবে সবকিছুতেই যেমন উজ্জ্বল দিক আছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ডিজিটাল বিভাজন এখনো একটি বাস্তব সমস্যা। গ্রাম-শহরের প্রযুক্তিগত সুযোগের বৈষম্য, ইন্টারনেটের মান ও গতি, নাগরিকদের ডিজিটাল সাক্ষরতা— সবকিছুই ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যের গোপনীয়তা নিয়েও ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে। একটি দেশের নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য যখন একটি কেন্দ্রীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত হয়, তখন তা সুরক্ষিত রাখতে না পারলে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে রাষ্ট্র। এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো, যা আইন ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনবল প্রশিক্ষণ। ই-গভর্ন্যান্স চালু করলেই হবে না, সরকারি কর্মীদের নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত এবং দক্ষ হতে হবে। তা না হলে এই প্রযুক্তি হয়তো ব্যর্থ হবে বাস্তব প্রয়োগে। তাই প্রতিটি পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত ডিজিটাল লিটারেসি ও সফট স্কিলস ট্রেনিং অপরিহার্য।
ই-গভর্ন্যান্স শুধু একটি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা নয়, এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবার মানবিকীকরণের একটি প্রয়াস। এটি একদিকে যেমন নাগরিককে ক্ষমতায়ন করছে, তেমনি সরকারি ব্যবস্থাকে আরও জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ এবং জনমুখী করে তুলছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি, তা পূরণ হবে তখনই, যখন প্রযুক্তি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক। ই-গভর্ন্যান্সের যাত্রা তেমনই এক আলোর পথ, যেখানে নাগরিক আর রাষ্ট্র একসঙ্গে হাঁটে, আস্থা এবং দায়িত্ববোধের সেতুবন্ধনে।
বাংলাদেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তির সুবর্ণ যুগে। এই সময়েই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো নাগরিক এই রূপান্তরের বাইরে না থেকে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির প্রবাহ যেন পৌঁছে যায় প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে পাহাড়ি জনপদেও। তাহলেই ই-গভর্ন্যান্স হবে কেবল সরকারের উদ্যোগ নয়, একটি জাতির সম্মিলিত অগ্রযাত্রার প্রতীক।
একটি রাষ্ট্র তার জনগণের কাছে কতটা দায়বদ্ধ, তা বোঝা যায় তার নাগরিক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থার ধরনের ওপরে। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় সেবা এখন আর কেবল সরকারি দপ্তরের ফাইলে আটকে নেই, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় এটি পৌঁছে গেছে নাগরিকের হাতে হাতে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই রূপান্তরের নাম ই-গভর্ন্যান্স।
প্রযুক্তির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এই ই-গভর্ন্যান্সের মূল লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের পথে এটি হয়ে উঠেছে একটি অপরিহার্য যন্ত্র।
এই দীর্ঘ অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল বিশ্ব জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ার উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ২০০১ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি’র (ডব্লিউএসআইএস) আলোকে বাংলাদেশ ২০০২ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন করে।
পরের বছর থেকে অর্থাৎ ২০০৩ সালে সাপোর্ট টু আইসিটি টাস্কফোর্স (এসএআইসিটি) প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। বলা যায়, এই প্রকল্পের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
২০০৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কারিগরি সহায়তায় আরেকটি প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ই-গভর্ন্যান্সের জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারি প্রক্রিয়া পুনর্গঠন ও প্রশাসনে প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কৃতির প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন করে আইসিটি ফোকাল কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়, যা প্রশাসনের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পথ তৈরি করে। এই বছরেই নাগরিকদের সুবিধার জন্য বহুল ব্যবহৃত ৫০টি সরকারি ফরম অনলাইনে প্রকাশ করা হয়, যা দেশের প্রথম ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এরপর সরকারি সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগে ই-গভর্নমেন্ট ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (২০০৭-০৮ সালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়) একটি ই-গভর্ন্যান্স সেল স্থাপন এবং এই সেলকে সহায়তার জন্য এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রাম চালু করার প্রস্তাব ২০০৬ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রোগ্রাম চালুর জন্য ইউএনডিপি একটি প্রোগ্রাম ইনিশিয়েশন ডকুমেন্ট (পিআইডি) প্রণয়ন করে, যা আগস্টে চূড়ান্ত করা হয়।
একই সময়ে বিশ্বব্যাংক-সমর্থিত ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের (ইএমটিএপি)’ আওতায় আইসিটি ব্যবহারের জন্য কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। তবে দেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয় ২০০৭-২০০৮ সালে, ‘ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা’ তৈরির মাধ্যমে।
এটুআই কার্যক্রমের অধীনে সেবা সহজীকরণ, তথ্যের প্রবেশাধিকার, দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ গৃহীত হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা ডিজিটাল সেন্টারগুলো ছিল এ উদ্যোগের অন্যতম বড় সাফল্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষও যেন কোনো রকম দালালের সহায়তা ছাড়াই তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারে, সেই ব্যবস্থাই গড়ে তোলা হয়।
একসময়ের কল্পনা এখন বাস্তব। আজ আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে জন্মনিবন্ধন, ভূমি সংক্রান্ত তথ্য, পাসপোর্ট আবেদন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে আপনার সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগও জানাতে পারেন। সেবাগুলোর জন্য নাগরিকদের আর অফিস থেকে অফিসে দৌড়াতে হয় না।
একদিকে যেমন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা সহজতর করা হচ্ছে, তেমনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সহানুভূতিশীলতা বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘এমপ্যাথি ট্রেনিং’য়ের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মীরা নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে সেবাকে দেখতে ও মূল্যায়ন করতে শিখছেন। এটি ই-গভর্ন্যান্সকে একটি কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, বরং মানবিক-সহানুভূতিশীল ব্যবস্থায় পরিণত করছে।
ই-গভর্ন্যান্সের মূল চালিকাশক্তি হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এ ব্যবস্থায় সব তথ্য সংরক্ষিত হয় একটি কেন্দ্রীভূত তথ্যভান্ডারে। ‘MyGov প্ল্যাটফর্ম’ যেমন নাগরিকদের জন্য এক জায়গা থেকে একাধিক সরকারি সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে সরকারও বিভিন্ন সেবার অগ্রগতি ও সমস্যা মনিটর করতে পারছে সরাসরি।
এ ছাড়া ৩৩৩ ও ৯৯৯ হেল্পলাইন দুটি জরুরি পরিষেবার মুখ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ৩৩৩ নম্বরে সাধারণ নাগরিক তথ্য, অভিযোগ বা পরামর্শ জানাতে পারেন। অন্যদিকে ৯৯৯ জরুরি পরিষেবা যেমন পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, বা ফায়ার সার্ভিসের সংযোগ দেয় দ্রুততম সময়ে।
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এসব ব্যবস্থার কারণে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রীয় সেবা ব্যবস্থার প্রতি। আগে যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল নিত্যসঙ্গী, এখন সেখানে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা দেখা যায়। প্রযুক্তি যখন সেবার একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায়, তখন দালাল, ফাইল গুম, বা অযথা ঘুষ দেওয়া অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আসে।
ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত জনগণের ক্ষমতায়ন। এ ক্ষমতায়ন কেবল তথ্য পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অংশগ্রহণ, জবাবদিহি দাবি ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব রাখার সুযোগও তৈরি করেছে।
যেমন— উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমে নাগরিক ফিডব্যাক সংগ্রহ বা জনগণের সমস্যা জানতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রবণতা, কিংবা উন্মুক্ত বাজেট সভার আয়োজন— সবই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর এই ব্যবস্থার মাধ্যমে। নাগরিক চরিত্র এখন আর নিষ্ক্রিয় নয়, বরং তারা প্রশাসনের অংশীদার হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
তবে সবকিছুতেই যেমন উজ্জ্বল দিক আছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ডিজিটাল বিভাজন এখনো একটি বাস্তব সমস্যা। গ্রাম-শহরের প্রযুক্তিগত সুযোগের বৈষম্য, ইন্টারনেটের মান ও গতি, নাগরিকদের ডিজিটাল সাক্ষরতা— সবকিছুই ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যের গোপনীয়তা নিয়েও ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে। একটি দেশের নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য যখন একটি কেন্দ্রীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত হয়, তখন তা সুরক্ষিত রাখতে না পারলে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে রাষ্ট্র। এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো, যা আইন ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনবল প্রশিক্ষণ। ই-গভর্ন্যান্স চালু করলেই হবে না, সরকারি কর্মীদের নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত এবং দক্ষ হতে হবে। তা না হলে এই প্রযুক্তি হয়তো ব্যর্থ হবে বাস্তব প্রয়োগে। তাই প্রতিটি পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত ডিজিটাল লিটারেসি ও সফট স্কিলস ট্রেনিং অপরিহার্য।
ই-গভর্ন্যান্স শুধু একটি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা নয়, এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবার মানবিকীকরণের একটি প্রয়াস। এটি একদিকে যেমন নাগরিককে ক্ষমতায়ন করছে, তেমনি সরকারি ব্যবস্থাকে আরও জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ এবং জনমুখী করে তুলছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি, তা পূরণ হবে তখনই, যখন প্রযুক্তি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক। ই-গভর্ন্যান্সের যাত্রা তেমনই এক আলোর পথ, যেখানে নাগরিক আর রাষ্ট্র একসঙ্গে হাঁটে, আস্থা এবং দায়িত্ববোধের সেতুবন্ধনে।
বাংলাদেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তির সুবর্ণ যুগে। এই সময়েই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো নাগরিক এই রূপান্তরের বাইরে না থেকে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির প্রবাহ যেন পৌঁছে যায় প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে পাহাড়ি জনপদেও। তাহলেই ই-গভর্ন্যান্স হবে কেবল সরকারের উদ্যোগ নয়, একটি জাতির সম্মিলিত অগ্রযাত্রার প্রতীক।
কোরবানির ঈদে মাংস সংরক্ষণ করার আলাদা একটা ঝামেলা থাকে। দেখা যায় যে, অনেক মাংস সংরক্ষণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে মাংস এমনভাবে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে অনেক দিন ভালো থাকে। রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করার দুই রকম নিয়ম জেনে নিন।
২ দিন আগেমুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামানসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (এমএনএ-এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবরটিকে ভুয়া নিউজ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
৩ দিন আগেএই টাস্কফোর্স ও এসআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো সরকার প্রমাণ করে, তারা প্রশাসনকে দক্ষ করতে এবং নাগরিক সেবাকে সহজ করতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী। শিক্ষা, কৃষি, ভূমি, পশুপালন, সচিবালয়সহ নানা দপ্তরে একের পর এক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকরণ শীর্ষক প্রকল্প চালু হয়। এর মধ্যে অনলাইন
৪ দিন আগে