ডিজিটাল সেবা

ই-টিন না থাকলে বেতন-ব্যবসা কোনোটাই হবে না!

শানজীদা শারমিন
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ২৩: ৩৪

রাজীব হাসান, ঢাকার এক ব্যস্ত চাকরিজীবী। বয়স ২৯, সদ্য করপোরেট জগতে যোগ দিয়েছেন। নতুন চাকরির প্রথম মাসের শেষে, অফিস থেকে ই-মেইল পেলেন— স্যালারি প্রসেস করার আগে ই-টিন নম্বর জমা দিতে হবে।

রাজীব আগে কখনো আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, ই-টিন নিয়েও ভাবেননি। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বসের সঙ্গে দেখা করলেন। বস বললেন, ই-টিন ছাড়া স্যালারি দেওয়া যাবে না। এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট— সব জায়গায় বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে।

রাজীব বুঝলেন, এটি শুধু চাকরির শর্ত না, একজন সচেতন নাগরিক হওয়ার অংশ।

বাসায় ফিরে রাতের বেলা ল্যাপটপ খুলে বসলেন। গুগল ঘেঁটে তাড়াতাড়ি https://www.incometax.gov.bd/ ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘e-Registration’ অপশনে ক্লিক করলেন। মোবাইল নম্বর ভেরিফাই করে নিজের তথ্য দিলেন— নাম, ঠিকানা, পেশা। কয়েকটি ধাপেই তার ই-টিন তৈরি হয়ে গেল। সার্টিফিকেটও ডাউনলোড করে রাখলেন।

এদিকে মীরা রহমান, যিনি রাজীবের অফিসে প্রতিদিন দুপুরের খাবার সরবরাহ করেন, তিনিও একই সমস্যায় পড়লেন।

মীরা একজন ছোট উদ্যোক্তা। নিজের রান্নার ব্যবসা চালান, অল্প কিছু কর্মচারী আছে তার। গত তিন বছর ধরে অফিসে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করলেও কখনোই ই-টিন বা ট্যাক্স রিটার্ন করার প্রয়োজন হয়নি। সরল বিশ্বাসে ব্যবসা চালিয়ে গেছেন।

কিন্তু এবার অফিস থেকে এলো নতুন নীতিমালা— যারা সার্ভিস প্রদান করে, তাদেরও ই-টিন নম্বর ও সাম্প্রতিক ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হবে।

মীরা প্রথমে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি কি পারবেন সবকিছু ঠিকঠাক করতে? তবে হাল ছাড়লেন না। কয়েকজন পরিচিত ব্যবসায়ীর পরামর্শে তিনিও ওয়েবসাইটে ঢুকে ই-টিনের জন্য আবেদন করলেন।

মোবাইল ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে কয়েকবার চেষ্টা করতে হয়েছে। ফর্ম পূরণের সময় ঠিকানা মিলে না যাওয়ায় সংশোধন করতে হয়েছে। অবশেষে ধৈর্য ধরে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে, ই-টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করলেন।

এরপর শুরু হলো ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার কাজ।

মীরার আয়ের হিসাব মোটামুটি সহজ— রান্নার আয়, কিছু ব্যয়। প্রথমবার করতে গিয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত হলেও ই-রিটার্ন পোর্টালের নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজেই রিটার্ন জমা দিলেন।

রাজীবও নিজের রিটার্ন জমা দিলেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

এবার অফিসে পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে গিয়ে রাজীব সহজেই তিন বছরের রিটার্ন রশিদ জমা দিলেন।

এক বছর পর রাজীব যখন একটি অ্যাপার্টমেন্ট বুক করতে গেলেন, ব্যাংকের লোন অফিসার প্রথমেই তার ই-টিন ও ট্যাক্স রিটার্নের কপি দেখতে চাইলেন। রাজীব হাসিমুখে সব ডকুমেন্টস দেখালেন। লোন প্রসেস সহজ হয়ে গেল।

মীরা নিজে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়ে যখন নতুন কিছু অফিসে খাবার সরবরাহের চুক্তি করতে গেলেন, তখন দেখতে পেলেন— প্রায় সব কোম্পানি এখন ই-টিন ও রিটার্ন কাগজ দেখতে চায়। তার এই প্রস্তুতি তাকে আরও বড় বড় অর্ডার পাওয়ার সুযোগ করে দিলো।

দুজনের কাছেই করদাতা হওয়া মানে নতুন আত্মবিশ্বাস, নতুন দায়িত্ববোধের শুরু। ই-টিন ও রিটার্ন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, ভবিষ্যতের জন্য অবিচ্ছেদ্য সুরক্ষা হয়ে দাঁড়াল।

আজকের বাংলাদেশে, ই-টিন ও ট্যাক্স রিটার্ন ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, লোন বা ক্রেডিট কার্ড নেওয়া, পাসপোর্ট ও ভিসা আবেদন, ট্রেড লাইসেন্স বা কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, জমি বা গাড়ি কেনাবেচা, শেয়ারবাজারে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, সঞ্চয়পত্র বা বন্ড কেনা, সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণ, জমির নামজারি অথবা বিদেশে পড়াশোনার ফাইন্যান্সিয়াল প্রমাণ দিতে গেলে— সবখানেই এখন রিটার্নের প্রমাণ চাই। এমনকি ফ্রিল্যান্সার ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণকারীদের জন্যও এটি বাধ্যতামূলক হয়ে উঠছে।

রাজীব ও মীরার অভিজ্ঞতা বলে, "নিজের ভবিষ্যতের জন্য প্রথম ধাপ হলো নিয়মিত করদাতা হয়ে ওঠা।"

যেসব এলাকায় ইন্টারনেট বা প্রযুক্তিগত সহায়তা সীমিত, সেসব জায়গায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে ই-টিন করা বা ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।

এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে শতাধিক সরকারি সেবা নিয়ে চালু হচ্ছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন আউটলেট। চলমান ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এতে যুক্ত করা হবে। সেখানেও পাওয়া যাবে উল্লিখিত সেবাটি।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

প্রথম অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট: কতটা বদলেছে সেবার চিত্র?

ওয়েবসাইটে ফি এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় দুইজনের কারও চোখই এড়ায় না স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা তথ্য- সাধারণ প্রসেসিংয়ে ২১ থেকে ৩০ দিন এবং এক্সপ্রেস প্রসেসিংয়ে ৭ থেকে ১০ দিন।

২ দিন আগে

হাত-পায়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

অনেক সময় হাত-পায়ের ব্যথা কোনো পেশির টান বা স্নায়ুর সমস্যার কারণে হয়। এর জন্য ঘরোয়া ব্যায়াম হতে পারে ভালো উপায়। যেমন প্রতিদিন সকালে ৫-১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করলে পেশির নমনীয়তা বাড়ে এবং ব্যথা কিছুটা কমে।

২ দিন আগে

ডিজিটাল বিচারালয়: নাগরিকের আরও কাছাকাছি

কয়েক মিনিটের মধ্যেই রহিমা তার মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ, বিচারকের নাম, মামলার অবস্থা জানতে পারলেন ওই তরুণের মাধ্যমে।

২ দিন আগে

জামিনে মুক্তি পেয়ে যা বললেন ফারিয়া

ফেসবুক পোস্টে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া লেখেন, ‘সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা যারা আমার পাশে ছিলেন। শারিরীক অসুস্থতার জন্য আজ কথা বলতে পারিনি। সুস্থ হয়ে খুব দ্রুত ফিরে আসব আপনাদের মাঝে।’

২ দিন আগে