ইতিহাস

বিদ্যাসাগর বনাম রামকৃষ্ণ পরমহংস

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
রামকৃষ্ণ পরমহাংস ও ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (কোলাজ: চ্যাটজিপিটি)

১৮৮২ সালের এক সন্ধ্যায়, কলকাতার বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাড়িতে এক অদ্ভুত সাক্ষাৎ হয়। একদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — যুক্তিবাদী সমাজসংস্কারক, যিনি অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন সারাজীবন। অন্যদিকে রামকৃষ্ণ পরমহংস — আধ্যাত্মিক জগতের এক বিস্ময়কর চরিত্র, যিনি ঈশ্বরকে অনুভব করেছেন প্রেম ও ভক্তির মধ্য দিয়ে। দুই মেরুর মানুষ, দুই বিপরীত দর্শনের ধারক – তবে কীভাবে ঘটল এই সাক্ষাৎ?

অনেক ঐতিহাসিক এই সাক্ষাৎকে চিহ্নিত করেন ‘সংস্কৃতির দ্বৈরথ’ হিসেবে। কেউ বলেন, এটা ছিল তর্ক, কেউ বলেন, একরকম বোঝাপড়া। কিন্তু আসলে কী হয়েছিল, তা আমরা জানতে পারি প্রধানত রামকৃষ্ণের শিষ্য মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের লেখা ‘শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত’-এর বর্ণনা থেকে। সেখানে দেখা যায়, রামকৃষ্ণ বিদ্যাসাগরকে নানা আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করছেন। বিদ্যাসাগর হেসে শুনছেন, কখনো স্পষ্ট করে দ্বিমত পোষণ করছেন না, আবার কখনো বিষয় ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। এ যেন এক নিঃশব্দ সংঘাত — যুক্তির সঙ্গে অনুভবের, বৈজ্ঞানিক মননের সঙ্গে আধ্যাত্মিক অন্বেষণের।

রামকৃষ্ণ পরমহংস পরে বলেছিলেন, “বিদ্যাসাগর জ্ঞানী, দয়ালু, এবং সত্যনিষ্ঠ।” এই কথায় দেখা যায় তাঁর আন্তরিক শ্রদ্ধা। এমনকি তিনি বলেন, “জ্ঞান ও দয়া — এই দুই গুণ খুব কম লোকের মধ্যে একসাথে দেখা যায়।” রামকৃষ্ণের মতো আধ্যাত্মিক গুরুও বিদ্যাসাগরের মানবতাবাদী চেতনাকে সম্মান করেছেন।

অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর সরাসরি কিছু না বললেও, তাঁর অভিব্যক্তি ছিল নম্র ও সহিষ্ণু। যদিও তিনি অলৌকিকতা বা ঈশ্বরচিন্তায় বিশ্বাস করতেন না, রামকৃষ্ণের সারল্য ও মানবিকতায় হয়তো তিনি একধরনের আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন।

যাঁরা দর্শনে, চিন্তায় একেবারে ভিন্ন — তাঁরা কি একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে পারেন না?

এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এই সাক্ষাতেই লুকিয়ে আছে।

রামকৃষ্ণ ও বিদ্যাসাগরের সাক্ষাৎ কোনো বিতর্ক নয়, বরং একটি সংলাপ — যেখানে মত পার্থক্য থাকলেও, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার অভাব ছিল না। এই শিক্ষা আজও সমান প্রাসঙ্গিক, যখন সমাজে ভিন্নমতকে সহ্য করার মনোভাব অনেক সময় হারিয়ে যেতে বসেছে।

ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

বুদ্ধিজীবীদের রক্ত, গভর্নর হাউজে বোমার ভূমিকম্প আর ‘টাইগার’ এখন খাঁচাবন্দি!

এই ভয়াল ট্র্যাজেডির পাশাপাশি এ দিনই শুরু হয় আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিক নাটকীয়তাও। ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশের চরমপত্রের পর ১৩ ডিসেম্বর রাতে জেনারেল নিয়াজি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর ছিল সেই দিন, যেদিন নিয়াজির আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক সিগন্যালটি দিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছায়।

১১ দিন আগে

বিজয়ের ৪৮ ঘণ্টা আগে যেভাবে ‘মগজশূন্য’ করা হয় জাতিকে

একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই যখন রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে আসছিল, তখনই গভর্নর হাউসের অন্দরমহলে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এক ভয়ংকর নীলনকশা চূড়ান্ত করেন। তাঁর ডায়েরিতেই পাওয়া যায় সেই মৃত্যু-তালিকা, যেখানে লেখা ছিল দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের নাম।

১১ দিন আগে

ঢাকার গলায় ‘ফাঁস’, শিরোমণির ট্যাংক যুদ্ধ এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার ছক!

১৩ ডিসেম্বর ঢাকার আকাশ, বাতাস এবং মাটি সব কিছুই যেন পাকিস্তানি জেনারেলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। জেনারেল নিয়াজি তার ক্যান্টনমেন্টের সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে বসে ম্যাপের দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন যে, পালানোর আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।

১২ দিন আগে

পাকিস্তানিদের শেষ ভরসা সপ্তম নৌ বহরও পরিণত মরীচিকায়

পরাশক্তিদের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও প্রবাসী সরকার ছিল অটল। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১২ ডিসেম্বর এক বেতার ভাষণে বলেন, ‘সপ্তম নৌ বহর আমাদের স্বাধীনতা আটকাতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা ১০০ বছর যুদ্ধ করব, তবু বিদেশিদের কাছে মাথা নত করব না।’

১৩ দিন আগে