শিল্প-সাহিত্য

হকার জসীমউদদীন

অরুণ কুমার
ছেলেবেলায় পেটের দায়ে পত্রিকার হকারি করেছেন জসীমউদদীন

পল্লীকবি জসীমউদদীন যে পরিবারে বড় হয়েছেন, অভাব-অনটন সেখানে নিত্যসঙ্গী। অভাবের মধ্যেই তিনি বই পড়ছেন, সাহিত্য পত্রিকা পড়ছেন, আর তাতেই আনমনে একসময় কবির মনে কবি হওয়ার বাসনা জাগে।

হকার জসীমউদদীনপল্লীকবি জসীমউদদীন যে পরিবারে বড় হয়েছেন, অভাব-অনটন সেখানে নিত্যসঙ্গী। অভাবের মধ্যেই তিনি বই পড়ছেন, সাহিত্য পত্রিকা পড়ছেন, আর তাতেই আনমনে একসময় কবির মনে কবি হওয়ার বাসনা জাগে।দদীন যে পরিবারে বড় হয়েছেন, অভাব-অনটন সেখানে নিত্যসঙ্গী। অভাবের মধ্যেই তিনি বই পড়ছেন, সাহিত্য পত্রিকা পড়ছেন, আর তাতেই আনমনে একসময় কবির মনে কবি হওয়ার বাসনা জাগে।

সেই বাসনা বাস্তবে রূপ দিতে গেলে-জসীমউদদীন জানতেন-কলকাতায় পাড়ি দিতে হবে তাঁকে। সেখানেই লেখাপড়া করবেন ভাবলেন।

কলকাতায় জসীমউদদীনের এক দুঃসম্পর্কের বোন থাকত। তাঁর স্বামী ছোট চাকুরে, মানে কুড়ি টাকা বেতন মোটে।

তাঁর ভাড়া করা বাসায় গিয়ে উঠলেন জসীমউদদীন। দরিদ্র হলেও বোনটি বড় উদার ছিলেন, উদার ছিলেন তাঁর স্বামীও। গ্রাম থেকে আসা ছোট ভাইটাকে উটকো ঝামেলা মনে না করে হাসিমুখেই বরণ করে নিলেন।

একখানি মাত্র ঘর, কোনোমতে একটা চৌকি আঁটে। দুহাত চওড়া একটা বারান্দা, সেখানেই বোন রান্না করেন, ধোঁয়ায় ঘর ভরে যায়।

এত অসুবিধার মধ্যেও বোনের বাড়িতে থাকতে শুরু করলেন। কিন্তু বোনের সংসারে অর্থকষ্ট দেখে ভাবলেন, নিজেও কিছু করা চাই। তাই পথে পথে হকারি করে পত্রিকা বিক্রির কথা ভাবলেন। তখন ‘বসুমতি’ পত্রিকার বড্ড চাহিদা। পত্রিকার দোকানে ৫-৭ দিন আগে টাকা জমা রাখলে তবেই পত্রিকা পাওয়া যায়। কিন্তু জমা দেওয়োর মতো টাকা কোথায় জসীমউদদীনের। তাই তিনি ‘নায়ক’ নামে কম প্রচারিত একটা পত্রিকা বিক্রির কথা ভাবলেন। দিনে টার্গেট ২৫ কপি। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে বুঝলেন, পত্রিকা বিক্রি অত সহজ কাজ নয়। অনেক কষ্টে, লেকচার দিয়ে, পত্রিকার ভেতর কী আছে, তার চুম্বক অংশ শুনিয়ে পত্রিকা বিক্রির চেষ্টা করতেন কিশোর জসীমউদদীন। এখনকার হকাররাও একই কাজ করেন। কিন্তু এত কষ্টের পরেও সারা দিনে ২৫ কপি নায়ক বিক্রি হতো না।

হকারি করতে গিয়ে কার্তিক নামে আরেক পূর্ববঙ্গীয় হকারের সঙ্গে পরিচয় হয় জসীমউদদীদনের। লোকটা বড্ড দয়ালু। এই লোকটাই জসীমউদদীনের অবিক্রীত পত্রিকা বিক্রি করে দিতেন। ২৫ কপি পত্রিকা বেঁচে লাভ হতো মাত্র ১৪ পয়সা। অথচ এই জসীমউদদীন একসময় সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, ঘুরেছিলেন দেশ-বিদেশ। আর তাঁর লেখার কথা নাই বা বললাম, সেসব আজ ইতিহাস!

ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

উত্তরে কাদেরিয়া ঝড়, দক্ষিণে সপ্তম নৌ বহর: নিয়াজির চোখে সর্ষে ফুল!

কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা প্যারাট্রুপারদের পথ দেখিয়ে পুংলি ব্রিজের দিকে নিয়ে যায় এবং ব্রিজটি দখল করে নেয়। এর ফলে ময়মনসিংহ ও জামালপুর থেকে পিছু হটা পাকিস্তানি ৯৩ ব্রিগেডের সৈন্যরা ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে আটকা পড়ে।

৩ দিন আগে

উত্তরে চীন, দক্ষিণে আমেরিকা— ইয়াহিয়ার ‘গালগপ্পো’ আর রূপসায় স্বজনের গোলা!

ঢাকার চারপাশের বৃত্ত বা ‘লুপ’ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যায়। উত্তরে ময়মনসিংহ মুক্ত হওয়ার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে ছুটছে, পূর্বে মেঘনা পাড় হয়ে নরসিংদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিশাল বহর, আর পশ্চিমে পদ্মার পাড়ে চলছে তুমুল প্রস্তুতি।

৪ দিন আগে

আকাশ থেকে নামল ‘উড়ন্ত যম’— পালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না পাকিস্তানি বাহিনীর

পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের তথাকথিত ‘ফোর্ট্রেস ডিফেন্স’ বা দুর্গ রক্ষা কৌশলের ওপর যে অন্ধ বিশ্বাস রেখেছিল, তা তখন অন্ধের মতোই তাদের হোঁচট খাওয়াচ্ছিল। একদিকে বিশ্বরাজনীতির দাবার বোর্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌ বহর পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তাপ ছড়াচ্ছিল, অন্যদিকে বাংলার

৫ দিন আগে

বিনয়-বাদল-দীনেশ— অগ্নিযুগের ৩ বিপ্লবী

তিন যুবকের হাতে মোটেও সময় নেই। বেচারা সিম্পসন! আজীবন নিরীহ-নিরপরাধ ভারতীয়দের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এসেছেন। এ জন্য কতকিছু চিন্তা করে নির্যাতনের উপায় বের করতে হয়েছে। সেই মানুষটি নিজের শেষ সময়ে বিন্দুমাত্র ভাবনার সময়ও পেলেন না। তার দিকে তাক করা তিনটি রিভলবার থেকে ছয়টি বুলেট সিম্পসনের শরীর ভেদ করে

৬ দিন আগে