অরুণাভ বিশ্বাস
যুদ্ধ মানেই রক্ত, কান্না আর ধ্বংস। কিন্তু যুদ্ধ মানেই কি কেবল বন্দুক আর গোলাগুলি? না, যুদ্ধ মানে মানুষের আত্মদহন, ভাঙাগড়া, সম্পর্কের বিপর্যয় এবং নতুন করে জেগে ওঠার কাহিনিও। এই যুদ্ধের নানা রূপ আমরা দেখতে পাই সাহিত্যে—বিশেষত উপন্যাসে। যুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস শুধু অতীত ইতিহাসের দলিল নয়, বরং সেগুলো আমাদের শেখায় সহানুভূতি, মানবতা আর আত্মবোধের নতুন সংজ্ঞা।
বিশ্বসাহিত্যে এমন অসংখ্য উপন্যাস রয়েছে, যেগুলো যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও তা শুধুই রাজনীতি বা কৌশলের গল্প নয়, বরং মানুষের গল্প। তাদের বেঁচে থাকার লড়াই, ভালোবাসা, হারিয়ে ফেলা প্রিয়জন, কিংবা যুদ্ধ শেষে একজন সৈনিকের নিঃসঙ্গ জীবনের গল্প। এসব উপন্যাস আমাদের দেখায়, যুদ্ধ কেবল একটি ভূখণ্ডের নয়—এটা মন ও আত্মারও যুদ্ধ।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-ভিত্তিক সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং গভীরভাবে অনুধাবনযোগ্য এক উপন্যাস হলো আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র রবার্ট জর্ডান একজন মার্কিন অধ্যাপক, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে এসে নিজের আদর্শ, ভয় ও প্রেমের মুখোমুখি হন। হেমিংওয়ের ভাষা সহজ, কিন্তু গভীর। তিনি আমাদের দেখান যে, যুদ্ধ মানুষকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও ভেঙে দেয়। ব্রিটিশ সাহিত্য বিশ্লেষক ড. মার্টিন হ্যাম্পসন এই উপন্যাসকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, “হেমিংওয়ে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, আদর্শিক যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আহত হয় সেই মানুষটা, যে নিজের নৈতিকতা নিয়ে লড়াই করতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তে।”
আরেকটি অনবদ্য যুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস হলো এরিক মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা আর একজন তরুণ সৈনিকের মানসিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসটি জার্মান ভাষায় প্রকাশ পেলেও তা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। লেখক নিজেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করেছেন, তাই তাঁর লেখায় আছে বাস্তবের স্পর্শ। উপন্যাসের নায়ক পল বয়মার যুদ্ধক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবকে হারিয়ে ফেলে, নিজের অনুভূতিকে গোপন করে রাখতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ শেষে সে আর আগের মতো থাকে না। আমেরিকার যুদ্ধসাহিত্য গবেষক ড. রেবেকা ডিন এই উপন্যাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “এই উপন্যাস কেবল একজন সৈনিকের নয়, একটি প্রজন্মের হারিয়ে যাওয়া মানবতার দলিল।”
যুদ্ধ মানেই শুধু সামরিক সংঘর্ষ নয়, যুদ্ধ মানে মানুষের মনোজগতে এক দীর্ঘ লড়াই। এ বিষয়টি অসাধারণভাবে উঠে এসেছে কুর্ট ভনেগাটের ‘স্লটারহাউস-ফাইভ’ উপন্যাসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ড্রেসডেন শহরের উপর মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণের ঘটনা নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে যুদ্ধের বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সায়েন্স ফিকশনের ছোঁয়া। ভনেগাটের ভাষা কখনো তীক্ষ্ণ, কখনো বিদ্রুপে ভরা। এই লেখকের নিজস্ব জীবনেও যুদ্ধ ছিল—তিনি ছিলেন ড্রেসডেনে বন্দি, এবং এই ভয়ংকর স্মৃতি থেকেই সৃষ্টি এই উপন্যাস। আমেরিকান সাহিত্য গবেষক ও ‘মর্ডান ওয়ার ফিকশন’ বইয়ের লেখক ড. হেনরি কোলম্যান বলেন, “স্লটারহাউস-ফাইভ একমাত্র উপন্যাস যেখানে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতাকে এমন চিত্তাকর্ষকভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেন আমরা হাসতে হাসতে ভয় পাই।”
নারীদের চোখে যুদ্ধ কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে সোভিয়েত লেখিকা স্বেতলানা আলেক্সিয়েভিচ-এর ‘ওয়ার্স আনওম্যানলি ফেস’ বইয়ে। যদিও এটি পুরোপুরি উপন্যাস নয়, তবে এতে রয়েছে ২০০-এর বেশি সোভিয়েত নারীর সাক্ষাৎকার, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কেউ ছিলেন স্নাইপার, কেউ চিকিৎসক, কেউবা নার্স। এই বইয়ে যুদ্ধের এমন সব গল্প পাওয়া যায়, যা মূলধারার ইতিহাসে নেই। আলেক্সিয়েভিচ বলেন, “নারীরা যুদ্ধ দেখে হৃদয় দিয়ে, বর্ণনা করে নিজের আত্মা দিয়ে।” এই বইয়ের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, এবং তাঁর কাজকে ‘নতুন ধরনের সাহিত্যিক ধ্বনি’ বলে আখ্যা দেন সুইডিশ অ্যাকাডেমি।
এছাড়া, লিও টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ উপন্যাসও যুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের প্রেক্ষাপটে লেখা এই মহাকাব্যিক উপন্যাসে উঠে আসে পাঁচটি রুশ অভিজাত পরিবারের কাহিনি, আর সেই সঙ্গে যুদ্ধের ছোবল, প্রেম, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দর্শনের মিশেল। এই উপন্যাস পড়া যেন এক মানসিক যাত্রা, যেখানে যুদ্ধের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া শান্তির খোঁজে ছুটে চলে চরিত্ররা। ব্রিটিশ সাহিত্য সমালোচক ড. হ্যারল্ড ব্লুম বলেন, “টলস্টয়ের এই উপন্যাস আমাদের বোঝায়—যুদ্ধ কোনো একক ঘটনা নয়, এটি একটি দীর্ঘ মানবিক অভিজ্ঞতা যা সময়, সমাজ আর ব্যক্তিত্বকে চিরকাল বদলে দেয়।”
এশিয়াতেও যুদ্ধ নিয়ে সাহিত্য হয়েছে, এবং তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো জাপানি লেখক কোবো আবের ‘উওম্যান ইন দ্য ডিউনস’। যদিও এটি সরাসরি যুদ্ধের কাহিনি নয়, কিন্তু উপন্যাসের গভীর স্তরে রয়েছে যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানি সমাজের ভয়, বন্দিত্ব এবং আত্মপরিচয়ের সংকট। এই উপন্যাসের প্রতীকী ভাষা, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন, এবং সমাজবীক্ষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যুদ্ধের ছায়া কত গভীরভাবে প্রভাব ফেলে সমাজে।
আধুনিক সময়েও যুদ্ধের ছাপ পড়ে সাহিত্যে। ২০০১ সালের পর আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ফিল ক্লেয়ের ‘রিডিপ্লয়মেন্ট’। এটি একটি ছোটগল্প সংকলন, যেখানে আমেরিকান সেনাদের মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতা, দেশে ফেরার পর মানসিক টানাপোড়েন এবং যুদ্ধের দগদগে স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসটি ২০১৪ সালে জাতীয় বুক অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। ক্লে নিজেও ছিলেন এক মার্কিন মেরিন, তাই তাঁর গল্পে বাস্তবতা তীব্র। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাহিত্য বিশ্লেষক ড. অ্যালেন গ্রিন এই বই সম্পর্কে বলেন, “রিডিপ্লয়মেন্ট হলো আধুনিক যুদ্ধের কণ্ঠস্বর, যেখানে গোলাগুলির চেয়ে বেশি শব্দ হয় নিঃশব্দের।”
সবশেষে বলা যায়, যুদ্ধ নিয়ে লেখা এই উপন্যাসগুলো কোনো কেবল সাহিত্য নয়—এগুলো একেকটি মানবিক দলিল। এগুলো আমাদের দেখায়, যুদ্ধ যতটা না ঘটে যুদ্ধক্ষেত্রে, তার চেয়েও বেশি ঘটে মানুষের হৃদয়ে। এসব উপন্যাস পড়লে আমরা বুঝি, মানুষ কতটা ভেঙে পড়ে, আবার সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়ায়। যুদ্ধ বদলায় মানচিত্র, আর সাহিত্যের যুদ্ধ বদলায় মনন। তাই এইসব উপন্যাস শুধু পাঠ নয়, আমাদের মানবিক চেতনার পাঠশালা।
যুদ্ধ মানেই রক্ত, কান্না আর ধ্বংস। কিন্তু যুদ্ধ মানেই কি কেবল বন্দুক আর গোলাগুলি? না, যুদ্ধ মানে মানুষের আত্মদহন, ভাঙাগড়া, সম্পর্কের বিপর্যয় এবং নতুন করে জেগে ওঠার কাহিনিও। এই যুদ্ধের নানা রূপ আমরা দেখতে পাই সাহিত্যে—বিশেষত উপন্যাসে। যুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস শুধু অতীত ইতিহাসের দলিল নয়, বরং সেগুলো আমাদের শেখায় সহানুভূতি, মানবতা আর আত্মবোধের নতুন সংজ্ঞা।
বিশ্বসাহিত্যে এমন অসংখ্য উপন্যাস রয়েছে, যেগুলো যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও তা শুধুই রাজনীতি বা কৌশলের গল্প নয়, বরং মানুষের গল্প। তাদের বেঁচে থাকার লড়াই, ভালোবাসা, হারিয়ে ফেলা প্রিয়জন, কিংবা যুদ্ধ শেষে একজন সৈনিকের নিঃসঙ্গ জীবনের গল্প। এসব উপন্যাস আমাদের দেখায়, যুদ্ধ কেবল একটি ভূখণ্ডের নয়—এটা মন ও আত্মারও যুদ্ধ।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-ভিত্তিক সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং গভীরভাবে অনুধাবনযোগ্য এক উপন্যাস হলো আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র রবার্ট জর্ডান একজন মার্কিন অধ্যাপক, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে এসে নিজের আদর্শ, ভয় ও প্রেমের মুখোমুখি হন। হেমিংওয়ের ভাষা সহজ, কিন্তু গভীর। তিনি আমাদের দেখান যে, যুদ্ধ মানুষকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও ভেঙে দেয়। ব্রিটিশ সাহিত্য বিশ্লেষক ড. মার্টিন হ্যাম্পসন এই উপন্যাসকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, “হেমিংওয়ে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, আদর্শিক যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আহত হয় সেই মানুষটা, যে নিজের নৈতিকতা নিয়ে লড়াই করতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তে।”
আরেকটি অনবদ্য যুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস হলো এরিক মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা আর একজন তরুণ সৈনিকের মানসিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসটি জার্মান ভাষায় প্রকাশ পেলেও তা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। লেখক নিজেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করেছেন, তাই তাঁর লেখায় আছে বাস্তবের স্পর্শ। উপন্যাসের নায়ক পল বয়মার যুদ্ধক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবকে হারিয়ে ফেলে, নিজের অনুভূতিকে গোপন করে রাখতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ শেষে সে আর আগের মতো থাকে না। আমেরিকার যুদ্ধসাহিত্য গবেষক ড. রেবেকা ডিন এই উপন্যাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “এই উপন্যাস কেবল একজন সৈনিকের নয়, একটি প্রজন্মের হারিয়ে যাওয়া মানবতার দলিল।”
যুদ্ধ মানেই শুধু সামরিক সংঘর্ষ নয়, যুদ্ধ মানে মানুষের মনোজগতে এক দীর্ঘ লড়াই। এ বিষয়টি অসাধারণভাবে উঠে এসেছে কুর্ট ভনেগাটের ‘স্লটারহাউস-ফাইভ’ উপন্যাসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ড্রেসডেন শহরের উপর মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণের ঘটনা নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে যুদ্ধের বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সায়েন্স ফিকশনের ছোঁয়া। ভনেগাটের ভাষা কখনো তীক্ষ্ণ, কখনো বিদ্রুপে ভরা। এই লেখকের নিজস্ব জীবনেও যুদ্ধ ছিল—তিনি ছিলেন ড্রেসডেনে বন্দি, এবং এই ভয়ংকর স্মৃতি থেকেই সৃষ্টি এই উপন্যাস। আমেরিকান সাহিত্য গবেষক ও ‘মর্ডান ওয়ার ফিকশন’ বইয়ের লেখক ড. হেনরি কোলম্যান বলেন, “স্লটারহাউস-ফাইভ একমাত্র উপন্যাস যেখানে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতাকে এমন চিত্তাকর্ষকভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেন আমরা হাসতে হাসতে ভয় পাই।”
নারীদের চোখে যুদ্ধ কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে সোভিয়েত লেখিকা স্বেতলানা আলেক্সিয়েভিচ-এর ‘ওয়ার্স আনওম্যানলি ফেস’ বইয়ে। যদিও এটি পুরোপুরি উপন্যাস নয়, তবে এতে রয়েছে ২০০-এর বেশি সোভিয়েত নারীর সাক্ষাৎকার, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কেউ ছিলেন স্নাইপার, কেউ চিকিৎসক, কেউবা নার্স। এই বইয়ে যুদ্ধের এমন সব গল্প পাওয়া যায়, যা মূলধারার ইতিহাসে নেই। আলেক্সিয়েভিচ বলেন, “নারীরা যুদ্ধ দেখে হৃদয় দিয়ে, বর্ণনা করে নিজের আত্মা দিয়ে।” এই বইয়ের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, এবং তাঁর কাজকে ‘নতুন ধরনের সাহিত্যিক ধ্বনি’ বলে আখ্যা দেন সুইডিশ অ্যাকাডেমি।
এছাড়া, লিও টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ উপন্যাসও যুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের প্রেক্ষাপটে লেখা এই মহাকাব্যিক উপন্যাসে উঠে আসে পাঁচটি রুশ অভিজাত পরিবারের কাহিনি, আর সেই সঙ্গে যুদ্ধের ছোবল, প্রেম, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দর্শনের মিশেল। এই উপন্যাস পড়া যেন এক মানসিক যাত্রা, যেখানে যুদ্ধের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া শান্তির খোঁজে ছুটে চলে চরিত্ররা। ব্রিটিশ সাহিত্য সমালোচক ড. হ্যারল্ড ব্লুম বলেন, “টলস্টয়ের এই উপন্যাস আমাদের বোঝায়—যুদ্ধ কোনো একক ঘটনা নয়, এটি একটি দীর্ঘ মানবিক অভিজ্ঞতা যা সময়, সমাজ আর ব্যক্তিত্বকে চিরকাল বদলে দেয়।”
এশিয়াতেও যুদ্ধ নিয়ে সাহিত্য হয়েছে, এবং তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো জাপানি লেখক কোবো আবের ‘উওম্যান ইন দ্য ডিউনস’। যদিও এটি সরাসরি যুদ্ধের কাহিনি নয়, কিন্তু উপন্যাসের গভীর স্তরে রয়েছে যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানি সমাজের ভয়, বন্দিত্ব এবং আত্মপরিচয়ের সংকট। এই উপন্যাসের প্রতীকী ভাষা, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন, এবং সমাজবীক্ষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যুদ্ধের ছায়া কত গভীরভাবে প্রভাব ফেলে সমাজে।
আধুনিক সময়েও যুদ্ধের ছাপ পড়ে সাহিত্যে। ২০০১ সালের পর আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ফিল ক্লেয়ের ‘রিডিপ্লয়মেন্ট’। এটি একটি ছোটগল্প সংকলন, যেখানে আমেরিকান সেনাদের মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতা, দেশে ফেরার পর মানসিক টানাপোড়েন এবং যুদ্ধের দগদগে স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসটি ২০১৪ সালে জাতীয় বুক অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। ক্লে নিজেও ছিলেন এক মার্কিন মেরিন, তাই তাঁর গল্পে বাস্তবতা তীব্র। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাহিত্য বিশ্লেষক ড. অ্যালেন গ্রিন এই বই সম্পর্কে বলেন, “রিডিপ্লয়মেন্ট হলো আধুনিক যুদ্ধের কণ্ঠস্বর, যেখানে গোলাগুলির চেয়ে বেশি শব্দ হয় নিঃশব্দের।”
সবশেষে বলা যায়, যুদ্ধ নিয়ে লেখা এই উপন্যাসগুলো কোনো কেবল সাহিত্য নয়—এগুলো একেকটি মানবিক দলিল। এগুলো আমাদের দেখায়, যুদ্ধ যতটা না ঘটে যুদ্ধক্ষেত্রে, তার চেয়েও বেশি ঘটে মানুষের হৃদয়ে। এসব উপন্যাস পড়লে আমরা বুঝি, মানুষ কতটা ভেঙে পড়ে, আবার সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়ায়। যুদ্ধ বদলায় মানচিত্র, আর সাহিত্যের যুদ্ধ বদলায় মনন। তাই এইসব উপন্যাস শুধু পাঠ নয়, আমাদের মানবিক চেতনার পাঠশালা।
আজ দুপুর ১টার মধ্যে দেশের সাত জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। শনিবার (২৮ জুন) ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
১ দিন আগেসবকিছু শুরু হয় উনিশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপে ‘জায়নবাদ’ নামক একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনার মধ্য দিয়ে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইহুদি জনগণের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করা।
১ দিন আগেপেয়ারা মূলত ট্রপিক্যাল ফল। বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ বহু দেশে এটি উৎপাদিত হয়। একেক দেশে এর রং, আকার ও স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সব জাতের পেয়ারাতেই থাকে প্রচুর ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটারি ফাইবার।
১ দিন আগেমোসাদ্দেক ছিলেন এক সত্যিকার গণতান্ত্রিক নেতা। ১৯৫১ সালে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি তেল শিল্পকে জাতীয়করণ করেন। কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল, ইরানের জনগণের সম্পদ শুধুমাত্র ইরানিদেরই কাজে লাগা উচিত।
২ দিন আগে