অরুণ কুমার
যশোরের একটা মেসে থাকি তখন৷ ছোট্ট একতলা বাড়ি। সামনে ঘাসঢাকা উঠোন। পেছেনে একটা কচুরিপনা আত নলঝোপে ঠাসা জংলি পুকুর। সারাদিন ওদের ডাক শুনি--কড়াক, কড়াক। রাতে সেই ডাক অদ্ভুত আর্তনাদের মতো শোনায়। যেন ডেকে ডেকে বলছে তাদের উচ্ছেদ হিয়ার করুণ কাহিনি। দিনের বেলা জানালায় গিয়ে বসতাম ওদের দেখার জন্য। সাদা কালো, মুরগির মতো দেখতে পাখিটা। নাম ডাহুক। ছোটবেলায় একে বলতাম ডাক পাখি। গ্রামের লোক আজও এ নামেই ডাকে। ছেলেবেলয়া বড়দের মুখে, বন্ধুদের মুখে শুনেছি এদের গল্প। পানিতে, কচুরিপানার দঙ্গলে নাকি বাসা করে। আমাদের গ্রামের চারপাশে দুটো বিল, একটা ঝিল আর একটা ছোট্ট নদী- ইছামতী। এছাড়া নিচু জলাভূমিও ছিল বিস্তর। তাই ডাহুক পাখির অভাব ছিল না। কিন্তু ছোটবেলায় গ্রামের জীবনে এদের দেখা পাইনি। কেন পাইনি, তখন এর উত্তর ছিল না। কিন্তু পরে বুঝেছি, মাংসের লোভে মানুষ নির্বিচারে এই পাখি শিকার করে। তাই মানুষকেই এদের যত ভয়, মানুষ আশপাশে আছে বুঝতে পারলে আর আশপাশে থাকে না। লুকিয়ে পড়ে কচুরিপানা আর জলজ উদ্ভিদের জটলার ভেতর।
যশোরের ওই জলাশয়টা ওদের জন্য বেশ নিরাপদ আশ্রয় ছিল। ওখানে মাংসের লোভে কেউ ওদের ধরে না। তাই জানালায় বসে নির্ভিক ডাহুকের দেখা পেতাম, দিব্যি খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কয়েকমাস ভালোই চলছিল, হঠাৎ একদিন এক শিকারির আগমন। লোকটা একটা খাঁচার ফাঁদ নিয়ে এসেছে। তার ভেতর একটা পোষা ডাহুক। এই ফাঁদটা বড় ভয়ংকর, খাঁচার ভেতরের ডাহুকটা কড়াক কড়াক করে ডাকে। সেই ডাকে আকৃষ্ট হয়ে বুনো ডাহুকেরা আসে খাঁচার পাশে। আর এলেই বিপদ। খাঁচার বাইরে জালের ফাঁদ। জংলি ডাহুক এসে সেখানে বসার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁদের ফাঁস খুলে যায়। বুনো ডাহুক আটকা পড়ে সেই ফাঁদে।
ব্যাপারটা বুঝতে আমাদের সময় লাগেনি। মেসের বন্ধুদের নিয়ে শিকারি লোকটাকে পাকড়াও করলাম। তার সেকী আস্ফালন। সে গায়ের জোর দেখায়, কিছুতেই সে পাখি শিকার বন্ধ করবে না। বুঝলাম, ভালো কথায় কাজ হবে না। তখন তাকে পুলিশের ভয় দেখালাম, বন্যপ্রাণী আইনে শিকার করা যে অন্যায়, সেটার কী শাস্তি সব খুলে বললাম। কিন্তু লোকটা একগুঁয়ে। উলটো আমাদের দেখে নেবে হুমকি দিল। তখন বাড়ির মালিককে জানালাম ব্যাপারটা। তিনি এসে লোকটাকে ভয় দেখিয়ে তাড়ালেন। এরপর লোকটাকে আর দেখিনি কোনোদিন।
এরপর বহুবার দেশের নানা জায়গায় ডাহুক দেখেছি, কিন্তু ঠিকঠাক ছবি তুলতে পারিনি। এই ঈদে গ্রামে গিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির খুব কাছে একটা একটা বাঁশবাগান, সেখানে একটা ছোট্ট জলাশয় আছে। সেখানে একবার ডাহুক দেখেছি। ক্যমেরাও সঙ্গে ছিল সেদিন। কিন্তু ছবি তুলতে ব্যর্থ হয়েছি, মানুষের প্রতি ওদের ভয়ের কারণেই। এবারও আরেক চেষ্টা করার জন্যই ওদিকে গিয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম! আমি যেদিক দিয়ে গিয়েছি, ওদিক দিয়ে জলাশয়ের যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। লোহার নেট দিয়ে চারপাশ ঘেরা। দূরে অন্যপারে ঢোকার দরজা আছে। কিন্তু সেদিকে যেতে হলে পুরো পাড়াটাই ঘুরতে হবে।
পশ্চিম দিকের বেড়াটা সেই জলাশয়ের প্রায় লাগোয়া। ভাবলাম ওদিকেই যাই। ডাহুক যদি থাকেই তাহলে ওখান থেকে ক্যামেরায় লেন্সের আওতাও পাওয়া যেতে পারে। সেদিকেই এগুলাম। বেড়ার পাশে সরু রাস্তা। নিচে বিশাল পুকুর। আসলে ওই পুকুরটার পাড়ের ওপর এই রাস্তা, বেড়া লাগোয়া।
সেখানে বসব ভাবছিলা, বেড়ার ফাঁক দিয়ে চোখ চলে গেল সেই ছোট্ট জলাশয়ে। পেয়ে গেলাম আমার পরম আরাধ্য ডাহুক। সঙ্গে দুটি ছানা।
ডাহুকের ছানা, দেখতে কুচকুচে কালো। মুরগির ছানার মতো। আমাদের গাঁয়ের এক পুকুরে প্রথম দেখেছিলাম ডাহুক ছানা। তিনটি। মায়ের পিছু পিছু ঘুরে বেড়াছিল্ল। সেদিনও ক্যামেরা ছিল, সঙ্গে ৩০০ মিলিমিটারের লেন্স। কিন্তু পর্যাপ্ত আলোর অভাবে ছবি ভালো হয়নি সেদিন। দূরত্বও ছিল অনেক বেশি। তবে আজ তার তিনভাগের একভাগ দূরত্বে। কেবল সকাল আটটা তাই আলোর অভাব অতটা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হলো ছানাদের গায়ের রং। ওরা জলাশায়ের ধার ঘেঁষে চলে, ভেজাঁ কাদা-মাটির সঙ্গে নিজেদের শরীর মিশিয়ে। কালো কাঁদার ওপর কালো ছানা। খুব বেশি নড়াচড়া করে না, মানুষ কিংবা শত্রু দেখলে একদম নট নড়নচড়ন। সুতরাং চট করে ওদের দেখে ফেলা কঠিন। আমি দেখেছি, ওরা আমাকে দেখেনি। সেটাই আমার জন্য সুবিধা হলো। মা আর ছানার ছবি নিলাম প্রাণ ভরে।
যশোরের একটা মেসে থাকি তখন৷ ছোট্ট একতলা বাড়ি। সামনে ঘাসঢাকা উঠোন। পেছেনে একটা কচুরিপনা আত নলঝোপে ঠাসা জংলি পুকুর। সারাদিন ওদের ডাক শুনি--কড়াক, কড়াক। রাতে সেই ডাক অদ্ভুত আর্তনাদের মতো শোনায়। যেন ডেকে ডেকে বলছে তাদের উচ্ছেদ হিয়ার করুণ কাহিনি। দিনের বেলা জানালায় গিয়ে বসতাম ওদের দেখার জন্য। সাদা কালো, মুরগির মতো দেখতে পাখিটা। নাম ডাহুক। ছোটবেলায় একে বলতাম ডাক পাখি। গ্রামের লোক আজও এ নামেই ডাকে। ছেলেবেলয়া বড়দের মুখে, বন্ধুদের মুখে শুনেছি এদের গল্প। পানিতে, কচুরিপানার দঙ্গলে নাকি বাসা করে। আমাদের গ্রামের চারপাশে দুটো বিল, একটা ঝিল আর একটা ছোট্ট নদী- ইছামতী। এছাড়া নিচু জলাভূমিও ছিল বিস্তর। তাই ডাহুক পাখির অভাব ছিল না। কিন্তু ছোটবেলায় গ্রামের জীবনে এদের দেখা পাইনি। কেন পাইনি, তখন এর উত্তর ছিল না। কিন্তু পরে বুঝেছি, মাংসের লোভে মানুষ নির্বিচারে এই পাখি শিকার করে। তাই মানুষকেই এদের যত ভয়, মানুষ আশপাশে আছে বুঝতে পারলে আর আশপাশে থাকে না। লুকিয়ে পড়ে কচুরিপানা আর জলজ উদ্ভিদের জটলার ভেতর।
যশোরের ওই জলাশয়টা ওদের জন্য বেশ নিরাপদ আশ্রয় ছিল। ওখানে মাংসের লোভে কেউ ওদের ধরে না। তাই জানালায় বসে নির্ভিক ডাহুকের দেখা পেতাম, দিব্যি খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কয়েকমাস ভালোই চলছিল, হঠাৎ একদিন এক শিকারির আগমন। লোকটা একটা খাঁচার ফাঁদ নিয়ে এসেছে। তার ভেতর একটা পোষা ডাহুক। এই ফাঁদটা বড় ভয়ংকর, খাঁচার ভেতরের ডাহুকটা কড়াক কড়াক করে ডাকে। সেই ডাকে আকৃষ্ট হয়ে বুনো ডাহুকেরা আসে খাঁচার পাশে। আর এলেই বিপদ। খাঁচার বাইরে জালের ফাঁদ। জংলি ডাহুক এসে সেখানে বসার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁদের ফাঁস খুলে যায়। বুনো ডাহুক আটকা পড়ে সেই ফাঁদে।
ব্যাপারটা বুঝতে আমাদের সময় লাগেনি। মেসের বন্ধুদের নিয়ে শিকারি লোকটাকে পাকড়াও করলাম। তার সেকী আস্ফালন। সে গায়ের জোর দেখায়, কিছুতেই সে পাখি শিকার বন্ধ করবে না। বুঝলাম, ভালো কথায় কাজ হবে না। তখন তাকে পুলিশের ভয় দেখালাম, বন্যপ্রাণী আইনে শিকার করা যে অন্যায়, সেটার কী শাস্তি সব খুলে বললাম। কিন্তু লোকটা একগুঁয়ে। উলটো আমাদের দেখে নেবে হুমকি দিল। তখন বাড়ির মালিককে জানালাম ব্যাপারটা। তিনি এসে লোকটাকে ভয় দেখিয়ে তাড়ালেন। এরপর লোকটাকে আর দেখিনি কোনোদিন।
এরপর বহুবার দেশের নানা জায়গায় ডাহুক দেখেছি, কিন্তু ঠিকঠাক ছবি তুলতে পারিনি। এই ঈদে গ্রামে গিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির খুব কাছে একটা একটা বাঁশবাগান, সেখানে একটা ছোট্ট জলাশয় আছে। সেখানে একবার ডাহুক দেখেছি। ক্যমেরাও সঙ্গে ছিল সেদিন। কিন্তু ছবি তুলতে ব্যর্থ হয়েছি, মানুষের প্রতি ওদের ভয়ের কারণেই। এবারও আরেক চেষ্টা করার জন্যই ওদিকে গিয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম! আমি যেদিক দিয়ে গিয়েছি, ওদিক দিয়ে জলাশয়ের যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। লোহার নেট দিয়ে চারপাশ ঘেরা। দূরে অন্যপারে ঢোকার দরজা আছে। কিন্তু সেদিকে যেতে হলে পুরো পাড়াটাই ঘুরতে হবে।
পশ্চিম দিকের বেড়াটা সেই জলাশয়ের প্রায় লাগোয়া। ভাবলাম ওদিকেই যাই। ডাহুক যদি থাকেই তাহলে ওখান থেকে ক্যামেরায় লেন্সের আওতাও পাওয়া যেতে পারে। সেদিকেই এগুলাম। বেড়ার পাশে সরু রাস্তা। নিচে বিশাল পুকুর। আসলে ওই পুকুরটার পাড়ের ওপর এই রাস্তা, বেড়া লাগোয়া।
সেখানে বসব ভাবছিলা, বেড়ার ফাঁক দিয়ে চোখ চলে গেল সেই ছোট্ট জলাশয়ে। পেয়ে গেলাম আমার পরম আরাধ্য ডাহুক। সঙ্গে দুটি ছানা।
ডাহুকের ছানা, দেখতে কুচকুচে কালো। মুরগির ছানার মতো। আমাদের গাঁয়ের এক পুকুরে প্রথম দেখেছিলাম ডাহুক ছানা। তিনটি। মায়ের পিছু পিছু ঘুরে বেড়াছিল্ল। সেদিনও ক্যামেরা ছিল, সঙ্গে ৩০০ মিলিমিটারের লেন্স। কিন্তু পর্যাপ্ত আলোর অভাবে ছবি ভালো হয়নি সেদিন। দূরত্বও ছিল অনেক বেশি। তবে আজ তার তিনভাগের একভাগ দূরত্বে। কেবল সকাল আটটা তাই আলোর অভাব অতটা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হলো ছানাদের গায়ের রং। ওরা জলাশায়ের ধার ঘেঁষে চলে, ভেজাঁ কাদা-মাটির সঙ্গে নিজেদের শরীর মিশিয়ে। কালো কাঁদার ওপর কালো ছানা। খুব বেশি নড়াচড়া করে না, মানুষ কিংবা শত্রু দেখলে একদম নট নড়নচড়ন। সুতরাং চট করে ওদের দেখে ফেলা কঠিন। আমি দেখেছি, ওরা আমাকে দেখেনি। সেটাই আমার জন্য সুবিধা হলো। মা আর ছানার ছবি নিলাম প্রাণ ভরে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে চুলের গঠন, তার প্রাকৃতিক বৃদ্ধি এবং ক্ষতির কারণ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। চুল মূলত প্রোটিন দ্বারা গঠিত, বিশেষ করে কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন চুলের মূল উপাদান। যখন চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না কিংবা বাইরে থেকে সঠিক যত্ন পায় না, তখন তা রুক্ষ হয়ে যায়, ভেঙে যায় এবং ঝরে পড়ে। তেল মূলত চ
১ দিন আগেলাল লতিকা হট্টিটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এই পাখিটি খুবেই চটপটে ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সতর্ক ভঙ্গি ও জলশয়ের পাতার ওপর দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। সেটিই লতিকা।
২ দিন আগেঅচ্যুত পোতদারের অভিনয়জীবন ছিল চার দশকেরও বেশি। তিনি ১২৫টির বেশি হিন্দি ও মারাঠি ছবিতে কাজ করেছেন। হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন নম্র, অমায়িক এবং বহুমুখী প্রতিভ
২ দিন আগেথাইরয়েড সমস্যায় ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ফল আছে যেগুলো থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এসব ফলে থাকে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ফল খেয়েই থাইরয়েড সারানো
২ দিন আগে