অরুণ কুমার
চৈত্রের খঁ খাঁ দুপর। ঝরা আম পাতার খস খস শব্দ। প্রথমে উৎসটা চোখে পড়েনি। একটু পরেই পড়ল। নতুন একটা পাখি। আমার ছবির অ্যালবামের জন্য নতুন। চোখের জন্যও নতুন কিনা সে কথা নিশ্চিত করতে পারল না মগজের স্মৃতিকোষগুলো।
হাতে ক্যামেরা। এমন সুযোগ হারায় কে? পাখিটাও যেন নিজেকে উজাড় করে মেলে ধরল। কমলা দামা। দোয়েলের জাত ভাই। সুন্দর বটে। লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়চ্ছে পাতার ভেতর। পা-নখ দিয়ে খুঁজে ফিরছে সাধের খাবার। মিলছেও দুয়েককটা। নিমিষে সেটা গলধকরণ করে আবার পাতার ভেতর চালাচ্ছে তল্লাসী। আগে কখনো দেখি-বা না দেখি তাতে কিছু এসে যায় না। ছোট্ট-সুন্দর পাখিটার তামাশা দেখে তখন ভারি আমোদ হচ্ছিল মনে। পাখির ছবি তোলা শুরুর আগে অনেক পাখিই দেখেছি কিনা মনে পড়ে না। অথচ গায়ের বনে-বাঁদাড়ে দিব্যি ঘুরে ঘুরে বেড়ায় পাখিগুলো। অন্তর্চক্ষু মুদে রাখলে বাইরের চোখ দিয়ে প্রকৃতির স্বাদ ষোল আনা অনুভব করা যায় না —আমি এটা এখন মর্মে মর্মে অনুধাবন করি।
দামার দেখা সেদিনই প্রথম। তবে শেষবার নয়। এখন প্রায়ই চোখে পড়ে। ছদ্মবেশি পাখি, তাই হয়তো সবার চোখে পড়ে না। অথচ ঘুরে বেড়ায় মানুষের নাকের ডগায়। গায়ের কমলা আর ধূসর রং লালচে-ধূসর ঝরা পাতার ভেতর এদের ছদ্মবেশ ধারণে সাহায্য করে।
ছদ্মবেশী হলেও কিন্তু অতি চালাক নয়। হাঁড়িচাঁচার মতো শিকারি পাখিদের কাছে বড্ড অসহায়। গত গ্রীষ্মে একটা আমবাগানে কিছুদিন আস্তানা গেঁড়েছিলাম। লুকিয়ে লুকিয়ে পাখিদের কাণ্ড-কীর্তি দেখব বলে। ঘন ঝোপালো বাগান। তার ওপর চারপাশ ভেরেন্ডা-কচার দুর্ভেদ্য বেড়া। মানুষের যাতায়াত একদম নেই। নিজে লুকিয়ে রাখার সে এক মোক্ষম জায়গা। বাগানটার পাশেই ছোট্ট একটা আমের ডালে বাসা বেঁধেছে শাহবুলবুল। মূলত ওদের জন্যই আমার এই ঘাঁপটি মারা। উপরি পাওনা হিসেবে পেয়ে গেলাম আরেকটা বাসা। একজোড়া কমলা দামা বাসা বেঁধেছে মেহগনির একট বোঁচা ডালের মাথায় খড়কুকোটো সাজিয়ে। সদ্য গজানো কিছু কচিপাতা আড়াল করে রেখেছে বাসাটাকে। আড়ালটা যথেষ্ট নয়। বাসা থেকে ছানাদের কিচির মিচির শুনতে পাই দূর থেকে। মাঝে মাঝে ছানাদের হাঁ-করা ঠোঁট দেখি। মা কিংবা বাবা পাখি মাঝে মাঝে খাইয়ে আসে ওদের।
মা-বাবা দামাদের আচরণ যেন ঠিক স্বাভাবিক নয় —কেমন যেন ভয় ভয় ব্যাপার আছে। চলনে-বলনে অতি সতর্কতা। কেন? সেটা ভাবছি —তখনই হাজির যমদূত। কারণ বুঝতে তখন আর বাকি থাকল না। একজোড়া খয়রা হাঁড়িচাঁছা হানা দিয়েছে বাগানে। দামার ছানাদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি। শাহবুলবুলের বাসায় ডিম-ছানা কিছু আছে কিনা বুঝতে পারছি না। কাছে গিয়ে দেখা ঠিক নয়। তাই তো এত দূরে গা ঢাকা দিয়ে আছি। মাঝে মাঝে খ্যামেরা জুম করে ছবি তুলি। তবু নিশ্চিত নই ওদেও বাসায় ডিম-বা ছানা আছে কিনা। কিন্তু হাঁড়িচাঁছার আবির্ভাবের পর ওরা অতি সতর্ক। লেজওয়ালা পুরষ শাহবুলবুল মারমুখি ভঙ্গিতে তেড়ে গেলো হাঁড়িচাঁচার দিকে। দামারা দূর থেকে কিচির মিচির করেই বকে দিচ্ছে শত্রুদের।
কিন্তু ওরা কি পারবে শেষ রক্ষা করতে? আকারে তো হাঁড়িচাঁছাদের কাছে দামরা নস্যি! সন্তান রক্ষায় ওদের লড়াইটা দেখেছিলাম চারদিন নিয়ম করে। দামারা দুজন, সাথে লড়াকু শাহবুলবল দম্পতি। একটা হলদে পাখি এসে জোট বাঁধল ওদের সাথে। বুঝতে বাকি রইল না, হলদে পাখির বাসাও আছে আশপাশে। সব মিলিয়ে বড়সড় একটা দল গড়ে উঠল। বুক চিতিয়ে ওদের লড়াইটা দেখে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়। ক্লান্ত পাখিরা যখন শত্রুদের হঠিয়ে ফিরে আসে, আমিও তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। কামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে ফিরে আসি বাড়িতে।
একদিন হঠাৎ দেখা শান্ত-নিরীহ কমলা দামাকে মনে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, সেদিন লড়াই শেষে সেই ছোট্ট কমলা দামাই শ্রদ্ধা আদায় করে নিল।
চৈত্রের খঁ খাঁ দুপর। ঝরা আম পাতার খস খস শব্দ। প্রথমে উৎসটা চোখে পড়েনি। একটু পরেই পড়ল। নতুন একটা পাখি। আমার ছবির অ্যালবামের জন্য নতুন। চোখের জন্যও নতুন কিনা সে কথা নিশ্চিত করতে পারল না মগজের স্মৃতিকোষগুলো।
হাতে ক্যামেরা। এমন সুযোগ হারায় কে? পাখিটাও যেন নিজেকে উজাড় করে মেলে ধরল। কমলা দামা। দোয়েলের জাত ভাই। সুন্দর বটে। লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়চ্ছে পাতার ভেতর। পা-নখ দিয়ে খুঁজে ফিরছে সাধের খাবার। মিলছেও দুয়েককটা। নিমিষে সেটা গলধকরণ করে আবার পাতার ভেতর চালাচ্ছে তল্লাসী। আগে কখনো দেখি-বা না দেখি তাতে কিছু এসে যায় না। ছোট্ট-সুন্দর পাখিটার তামাশা দেখে তখন ভারি আমোদ হচ্ছিল মনে। পাখির ছবি তোলা শুরুর আগে অনেক পাখিই দেখেছি কিনা মনে পড়ে না। অথচ গায়ের বনে-বাঁদাড়ে দিব্যি ঘুরে ঘুরে বেড়ায় পাখিগুলো। অন্তর্চক্ষু মুদে রাখলে বাইরের চোখ দিয়ে প্রকৃতির স্বাদ ষোল আনা অনুভব করা যায় না —আমি এটা এখন মর্মে মর্মে অনুধাবন করি।
দামার দেখা সেদিনই প্রথম। তবে শেষবার নয়। এখন প্রায়ই চোখে পড়ে। ছদ্মবেশি পাখি, তাই হয়তো সবার চোখে পড়ে না। অথচ ঘুরে বেড়ায় মানুষের নাকের ডগায়। গায়ের কমলা আর ধূসর রং লালচে-ধূসর ঝরা পাতার ভেতর এদের ছদ্মবেশ ধারণে সাহায্য করে।
ছদ্মবেশী হলেও কিন্তু অতি চালাক নয়। হাঁড়িচাঁচার মতো শিকারি পাখিদের কাছে বড্ড অসহায়। গত গ্রীষ্মে একটা আমবাগানে কিছুদিন আস্তানা গেঁড়েছিলাম। লুকিয়ে লুকিয়ে পাখিদের কাণ্ড-কীর্তি দেখব বলে। ঘন ঝোপালো বাগান। তার ওপর চারপাশ ভেরেন্ডা-কচার দুর্ভেদ্য বেড়া। মানুষের যাতায়াত একদম নেই। নিজে লুকিয়ে রাখার সে এক মোক্ষম জায়গা। বাগানটার পাশেই ছোট্ট একটা আমের ডালে বাসা বেঁধেছে শাহবুলবুল। মূলত ওদের জন্যই আমার এই ঘাঁপটি মারা। উপরি পাওনা হিসেবে পেয়ে গেলাম আরেকটা বাসা। একজোড়া কমলা দামা বাসা বেঁধেছে মেহগনির একট বোঁচা ডালের মাথায় খড়কুকোটো সাজিয়ে। সদ্য গজানো কিছু কচিপাতা আড়াল করে রেখেছে বাসাটাকে। আড়ালটা যথেষ্ট নয়। বাসা থেকে ছানাদের কিচির মিচির শুনতে পাই দূর থেকে। মাঝে মাঝে ছানাদের হাঁ-করা ঠোঁট দেখি। মা কিংবা বাবা পাখি মাঝে মাঝে খাইয়ে আসে ওদের।
মা-বাবা দামাদের আচরণ যেন ঠিক স্বাভাবিক নয় —কেমন যেন ভয় ভয় ব্যাপার আছে। চলনে-বলনে অতি সতর্কতা। কেন? সেটা ভাবছি —তখনই হাজির যমদূত। কারণ বুঝতে তখন আর বাকি থাকল না। একজোড়া খয়রা হাঁড়িচাঁছা হানা দিয়েছে বাগানে। দামার ছানাদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি। শাহবুলবুলের বাসায় ডিম-ছানা কিছু আছে কিনা বুঝতে পারছি না। কাছে গিয়ে দেখা ঠিক নয়। তাই তো এত দূরে গা ঢাকা দিয়ে আছি। মাঝে মাঝে খ্যামেরা জুম করে ছবি তুলি। তবু নিশ্চিত নই ওদেও বাসায় ডিম-বা ছানা আছে কিনা। কিন্তু হাঁড়িচাঁছার আবির্ভাবের পর ওরা অতি সতর্ক। লেজওয়ালা পুরষ শাহবুলবুল মারমুখি ভঙ্গিতে তেড়ে গেলো হাঁড়িচাঁচার দিকে। দামারা দূর থেকে কিচির মিচির করেই বকে দিচ্ছে শত্রুদের।
কিন্তু ওরা কি পারবে শেষ রক্ষা করতে? আকারে তো হাঁড়িচাঁছাদের কাছে দামরা নস্যি! সন্তান রক্ষায় ওদের লড়াইটা দেখেছিলাম চারদিন নিয়ম করে। দামারা দুজন, সাথে লড়াকু শাহবুলবল দম্পতি। একটা হলদে পাখি এসে জোট বাঁধল ওদের সাথে। বুঝতে বাকি রইল না, হলদে পাখির বাসাও আছে আশপাশে। সব মিলিয়ে বড়সড় একটা দল গড়ে উঠল। বুক চিতিয়ে ওদের লড়াইটা দেখে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়। ক্লান্ত পাখিরা যখন শত্রুদের হঠিয়ে ফিরে আসে, আমিও তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। কামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে ফিরে আসি বাড়িতে।
একদিন হঠাৎ দেখা শান্ত-নিরীহ কমলা দামাকে মনে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, সেদিন লড়াই শেষে সেই ছোট্ট কমলা দামাই শ্রদ্ধা আদায় করে নিল।
ক্লাসিক্যাল বিট তৈরি হয় বৈদ্যুতিক সার্কিটের মাধ্যমে, যেখানে একটি ট্রানজিস্টার হয় চালু (১) অথবা বন্ধ (০)। কিন্তু কিউবিট তৈরি হয় পরমাণুর অদ্ভুত আচরণ দিয়ে। কোনো একক ইলেকট্রন, ফোটন, বা নিউক্লিয়াসের ঘূর্ণন—এই সবকিছু দিয়েই একটি কিউবিট বানানো যেতে পারে।
২০ ঘণ্টা আগেদেশের আট জেলায় সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
১ দিন আগেএই সমস্যা প্রতিরোধে প্রথমে বুঝে নিতে হবে কারণটা ঠিক কী। কারণ অনুযায়ী সমাধানও আলাদা হতে পারে। তবে কিছু প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় আছে, যেগুলো মোটামুটি সব অবস্থাতেই কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।
২ দিন আগেবাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে বোঝা যায়, আমাদের যাত্রাপথ ছিল ভিন্নতর। আমরা একটি বিশাল জনগোষ্ঠী, জটিল আমলাতান্ত্রিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছি।
২ দিন আগে