বিজ্ঞান

জায়ান্ট মোয়া: অতিকায় এক জুরাসিক পাখি

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
জায়ান্ট মোয়া। ছবি: সংগৃহীত

অনেক দিন আগে নিউজিল্যান্ডে এক ধরনের বিশাল পাখি থাকত। এর নাম ছিল জায়ান্ট মোয়া (Giant Moa)। এই পাখিগুলো ডিম পাড়ত, কিন্তু উড়তে পারত না। তারা এতটাই বড় ছিল যে কোনো কোনো মোয়া মানুষের চেয়েও লম্বা হতো। ওজন হতো প্রায় ২৫০ কেজি! কিন্তু মানুষ যখন নিউজিল্যান্ডে যায়, তখন বেশি শিকার করার কারণে এই পাখিগুলো এক সময় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

আজকের বিজ্ঞানীরা চাইছেন বিলুপ্ত কিছু প্রাণীকে আবার ফিরিয়ে আনতে। এভাবে আগের মতো তাদের তৈরি করে তোলা যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে বলে “ডি-এক্সটিংশন”। মানে, যেসব প্রাণী অনেক বছর আগে হারিয়ে গেছে, তাদের আবার বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা। অনেকেই চায় ডায়ার উলফ বা ম্যামথ ফিরে আসুক। কেউ কেউ জায়ান্ট মোাকেও ফিরিয়ে আনতে চাইছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মোাকে ফিরিয়ে আনা ডায়ার উলফের থেকেও অনেক বেশি কঠিন। কেননা, ডায়ার উলফ ছিল একধরনের বন্য কুকুর। আর আজকের আধুনিক নেকড়ে বা কুকুর তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাই বিজ্ঞানীরা ডায়ার উলফ ফিরিয়ে আনতে আধুনিক নেকড়ের ডিএনএ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু মোার কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নেই।

জেনেটিক গবেষক ড. বেথ শ্যাপার্ড, যিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে পড়ান, বলেন, “ডায়ার উলফের কাছাকাছি অনেক প্রাণী আছে। কিন্তু মোার খুব কাছের কোনো আত্মীয় আমরা পাইনি।” তিনি বলেন, “মোাদের ডিএনএ খুব খারাপ অবস্থায় পাওয়া গেছে। ডিএনএ অনেক পুরোনো, তাই এতে ফাঁকফোকর বেশি।”

জায়ান্ট মোা ৬০০ বছরের বেশি আগে হারিয়ে গেছে। এই কারণে তাদের শরীর থেকে পাওয়া ডিএনএ খুবই দুর্বল। আর ডিএনএ যদি খারাপ হয়, তাহলে বিজ্ঞানীরা তার সাহায্যে নতুন মোা তৈরি করতে পারবেন না।

আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, মোার যতগুলো প্রজাতি ছিল, তার সবগুলোই হারিয়ে গেছে। কেউই বেঁচে নেই। ফলে, কারও শরীর বা ডিম ব্যবহার করে কাজ চালানো যায় না। অন্যদিকে, ডায়ার উলফের ক্ষেত্রে নেকড়ে বা কুকুর ব্যবহার করে কিছু করা সম্ভব।

অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অ্যালেন টেম্পল বলেন, “মোাকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের খুব ভালো মানের ডিএনএ দরকার। সেই ডিএনএ থেকে কোষ বানাতে হবে। তারপর সেই কোষ দিয়ে ডিম তৈরি করতে হবে। আর ওই ডিমকে একটা মা পাখির শরীরে বড় করতে হবে। কিন্তু এত কিছু করার জন্য কোনো কাছের আত্মীয় পাখি দরকার।”

বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন, উড়তে না-জানা একটা পাখি আছে, যার নাম টিনামু। এটা দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। টিনামু মোার অনেক দূরের আত্মীয়। কিন্তু মোা ছিল বিশাল। আর টিনামু অনেক ছোট। সাইজে এত পার্থক্য যে টিনামুর শরীরে মোার মতো ডিম রাখা যায় না। তাহলে কি এমু বা উটপাখির শরীরে রাখা যাবে? না, কারণ তারা মোার আত্মীয় নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীর যত বড় হোক না কেন, যদি ডিএনএ মেলে না, তাহলে এই চেষ্টা ব্যর্থ হবে।

জেনেটিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভালো ডিএনএ পাওয়া। যখন কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়, তার দেহ পচে যায়। আর পচা শরীর থেকে ভালো ডিএনএ পাওয়া খুব কঠিন। কোনো কোনো সময় বরফের নিচে থাকা প্রাণীদের দেহ ভালো থাকে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পরিবেশ তেমন ঠান্ডা নয়। তাই মোাদের ডিএনএ খুব নষ্ট হয়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. গ্রেগার লারসন বলেন, “আমরা যদি মোাদের কাছাকাছি আত্মীয় পেতাম, তাহলে হয়তো কিছু করা যেত। কিন্তু মোাদের পরিবারে এমন কেউ নেই, যাকে ব্যবহার করা যায়।”

তবে বিজ্ঞানীরা আশা ছাড়ছেন না। কেউ কেউ বলছেন, ভবিষ্যতে হয়তো প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। তখন হয়তো এমন যন্ত্র তৈরি হবে, যা দিয়ে খারাপ ডিএনএ থেকেও ভালো জিন বানানো যাবে। তখন হয়তো জায়ান্ট মোাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তবে এখনই সেটা সম্ভব নয়। তাই বলাই যায়, ডায়ার উলফ বা ম্যামথকে ফিরিয়ে আনা যেমন কঠিন, মোাকে ফিরিয়ে আনা তার চেয়েও বেশি কঠিন। কারণ, ডিএনএ নেই, আত্মীয় নেই, আর শরীরের গঠনও একেবারে আলাদা।

এক সময় মানুষ এসব মোাকে শিকার করেছিল খাবার হিসেবে। আর এখন মানুষই ভাবছে, যদি ওদের আবার ফিরিয়ে আনা যেত! কিন্তু প্রকৃতি একবার যা হারিয়ে ফেলে, তা ফেরানো সত্যিই অনেক কষ্টের কাজ।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

'এআই চ্যাটবট' ছদ্মবেশে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে অনুপযুক্ত আলাপ করছে

টিমোথি শালামে, চ্যাপেল রোন ও প্যাট্রিক মাহোমসের নামে তৈরি এআইভিত্তিক চ্যাটবট শিশু-কিশোরদের সঙ্গে যৌন, মাদক ও আত্মহত্যাসংক্রান্ত অনুপযুক্ত আলাপ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চ্যাটবটগুলো টেক্সটের মাধ্যমে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি কণ্ঠ ব্যবহার করে, যেগুলো তারকাদের মতো শোনানোর জন্য প্রশিক্ষিত ছিল

৬ দিন আগে

উত্তম কুমার— বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়নকের জন্মদিন

চলচ্চিত্র ছেড়ে দেবো করতে করতেই পাহাড়ি সান্যালের হাত ধরে অভিনয় করেন ‘বসু পরিবার’ ছবিতে। ১৯৫২ সালের সে ছবিটি বেশ নজর কাড়ে অনেকের। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। সুচিত্রা সেনের বিপরীতে উত্তমের এই ছবিটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার! উত্তম কুমারের চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠারও সূচনা তার সঙ্গে।

৭ দিন আগে

শরীর আগুনে পুড়লে করণীয়

আগুন মানুষের জীবনে যেমন আশীর্বাদ, তেমনি কখনও কখনও হয়ে ওঠে অভিশাপ। রান্না, আলো বা উষ্ণতা—এসবের জন্য আগুন অপরিহার্য। কিন্তু সামান্য অসাবধানতা আগুনকে পরিণত করতে পারে ভয়ংকর বিপর্যয়ে। রান্নাঘরে চুলার গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণ, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, কিংবা শিল্পকারখানার দুর্ঘটনা—এমন অসংখ্য ঘটনায় মানুষ দগ্ধ হ

৯ দিন আগে

ফোনকল থেকেও হ্যাক হতে পারে জিমেইল

হ্যাকিং এখন আর শুধু ইন্টারনেটের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই, ফোনকলের মাধ্যমেও ফাঁদ পাতা হচ্ছে। সম্প্রতি জিমেইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই ধরনের প্রতারণা বেড়ে গেছে। অনেকেই গুগলের নাম ভাঙিয়ে ফোন পাচ্ছেন, যেখানে কলার নিজেকে গুগলের কর্মী পরিচয় দেন। ভুক্তভোগীদের বলা হয় তাঁদের জিমেইল অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক কার্যকলাপ

৯ দিন আগে