অরুণ কুমার
বসন্তে শিমুলের পাতাহীন ডালে দাউ দাউ করে জ্বলে কাটফাটা চৈত্রের লেলিহান শিখা। নয়ানাভিরাম ফুলের সাথে মনমাতানো সুবাস, সেই সাথে রাজকীয় গড়ন —বাংলার ফুলরাজ্যে আলাদা করে ঠাঁই করে নিয়েছে গ্রামীণ এই মেঠোফুলটি।
একবার ভাবুন তো, এমন সাজানো গোছানো পুরু পাঁপড়ি তার ওপর ঘণ্টার মতো চেহার আর শক্তপোক্ত গড়ন- এমন পরিপূর্ণ ফুল কি আর আছে প্রকৃতি রাজ্যে? অনেকে হয়তো পলাশের উদাহরণ টানবেন। হ্যাঁ মানছি, পলাশের পাঁপড়িগুলোও আগুনরঙা, কিন্তু পাঁপড়ির বিন্যাসে কেমন যেন এলোমেলো ভাব। আর গন্ধ! বসন্তে আম, ভাটফুলের আর বাতাবি লেবুর ফুলের যেমন আলাদা রকম সুবাস, সেই সুবাসের কারণেই গড়ে ওঠে আলাদা আলাদা স্বপ্নালু জগত, শিমুলের সুবাসেও ঠিক তেমনই মন পাগল করা এমন একটা সুবাস আছে। আকারে-আকৃতিতে, সংখ্যায় আর সবাইকে টেক্কা দিতে পারে বলেই হয়তো ঝরে পড়া শিমুলের ভারে গর্বিত হয় মাটির বুক।
‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।’ —প্রবাদটার ধার বোধ হয় শিমুল ধারে না। তাই শিমুল শব্দটা উচ্চারণ করলে সবার আগে এর রক্তরাঙা ফুলের কথাই মনে আসে। ফলের পরিচয়ে শিমুলকে কেউ তুলোগাছ বলে আখ্যায়িত করলে এর পরিচয়ের শতাংশ ভাগও কি প্রকাশ পাবে? কিন্তু শিমুল ফুল বললে, এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে আসে আশ্চর্য সুন্দর এক কুসুমের অবয়ব।
শিমুল বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলার মাঠে-ঘাটে, রাস্তার পাশে অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠে শিমুল গাছ। সাধরণত বর্ষাকালে পানি পেলে জন্মায়। দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে উচ্চতায় আশপাশের আম-কাঁঠাল জাতীয় ২০-২৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরে ৬ মাস সবুজ পাতায় সুশোভিত থাকে শিমুলগাছ। হেমন্তের শুরতেই সবুজ পাতা হলদেটে হয়ে যায়। শীতের শুরুতেই সব পাতা ঝরে গাছ পুরোপুরি ন্যাড়া হয়ে যায়। বসন্ত কালে অন্যান্য বৃক্ষরা যখন নব পল্লবে সেজে ওঠে তখন শিমুল গাছে শুধু কুঁড়ি বের হয়। সেই বোধহয় ভালো। নইলে শিমুলের পাতার যে সৌন্দর্য, সেটা এর ফুলের কাছে একেবারে ফিকে হয়ে যেত। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারত। শিমুলের পাতার যে বাহার, যে বিপুল তাদের সংখ্যা, হয়তো তার আড়ালে কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যেত শিমুলের সুন্দরী পষ্পকূল।
শিমুল দ্রত বর্ধনশীল বৃক্ষ। তাই এর কাণ্ডের বৃদ্ধিটাই সবচেয়ে বেশি। শিমুলের কাণ্ডের রং ধূসর। অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে ফোঁড়ার মতো কাঁটা থাকে। কাণ্ড পেরিয়ে যতই ওপরে ওঠা যায়, ততই কাঁটা কমতে থাকে। কাণ্ডের শেষ পর্যায়ে গিয়ে মোটেও কাঁটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর ডালে তো নয়ই। কোনো গাছের বয়স ১৫-২০ পেরিয়ে গেলে কাঁটা তখন গোড়াতেও থাকে না। শিমুলে কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা বেশ নরম। তবে কাণ্ড একেবারে সোজা ও খাড়া হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়।
শিমুল গাছের কাণ্ড খাদযুক্ত। তারমানে কাণ্ডের একেবারে গোড়ার দিকে হাঙরের ডানার মতো ৩-৪ টি পায়া বের হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। এ কারণে বয়স্ক শিমুল গাছের কাণ্ড গোল হয় না। তবে তরুণ গাছের কাণ্ড গোলই হয়। ছোট্টকালে কাণ্ডের গোড়া থেকে ডাল বের হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেসব নষ্ট হয়ে যায়। তাই শিমুল গাছের কাণ্ডের উচ্চতাও অনেক বেশি। মোটমুটি ২০ ফুটের ওপরে গিয়ে শিমুলের প্রথম ডালটার নাগাল পাওয়া যেতে পারে। কাণ্ডের বেড় খুব বয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে ১০-১৫ ফুট। গাছের বয়সানুসারে এরচেয়ে কম-বেশি হতে পারে।
শিমুল পাতার রং সবুজ। বোঁটা লম্বা, বহুপক্ষল। একেকটা বোঁটায় ৫-৮ টা পাতা থাকে। প্রতিটা পাতার যে আলাদা বোঁটা থাকে, সেটা মোটামুটি এক ইঞ্চি লম্বা। পাতা লম্বাটে, অনেকটা বর্শার ফলার মতো। পাতা ৪-৮ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। মাঝ বরাবর পাতার প্রস্থ ২-২.৫ ইঞ্চি।
শীতের একেবারে শেষভাগে এসে ন্যাড়া শিমুল গাছের মঞ্জরিতে কুঁড়ি আসে। এর কুঁড়িগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। ঠিক কুঁড়ি নয়, যেন সুস্বাদু ফল! শিমুলের মঞ্জরিও দেখার মতো। ছোটখাট একট ডাল যেন। ডালটার সারা গায়ে সার বেঁধে কুঁড়ি বের হয়। তার মানে মঞ্জরি বহুপুষ্পক। ফুলের কুঁড়ি আস্ত একটা সবুজ আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। ধীরে ধীর সবুজ আবরণ ফেটে বেরিয়ে আসে আসল ফুল। কিন্তু কুঁড়ির ওই সবুজ আবরণ থেকেই যায়। পরিণত হয় সবুজ পাঁপড়িতে। ফুলের বোঁটার বেড় প্রায় ১ ইঞ্চি।
শিমুল ফুলের রং গাঢ় লাল। কখনো কখনো ফিকে লাল রঙের ফুলও দেখা যায়। তবে স্টো পানির অভাবের কারণেই। আবার সোনালি ধরনের একরকম শিমুল দেখা যায়। তবে সেটার সম্পর্কে আমার অল্পবিস্তর জানাশোনাও নেই, তার বর্ণনা এড়িয়ে যাচ্ছি। শিমুল ফুল ঘণ্টাকৃতির। পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। পাঁপড়ি ঘন, সুসজ্জিত। ফুলের ব্যাস ৫-৭ ইঞ্চি হতে পারে। একটা পাঁপড়ি ছিঁড়ে নিয়ে মাপলে কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি লম্বা হবে। পাঁপড়ি বেশ পুরু। অন্তত কাচের চায়ের কাপের মতো পুরু হবে। অতিরিক্ত পুরুত্বের কারণে শিমুল ফুলের ওজনও অনেক বেশি। একেকটা ফুলের ওজন ৩০-৫০ গ্রাম হবে। শিমুলের ডাল ফুলের ভারেই নুয়ে পড়ে। পাঁচ পাঁপড়ির মাঝখানে একগুচ্ছ লম্বা কিশোর থাকে। শিমুল ফুলে পাখি ও পতঙ্গ আকর্ষক মধু থাকে। তারমানে এদের মাধ্যমেই শিমুলের পরাগায়ন ঘটে।
বসন্তের শেষভাগে এসে শিমুল গাছে ফল আসে। শিমুলের ফল মোঁচাকৃতির। লম্বাটে, ৪-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। কাঁচা ফলের রং সবুজ। বৈশাখ মাসের মাঝমাঝিতে শিমুলের ফল ফাটতে শুরু করে। ততোদিনে অবশ্য শিমুল গাছ নতুন পাতায় ভরে ওঠে। ফলের রং সবুজ থেকে বাদামী হতে শুরু করে। ফলের ভেতরটা পাঁচটা চেম্বারে ভাগ করা থাকে।
পাঁচটা চেম্বার ঠাঁসা থাকে কোমল তুলা দ্বারা। তুলা শিমুলের বংশ বিস্তারে দুটো অবদান রাখে। প্রথমটা হলো তুলার আবরণের নিচেই থাকে শিমুলের বীজ- পোকা, পাখি, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে সেই বীজকে আগলে রাখে এই তুলা। দিতীয়টা হলো, ফল সম্পূর্ণ যখন ফুটে যায়, তখন এর বীজগুলো সোজা নিচে পড়তে বাধা দেয় এই তুলার তন্তু। তার বদলে প্রতিটা বীজের গায়ে লেগে থাকা কিছু তন্তুর সাহায্যে বাতাসে উড়ে বহুদূর গিয়ে পড়ে বীজ। ফলে একই জায়গায় লক্ষ লক্ষ শিমুলে চারা না জন্মে, শিমুলের ভাবী প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তে। ছোট্টকালে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো তুলাসহ বীজ ধরা ছিল আমাদের মহা আনন্দের এক খেলা।
একটা শিমুলের ফলে এক শরও বেশি বীজ থাকে। শিমুলের বীজের রং কালচে বাদামি। বীজের আকার একটা মসুর দানার সমান। তবে মসুর দানা হয় চ্যাপ্টা, আর শিমুলের বীজ মোটামুটি গোলকাকার। বীজ দ্বিবীজপত্রি।
আগে এদেশে কার্পাস তুলা চাষ হতো না। তখনই শিমুল তুলাই ছিল গৃহিনীদের একমাত্র ভরসা। শিমুল তুলো দিয়ে লেপ, তোশক, বালিশ বানানো হয়। মনে পড়ে, ছোট্ট কালে নানার বাড়ি ঘুমানোর কথা। আমাদের এলাকায় কার্পাস তুলোর চাষ হয়। তাই আমাদের লেপ তোশক বালিশও কার্পাস তুলো দিয়ে তৈরি। কিন্তু নানাবাড়িতে সব শিমুল তুলোর। কার্পাস তুলোর সুবিধা হলো এর বীজ তুলোর গায়ে এমন ভাবে লেপ্টে থাকে যে মেশিন দিয়ে ছাড়াতে হয়। ফলে ওই তুলোর লেপকাথা বালিশ একেবারে নিরাপদ। আর শিমুল তুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারে অন্যরকম। এর বীজ তুলোর সাথে আলগা ভাবে লেগে থাকে। একট ঝাড়া-ঝুড়া দিলেই বীজ সরে পড়ে। কিন্তু কিছু বীজ থেকেই যায়। সেগুলোই করে জ্বালাতন। লেপ তোশক বনানো মানে স্থায়ীভাবে তুলোগুলো তার ভেতর ভরে ফেলা। মুশকিল হলো, এড়িয়ে যাওয়া বীজগুলো নিয়ে। বালিশ বা লেপ বানানোর পর মহাপাজী বীজগুলোর মনে পড়ে তুলো থেকে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তুলো থেকে সরে পড়লেও সেলাই করা লেপের ভেতর থেকে তো বেরুতে পারে না, তখন সবগুলো বীজ একত্রিত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর সেই বীজের পোটলা পিঠের নিচে, মাথার নিচে পড়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
বাংলায় একটা শব্দ আছে। আমার ধারণা এমন কোনো সচল নেই যিনি এই শব্দটা সাথে অপরিচিত। শব্দটা তুলোধুনা। শব্দটা এসেছে শিমুল তুলো থেকে। আগেই বলেছি লেপ-তোশকের ভেতর বীজদের বিদ্রোহের কথা। তাছাড়া শিমুল তুলোর ইলাস্ট্রিসিটি কম। কয়েক বছর ব্যবহার করলেই লেপ-তোশক-বালিশ চুপশে একেবারে ত্যানা হয়ে যায়। তাই গৃহিনীরা লেপ-তোশকের সেলাই খুলে তুলোগুলো বের করে বিছানায় রাখেন। তারপর একটা লম্বা লাঠি দিয়ে আচ্ছা করে পেটান সেগুলোকে। একেই বলে তুলোধুনা! এতে এক সাথে দুই কাজই উদ্ধার হয়। বেয়াদব টাইপের বীজগুলোও তুলো থেকে মানে মানে কেটে পড়ে আবার চুপসে যাওয়া তুলোও ফুলে-ফেঁপে নব যৌবন লাভ করে।
একটা শিমুল গাছ কত বছর পর্যন্ত বাঁচে তা আমার জানা নেই। তবে উচ্চতায় কয়েকশ ফুট হতে পারে।
বসন্তে শিমুলের পাতাহীন ডালে দাউ দাউ করে জ্বলে কাটফাটা চৈত্রের লেলিহান শিখা। নয়ানাভিরাম ফুলের সাথে মনমাতানো সুবাস, সেই সাথে রাজকীয় গড়ন —বাংলার ফুলরাজ্যে আলাদা করে ঠাঁই করে নিয়েছে গ্রামীণ এই মেঠোফুলটি।
একবার ভাবুন তো, এমন সাজানো গোছানো পুরু পাঁপড়ি তার ওপর ঘণ্টার মতো চেহার আর শক্তপোক্ত গড়ন- এমন পরিপূর্ণ ফুল কি আর আছে প্রকৃতি রাজ্যে? অনেকে হয়তো পলাশের উদাহরণ টানবেন। হ্যাঁ মানছি, পলাশের পাঁপড়িগুলোও আগুনরঙা, কিন্তু পাঁপড়ির বিন্যাসে কেমন যেন এলোমেলো ভাব। আর গন্ধ! বসন্তে আম, ভাটফুলের আর বাতাবি লেবুর ফুলের যেমন আলাদা রকম সুবাস, সেই সুবাসের কারণেই গড়ে ওঠে আলাদা আলাদা স্বপ্নালু জগত, শিমুলের সুবাসেও ঠিক তেমনই মন পাগল করা এমন একটা সুবাস আছে। আকারে-আকৃতিতে, সংখ্যায় আর সবাইকে টেক্কা দিতে পারে বলেই হয়তো ঝরে পড়া শিমুলের ভারে গর্বিত হয় মাটির বুক।
‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।’ —প্রবাদটার ধার বোধ হয় শিমুল ধারে না। তাই শিমুল শব্দটা উচ্চারণ করলে সবার আগে এর রক্তরাঙা ফুলের কথাই মনে আসে। ফলের পরিচয়ে শিমুলকে কেউ তুলোগাছ বলে আখ্যায়িত করলে এর পরিচয়ের শতাংশ ভাগও কি প্রকাশ পাবে? কিন্তু শিমুল ফুল বললে, এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে আসে আশ্চর্য সুন্দর এক কুসুমের অবয়ব।
শিমুল বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলার মাঠে-ঘাটে, রাস্তার পাশে অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠে শিমুল গাছ। সাধরণত বর্ষাকালে পানি পেলে জন্মায়। দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে উচ্চতায় আশপাশের আম-কাঁঠাল জাতীয় ২০-২৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরে ৬ মাস সবুজ পাতায় সুশোভিত থাকে শিমুলগাছ। হেমন্তের শুরতেই সবুজ পাতা হলদেটে হয়ে যায়। শীতের শুরুতেই সব পাতা ঝরে গাছ পুরোপুরি ন্যাড়া হয়ে যায়। বসন্ত কালে অন্যান্য বৃক্ষরা যখন নব পল্লবে সেজে ওঠে তখন শিমুল গাছে শুধু কুঁড়ি বের হয়। সেই বোধহয় ভালো। নইলে শিমুলের পাতার যে সৌন্দর্য, সেটা এর ফুলের কাছে একেবারে ফিকে হয়ে যেত। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারত। শিমুলের পাতার যে বাহার, যে বিপুল তাদের সংখ্যা, হয়তো তার আড়ালে কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যেত শিমুলের সুন্দরী পষ্পকূল।
শিমুল দ্রত বর্ধনশীল বৃক্ষ। তাই এর কাণ্ডের বৃদ্ধিটাই সবচেয়ে বেশি। শিমুলের কাণ্ডের রং ধূসর। অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে ফোঁড়ার মতো কাঁটা থাকে। কাণ্ড পেরিয়ে যতই ওপরে ওঠা যায়, ততই কাঁটা কমতে থাকে। কাণ্ডের শেষ পর্যায়ে গিয়ে মোটেও কাঁটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর ডালে তো নয়ই। কোনো গাছের বয়স ১৫-২০ পেরিয়ে গেলে কাঁটা তখন গোড়াতেও থাকে না। শিমুলে কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা বেশ নরম। তবে কাণ্ড একেবারে সোজা ও খাড়া হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়।
শিমুল গাছের কাণ্ড খাদযুক্ত। তারমানে কাণ্ডের একেবারে গোড়ার দিকে হাঙরের ডানার মতো ৩-৪ টি পায়া বের হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। এ কারণে বয়স্ক শিমুল গাছের কাণ্ড গোল হয় না। তবে তরুণ গাছের কাণ্ড গোলই হয়। ছোট্টকালে কাণ্ডের গোড়া থেকে ডাল বের হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেসব নষ্ট হয়ে যায়। তাই শিমুল গাছের কাণ্ডের উচ্চতাও অনেক বেশি। মোটমুটি ২০ ফুটের ওপরে গিয়ে শিমুলের প্রথম ডালটার নাগাল পাওয়া যেতে পারে। কাণ্ডের বেড় খুব বয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে ১০-১৫ ফুট। গাছের বয়সানুসারে এরচেয়ে কম-বেশি হতে পারে।
শিমুল পাতার রং সবুজ। বোঁটা লম্বা, বহুপক্ষল। একেকটা বোঁটায় ৫-৮ টা পাতা থাকে। প্রতিটা পাতার যে আলাদা বোঁটা থাকে, সেটা মোটামুটি এক ইঞ্চি লম্বা। পাতা লম্বাটে, অনেকটা বর্শার ফলার মতো। পাতা ৪-৮ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। মাঝ বরাবর পাতার প্রস্থ ২-২.৫ ইঞ্চি।
শীতের একেবারে শেষভাগে এসে ন্যাড়া শিমুল গাছের মঞ্জরিতে কুঁড়ি আসে। এর কুঁড়িগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। ঠিক কুঁড়ি নয়, যেন সুস্বাদু ফল! শিমুলের মঞ্জরিও দেখার মতো। ছোটখাট একট ডাল যেন। ডালটার সারা গায়ে সার বেঁধে কুঁড়ি বের হয়। তার মানে মঞ্জরি বহুপুষ্পক। ফুলের কুঁড়ি আস্ত একটা সবুজ আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। ধীরে ধীর সবুজ আবরণ ফেটে বেরিয়ে আসে আসল ফুল। কিন্তু কুঁড়ির ওই সবুজ আবরণ থেকেই যায়। পরিণত হয় সবুজ পাঁপড়িতে। ফুলের বোঁটার বেড় প্রায় ১ ইঞ্চি।
শিমুল ফুলের রং গাঢ় লাল। কখনো কখনো ফিকে লাল রঙের ফুলও দেখা যায়। তবে স্টো পানির অভাবের কারণেই। আবার সোনালি ধরনের একরকম শিমুল দেখা যায়। তবে সেটার সম্পর্কে আমার অল্পবিস্তর জানাশোনাও নেই, তার বর্ণনা এড়িয়ে যাচ্ছি। শিমুল ফুল ঘণ্টাকৃতির। পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। পাঁপড়ি ঘন, সুসজ্জিত। ফুলের ব্যাস ৫-৭ ইঞ্চি হতে পারে। একটা পাঁপড়ি ছিঁড়ে নিয়ে মাপলে কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি লম্বা হবে। পাঁপড়ি বেশ পুরু। অন্তত কাচের চায়ের কাপের মতো পুরু হবে। অতিরিক্ত পুরুত্বের কারণে শিমুল ফুলের ওজনও অনেক বেশি। একেকটা ফুলের ওজন ৩০-৫০ গ্রাম হবে। শিমুলের ডাল ফুলের ভারেই নুয়ে পড়ে। পাঁচ পাঁপড়ির মাঝখানে একগুচ্ছ লম্বা কিশোর থাকে। শিমুল ফুলে পাখি ও পতঙ্গ আকর্ষক মধু থাকে। তারমানে এদের মাধ্যমেই শিমুলের পরাগায়ন ঘটে।
বসন্তের শেষভাগে এসে শিমুল গাছে ফল আসে। শিমুলের ফল মোঁচাকৃতির। লম্বাটে, ৪-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। কাঁচা ফলের রং সবুজ। বৈশাখ মাসের মাঝমাঝিতে শিমুলের ফল ফাটতে শুরু করে। ততোদিনে অবশ্য শিমুল গাছ নতুন পাতায় ভরে ওঠে। ফলের রং সবুজ থেকে বাদামী হতে শুরু করে। ফলের ভেতরটা পাঁচটা চেম্বারে ভাগ করা থাকে।
পাঁচটা চেম্বার ঠাঁসা থাকে কোমল তুলা দ্বারা। তুলা শিমুলের বংশ বিস্তারে দুটো অবদান রাখে। প্রথমটা হলো তুলার আবরণের নিচেই থাকে শিমুলের বীজ- পোকা, পাখি, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে সেই বীজকে আগলে রাখে এই তুলা। দিতীয়টা হলো, ফল সম্পূর্ণ যখন ফুটে যায়, তখন এর বীজগুলো সোজা নিচে পড়তে বাধা দেয় এই তুলার তন্তু। তার বদলে প্রতিটা বীজের গায়ে লেগে থাকা কিছু তন্তুর সাহায্যে বাতাসে উড়ে বহুদূর গিয়ে পড়ে বীজ। ফলে একই জায়গায় লক্ষ লক্ষ শিমুলে চারা না জন্মে, শিমুলের ভাবী প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তে। ছোট্টকালে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো তুলাসহ বীজ ধরা ছিল আমাদের মহা আনন্দের এক খেলা।
একটা শিমুলের ফলে এক শরও বেশি বীজ থাকে। শিমুলের বীজের রং কালচে বাদামি। বীজের আকার একটা মসুর দানার সমান। তবে মসুর দানা হয় চ্যাপ্টা, আর শিমুলের বীজ মোটামুটি গোলকাকার। বীজ দ্বিবীজপত্রি।
আগে এদেশে কার্পাস তুলা চাষ হতো না। তখনই শিমুল তুলাই ছিল গৃহিনীদের একমাত্র ভরসা। শিমুল তুলো দিয়ে লেপ, তোশক, বালিশ বানানো হয়। মনে পড়ে, ছোট্ট কালে নানার বাড়ি ঘুমানোর কথা। আমাদের এলাকায় কার্পাস তুলোর চাষ হয়। তাই আমাদের লেপ তোশক বালিশও কার্পাস তুলো দিয়ে তৈরি। কিন্তু নানাবাড়িতে সব শিমুল তুলোর। কার্পাস তুলোর সুবিধা হলো এর বীজ তুলোর গায়ে এমন ভাবে লেপ্টে থাকে যে মেশিন দিয়ে ছাড়াতে হয়। ফলে ওই তুলোর লেপকাথা বালিশ একেবারে নিরাপদ। আর শিমুল তুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারে অন্যরকম। এর বীজ তুলোর সাথে আলগা ভাবে লেগে থাকে। একট ঝাড়া-ঝুড়া দিলেই বীজ সরে পড়ে। কিন্তু কিছু বীজ থেকেই যায়। সেগুলোই করে জ্বালাতন। লেপ তোশক বনানো মানে স্থায়ীভাবে তুলোগুলো তার ভেতর ভরে ফেলা। মুশকিল হলো, এড়িয়ে যাওয়া বীজগুলো নিয়ে। বালিশ বা লেপ বানানোর পর মহাপাজী বীজগুলোর মনে পড়ে তুলো থেকে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তুলো থেকে সরে পড়লেও সেলাই করা লেপের ভেতর থেকে তো বেরুতে পারে না, তখন সবগুলো বীজ একত্রিত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর সেই বীজের পোটলা পিঠের নিচে, মাথার নিচে পড়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
বাংলায় একটা শব্দ আছে। আমার ধারণা এমন কোনো সচল নেই যিনি এই শব্দটা সাথে অপরিচিত। শব্দটা তুলোধুনা। শব্দটা এসেছে শিমুল তুলো থেকে। আগেই বলেছি লেপ-তোশকের ভেতর বীজদের বিদ্রোহের কথা। তাছাড়া শিমুল তুলোর ইলাস্ট্রিসিটি কম। কয়েক বছর ব্যবহার করলেই লেপ-তোশক-বালিশ চুপশে একেবারে ত্যানা হয়ে যায়। তাই গৃহিনীরা লেপ-তোশকের সেলাই খুলে তুলোগুলো বের করে বিছানায় রাখেন। তারপর একটা লম্বা লাঠি দিয়ে আচ্ছা করে পেটান সেগুলোকে। একেই বলে তুলোধুনা! এতে এক সাথে দুই কাজই উদ্ধার হয়। বেয়াদব টাইপের বীজগুলোও তুলো থেকে মানে মানে কেটে পড়ে আবার চুপসে যাওয়া তুলোও ফুলে-ফেঁপে নব যৌবন লাভ করে।
একটা শিমুল গাছ কত বছর পর্যন্ত বাঁচে তা আমার জানা নেই। তবে উচ্চতায় কয়েকশ ফুট হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে চুলের গঠন, তার প্রাকৃতিক বৃদ্ধি এবং ক্ষতির কারণ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। চুল মূলত প্রোটিন দ্বারা গঠিত, বিশেষ করে কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন চুলের মূল উপাদান। যখন চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না কিংবা বাইরে থেকে সঠিক যত্ন পায় না, তখন তা রুক্ষ হয়ে যায়, ভেঙে যায় এবং ঝরে পড়ে। তেল মূলত চ
১ দিন আগেলাল লতিকা হট্টিটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এই পাখিটি খুবেই চটপটে ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সতর্ক ভঙ্গি ও জলশয়ের পাতার ওপর দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। সেটিই লতিকা।
২ দিন আগেঅচ্যুত পোতদারের অভিনয়জীবন ছিল চার দশকেরও বেশি। তিনি ১২৫টির বেশি হিন্দি ও মারাঠি ছবিতে কাজ করেছেন। হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন নম্র, অমায়িক এবং বহুমুখী প্রতিভ
২ দিন আগেথাইরয়েড সমস্যায় ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ফল আছে যেগুলো থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এসব ফলে থাকে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ফল খেয়েই থাইরয়েড সারানো
২ দিন আগে