বিজ্ঞান

মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়: আলট্রা ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল

মহাবিশ্ব আমাদের প্রতিনিয়ত চমকে দিচ্ছে। এবার এক বিশাল বিস্ময় উঠে এসেছে মহাকাশের অতল গহ্বর থেকে। আবিষ্কৃত হয়েছে মহাবিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকহোল গুলোর একটি, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন,
"আলট্রা ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল"।
এই দৈত্যাকার ব্ল্যাকহোলটি লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় গ্যালাক্সির কেন্দ্রে, যার নাম LRG 3-757, তার চারপাশে সৃষ্টি হয়েছে এক অবিশ্বাস্য কসমিক দৃশ্য। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন, কসমিক হর্স সু।
এই নামটা এসেছে এর আকৃতি থেকে। দূরের কোনো গ্যালাক্সি থেকে আলো যখন অন্য কোন বিশাল গ্যালাক্সির পাশ দিয়ে আসে, তখন সেই গ্যালাক্সির প্রবল মহাকর্ষ দূরবর্তী আলোকে এমনভাবে বাঁকিয়ে দেয় যে পৃথিবী থেকে আমরা দেখতে পাই এক অর্ধবৃত্ত বা ঘোড়ার নালের মতো এক ধরনের অদ্ভুত আলোকচ্ছটা। এই ঘটনাটাকে বলে, গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং। আর এটি দূর মহাকাশে থাকা অনেক অদৃশ্য বস্তুর খোঁজ পেতে সাহায্য করে।
LRG 3-757 গ্যালাক্সির মাঝখানে যে ব্ল্যাকহোলটি রয়েছে, তার ভর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বের করেছেন, ৩৬ বিলিয়ন সূর্যের সমান! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। একটি ব্ল্যাকহোল আমাদের সূর্যের চেয়েও ৩৬,০০০,০০০,০০০ গুণ বেশি ভারী! ভাবা যায়? এতদিন এমন অতি বিশাল ভরের ব্ল্যাকহোল কেবল অনুমানেই ছিল। এবার বিজ্ঞানীরা সরাসরি প্রমাণ পেলেন এমন এক ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্বের, যা মহাকাশ গবেষণার এক নতুন দ্বার খুলে দিল।
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ব্রাজিলের জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্লোস মেলো-কার্নেইরো ও তাঁর দল। তাঁরা ব্যবহার করেছেন চিলিতে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ ও হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ডেটা। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, এই কসমিক হর্স সু - এর আকৃতি যেভাবে গঠিত হয়েছে, তা কেবল তখনই সম্ভব যদি এর কেন্দ্রে এক বিশাল আলট্রা ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল লুকিয়ে থাকে।
ব্ল্যাকহোল সাধারণত জন্ম নেয় নক্ষত্রদের বিস্ফোরণ জনিত মৃত্যুর পর। তবে এত বিশাল বড় ব্ল্যাকহোল কীভাবে তৈরি হলো? এটা একটি অমিমাংসিত প্রশ্ন।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটা হতে পারে বহু গ্যালাক্সির একত্রে সংঘর্ষের ফল। এক সময় হয়তো এই গ্যালাক্সি একটি অতি সক্রিয় কোয়াসার (quasar) ছিল, যার কেন্দ্র থেকে তীব্র শক্তি নির্গত হতো। আবার এটাও হতে পারে, এটি একটি ফসিল গ্যালাক্সি গ্রুপ,
অর্থাৎ বহু ক্ষুদ্র ও প্রাচীন গ্যালাক্সির ধীরে ধীরে মিলে যাওয়া এক বিশাল দানব।
এই আবিষ্কারটি শুধু একটা পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি আমাদের মহাবিশ্বের গঠন আর বিবর্তনের রহস্য আরও গভীরভাবে বোঝার সুযোগ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে ইউরোপের ইউক্লিড মিশন, অথবা চিলির এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ (ELT) যদি এ ধরনের আরও ঘটনা আবিষ্কার করতে পারে, তাহলে হয়তো আমরা বুঝে উঠতে পারবো, বিশাল ব্ল্যাকহোল আর গ্যালাক্সি একসাথে কীভাবে বিকশিত হয়েছে বিগত কোটি কোটি বছরে।

সূত্র: আর্থ ডট কম।


ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

কেন ভাদ্র মাসে তাল পাকে?

১ দিন আগে

ফারুকীর অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন: তিশা

কক্সবাজার সফরে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পরে রাতে তাকে একটি হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল রোববার (১৭ আগস্ট) এই উপদেষ্টার অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

১ দিন আগে

বদহজম দূর করার উপায়

এক গ্লাস হালকা গরম পানি খেলে বদহজমের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পেটের ভেতরে জমে থাকা অতিরিক্ত এসিডকে পাতলা করে দেয়।

১ দিন আগে

সাপ কেন আঁকাবাঁকা হয়ে পথ চলে?

সাপের মেরুদণ্ডে অসংখ্য হাড় আর পেশী আছে। এই হাড় ও পেশীর সাহায্যে তারা শরীর বাঁকায়, সঙ্কুচিত করে আবার প্রসারিত করে। একেকটা অংশ মাটিতে ধাক্কা দেয়, আর নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী মাটিও পাল্টা চাপ দিয়ে সাপকে সামনে এগিয়ে দেয়।

২ দিন আগে