এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি ফ্রান্সের, একই পথে আরও ইউরোপীয় দেশ

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
রোববার জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। এর আগেই তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্সের স্বীকৃতির কথা জানান। ছবি: জাতিসংঘ

যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের পর এবার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। শুধু তাই নয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জানিয়েছেন, আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে রয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে ফ্রান্স এই স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনকে একই স্বীকৃতি দেয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ার আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ সোমবার জাতিসংঘে বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার এবং হামাসের হাতে আটক বাকি ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার এখনই সময়। কারণ বিশ্ব খুব দ্রুতই এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে যেখানে আর শান্তি অর্জনের সুযোগ থাকবে না। আমরা আর অপেক্ষা করতে পারি না।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসারয়েলে হামাসের হামলার নিন্দাও জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ। বলেন, আমরা এমন এক শান্তি চাই যেখানে দুই রাষ্ট্র পাশাপাশি অবস্থান করবে। চলমান যুদ্ধকে ন্যায্যতা দেওয়ার মতো কিছুই নেই। বরং সবকিছুই আমাদের বাধ্য করছে যুদ্ধকে চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত করতে।

ম্যাখোঁ উল্লেখ করেন, এরই মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সান ম্যারিনোর মতো দেশগুলো।

এ তালিকায় আরও দেশ যুক্ত হওয়ার পথে রয়েছে বলেও জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। বলেন, এ দেশগুলো জুলাইয়ে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শান্তিকে বেছে নেওয়ার দায়িত্বশীল ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনও একই পথে এগোচ্ছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি গাজায় হামাসের কার্যক্রমের অবসান ঘটানোর কথাও বলেন ম্যাখোঁ। বলেন, এ প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন করা যেতে পারে।

গাজার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ফ্রান্স একটি ‘স্থিতিশীলতা মিশনে’ অবদান রাখতে প্রস্তুত, যা কার্যত ওই অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা উপস্থিতির সম্ভাবনা তৈরি করছে বলে উল্লেখ করেন ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। বলেন, হামাসের হাতে আটক সব জিম্মি মুক্তি না পাওয়া এবং যুদ্ধবিরতি চূড়ান্তভাবে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ফ্রান্স কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে দূতাবাস খুলবে না।

এদিকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) পক্ষে জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। তিনিও ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ওই অংশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রিন্স ফয়সাল। এ সময় তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হলো দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বা টু-স্টেট সলিউশন।

এর আগে রোববার ফিলিস্তিনকে প্রথম স্বীকৃতির ঘোষণা দেয় কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনের অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতার প্রস্তাব দিচ্ছে।’

এরপর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এক বিবৃতিতে বলেন, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এক ভিডিওবার্তায় বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি ঘোষণা করছি, যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর একে একে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণাকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েলিরা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠোর নিন্দা জানিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, জর্ডান নদীর তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই প্রতিষ্ঠা পাবে না। বরং এই স্বীকৃতির মাধ্যমে এসব দেশ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করেছে।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এক ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর (হামাস) ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরও যে নেতারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার স্পষ্ট বার্তা— আপনারা সন্ত্রাসবাদকে ব্যাপকভাবে পুরস্কৃত করছেন।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই প্রতিষ্ঠা পাবে না উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, আপনাদের জন্য আমার আরও একটি বার্তা আছে। তা হলো— এটি (ফিলিস্তিন রাষ্ট্র) কখনো ঘটবে না। জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনো প্রতিষ্ঠা পাবে না।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

গাজায় আরও ৭৫ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি

১৯ ঘণ্টা আগে

শেভ না করলে মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে বাদ

অসুস্থতাজনিত কারণে অবশ্য মার্কিন সেনা সদস্যরা এ নীতিমালায় ছাড় পাবেন। তবে সে ক্ষেত্রেও সেনা সদস্যদের সেনাবাহিনীর চিকিৎসা কর্মীদের কাছ থেকে সুপারিশ আদায় করতে হবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে এক বছর চিকিৎসার পরও যারা সুস্থ হবেন না বা দাঁড়ি শেভ করবেন না, তাদের সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেওয়া হবে।

১ দিন আগে

রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি পেল ফিলিস্তিন

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ‘জি সেভেন’ভুক্ত প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় কানাডা। পরে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের কাছ থেকেও এসেছে একই ঘোষণা।

১ দিন আগে

৭টি যুদ্ধ থামিয়েছি, ৭টি নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত: ট্রাম্প

ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি আরও ছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছেন। এগুলো হলো— থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কসোভো-সার্বিয়া, ইসরায়েল-ইরান, মিশর-ইথিওপিয়া ও রুয়ান্ডা-কঙ্গো। ট্রাম্প বলছেন, বাণিজ্য বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে এগুলো বন্ধ করেছেন তিনি।

১ দিন আগে