রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংকট, জরুরি সহায়তার আহ্বান ডব্লিউএফপির

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমে গেলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাধিকার কর্মীদের। ছবি: ব্র্যাক

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য তহবিল সংকটের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)। সংস্থাটি বলছে, তহবিল সংকটের কারণে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত তহবিল পাওয়া না গেলে রোহিঙ্গাদের খাবার বাবদ মাসিক রেশনের পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দিতে হবে।

শুক্রবার (৭ মার্চ) ডাব্লিউএফপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের খাবার বাবদ মাসিক এই সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চয়তায় ফেলবে, তাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়বে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে জরুরি তহবিল পাওয়া না গেলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যেকের জন্য মাসিক রেশন সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আর এই সংকট এমন এক সময়ে আসছে, যখন শরণার্থীরা রমজান শেষে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা পান নির্ধারিত দোকানগুলো থেকে তাদের পছন্দের খাবার কেনার জন্য ভাউচার হিসেবে। পূর্ণ রেশন চালিয়ে যেতে এপ্রিলেই জরুরিভাবে দেড় কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। আর এ বছরের পুরোটা হিসাব করলে নতুন করে সহায়তা প্রয়োজন হবে আট কোটি ১০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশে ডাব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেল্লি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমানো হলে তারা আরও গভীর সংকটে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে তারা আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে শুরু করে ২০১৭ সালের আগস্টে। ওই সময় থেকে পরের কয়েক মাসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রাণ বাঁচাতে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর আরও কয়েকবার থেমে থেমে আরও কিছু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। সবশেষ গত কয়েক মাসে প্রায় নতুন এক লাখ রোহিঙ্গা এসেছে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে।

ডাব্লিউএফপিও ধারণা করছে, গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের সংঘাত থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। পালিয়ে আসা এসব মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় খুঁজছে, যা এরই মধ্যে চাপে থাকা সম্পদের ওপর আরও বড় চাপ তৈরি করছে।

এ অবস্থাায় জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি এরই মধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য রেশন কমানোর বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে। এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়কে।

স্ক্যালপেল্লি বলেন, এখন আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এই পরিবারগুলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ডাব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তাই তাদের বেঁচে থাকার আশা ও হতাশার মধ্যে পার্থক্য। এই সংকট আরও বাড়তে না দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

এর আগে ২০২৩ সালে তহবিলের তীব্র সংকটের কারণে ডাব্লিউএফপি প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি রেশন ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। ওই সময় রোহিঙ্গাদের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণে ব্যাপক অবনতি ঘটে। এতে ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রাও সর্বোচ্চ (১৫ শতাংশেরও বেশি) হারে পৌঁছায়।

নতুন তহবিল পাওয়ার পর ফের সেই রেশনের পরিমাণ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ ডলার করা হয়। ডাব্লিউএফপি বলছে, এই পরিমাণ অর্থ একজন মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য আবশ্যক। কিন্তু তহবিল না থাকার কারণে সেই পরিমাণকে অর্ধেকেরও কমে নামিয়ে আনতে হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেহেতু এই জনগোষ্ঠীর কোনো আইনি অবস্থান নেই, ক্যাম্পের বাইরে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং টেকসই জীবিকার সুযোগও নেই, তাই রেশনের পরিমাণ কমানো হলে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

রোহিঙ্গা পরিবারগুলো বাঁচতে তখন বেপারোয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মতো বিশেষত নারীদের শোষণ, পাচার, পতিতাবৃত্তি ও সহিংসতার উচ্চতর ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। শিশুরা স্কুল থেকে বের হয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হতে পারে। মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে শরণার্থী জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও সাহায্যের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারাই প্রথম ঘাটতির সম্মুখীন হয় উল্লেখ করে ডাব্লিউএফপি বলছে, তহবিলের ঘাটতি ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য অনেক সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইসরায়েলি হামলা গাজায় নিহত ছাড়াল ৬২ হাজার

গাজায় উদ্ধার প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন অথবা রাস্তায় পড়ে আছেন তবে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ এবং সরঞ্জামের অভাবে জরুরি দল তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।

৪ ঘণ্টা আগে

এবার পুতিন-জেলেনস্কিকে মুখোমুখি নিয়ে বসবেন ট্রাম্প

এ বৈঠকের দিন-তারিখ নিয়ে অবশ্য কোনো তরহ্য মেলেনি। নির্ধারণ হয়নি বৈঠকের স্থানও। তবে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস আভাস দিয়েছেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটি হতে পারে।

৫ ঘণ্টা আগে

বৈঠকে ট্রাম্প-জেলেনস্কি, যেসব শর্ত আলোচনায়

বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এ সময় জেলেনস্কি বলেন, কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সমর্থন আছে।

১৪ ঘণ্টা আগে

ব্যাটল অব হ্যাস্টিংসের ইতিহাস

ইংল্যান্ডের সিংহাসন তখন ছিল এক জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্র। ইংরেজ রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল—কে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হবেন? রাজ্যের প্রধান অভিজাতেরা হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করলেন।

২০ ঘণ্টা আগে