এআই যুদ্ধে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ‘ডিপসিক’

শাহরিয়ার শরীফ
বাজারে এসেই চ্যাটজিপিটিসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যান্য অ্যাপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেছে চীনের ডিপসিক। গ্রাফিক্স: রাজনীতি ডটকম

কয়েক সপ্তাহ আগেও বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ হয়তো ‘ডিপসিক’ নামটির সঙ্গে পরিচিতই ছিলেন না। কিন্তু আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দুনিয়ায় এই চীনা অ্যাপ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।

প্রযুক্তি খাতে মার্কিন আধিপত্যের সামনে ‘ডিপসিক’ কি সত্যিই নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারছে? নাকি এটি নিছকই আরেকটি সাময়িক ‘হাইপ’?

ডিপসিকের উত্থান যতটা আকস্মিক, ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসার পরপরই অ্যাপল অ্যাপস্টোরের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ফ্রি অ্যাপের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে।

ডিপসিকের জনপ্রিয়তার বিস্ফোরণ এতটাই বেশি ছিল যে কিছুদিনের মধ্যেই এনভিডিয়া, মাইক্রোসফট ও মেটার মতো এআই খাতে নেতৃত্ব দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম কমে যায়। অনেক বিশেষজ্ঞ একে চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার নতুন যুগের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

ডিপসিকের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বলছে, তাদের নতুন এআই মডেল চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ, তবে এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে অনেক কম। এটি ব্যবহারকারীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

কার্যকারিতার দিক থেকে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি ও অ্যানথ্রপিকের ক্লডের মতো হলেও কিছু দিক থেকে ডিপসিক বরং এগিয়ে— এমনটিই দাবি এর নির্মাতা কোম্পানি হাংঝো ডিপসিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বেসিক টেকনোলজি রিসার্চ কোম্পানি লিমিটেডের।

চ্যাটজিপিটি বা অন্য এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সঙ্গে ডিপসিকের প্রধান পার্থক্য হল— এটি সম্পূর্ণ ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্স কোড সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। এই কোড ব্যবহার করে যে কেউ নিজের মতো করেও একে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা মার্ক আন্দ্রিসেন একে ‘এআই দুনিয়ার অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপসিকের শক্তির প্রকৃত জায়গা এর সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় এটি কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যার ও জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) ব্যবহার করেও কার্যকর এআই অভিজ্ঞতা দিতে পারছে। ফলে চীন সীমিত প্রযুক্তি অ্যাকসেস নিয়েও এআই খাতে এগিয়ে যাওয়ার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।

যেকোনো নতুন প্রযুক্তির মতোই ডিপসিকও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা সরকারের নীতিমালার প্রতি এর সুস্পষ্ট অনুগত আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে, চীন সম্পর্কিত রাজনৈতিক বা সংবেদনশীল বিষয়গুলো এটি হয় এড়িয়ে যায়, না হয় পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য দেয়।

এমন সেন্সরশিপ নিয়ে পশ্চিমা বাজারে ডিপসিক কতদিন টিকে থাকতে পারবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এটিই কি একমাত্র সেন্সরড এআই?

বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা বাজারেও সেন্সরশিপ বিরল নয়। চ্যাটজিপিটি বা গুগলের বার্ডের মতো এআই চ্যাটবটগুলোরও বিভিন্ন নীতিগত কারণে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে ডিপসিকের ক্ষেত্রে এটি আরও প্রকট। কারণ এটি চীনা সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি: নতুন এআই যুদ্ধ?

এআই এখন বৈশ্বিক শক্তির লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে। চ্যাটজিপিটি যখন মার্কিন আধিপত্যের প্রতীক, তখন ডিপসিক চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এক নতুন মুখ। প্রশ্ন হলো— এটি কি চ্যাটজিপিটির অবস্থানকে সত্যিই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে?

বর্তমানে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি বাজারে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমা করপোরেট জগতে এর গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। তবে ডিপসিকও প্রমাণ করছে, কম খরচে শক্তিশালী এআই তৈরি করা সম্ভব এবং চীনও এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই।

ডিপসিকের উত্থান এআই দুনিয়ায় একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। এটি যদি সেন্সরশিপের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে হয়তো এটি বৈশ্বিক বাজারেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তবে বিশেষত নিরাপত্তা ও সেন্সরশিপ ইস্যুর কারণে পশ্চিমা বিশ্বে এর গ্রহণযোগ্যতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

ডিপসিক কি সাময়িক হাইপ? নাকি এআই শিল্পে স্থায়ী পরিবর্তন আনবে এটি? এ প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে। তবে ডিপসিকের আগমনে যে এআই যুদ্ধে নতুন মোড় আসতে চলেছে এবং সেই যুদ্ধে যে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম হয়ে উঠেছে— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

এবার পুতিন-জেলেনস্কিকে মুখোমুখি নিয়ে বসবেন ট্রাম্প

এ বৈঠকের দিন-তারিখ নিয়ে অবশ্য কোনো তরহ্য মেলেনি। নির্ধারণ হয়নি বৈঠকের স্থানও। তবে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস আভাস দিয়েছেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটি হতে পারে।

৩ ঘণ্টা আগে

বৈঠকে ট্রাম্প-জেলেনস্কি, যেসব শর্ত আলোচনায়

বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এ সময় জেলেনস্কি বলেন, কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সমর্থন আছে।

১১ ঘণ্টা আগে

ব্যাটল অব হ্যাস্টিংসের ইতিহাস

ইংল্যান্ডের সিংহাসন তখন ছিল এক জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্র। ইংরেজ রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল—কে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হবেন? রাজ্যের প্রধান অভিজাতেরা হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করলেন।

১৭ ঘণ্টা আগে

মায়ানমারে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল জান্তা

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।তবে সমালোচকরা ইতোমধ্যেই এই নির্বাচনকে ধোঁকাবাজি বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

১৮ ঘণ্টা আগে