ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
পহেলা বৈশাখ মানেই নতুন ক্যালেন্ডারের পাতা, নতুন আশা আর নতুন করে পথচলার দিন। এই দিনে ছোট থেকে বড় সবাই রঙিন পোশাকে সেজে ওঠে, নানা রকমের খাবার রান্না হয়, বাড়িতে অতিথি আসে, মেলা বসে, আর গান-বাজনার আয়োজন হয়। কিন্তু এই উৎসবের আরেকটি দিক রয়েছে, যেটি অনেকেই হয়তো ভুলে যেতে বসেছেন। সেটি হলো— হালখাতা।
‘হালখাতা’ শব্দটি শুনলেই মনে আসে দোকানের নতুন খাতা, দোকান সাজানো, মিষ্টি খাওয়া আর একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। ব্যবসায়ীরা এই দিনটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। কারণ এই দিনে তারা পুরনো বছরের হিসেব চুকিয়ে নতুন খাতা খুলে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেন।
‘হাল’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষায় ‘লাঙল’ অর্থে ব্যবহৃত হয়, আবার ফারসি ভাষায় এর মানে ‘নতুন’। আর ‘খাতা’ মানে খাতা বা রেজিস্টার। তাই ‘হালখাতা’ মানে দাঁড়ায়— নতুন হিসাবের খাতা। এটি শুধু একটি খাতা নয়, বরং এটি বাঙালির জীবনে বছরের হিসাব মেলানোর এবং নতুন করে শুরু করার প্রতীক।
বাংলা সনের ইতিহাস নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন, মোগল সম্রাট আকবর এই সন চালু করেন। তার আমলে খাজনা আদায় হতো হিজরি (চন্দ্র) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। এতে সমস্যা হতো, কারণ হিজরি বছর কৃষির মৌসুমের সঙ্গে মিলত না। ফলে কৃষকরা অসুবিধায় পড়ত। এই সমস্যা সমাধানে সম্রাট আকবর জ্যোতিষী আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজিকে দিয়ে নতুন একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করান, যাতে হিজরি এবং হিন্দু পঞ্জিকার সমন্বয় করা হয়। এটি ছিল মূলত ফসলি সন, যা পরে হয়ে যায় বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ।
নতুন এই বর্ষপঞ্জি চালু হওয়ার পর, জমিদাররা চৈত্র মাসের শেষ দিনে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন, আর পহেলা বৈশাখে তাদের মিষ্টি খাওয়াতেন, আপ্যায়ন করতেন। সেই সময় থেকেই ‘হালখাতা’ চালু হয়। জমিদারদের পর ব্যবসায়ীরাও এই রীতিকে গ্রহণ করেন।
একসময় পাটসহ নানা ফসল বিক্রি করে কৃষকের হাতে টাকা আসত বছরে নির্দিষ্ট সময়। সেই সময় অনেক কৃষক দোকান থেকে বাকিতে জিনিস কিনতেন। এরপর ফসল বিক্রি করে পহেলা বৈশাখে দোকানে এসে দেনা পরিশোধ করতেন। ব্যবসায়ীরাও খরিদ্দারদের দাওয়াত দিয়ে দোকানে আমন্ত্রণ জানাতেন। দোকান সাজানো হতো রঙিন কাগজে, ঝালর দিয়ে। ফেস্টুনে লেখা থাকত— “শুভ নববর্ষ”, “শুভ হালখাতা”।
এই দিনে দোকানে আসা খরিদ্দারদের মিষ্টিমুখ করানো হতো, গল্প-আড্ডায় জমে উঠত পরিবেশ। নতুন খাতা খুলে হিসেব শুরু হতো। অনেক হিন্দু ব্যবসায়ী এই খাতা নিয়ে মন্দিরে যেতেন পূজা দিতে।
বিশেষ করে পুরান ঢাকায় হালখাতার আলাদা একটি আবহ ছিল। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই এই দিনটিকে এক উৎসব হিসেবে নিতেন। ব্যবসায়ীরা দোকান সেজে তুলতেন, অনেক জায়গায় ধূপধুনাও দেওয়া হতো। অতিথিদের জন্য থাকত পান-সুপারি, মিষ্টি আর ছোটখাটো উপহার। এভাবেই পুরান ঢাকায় ‘হালখাতা’ ছিল শুধু ব্যবসার হিসাব নয়, বরং এক মিলনমেলা।
একসময় বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ একটি উৎসব চালু করেন, যার নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’। সেটিও ছিল খাজনা আদায়ের সময়কার এক ধরনের উৎসব। যদিও সেই উৎসব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে, কিন্তু হালখাতা টিকে আছে আজও।
বর্তমানে আগের মতো জাঁকজমক নেই। এখন মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল পেমেন্টের যুগে অনেকেই দোকানে গিয়ে দেনা পরিশোধ করেন না। তবে এখনো পুরান ঢাকার কিছু দোকানে, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে হালখাতা পালন করা হয়। অনেকে এখনো নতুন বছরের শুরুতে দোকান সাজান, পুরোনো খাতা বন্ধ করে নতুন খাতা খোলেন।
হালখাতা শুধু একটি হিসেবের খাতা নয়, এটি ব্যবসায়ী ও খরিদ্দারদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যম। এই দিনে একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়, হাসিমুখে পুরোনো দেনা মেটানো হয়, আর নতুন করে ব্যবসার পথচলা শুরু হয়।
হালখাতা বাঙালির সংস্কৃতির একটি মূল্যবান অংশ। সময়ের সঙ্গে এর চেহারা বদলালেও আবেগ এখনো টিকে আছে। পহেলা বৈশাখ মানেই নতুন সূচনা, আর হালখাতা সেই শুরুর অন্যতম অনুষঙ্গ। ব্যবসায়িক সম্পর্ককে সৌহার্দ্যপূর্ণ করে তুলতে, মানুষের মাঝে ভালোবাসা বাড়াতে হালখাতা উৎসবের গুরুত্ব কখনোই কমে না। তাই বলা যায়— বাংলা নববর্ষ আর হালখাতা, দুটিই মিলেই বাঙালির প্রাণের উৎসব।
পহেলা বৈশাখ মানেই নতুন ক্যালেন্ডারের পাতা, নতুন আশা আর নতুন করে পথচলার দিন। এই দিনে ছোট থেকে বড় সবাই রঙিন পোশাকে সেজে ওঠে, নানা রকমের খাবার রান্না হয়, বাড়িতে অতিথি আসে, মেলা বসে, আর গান-বাজনার আয়োজন হয়। কিন্তু এই উৎসবের আরেকটি দিক রয়েছে, যেটি অনেকেই হয়তো ভুলে যেতে বসেছেন। সেটি হলো— হালখাতা।
‘হালখাতা’ শব্দটি শুনলেই মনে আসে দোকানের নতুন খাতা, দোকান সাজানো, মিষ্টি খাওয়া আর একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। ব্যবসায়ীরা এই দিনটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। কারণ এই দিনে তারা পুরনো বছরের হিসেব চুকিয়ে নতুন খাতা খুলে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেন।
‘হাল’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষায় ‘লাঙল’ অর্থে ব্যবহৃত হয়, আবার ফারসি ভাষায় এর মানে ‘নতুন’। আর ‘খাতা’ মানে খাতা বা রেজিস্টার। তাই ‘হালখাতা’ মানে দাঁড়ায়— নতুন হিসাবের খাতা। এটি শুধু একটি খাতা নয়, বরং এটি বাঙালির জীবনে বছরের হিসাব মেলানোর এবং নতুন করে শুরু করার প্রতীক।
বাংলা সনের ইতিহাস নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন, মোগল সম্রাট আকবর এই সন চালু করেন। তার আমলে খাজনা আদায় হতো হিজরি (চন্দ্র) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। এতে সমস্যা হতো, কারণ হিজরি বছর কৃষির মৌসুমের সঙ্গে মিলত না। ফলে কৃষকরা অসুবিধায় পড়ত। এই সমস্যা সমাধানে সম্রাট আকবর জ্যোতিষী আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজিকে দিয়ে নতুন একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করান, যাতে হিজরি এবং হিন্দু পঞ্জিকার সমন্বয় করা হয়। এটি ছিল মূলত ফসলি সন, যা পরে হয়ে যায় বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ।
নতুন এই বর্ষপঞ্জি চালু হওয়ার পর, জমিদাররা চৈত্র মাসের শেষ দিনে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন, আর পহেলা বৈশাখে তাদের মিষ্টি খাওয়াতেন, আপ্যায়ন করতেন। সেই সময় থেকেই ‘হালখাতা’ চালু হয়। জমিদারদের পর ব্যবসায়ীরাও এই রীতিকে গ্রহণ করেন।
একসময় পাটসহ নানা ফসল বিক্রি করে কৃষকের হাতে টাকা আসত বছরে নির্দিষ্ট সময়। সেই সময় অনেক কৃষক দোকান থেকে বাকিতে জিনিস কিনতেন। এরপর ফসল বিক্রি করে পহেলা বৈশাখে দোকানে এসে দেনা পরিশোধ করতেন। ব্যবসায়ীরাও খরিদ্দারদের দাওয়াত দিয়ে দোকানে আমন্ত্রণ জানাতেন। দোকান সাজানো হতো রঙিন কাগজে, ঝালর দিয়ে। ফেস্টুনে লেখা থাকত— “শুভ নববর্ষ”, “শুভ হালখাতা”।
এই দিনে দোকানে আসা খরিদ্দারদের মিষ্টিমুখ করানো হতো, গল্প-আড্ডায় জমে উঠত পরিবেশ। নতুন খাতা খুলে হিসেব শুরু হতো। অনেক হিন্দু ব্যবসায়ী এই খাতা নিয়ে মন্দিরে যেতেন পূজা দিতে।
বিশেষ করে পুরান ঢাকায় হালখাতার আলাদা একটি আবহ ছিল। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই এই দিনটিকে এক উৎসব হিসেবে নিতেন। ব্যবসায়ীরা দোকান সেজে তুলতেন, অনেক জায়গায় ধূপধুনাও দেওয়া হতো। অতিথিদের জন্য থাকত পান-সুপারি, মিষ্টি আর ছোটখাটো উপহার। এভাবেই পুরান ঢাকায় ‘হালখাতা’ ছিল শুধু ব্যবসার হিসাব নয়, বরং এক মিলনমেলা।
একসময় বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ একটি উৎসব চালু করেন, যার নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’। সেটিও ছিল খাজনা আদায়ের সময়কার এক ধরনের উৎসব। যদিও সেই উৎসব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে, কিন্তু হালখাতা টিকে আছে আজও।
বর্তমানে আগের মতো জাঁকজমক নেই। এখন মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল পেমেন্টের যুগে অনেকেই দোকানে গিয়ে দেনা পরিশোধ করেন না। তবে এখনো পুরান ঢাকার কিছু দোকানে, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে হালখাতা পালন করা হয়। অনেকে এখনো নতুন বছরের শুরুতে দোকান সাজান, পুরোনো খাতা বন্ধ করে নতুন খাতা খোলেন।
হালখাতা শুধু একটি হিসেবের খাতা নয়, এটি ব্যবসায়ী ও খরিদ্দারদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যম। এই দিনে একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়, হাসিমুখে পুরোনো দেনা মেটানো হয়, আর নতুন করে ব্যবসার পথচলা শুরু হয়।
হালখাতা বাঙালির সংস্কৃতির একটি মূল্যবান অংশ। সময়ের সঙ্গে এর চেহারা বদলালেও আবেগ এখনো টিকে আছে। পহেলা বৈশাখ মানেই নতুন সূচনা, আর হালখাতা সেই শুরুর অন্যতম অনুষঙ্গ। ব্যবসায়িক সম্পর্ককে সৌহার্দ্যপূর্ণ করে তুলতে, মানুষের মাঝে ভালোবাসা বাড়াতে হালখাতা উৎসবের গুরুত্ব কখনোই কমে না। তাই বলা যায়— বাংলা নববর্ষ আর হালখাতা, দুটিই মিলেই বাঙালির প্রাণের উৎসব।
ভিডিও বার্তায় হানিয়া বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশে আসছেন একটি ছোট্ট সারপ্রাইজ নিয়ে। সেই ‘সারপ্রাইজ’ ঠিক কী, তা হয়তো করপোরেট ইভেন্টের সীমায় আটকে থাকবে। কিন্তু ভক্তদের কাছে সবচেয়ে বড় চমক তো তিনি নিজেই— ঢাকায় এসে, এই শহরের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রতি সমর্থন জানানো।
২২ দিন আগেকবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
২২ দিন আগেঅনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, বিশ্বসূফি সংস্থার সদস্য হাসান শাহ সুরেশ্বরী দীপু নূরী, সায়ান, অরূপ রাহী, কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম, সহজিয়া ব্যান্ডের রাজুসহ বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমগীতের সভাপ্রধ
২৪ দিন আগেপ্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তাদের বৃহস্পতিবার প্রথম পাতা সাজিয়েছে ট্রাম্পের সফর নিয়েই। সেখানে মূল সংবাদের পাশেই স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ ‘পোয়েট লরিয়েট’ তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিযুক্ত কবি ক্যারল অ্যান ডাফির কবিতা STATE/BANQUET। বিশ্বব্যবস্থা যে রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারই এক মূর্ত
২৪ দিন আগে