ডিসেম্বরের দিনলিপি: ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

শীতের রাতে বাংলার নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের সলিল সমাধি!

নাজমুল ইসলাম হৃদয়

১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখটি ইতিহাসের পাতায় কেবল একটি দিন নয়, বরং এক দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের চূড়ান্ত রূপান্তরের মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। আগের দিন বিকেলে পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় বিমানঘাঁটিগুলোতে যে ‘অপারেশন চেঙ্গিস খান’ পরিচালনা করেছিল, তার সামরিক ফলাফল ৪ ডিসেম্বর সকাল থেকেই স্পষ্ট হতে শুরু করে।

এ দিন আর কোনো লুকোছাপা ছিল না। গেরিলা যুদ্ধের প্রচলিত সীমানা পেরিয়ে সংঘাতটি একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের রূপ নেয়। তবে এই দিনের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণে মিত্রবাহিনীর শক্তিমত্তার চেয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কৌশলগত ব্যর্থতা ও তাদের অভ্যন্তরীণ হতাশার চিত্রটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পাকিস্তানের সুপ্রিম কমান্ডার জেনারেল ইয়াহিয়া খান যখন রাওয়ালপিন্ডি থেকে জিহাদের ডাক দিচ্ছিলেন, তখন পূর্ব পাকিস্তানের রণাঙ্গনে চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে ৪ ডিসেম্বরের পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে তখন এক অদ্ভুত ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছিল।

মেজর সালিক লিখেছেন, ‘৪ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম, আমাদের মাথার ওপরের আকাশ আর আমাদের নেই। ভারতীয় বিমানগুলো যখন ইচ্ছা আসছে, হামলা করছে এবং চলে যাচ্ছে। আমাদের স্যাবার জেটগুলো রানওয়েতে আটকা পড়ে আছে, কারণ রানওয়েগুলো গত রাতের এবং ভোরের হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।’

সিদ্দিক সালিকের এই বয়ান প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বাহিনী মানসিকভাবে কতটা ভেঙে পড়েছিল।

এ দিন আকাশপথের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য কফিনে প্রথম পেরেক। তেজগাঁও ও কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটি অচল হয়ে পড়ার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গ্রাউন্ড ফোর্সের জন্য কোনো ‘এয়ার সাপোর্ট’ বা আকাশ থেকে সহায়তার সুযোগ ছিল না। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একমাত্র সম্বল ১৪ নম্বর স্কোয়াড্রনের স্যাবার এফ-৮৬ জেটগুলো কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে।

ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল পি সি লাল পরে তার বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছিলেন, ৪ ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর সক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডি থেকে জেনারেল হেডকোয়ার্টার ঢাকার ইস্টার্ন কমান্ডকে বারবার আশ্বাস দিচ্ছিল, ‘উত্তরের বন্ধু’ (চীন) ও ‘দক্ষিণের বন্ধু’ (যুক্তরাষ্ট্র) সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে।

পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী তার ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন, এই আশ্বাসগুলো ছিল মূলত বাহিনীকে সান্ত্বনা দেওয়ার কৌশল। বাস্তবে ৪ ডিসেম্বর চীন বা যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করেনি, বরং তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কূটনৈতিক লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। এই মিথ্যা আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জেনারেল নিয়াজি তার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা মাটি কামড়ে পড়ে থাকার জন্য, যা ছিল একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে ৪ ডিসেম্বর ছিল স্নায়ুযুদ্ধের এক চরম নাটকীয় দিন। পাকিস্তান যখন রণাঙ্গনে পিছু হটছে, তখন তাদের অস্তিত্ব রক্ষার শেষ চেষ্টাটি হয় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় মরিয়া হয়ে ওঠেন।

ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের গোপন নথিপত্র ও হোয়াইট হাউজের অবমুক্ত করা টেপ থেকে জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর নিক্সন সরাসরি নির্দেশ দেন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস করানোর জন্য। সে অনুযায়ী মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ বুশ (সিনিয়র) নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব তোলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই অবিলম্বে নিজ নিজ সীমান্তে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।

এ প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এ প্রস্তাবে ভেটো দেয়। সোভিয়েত প্রতিনিধি ইয়াকভ মালিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান ও জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি বা সেনা প্রত্যাহার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের এ ভেটো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ফলে পাকিস্তানের কূটনৈতিক রক্ষাকবচ ভেঙে পড়ে। পাকিস্তানের ‘দ্য পাকিস্তান টাইমস’ পত্রিকার ৫ ডিসেম্বরের শিরোনামে এ ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, যা তাদের হতাশারই বহির্প্রকাশ ছিল।

রণাঙ্গনের কৌশলে ৪ ডিসেম্বর এক বড় পরিবর্তন আসে। এতদিন ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সীমান্তে শক্তিশালী ঘাঁটি বা ‘স্ট্রং হোল্ড’ তৈরি করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা এই ঘাঁটিগুলো দখলের জন্য সরাসরি আক্রমণ করবে, আর সেই সুযোগে পাকিস্তান তাদের ভারী আর্টিলারি ব্যবহার করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করবে।

কিন্তু জেনারেল শ্যাম মানেকশের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী ‘বাইপাসিং স্ট্র্যাটেজি’ বা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল গ্রহণ করে। তারা পাকিস্তানের শক্তিশালী ঘাঁটিগুলোর ওপর সম্মুখ আক্রমণ না করে সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে পেছনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

জেনারেল নিয়াজি তার আত্মজীবনী ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’-এ আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘শত্রুরা আমাদের যুদ্ধের নিয়ম মানছিল না। তারা আমাদের সাজানো দুর্গগুলোর সামনে দিয়ে না এসে পাশ দিয়ে ঢুকে পড়ছিল এবং আমাদের পেছনের সাপ্লাই লাইন কেটে দিচ্ছিল। ফলে আমাদের সৈন্যরা দুর্গের ভেতরেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছিল।’

একই কৌশলের কারণে ৪ ডিসেম্বর হিলি, আখাউড়া ও সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনী কোনো বড় প্রতিরোধ ছাড়াই কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

উত্তরাঞ্চলীয় রণাঙ্গন, বিশেষ করে জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর সীমান্তে ৪ ডিসেম্বর ঘটে এক নাটকীয় ঘটনা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল কামালপুর। টানা ১০ দিনের অবরোধের পর ৪ ডিসেম্বর বিকেলে সেখানে রসদ ফুরিয়ে আসে। পাকিস্তানি গ্যারিসন কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসান মালিক রাওয়ালপিন্ডিতে বার্তা পাঠান সাহায্যের জন্য।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওয়্যারলেস ইন্টারসেপ্ট থেকে জানা যায়, তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বলেন, ‘সাহায্য পাঠানো সম্ভব নয়, তুমি নিজের বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নাও।’ কোনো উপায় না দেখে এবং যৌথ বাহিনীর আলটিমেটামের মুখে সন্ধ্যা ৭টায় ক্যাপ্টেন আহসান মালিক ১৬২ জন সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করেন।

এ ঘটনাটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মনোবলে বড় আঘাত হানে। কারণ কামালপুর ছিল তাদের অন্যতম সেরা প্রতিরক্ষা ব্যূহ। এ পতনের ফলে ময়মনসিংহ ও ঢাকার দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। পাকিস্তানি সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল ফজল মুকিম খান তার ‘পাকিস্তানস ক্রাইসিস ইন লিডারশিপ’ বইয়ে এ ঘটনাকে নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পূর্ব সীমান্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ৪ ডিসেম্বর রাতে সংঘটিত হয় যুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ লড়াই। আখাউড়া ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগের জংশন ও কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট মোতায়েন ছিল। যৌথ বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।

সারা রাত ধরে চলা গুলিবিনিময় ও আর্টিলারি হামলার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পলায়নপর অনেক পাকিস্তানি সৈন্য তিতাস নদীতে ঝাঁপ দেয়। শীতের রাতে ভারী বুট ও ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় নদী পার হতে গিয়ে তাদের অনেকের সলিল সমাধি ঘটে। যারা বেঁচে ছিলেন, তারা রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যান।

এ যুদ্ধের ভয়াবহতা এতই তীব্র ছিল যে ৫ ডিসেম্বর ভোরে যখন আখাউড়া মুক্ত হয়, তখন সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৪ ডিসেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পোড়ামাটি নীতির এক জঘন্য উদাহরণ। যৌথ বাহিনীর অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারে, তারা ফুলবাড়ী রক্ষা করতে পারবে না। ফলে তারা পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার আগে তারা ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদীর ওপর থাকা লোহার ব্রিজটির একাংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়, যেন মুক্তি ও মিত্রবাহিনী তাদের ধাওয়া করতে না পারে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ৪ ডিসেম্বর বিকেলে ব্রিজটি ওড়ানোর বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা একটি বিশেষ ট্রেনে করে সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার শেল নিক্ষেপ করে ট্রেনটি থামানোর চেষ্টা করলেও সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এই পালানোর ঘটনা প্রমাণ করে, সম্মুখ যুদ্ধে লড়ার সাহস বা সামর্থ্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর অবশিষ্ট ছিল না।

সমুদ্রপথেও ৪ ডিসেম্বর ছিল পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয়ের দিন। তাদের একমাত্র দূরপাল্লার সাবমেরিন ‘পিএনএস গাজী’ বিশাখাপত্তনম বন্দরের কাছে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী এটি ছিল একটি দুর্ঘটনা, কিন্তু ভারতীয় নৌবাহিনীর নথি ও বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল একটি সফল নৌ-ফাঁদ। পিএনএস গাজী ধ্বংস করে দেওয়ায় বঙ্গোপসাগরে পাকিস্তানের নৌ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে পড়ে।

একই রাতে ভারতীয় নৌ বাহিনী করাচি বন্দরে ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ পরিচালনা করে। মিসাইল বোটের সাহায্যে চালানো এ হামলায় করাচি বন্দরের তেলের ডিপোগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দপ্তর অচল হয়ে পড়ে। করাচির আকাশে আগুনের কুণ্ডলী এবং ধোঁয়া এতই প্রবল ছিল যে তা মহাকাশ থেকেও স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছিল। এ ঘটনা পাকিস্তানের সামরিক হাইকমান্ডের মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে দেয়।

অবরুদ্ধ ঢাকায় ৪ ডিসেম্বর ছিল এক চরম অনিশ্চয়তার দিন। পাকিস্তান সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘রেডিও পাকিস্তান’ ও ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় তখনো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছিল। ৪ ডিসেম্বরের খবরে বলা হয়, ‘আমাদের বীর সেনারা সীমান্তে শত্রুর আগ্রাসন রুখে দিয়েছে এবং ভারতের অভ্যন্তরে অগ্রসর হচ্ছে।’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতারা ঢাকায় মিছিল বের করে জনগণকে জিহাদে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। আল-বদর কমান্ডাররা বায়তুল মোকাররমের সামনে দাঁড়িয়ে ভারতকে ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার হুমকি দেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন।

ঢাকার সাধারণ মানুষ বিবিসি ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবরে কান পেতে ছিল। তারা জানত, সীমান্তে আসলে কী ঘটছে। শহরের ভেতরে থাকা ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলারা এ দিন ডেমরার গুল টেক্সটাইল মিলসে পাকিস্তানি ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বহু সৈন্যকে হতাহত করে। এ হামলা প্রমাণ করে, কেবল সীমান্তেই নয়, খোদ ঢাকার বুকে বসেও পাকিস্তানি বাহিনী নিরাপদ ছিল না।

সব মিলিয়ে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ছিল এমন একটি দিন, যখন পাকিস্তান সামরিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক— সব দিক থেকেই পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছিল। তাদের তথাকথিত ‘অজেয়’ প্রতিরক্ষা ব্যূহগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছিল। জেনারেল নিয়াজির ‘মাটি কামড়ে পড়ে থাকা’র নির্দেশ বাস্তবে কোনো কাজেই আসছিল না, কারণ তাদের সাপ্লাই লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে চিঠি পাঠায়, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পথে এক বড় পদক্ষেপ। ৪ ডিসেম্বরের সূর্য যখন অস্ত গিয়েছিল, তখন এটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, পাকিস্তানের পরাজয় কেবল সময়ের ব্যাপার।

তথ্যসূত্র

  • উইটনেস টু সারেন্ডার (Witness to Surrender) – মেজর সিদ্দিক সালিক
  • দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান (The Betrayal of East Pakistan) – লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী
  • পাকিস্তানস ক্রাইসিস ইন লিডারশিপ (Pakistan’s Crisis in Leadership) – মেজর জেনারেল ফজল মুকিম খান
  • মাই ইয়ারস উইথ দি আইএএফ (My Years with the IAF) – এয়ার চিফ মার্শাল পিসি লাল
  • সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অব আ ন্যাশন (Surrender at Dacca: Birth of a Nation) – লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব
  • দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম (The Blood Telegram) – গ্যারি জে বাস
  • মূলধারা ’৭১ (Muldhara ’71) – মঈদুল হাসান
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (খণ্ড ৮ ও ৯) – হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাদক)
  • ট্রানজিশন টু ট্রায়াম্ফ (Transition to Triumph) – ভাইস অ্যাডমিরাল জি এম হিরানন্দানি
ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

ভূমিকম্পে করণীয়-বর্জনীয়

এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত—কী করা উচিত না তা নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ পরামর্শ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত।

১২ দিন আগে

আত্মসমর্পণ করলেন মেহজাবীন

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ, হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ ঘটনায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন মডেল ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী এবং তার ভাই আলিসান চৌধুরী।

১৮ দিন আগে

মেহজাবীনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। এই অভিনেত্রী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। পারিবারিক ব্যবসার পার্টনার হিসেবে রাখার বিনিময়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ, হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

১৮ দিন আগে

হিরো আলমের জামিন

হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা মামালায় জামিন পেয়েছেন আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।

১৯ দিন আগে