ফ্যাসিবাদী শাসনের সহযোগী জাসদ ও বাংলাদেশ

মো. সিদ্দিকুর রহমান
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ৪০

কিছুদিন আগে শহীদুল্লাহ ফরাজীর একটা লেখা পড়লাম। তাতে দেখতে পেলাম রাষ্ট্রের আদর্শ, দর্শন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক বিচার ব্যবস্থাকে অতীতের ক্ষমতাসীনরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। অতীতের ক্ষমতাসীনদের সহযোগী হিসেবে দেখতে পেলাম জাসদ নামক একটি রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতাসীনদের বিদায় করার পেছনে প্রধান সহযোগী ছিলেন।

জনাব ফরাজী সাহেব ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ পত্রিকার ওই লেখায় এসব ব্যাপারে কিছু বলেননি। প্রজাতন্ত্র ৫৩ বছরে সামরিক একনায়কতন্ত্রের কারণে রাষ্ট্র ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তার পেছনে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কাজ করছে (ভুয়া সমাজতন্ত্র)। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই জাসদ তাদের কাজে উৎসাহিত করছে। আ স ম আব্দুর রব ও হাসানুল হক ইনু তাদের মধ্যে অন্যতম সহযোগী ছিল।

এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৮৮ সালে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সহযোগী হিসেবে সামরিক সরকারের অংশীদারের জন্য ৭২ দল নামক একটি সর্বদলীয় সম্মিলিত বিরোধী দল একটি মোর্চা গঠন করেন। এরশাদ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য তারা ৮৮’র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করে এবং জনাব আ স ম রব এই ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতা হন। এই শহীদুল্লাহ ফরাজী তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন। জাসদ সমাজতন্ত্রের নামে গণবাহিনী সৃষ্টি করে বাংলাদেশের হাজার হাজার যুবকের জীবন নষ্ট করেছেন।

বাংলাদেশের মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল এবং মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধিতা করে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই আওয়ামী লীগের ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে সহযোগিতা করেন জনাব আ স ম রব, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন। তারা মন্ত্রীত্বের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০০৪, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বিহীন নির্বাচন করতে সক্রিয় সহযোগিতা করেন।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে ও পশ্চিম পাকিস্তানের সন্ত্রাসী বাহিনী ও সামরিক বাহিনী দ্বারা নির্যাতন করে তাদের পাকিস্তান রক্ষা করতে পারে নাই এবং এদেশের সাধারণ মানুষ আবাল, বৃদ্ধ, যুবক, সর্বস্তরের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। ৫৩ বছর পরে আজও বাংলাদেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন আওয়ামী লীগ চালু রেখেছিল যা দেশের সর্বস্তরের জনগণ কখনো মেনে নেয়নি।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসককে হটিয়ে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা লাভ করেছে।

১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি সেটা ছিল ভৌগলিক স্বাধীনতা। মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না, মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের যে স্বাধীনতা তা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সকল বৈষম্যবিরোধী অবসান ঘটিয়ে সমাজের ন্যায় বিচার, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

লেখক: সভাপতি, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

রক্তাক্ত বাংলাদেশ: ১৯৭১ থেকে ২০২৫

২০০৮ থেকে ২০২৪। বাংলাদেশে শুরু হলো এক রক্তঝরানোর অধ্যায়। হত্যা, খুন, গুম, আয়নাঘর— বিরোধী দলের নেতাদের ওপর অমানুষিক, নির্মম, নিষ্ঠুর অত্যাচার। মানবতা বিসর্জন দিয়ে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে গিয়ে নিজের দেশের

৫ দিন আগে

সবার মুখে ফেব্রুয়ারিতে ভোট, বিরোধ জুলাই সনদ ঘিরে

তবে হঠাৎ করেই ঘুরে গেছে হাওয়া। বদলে গেছে সবার সুর। সবার মুখে মুখে এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতেই হবে। তবে সংস্কার নিয়ে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন দলের অবস্থান ভিন্

৫ দিন আগে

টেলিগ্রাফের হেডিং— ডাস ক্যাপিটাল

এই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।

১৯ দিন আগে

জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং বিকেন্দ্রীকরণ

একটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং

১৯ দিন আগে