মো. কাফি খান
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের শিশুরা সেদিনও প্রতিদিনের মতোই ক্লাসে যাচ্ছিল। কেউ কবিতা মুখস্থ করছিল, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে হাসছিল, কেউ ঘুমজড়ানো চোখে বেঞ্চে বসে ছিল। কোনো মা-বাবা তখন কল্পনাও করেননি, সেদিন বাসা থেকে স্কুলের পতে যাত্রাই ছিল তাদের সন্তানের শেষ বিদায়।
আচমকা সেই স্বাভাবিক দুপুর পরিণত হলো ভয়াল এক মুহূর্তে। একটি প্রশিক্ষণ বিমান আকাশ থেকে আছড়ে পড়ল স্কুলের ওপর। আগুন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। শিশুদের কান্না, চিৎকার আর আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীর— সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি জাতীয় ট্রাজেডি— যা আমাদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।
আমরা অনেক দুর্যোগ, অনেক মৃত্যু দেখেছি। কিন্তু এবার মৃত্যু এসেছিল স্কুলে পাঠরত শিশুদের ঘরে। তাদের নিষ্পাপ মুখ, তাদের স্বপ্ন, তাদের খেলা— সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এই শোক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কোনো মা এখন পুড়ে যাওয়া সন্তানের পাশে বসে আছে। কীভাবে বলব, ‘আপনার সন্তান আর ফিরে আসবে না!’
এটি কি কেবল নিয়তি? নাকি এক গাফিলতির ইতিহাস?
প্রতিটি মৃত্যু যদি এড়ানো যেত, তবে আমরা কেন আগেই ব্যবস্থা নিইনি? প্রশিক্ষণ বিমান কেন জনবহুল স্কুলের এত কাছে উড়ছিল? কোথায় ছিল নিরাপত্তা প্রটোকল? স্কুলের আগুন প্রতিরোধব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত ছিল? প্রশাসনিক অনুমোদন ও পর্যবেক্ষণ কতটা কার্যকর? এসব প্রশ্ন রাজনীতি নয়, এগুলো নিরাপত্তার প্রশ্ন, দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন।
৮ বছরের আয়েশা প্রতিদিন পাখির ছবি আঁকত। তার খাতা রঙিন স্বপ্নে ভরা। আজ সে ৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
১০ বছরের সামি একটি সায়েন্স প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। সে আর কোনোদিন মঞ্চে উঠবে না।
এ গল্পগুলো শুধুই কয়েকটি নাম নয়, এগুলো আমাদের সব শিশুর গল্প। তাদের প্রত্যেকের জন্য আমাদের দায় আছে।
আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের ফেরাতে পারব না। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে পারি।
জাতীয় শোক ঘোষণা: এ দুর্ঘটনা স্মরণ করে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা, আলোচনা সভা ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক।
স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি: বেসামরিক ও সামরিক উভয় পক্ষের অংশগ্রহণে একটি স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হোক।
স্কুল ও হাসপাতালকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা: প্রশিক্ষণ বা নিম্ন উচ্চতার উড়ানকে জনবহুল ও সংবেদনশীল এলাকায় নিষিদ্ধ করতে হবে।
আহতদের পূর্ণ চিকিৎসা ও মানসিক সমর্থন: দেশে বা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মানসিক সাপোর্টের জন্য পৃথক তহবিল গঠন করা হোক।
ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য আজীবন স্কলারশিপ: বেঁচে যাওয়া শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সম্পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা হোক।
শিক্ষক ও কর্মীদের সম্মাননা ও সমর্থন: দুর্ঘটনার সময় যারা সাহসিকতার সঙ্গে রক্ষা করেছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক।
একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ: নিহত শিশুদের নামসহ একটি স্মৃতি প্রাচীর গড়ে তোলা হোক, যা জাতিকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে— আমরা যেন ভুলে না যাই।
জাতীয় শিশু নিরাপত্তা টাস্কফোর্স: প্রতিটি স্কুলের জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন, অগ্নিনিরাপত্তা ও জরুরি প্রস্তুতির জন্য একটি স্থায়ী সরকারি কমিটি গঠন করা হোক।
জাপানে শিশুদের জন্য সপ্তাহে একাধিক ভূমিকম্প মহড়া হয়। আমেরিকায় স্কুল নিরাপত্তা নিয়ে আইন হয়েছে বহুবার। আমরা কেন পারি না?
সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, চিকিৎসক, শিক্ষক, সংগঠন— সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কমিউনিটি কাউন্সেলিং, নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা, জনমত গঠন, অনুদান সংগ্রহ— এ দুঃখ যেন শুধু কান্নায় শেষ না হয়। এ দুঃখ পরিবর্তনের বীজ হয়ে উঠুক।
‘বারবার কেন জাগি
কেবল মৃত্যুর পর?’
আমরা প্রতিক্রিয়া দিই, কিন্তু প্রস্তুত হই না। কেন? এই লেখা কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি আত্মজিজ্ঞাসা। আমরা কি এবার সত্যিই পরিবর্তন চাই?
‘হে আল্লাহ, যেসব শিশু ও প্রাণ আমরা হারিয়েছি, তাদের জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। আহতদের পূর্ণ সুস্থতা দিন। পরিবারগুলোকে ধৈর্য ও শক্তি দিন। জাতির অন্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করুন যেন আর কোনো শিশু এমনভাবে মৃত্যুবরণ না করে।’
এই লেখা আমি লিখছি একজন পিতা, একজন সাধারণ মানুষ, একজন বিবেকবান নাগরিকের হৃদয় নিয়ে। এই গল্প যেন আমরা ভুলে না যাই। বরং এটিই হোক আমাদের পথ পরিবর্তনের ইতিহাস।
[লেখাটি লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। কোনো প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা কর্মস্থলের প্রতিনিধিত্ব করে না।]
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের শিশুরা সেদিনও প্রতিদিনের মতোই ক্লাসে যাচ্ছিল। কেউ কবিতা মুখস্থ করছিল, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে হাসছিল, কেউ ঘুমজড়ানো চোখে বেঞ্চে বসে ছিল। কোনো মা-বাবা তখন কল্পনাও করেননি, সেদিন বাসা থেকে স্কুলের পতে যাত্রাই ছিল তাদের সন্তানের শেষ বিদায়।
আচমকা সেই স্বাভাবিক দুপুর পরিণত হলো ভয়াল এক মুহূর্তে। একটি প্রশিক্ষণ বিমান আকাশ থেকে আছড়ে পড়ল স্কুলের ওপর। আগুন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। শিশুদের কান্না, চিৎকার আর আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীর— সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি জাতীয় ট্রাজেডি— যা আমাদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।
আমরা অনেক দুর্যোগ, অনেক মৃত্যু দেখেছি। কিন্তু এবার মৃত্যু এসেছিল স্কুলে পাঠরত শিশুদের ঘরে। তাদের নিষ্পাপ মুখ, তাদের স্বপ্ন, তাদের খেলা— সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এই শোক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কোনো মা এখন পুড়ে যাওয়া সন্তানের পাশে বসে আছে। কীভাবে বলব, ‘আপনার সন্তান আর ফিরে আসবে না!’
এটি কি কেবল নিয়তি? নাকি এক গাফিলতির ইতিহাস?
প্রতিটি মৃত্যু যদি এড়ানো যেত, তবে আমরা কেন আগেই ব্যবস্থা নিইনি? প্রশিক্ষণ বিমান কেন জনবহুল স্কুলের এত কাছে উড়ছিল? কোথায় ছিল নিরাপত্তা প্রটোকল? স্কুলের আগুন প্রতিরোধব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত ছিল? প্রশাসনিক অনুমোদন ও পর্যবেক্ষণ কতটা কার্যকর? এসব প্রশ্ন রাজনীতি নয়, এগুলো নিরাপত্তার প্রশ্ন, দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন।
৮ বছরের আয়েশা প্রতিদিন পাখির ছবি আঁকত। তার খাতা রঙিন স্বপ্নে ভরা। আজ সে ৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
১০ বছরের সামি একটি সায়েন্স প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। সে আর কোনোদিন মঞ্চে উঠবে না।
এ গল্পগুলো শুধুই কয়েকটি নাম নয়, এগুলো আমাদের সব শিশুর গল্প। তাদের প্রত্যেকের জন্য আমাদের দায় আছে।
আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের ফেরাতে পারব না। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে পারি।
জাতীয় শোক ঘোষণা: এ দুর্ঘটনা স্মরণ করে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা, আলোচনা সভা ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক।
স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি: বেসামরিক ও সামরিক উভয় পক্ষের অংশগ্রহণে একটি স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হোক।
স্কুল ও হাসপাতালকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা: প্রশিক্ষণ বা নিম্ন উচ্চতার উড়ানকে জনবহুল ও সংবেদনশীল এলাকায় নিষিদ্ধ করতে হবে।
আহতদের পূর্ণ চিকিৎসা ও মানসিক সমর্থন: দেশে বা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মানসিক সাপোর্টের জন্য পৃথক তহবিল গঠন করা হোক।
ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য আজীবন স্কলারশিপ: বেঁচে যাওয়া শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সম্পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা হোক।
শিক্ষক ও কর্মীদের সম্মাননা ও সমর্থন: দুর্ঘটনার সময় যারা সাহসিকতার সঙ্গে রক্ষা করেছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক।
একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ: নিহত শিশুদের নামসহ একটি স্মৃতি প্রাচীর গড়ে তোলা হোক, যা জাতিকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে— আমরা যেন ভুলে না যাই।
জাতীয় শিশু নিরাপত্তা টাস্কফোর্স: প্রতিটি স্কুলের জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন, অগ্নিনিরাপত্তা ও জরুরি প্রস্তুতির জন্য একটি স্থায়ী সরকারি কমিটি গঠন করা হোক।
জাপানে শিশুদের জন্য সপ্তাহে একাধিক ভূমিকম্প মহড়া হয়। আমেরিকায় স্কুল নিরাপত্তা নিয়ে আইন হয়েছে বহুবার। আমরা কেন পারি না?
সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, চিকিৎসক, শিক্ষক, সংগঠন— সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কমিউনিটি কাউন্সেলিং, নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা, জনমত গঠন, অনুদান সংগ্রহ— এ দুঃখ যেন শুধু কান্নায় শেষ না হয়। এ দুঃখ পরিবর্তনের বীজ হয়ে উঠুক।
‘বারবার কেন জাগি
কেবল মৃত্যুর পর?’
আমরা প্রতিক্রিয়া দিই, কিন্তু প্রস্তুত হই না। কেন? এই লেখা কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি আত্মজিজ্ঞাসা। আমরা কি এবার সত্যিই পরিবর্তন চাই?
‘হে আল্লাহ, যেসব শিশু ও প্রাণ আমরা হারিয়েছি, তাদের জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। আহতদের পূর্ণ সুস্থতা দিন। পরিবারগুলোকে ধৈর্য ও শক্তি দিন। জাতির অন্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করুন যেন আর কোনো শিশু এমনভাবে মৃত্যুবরণ না করে।’
এই লেখা আমি লিখছি একজন পিতা, একজন সাধারণ মানুষ, একজন বিবেকবান নাগরিকের হৃদয় নিয়ে। এই গল্প যেন আমরা ভুলে না যাই। বরং এটিই হোক আমাদের পথ পরিবর্তনের ইতিহাস।
[লেখাটি লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। কোনো প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা কর্মস্থলের প্রতিনিধিত্ব করে না।]
একটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৮ দিন আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা গেলে জামায়াত তখন বিএনপির শক্ত বা সবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জামায়াত দরকষাকষির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
১৯ দিন আগেঝিনাইদহের কৃষক শ্রী হরিপদ কাপালীর হাতে হরি ধানের আবিষ্কার দুই দশক আগে যার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয়নি কেবল দারিদ্রতার কারনে। এখানে উল্লেখ্য যে হরিপদ কাপালী ১৯২২ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং ২০১৮ সালের ৬ই জুলাই নিজ শ্বশুরালয় আহসান নগর গ্রামে মৃত্
১৯ দিন আগেগত বছরের জুনে ব্যাংক ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৪–১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও এক দফা নীতি সুদহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এমন দফায় দফায় সুদহার বৃদ্ধির ফলে বড় প্রতিষ্ঠানও চাপে পড়তে পারে এবং বহু প্রতিষ্ঠান রুগ্ন তালিকাভুক্ত হবে। উল্লেখযোগ্য, ২০২০ সালের এপ্রিলে স
১৯ দিন আগে