নিউইয়র্কে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, পুলিশের গুলি চালানো নিয়ে ধুম্রজাল

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
উইন রোজারিও। ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। পুলিশকে কেন গুলি চালাতে হলো তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল। নিহত হওয়ার কারণ সম্পর্কে মার্কিন পুলিশ এবং নিহত তরুণের পরিবারের সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য সামনে এসেছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ মার্চ বেলা ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে নিউইয়র্কে ওজন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটের একটি বাড়িতে। এই বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন ফ্রান্সিস রোজারিও। রোজারিও পরিবার প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ফ্রান্সিস রোজারিওর ১৯ বছরের ছেলে উইন রোজারিওই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, উইন রোজারিও ৯১১ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চান। ফোন পেয়ে তাদের বাসায় যান পুলিশ সদস্যরা। সেখানে যাওয়ার পর উইন পুলিশ সদস্যদের দিকে কাঁচি নিয়ে মারতে যান, তখন আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। ঘটনাস্থলেই উইন মারা যান।

কিন্তু উইনের ছোট ভাই উশতো রোজারিও বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তার ভাইকে পুলিশের দিকে যেতে বাধা দিচ্ছিলেন তার মা। মা ভাইকে জাপটে ধরে রেখেছিলেন। সুতরাং গুলি ছোড়ার দরকার ছিল না।

পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, ফলে পুলিশের গুলি চালানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। নিহত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, উইনকে মোট ছয়টি গুলি করা হয়।

পুলিশ অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। যদিও সে ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে প্রতিবছর ১ হাজারেও বেশি মানুষ নিহত হয়। ২০২১-এর তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ যে গুলি চালায় সেসব তথ্যের মাত্র তিনভাগের একভাগ এফবিআই-এর ডাটাবেজে সংরক্ষিত হয়। বাকিটা উধাও। কেননা থানাগুলো কেন্দ্রীয় সরকারকে এসব তথ্য দিতে বাধ্য নয়।

পত্রিকাটি আরো দেখেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের গুলি করে হত্যার প্রবণতা বেড়েছে। ২০২৩ সালে তা রেকর্ড গড়েছে, এ বছর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ১ হাজার ১৬২ জন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর অনুসন্ধান বলছে, পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের হার দ্বিগুণ। আর যারা নিহত হচ্ছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশির বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর।

বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও মার্কিন সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন অঙ্কুরেই শেষ হয়ে গেল। এমনটি কেন হলো তা কি আমরা আর জানতে পারবো? এই তরুণ কি বর্ণবাদের বলি হলেন? আমরা কি যুক্তরাষ্ট্রে আইনের প্রতি আস্থা রাখতে পারি? সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার কি হবে? এমন অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আজ শনিবার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক উইন রোজারিওর বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, পুলিশের গুলি করার প্রয়োজন ছিল না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং এর তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে পুলিশের 'অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া' বা দোষ প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশা করি।’ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।

সূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৬ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৬ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৭ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

১১ দিন আগে